ভালো নেই ঢাক ও ঢোলবাদকরা

ঢাক-ঢোল, কাঁসা ও সানাইয়ের তালে তালে সারা দেশে এবারও আনন্দ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে মন্দিরে-মন্দিরে ভক্তদের দেবী আরাধনা। বাদ্যযন্ত্রের তাল ও শব্দ ব্যতীত দেবী দুর্গার মন যেনো পূর্ণতা পায় না। দেবী আরাধনা করেন সাধারণ মানুষ। আর নিজেদের তৈরি ঢাক-ঢোল নিজেরাই বাজিয়ে পূজামন্ডপ সরগরম করার কাজটি এখনো বংশপরম্পরায় করে আসছেন দেশের বিভিন্ন এলাকার বাদকদল। তবে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মানুষের মন জয় করা বাদকদের প্রতিটি দিন কাটছে বিভিন্ন টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে। জীবন-জীবিকার তাগিদে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। বেছে নিচ্ছেন নতুন পেশা।
রাজধানীর রমনা কালী মন্দিরে গত সোমবার বিকালে ঢাক বাজাতে এসেছেন বাদক গণেশ বিশ্বাস। তার বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোল্লা হাট থানায়। রমনা কালী মন্দিরে ঢাক-ঢোল, কাঁসা ও সানাই বাজাতে তার বাদক দল মিতালী মিউজিক স্টাফ দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে আসছেন।
ঢাক বাদক গণেশ বিশ্বাস সকালের সময়কে বলেন, ‘দুই মেয়ে ও স্ত্রীসহ চারজনের পরিবার আমার। বংশপরম্পরায় প্রায় ৩৫ বছর এ পেশায় আছি। এ ছাড়া বাদ্যযন্ত্র তৈরির কাজও করি। ছোটকালে বিনোদ ওস্তাদজীর কাছে এ বাজনা শেখা। অনেক কষ্ট করে পেশাটা ধরে রেখেছি।’ রমনা কালী মন্দিরে বাদক হিসেবে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে কাজ করছেন তিনি। বছরে ৩ বার এখানে আসেন। এবার তাদের দলে দু’জন ঢাক বাদক, ৩ জন বাঁশি বাদক এবং ১ জন কাশি বাদক এসেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনার সময় লকডাউনে অনেক কষ্টে দিনযাপন করেছি। বন্ধ ছিল সব ধরনের অনুষ্ঠান, তাই কোনো কাজও ছিল না। সে সময় মাটি কেটে সংসার এবং বাদ্যযন্ত্র তৈরির কারিগরদের মজুরির টাকা দিতে হয়েছে। শুনেছি সরকার অনেক কিছু দিয়ে সহযোগিতা করেছে। কিন্তু আমরা সংখ্যলঘু হওয়াতে কোনো প্রকার সাহায্য পাইনি।’
কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, এখনো অনেক কষ্টে দিন কাটছে তার। মাসে খুব বেশি হলে ৮ থেকে ১০ দিন কাজ থাকে। অন্যদিনগুলো কাটে কর্মহীন। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে বাদ্যযন্ত্র তৈরির ব্যবসাটাও বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় আছেন তিনি। পরিশ্রম বেশি, লাভ খুব কম, তারপরেও যদি কোনো প্রকার সহায়তা পাওয়া যায় তাহলে বাদ্যযন্ত্র তৈরির ব্যবসাটা হয়তো ভালো মত চালাতে পারবেন। এমন আশাও করছেন তিনি।
ঢাক বাদক আনন্দ বিশ্বাস দুই ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে বসবাস করেন গোপালগঞ্জ জেলার গোপীনাথপুর গ্রামে। দুর্গাপূজার ঢাক বাদক হিসাবে গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকা রমনা কালী মন্দিরে এসেছেন। ১২ বছর বয়সে বাবার কাছ থেকে ঢাক বাজানো শিখেছিলেন আনন্দ বিশ্বাস। এরপর গত ৩০ বছর ধরে ঢাক বাজাচ্ছেন। ভাদ্র, কার্তিক, পৌষ ও চৈত্র মাসে তাদের কাজ কম থাকে। শুধু ঢাক বাজিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর। প্রতিদিন অনুষ্ঠান থাকে না। সপ্তাহে দু-তিনদিন অনুষ্ঠান থাকে। কৃষি কাজ করার মত কোনো জমিও নেই যে চাষ করবেন। তাই বাদ্যযন্ত্র বাজানোর পাশাপাশি কুটিরশিল্পের কাজ করছেন।
