বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রক্ষেপণ
২০২৩ সালের মধ্যে স্বাভাবিক ধারায় ফিরবে রফতানি

মহামারীতে বিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রয়াস চালাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২০ সাল শেষে অর্থনীতির প্রতিটি খাতে করোনার অভিঘাত নিয়ে গবেষণা চালিয়েছে দেশের ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। দেশের রফতানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব। সেখান থেকে পূর্ণ উত্তরণ না হলেও রফতানি এখন পুনরুদ্ধারের পথে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রক্ষেপণও বলছে, ২০২৩ সালের মধ্যেই দেশের রফতানি স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসবে। ওই সময়েই প্রথম প্রাক-কভিড পর্যায়কে ছাড়িয়ে যেতে পারে দেশের রফতানি। সেক্ষেত্রে ওই বছর রফতানির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বেশিতে।
এর আগে ২০১৯ সালে ৩ হাজার ৯৩৪ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছিল বাংলাদেশ। গত বছরও শুরুতে রফতানির গতি স্বাভাবিক পর্যায়েই ছিল। কিন্তু মার্চে কভিডের প্রাদুর্ভাবের পর দেশের শিল্পোৎপাদন ও রফতানি খাত পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়ে। পরে এ স্থবিরতা কাটিয়ে উঠলেও পুনরুদ্ধারের গতি এখনো শ্লথ বলে অভিমত খাতসংশ্লিষ্টদের।
সম্প্রতি বাংলাদেশের অর্থনীতি ও আর্থিক খাতে কভিড-১৯-এর প্রভাব মূল্যায়ন করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘ইকোনমিক অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি ইমপ্লিকেশনস অব কভিড-১৯: বাংলাদেশ ব্যাংক অ্যান্ড গভর্নমেন্টস পলিসি রেসপন্স’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে ২০২০ সালে কভিডের খাতভিত্তিক প্রভাব মূল্যায়ন করা হয়। পাশাপাশি এ থেকে পুনরুদ্ধারের সম্ভাব্য গতিপথ ও আগামী দুই বছরের পূর্বাভাসও তুলে ধরা হয়েছে।
করোনার কারণে ২০২০ সালে আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৬০০ কোটি ডলার হ্রাস পায় বাংলাদেশের রফতানি। গত বছর দেশের মোট রফতানির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৩৬১ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, সেখান থেকে বেড়ে চলতি বছর রফতানির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৩ হাজার ৬২১ কোটি ডলারে। ২০২৩ সালে সম্ভাব্য রফতানির প্রক্ষেপণ করতে গিয়ে স্বাভাবিক, উচ্চাভিলাষী ও রক্ষণশীল—এ তিন ধরনেরই পূর্বাভাস প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সার্বিক দিক বিশ্লেষণে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, ব্যবসায়িক পরিস্থিতির সাধারণ ধারা বজায় থাকলে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে রফতানি হবে ৩ হাজার ৯০৭ কোটি ডলারের পণ্য। রক্ষণশীলভাবে হিসাব করলে এ রফতানির সম্ভাব্য পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ হাজার ৭৩৭ কোটি ডলারে। অন্যদিকে উচ্চাভিলাষী হিসাব অনুযায়ী, এর পরিমাণ ৪ হাজার ২০৩ কোটি ডলার।
খাতসংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞদের অনেকের হিসাবেও কাছাকাছি পরিসংখ্যান উঠে আসছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর জানান, ব্যবসার স্বাভাবিক ধারা বিবেচনায় নিলে আমাদের বিশ্লেষণও বলছে, ২০২৩ সালে রফতানি হবে ৩৯-৪০ বিলিয়ন ডলারের। গুরুত্বপূর্ণ হলো আমাদের পোশাক খাতে নিটওয়্যারের প্রবৃদ্ধি ভালো। আর এ পণ্যে মূল্য সংযোজনও বেশি। অর্থাৎ নিটওয়্যারনির্ভর রফতানি প্রবৃদ্ধি হলে আমাদের নেট রফতানি ইতিবাচক পর্যায়েই থাকবে। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বাভাস যথাযথই মনে হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি অনুকূলে থাকতে হবে।
রফতানির পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের বড় বাজারগুলোর জিডিপি প্রবৃদ্ধি পরিসংখ্যান বিবেচনায় নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বিপরীতে দেশের রফতানি প্রবৃদ্ধিকে পর্যালোচনা করে দেখা হয়। পাশাপাশি এসব বাজারে আগামী দুই বছরের প্রবৃদ্ধি নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাসকেও বিশ্লেষণে নেয়া হয়। এরই ভিত্তিতে ২০২৩ সাল শেষে দেশের রফতানি খাতের সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে প্রক্ষেপণটি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্যদিকে সরবরাহ পর্যায়ের প্রভাব হিসাব করা হয়েছে দেশের জিডিপি ও রফতানি প্রবৃদ্ধির গতিপ্রকৃতির ভিত্তিতে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, কভিডের প্রভাবে সারা বিশ্বের মতোই বিপর্যস্ত হয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। আমদানি-রফতানি-রেমিট্যান্স ও প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের