ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ইসলামি দলে নির্বাচনী হাওয়া


শহিদুল ইসলাম photo শহিদুল ইসলাম
প্রকাশিত: ৬-১০-২০২২ দুপুর ১১:৪৮

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে নিজেদের মধ্যে একটা ‘ঐক্য গড়ার’ চেষ্টা করছেন ইসলামিক দলগুলোর নেতারা। ইতোমধ্যে ঐক্য গড়ার চেষ্টায় বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক দলের নেতারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সভা ও সংবাদ সম্মেলনে তারা জোট গঠনের বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন। তবে কোন কোন দল নিয়ে ইসলামি দলগুলোর জোট গঠন হচ্ছে তা এখনো সুস্পষ্ট হয়নি। আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য ইসলামিক দলগুলো ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। দলের অভ্যন্তরের নানান ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

ধর্মভিত্তিক দলের কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনী ঐক্য গড়ার উদ্যোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আগামী নির্বাচন কীভাবে হবে- নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, নাকি সরকারের ধরাবাঁধা পদ্ধতিতে, সেটি এখনো দলগুলোর কাছে পরিষ্কার নয়।ইসালমিক বিভিন্ন দলের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে ইসলামি দলগুলোকে এক জায়গায় আনার প্রথম উদ্যোগটি আসে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে। এ লক্ষ্যে তারা ইতোমধ্যে খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম পার্টি (একাংশ), মুসলিম লীগসহ (একাংশ) বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে কথা বলেছে, আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনূস আহমাদ দৈনিক সকালের সময়কে বলেন, ‘জোট গঠনের সময় এখনো আসেনি। আমরা বিভিন্ন ইসলামিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টায় আছি। তাদেরকে আমরা কাছে আনার চেষ্টা করছি, আমরাও তাদের কাছে যাচ্ছি। পরস্পর মতবিনিময়ের মাধ্যমে আমরা একটা প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার চেষ্টা করছি । সেটা জোট হোক কিংবা সমঝোতা হোক - আমরা যেন কাছাকাছি অবস্থানে থাকতে পারি সেই চেষ্টা করছি। আলোচনা হচ্ছে, সামনে আরও আলোচনা হবে। আমরা সম্মিলিতভাবে একটা অবস্থানে যেতে চেষ্টা করে যাচ্ছি।’ইভিএম বাতিল, স্বচ্ছ নির্বাচন কমিশন, নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ একটি সরকারের অধীনে নির্বাচন চান তারা। আগের নির্বাচনগুলোর মতো নির্বাচন হলে তারা অংশগ্রহণ করবেন না বলেও তিনি জানান।

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ইসলামপন্থী দলের সংখ্যা ১০। এর মধ্যে পাঁচটি দল একসময় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটে থাকলেও বিভিন্ন সময় তারা বের হয়ে গেছে। মূলত এই দলগুলোকে নিয়েই একটি নির্বাচনী সমঝোতার চেষ্টা হচ্ছে। দলগুলো হচ্ছে প্রয়াত শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, মুফতি আমিনীর দল ইসলামী ঐক্যজোট, মুহাম্মদ ইসহাক ও আহমদ আবদুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস, শায়খ যিয়াউদ্দিন ও মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীর নেতৃত্বাধীন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও আতাউল্লাহ হাফেজ্জীর বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। এর বাইরে আছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। কওমি মাদ্রাসাগুলোর ছাত্র-শিক্ষার্থীদের মধ্যে মূলত এই কটি দলের প্রভাব রয়েছে।

এর বাইরে নিবন্ধিত ইসলামপন্থী অন্য দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক। এ ছাড়া ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ (বাহাদুর শাহ), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট (এম এ মতিন) ও জাকের পার্টিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে। আওয়ামী লীগের বাইরে গিয়ে এই দলগুলোর অন্য কোনো জোটে বা নির্বাচনী সমঝোতায় যাবে- এমন সম্ভাবনা খুব একটা নেই। অবশ্য এম এ মতিনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট নির্বাচনে ইভিএমের বিরোধিতা করেছে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে।কয়েকটি দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় প্রতিটি দলই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সাংগঠনিক প্রস্তুতি, প্রার্থী বাছাই এবং সর্বোপরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে কী কী সুবিধাপ্রাপ্তি নিশ্চিত হবে, এ নিয়েও রাজনৈতিক কৌশল প্রণয়ন করছেন নীতিনির্ধারণী নেতারা।

আগামী বছরের ডিসেম্বরে, নয়তো ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। এখন থেকেই ধর্মভিত্তিক ইসলামি দলগুলো নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে। ইসলামী আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও ইসলামী ঐক্যজোট প্রার্থী বাছাইও প্রায় শেষ করেছে।নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসলামিক দলগুলো: জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলছেন, ‘জমিয়ত নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। আমরা সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এসেছি। স্থানীয় নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেছি।’খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, ‘এই মুহূর্তে ইসলামি দলগুলো বড় দুটি দলের সঙ্গে নেই। তাই আমাদের মধ্যে একটা চিন্তা হচ্ছে, পারস্পরিক দূরত্ব কমিয়ে আগামী নির্বাচনে একটা সমঝোতায় আসা গেলে আমরা ভালো করব। সবার মধ্যেই এ ধরনের একটা আলোচনা আছে।’

নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে বিএনপি-জোট ছেড়ে আসা খেলাফত মজলিস। দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক বলেন, ‘যদি এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়, তাহলে আমরা যাবো না। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হলে যাবো। ইসি যদি নিরপেক্ষ হয় তাহলে যাবো। যদিও এই নির্বাচন কমিশন সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে।’ইসলামী ঐক্যজোটের একটি প্রভাবশালী সূত্র জানায়, কিছু আসনের জন্য প্রার্থী বাছাই কার্যক্রম শুরু করেছে ইসলামী ঐক্যজোট। সারা দেশে প্রার্থী দেওয়ার মতো পরিস্থিতি না থাকায় কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা নিজেদের পছন্দমতো আসনে প্রার্থিতা ও বিজয়ী হওয়ার নিশ্চয়তা চায় মাত্র। দলের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়াও চলমান। কতগুলো আসনে নির্বাচন করবো, সেটা নির্ভর করছে সামগ্রিক পরিস্থিতির ওপর।’

ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠতা রেখে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে জাকের পার্টি। এই দলটি ২০১৮ সালে ৯১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সে সংখ্যাটি আরও বাড়তে পারে, এমন ইঙ্গিত রয়েছে দলটির পক্ষ থেকে।দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শামীম পাটোয়ারী বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে। তবে নির্বাচনে আমরা একক না জোটগত করবো, সেটা এখনো নির্ধারণ হয়নি। ২০১৮ সালের ৯১টি আসনে গোলাপ ফুল প্রতীক নিয়ে জাকের পার্টি নির্বাচন করে। এ বছর সেই সংখ্যাটা বাড়তে পারে। আমাদের প্রস্তুতি ভালো, প্রার্থী বাছাই কার্যক্রম চলছে।’

বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির নির্বাহী সভাপতি ও জাতীয় সংহতি মঞ্চের প্রধান সমন্বয়কারী মাওলানা একে এম আশরাফুল হক বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে নির্বাচনের বিকল্প নেই। সুতরাং দেশে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারা সুসংহত করতে আমরা সব সময়ই নির্বাচনমুখী রাজনীতি করে আসছি। গত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে প্রশ্ন সৃষ্টি হওয়ায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আমরা শঙ্কিত।’ সব রাজনৈতিক দলকে আস্থায় নিয়ে এসে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনি পরিবেশ তৈরির দাবি জানান আশরাফুল হক।

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে মাইজভাণ্ডারিভিত্তিক দল বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি। দলটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নেতাকর্মীদের নির্বাচনমুখী করতে নানা কর্মসূচি পালন করছে। দলটির চেয়ারম্যান সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারি বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর। সকল দলের অংশ গ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান মাওলানা ফরীদউদ্দীন মাসঊদ। তিনি বিগত কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও আগামী নির্বাচনে তার দলের কেউ কেউ অংশগ্রহণ করতে পারে, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন একজন প্রভাবশালী নেতা।

নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। দলটির নতুন নির্বাচিত আমির এম এ মতিন বলেন, ‘আমরা নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। আমাদের অবস্থান নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে। বিগত কিছু সময় আগে আমাদের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা ছিল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে, প্রার্থী বাছাই করার জন্য। এখন যেহেতু নতুন কমিটি হয়েছে তাই আগে আমরা আমাদের ঢাকার অফিস পুরোদমে চালু করার পর এ বিষয়টিতে সিদ্ধান্ত নেবো। গত নির্বাচনে আমরা ২৭ আসনে প্রার্থিতা দিয়েছিলাম।’

 

এমএসএম / এমএসএম

দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র তীব্রভাবে ক্রিয়াশীল হচ্ছে : রিজভী

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে আর কোনও সংশয় নেই

নিবন্ধন পেল লেবার পার্টি, প্রতীক আনারস

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে আরেকটি ফ্যাসিস্ট সরকার তৈরি হতে পারে

চাপে এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দিতে সাহস পাচ্ছে না নির্বাচন কমিশন

আগামী নির্বাচনে বিএনপিই রাষ্ট্রক্ষমতায় যাবে : আমান উল্লাহ আমান

কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দেশে ফিরছেন তারেক রহমান

কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তারেক রহমান দেশে ফিরবেন: ডা. জাহিদ

মির্জা ফখরুল বিদেশি কোনো গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেননি : বিএনপি

তরুণদের উদ্বুদ্ধ করে রাজপথে নামিয়েছিলেন তারেক রহমান : রিজভী

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অজয় কর গ্রেপ্তার

শাপলা প্রতীক পাচ্ছে না এনসিপি

বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে : রিজভী