তিনি সকালের সময়কে বলেন, ‘এক বছর আগে আমি হার্ট ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হই। ডাক্তার বলেছেন বিশ্রাম নিতে। পেট তো বসে থেকে চলে না। অসুস্থ অবস্থাতেই ওষুধের ব্যাগটি নিয়ে ঢাকাই এসেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনার দুঃসময়ে এক আত্মীয়ের কাছ থেকে ধার করা টাকা দিয়ে একটি অটোভ্যান কিনে চালিয়েছিলাম। ভালোই চলছিলো দিন-কাল। প্রতিদিনের মতো ভ্যান চালিয়ে ঘরে ফিরে ভ্যান চার্জ দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে উঠে দেখি ভ্যানটি চুরি হয়ে গেছে। করোনার সময় কোনো সহায়তাও পাইনি।’
আনন্দ বিশ্বাস কুটিরশিল্পের কাজ পারেন। এ কাজের জন্য যে সামান্য পুঁজি দরকার, তা নেই আনন্দ বিশ্বাসের। তাই জানা কাজও তিনি করতে পারছেন না টাকার অভাব থাকায়। ঋণ দিয়ে সাহায্য করলেও হয়তো পরিবার পরিজন নিয়ে অন্তত দু’বেলা খাবার খেতে পারবেন এই স্বপ্ন দেখেন আনন্দ বিশ্বাস।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যলয়ের বটতলা শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ ও মাতৃ মন্দিরের ঢোল বাদক রমেশ। গ্রামের বাড়ি মাগুরা জেলায়। এক ছেলে, দুই কন্য ও স্ত্রীসহ মাকে নিয়ে বর্তমানে থাকেন ঢাকার ভাড়া বাসায়। বংশগতভাবে পেশা তার ঢোল ও বাঁশি বাজানো।
ছোটবেলায় চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় ওস্তাদ অজিত বিশ্বাসের কাছ থেকে বাদ্যযন্ত্র বাজানো শিখেছিলেন তিনি। এখন শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ ও মাতৃ মন্দিরের ঢোল বাদক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমার বয়স যখন দশ-বারো, তখন থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতাম। দেশের সবখানে ঢাক, বাংলা ঢোল, ড্রাম ও বাঁশি বাজিয়েছি। বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করেছি। পুরস্কার হিসেবে পেয়েছি সম্মাননা স্মারক ও নানা ধরনের উপহার সামগ্রী। গত বছর দুর্গাপূজায় ঢাক বাজিয়ে আয় হয়েছিল ১৩ হাজার টাকা। বর্তমানে সব কিছুর দাম অনেক। রোজগারের চেয়ে সংসারে খরচ বেশি। খুব কষ্ট করে কোনোরকম পরিবার নিয়ে বেঁচে আছি।’
বাদ্যযন্ত্র বাজানোর পাশাপাশি ঢাক ও বাঁশি তৈরি করতে পারেন তিনি। তবে ঢাক ও বাঁশি তৈরি করার জন্য যেসব উপকরণ দরকার হয়, অনেক সময় সেসব উপকরণ কেনার টাকা থাকে না তার কাছে। ফলে ইচ্ছে থাকার পরেও প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে তৈরি করতে পারেন না ঢাক ও বাঁশি। অথচ কাজের প্রতি মায়া ও ভালোবাসার কারণে এই পেশা ছাড়তে চান না তিনি।
রমেশ জানান, তিনি নিজের পেশায় থাকতে চান। তবে নতুন প্রজন্ম এই পেশায় আসতে চায় না। তারা বাদ্যযন্ত্র ছেড়ে বিভিন্ন পেশা বা ব্যবসা বেছে নিচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও আর্থিক সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
মেহেদী হাসান / মেহেদী হাসান

জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করলেন প্রধান উপদেষ্টা, শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণা

ঘোষণাপত্র পাঠ শেষে নেতাদের সঙ্গে বুক মেলালেন প্রধান উপদেষ্টা

বৃষ্টি উপেক্ষা করে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জনতার ঢল

সাইমুমের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান

রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা

ড. ইউনূসের ভাষণ আজ: জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার সম্ভাবনা

বাংলাদেশিদের জন্য ভারতীয় ভিসার খরচ বাড়লো

বিকেলে রায়েরবাজার কবরস্থান থেকে অজ্ঞাত লাশ উত্তোলন শুরু

নির্বাচনের আগ পর্যন্ত অভিযান চলবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

১১ মাসে পুলিশের বিরুদ্ধে ৭৬১ মামলা হয়েছে : টিআইবি

রোববার শাহবাগ এলাকায় যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ করবে পুলিশ

৫ আগস্ট সব পক্ষের উপস্থিতিতে জুলাই ঘোষণাপত্র : প্রেস উইং