মতো বহিঃখাতগুলোর ওপর এর প্রভাব ছিল বেশ দৃশ্যমান। ২০২০ সালের শুরুতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কভিডের প্রাথমিক অবস্থায় তাত্ক্ষণিকভাবে এ খাতগুলোই নেতিবাচক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। চাহিদা কমে যায়, ফলে বড় ধাক্কা আসে সরবরাহ পর্যায়ে; আন্তর্জাতিক পরিবহন ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয় মারাত্মকভাবে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ থেকে রফতানি হয়েছিল ৩৬২ কোটি বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এপ্রিলের মধ্যেই তা ব্যাপক হারে কমে আসে। ওই মাসে রফতানি হয়েছিল ৫২ কোটি ডলারের পণ্য। এ পরিস্থিতি থেকে দ্রুতই পুনরুদ্ধার ঘটে। বিশ্বব্যাপী বাজার পরিস্থিতি একটু একটু করে স্বাভাবিক হতে থাকলে জুলাই নাগাদ রফতানি বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯১ কোটি ডলারে। এ ধারা অব্যাহত রেখে ডিসেম্বরে রফতানি হয় ৩৩১ কোটি ডলারের পণ্য। রফতানিতে গন্তব্য দেশগুলোর চাহিদার প্রভাব মূল্যায়ন করতে গিয়ে বড় ১৫টি বাজারকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। দেশের মোট রফতানির ৬৯ শতাংশেরও বেশি যায় দেশগুলোয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা। এসব দেশে বাংলাদেশ থেকে প্রধানত পোশাকই রফতানি হয়ে থাকে।
দেশের পোশাক শিল্প মালিক সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা বলছেন, রফতানির বড় গন্তব্যগুলোর চাহিদা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। আগামী অক্টোবর থেকে পোশাক পণ্যের রফতানি পুনরুদ্ধারের গতি আরো বাড়বে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বাভাসও বাস্তবে রূপ নেবে বলে প্রত্যাশা করা যায়। এর আগে চলতি বছর ৫ হাজার কোটি ডলারের পোশাক রফতানির লক্ষ্য নিয়েছিলেন খাতসংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা। কিন্তু কভিডের আগে ক্রেতাদের ক্রয়চর্চায় বড় পরিবর্তন আসায় সে আশা ক্ষীণ হয়ে আসে। আর কভিড প্রেক্ষাপটে এ প্রত্যাশা অনেকটাই উবে যায়।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান জানান, কোভিড শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশ রফতানিতে পিছিয়েছে। আগামী অক্টোবর থেকে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে যাবে বলে আশা করছি। বর্তমানে ক্রেতাদের চাহিদা বিবেচনায় নিলে ২০২৩ সাল নাগাদ রফতানি ৪০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি হতে পারে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বাভাস বাস্তবে রূপ নিতে অবশ্যই নীতিসহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে তাত্ক্ষণিকভাবে আগামী তিন মাস টিকে থাকা, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং নতুন বাজার ও পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে নীতিসহায়তা আবশ্যক বলে জানান বিজিএমইএ সভাপতি।
রফতানি খাতের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী জানান, ক্রেতাদের মধ্যে বর্তমানে নৈতিক চর্চার বেশ অভাব। সিয়ার্সসহ আরো বেশকিছু বড় ক্রেতার মধ্যেও নৈতিক চর্চার ব্যাপক ঘাটতি প্রকাশ পাচ্ছে। এদের কেউই তাদের ব্যবসায়িক প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে না। পণ্যের মূল্য নিয়ে ব্যাপক চাপের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এ পরিস্থিতি রফতানি খাতের টেকসই ভবিষ্যতের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। তবে সরকারের বিদ্যমান নীতিসহায়তার পাশাপাশি নতুন নীতিসহায়তা নিশ্চিত হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী রফতানির ইতিবাচক ধারা ধরে রাখা যাবে বলে আমি মনে করি।
জামান / জামান

বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করা হয়েছে : অর্থ উপদেষ্টা

বাজারে গরুর মাংসের ক্রেতা কম, মুরগি-মাছেই মিলছে স্বস্তি!

ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ পোশাক খাতের নতুন চ্যালেঞ্জ: বিজিএমইএ সভাপতি

টিউলিপ নির্দোষ হলে মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন কেন, প্রশ্ন দুদক চেয়ারম্যানের

পাঁচ ব্যাংক মিলে হচ্ছে এক ব্যাংক, চাকরি হারাবে না কর্মীরা

ঈদের আগে তিন দিনে এলো ৭৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স

আওয়ামী লীগ সরকার আর্থিক খাত ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে গেছে : অর্থ উপদেষ্টা

মুরগির মাংসেই স্বস্তি, গরু-ডিম-মাছে অস্বস্তি

গরুর মাংস-মাছের দামে অস্বস্তি, মুরগিতে ঝুঁকছেন ক্রেতারা

বৃষ্টি উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন ইশরাকের অনুসারীরা

টিসিবির ডিলার নিয়োগের নীতিমালা চূড়ান্ত

সামাজিক উন্নয়নে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের ইতিবাচক প্রভাব
