চলমান জ্বালানি সংকটের সমাধান

হঠাৎ বিদ্যুৎ সংকটে গোটা দেশ। চাহিদামতো জ্বালানির জোগান নেই শিল্প কারখানায়। কৃষিখাতে উৎপাদন ব্যয় বাড়ার শঙ্কায় আছেন কৃষক। নিত্যপণ্যের অতিরিক্ত দামের ধাক্কায় ইতোমধ্যে বিপর্যস্ত সাধারণ মানুষের জীবন। চলমান এই জ্বালানি সংকট থেকে উত্তোরণের পথ কি? এই প্রসঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য আবু ফারুক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দৈনিক সকালের সময় এর যুগ্ম সম্পাদক- ফয়েজ রেজা
প্রশ্ন: হঠাৎ করেই দেশে তীব্র জ্বালানি সংকট। এই সংকটের কারণ কি?
উত্তর: পৃথিবীর যেকোনো দেশের অর্থনীতির অগ্রগতির প্রধান চালিকাশক্তি জ্বালানি খাত। জ্বালানি ছাড়া শিল্প প্রতিষ্ঠান বিকাশ সম্ভব নয়। বর্তমান সময়ে বিশ্বের সকল দেশের রাষ্ট্রপরিচালক থেকে শিল্প উদ্যোক্তা, প্রত্যেকেই বিষয়টি নতুন করে অনুধাবন করছে। আমাদের দেশে সরকার স্বাধীনতার পর থেকে জ্বালানি খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। এই কাজে সহযোগিতা করার জন্য নতুন কূপ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কাজ নবায়ন করছে। আমাদের দেশে জ্বালানির গুরুত্ব বেশি হওয়ার কারণ, আমাদের দেশে শিল্প বিকশিত হতে শুরু করেছে স্বাধীনতার পর থেকেই। বর্তমান সরকারও দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য জ্বালানি খাতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। বিগত কয়েক দশকে বিদেশ থেকে অনেক বিনিয়োগকারী এসেছে বাংলাদেশে। শিল্প কারখানায় জ্বালানির ব্যবহার বেড়েছে। সরকারের লক্ষ্য ছিল দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি হয়ে গেছে। বিগত কয়েক দশকে প্রতি বছর গড়ে ৮ থেকে ১০ শতাংশ বিদ্যুতের গ্রোথ হয়েছে। বর্তমানে আমাদের দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান দুটি উৎস- গ্যাস ও ডিজেল।
আন্তর্জাতিক বাজারে শুধুমাত্র ইউক্রেনের সাথে রাশিয়ার চলমান যুদ্ধ এবং নানাবিধ কারণে একদিকে জ্বালানির মূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে, বেড়েছে আমদানি খরচ। অন্যদিকে আমাদের দেশিয় গ্যাস উত্তোলন অভ্যন্তরীণভাবে বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। যার কারণে সরকার সকল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখার জন্য এবং সবগুলো উন্নয়ন খাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অধিকমূল্যে এলএনজি আমদানি করে দেশিয় গ্যাসের সাথে মিশিয়ে সরবরাহ করতে বাধ্য হচ্ছে।
বর্তমানে সরকার কাতার ও ওমান থেকে ৩৫ বছরের দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তিতে এলএনজি আমদানি করছে। অন্যদিকে স্পট মার্কেট থেকে ক্রয় করছে। গত জুন মাস থেকে স্পট মার্কেটে আমদানি মূল্য মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেছে। ফলে সরকার বাধ্য হয়ে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমাদানি আপাতত স্থগিত রেখেছে। এই ঘাটতি এখন আমাদের জ্বালানি বিশেষ করে গ্যাসে চরম আকার ধারণ করেছে। ফলে দেখা যাচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পিডিবিকে গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বিঘ্ন ঘটছে।
প্রশ্ন : বর্তমান জ্বালানি সংকট সমাধানে সাধারণ মানুষ সরকারকে কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে?
উত্তর: বর্তমান যে জ্বালানি সংকট, তা শুধুমাত্র আমাদের নিজস্ব সংকট নয়। এই সংকটে জর্জরিত গোটা পৃথিবীর মানুষ। তা মানুষ ইত্যোমধ্যে জেনে গেছে। এই সমস্যা থেকে উত্তোরণের জন্য অগ্রাধিকার খাতে জ্বালানি সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করতে হবে। বিশেষ করে রপ্তানী শিল্প কারখানায় সব সময় সচল রাখার জন্য যা করণীয়, তা করতে হবে। রপ্তানী খাতের শিল্প প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সুবিধা প্রদানের উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে আমাদের রপ্তানী খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং এর কারণে আমাদের বৈদেশিক আয় বাধাগ্রস্ত হতে পারে। যতটুকু সম্ভব অপচয় রোধ করতে হবে। অবৈধ সংযোগ যা আছে, তা বন্ধ করতে হবে। সরকার কৃচ্ছতা সাধনের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা অনুসরণ করতে হবে।
প্রশ্ন: দেশে এরকম জ্বালানি সংকট হতে পারে, এমন কোনো ধারণা কি আপনাদের আগে থেকেই ছিল?
উত্তর: আমাদের মতো অনেক দেশ জ্বালানি সংকটে ভুগছে। অনেক দেশ জ্বালানি সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারেনি শুধুমাত্র তাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতার অভাবে। বর্ধিত মূল্যে প্রয়োজনীয় জ্বালানি করতে না পেয়ে তারা তাদের দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে পারছে না। এর প্রধান কারণ, তারা অনুমান করতে পারেনি হঠাৎ জ্বালানি খাতে এমন বিপর্যয় আসতে পারে। ফলে অনেক দেশ হঠাৎ বিপদে পড়েছে। আমাদের দেশের সরকার বিষয়টি পূর্ব থেকেই পর্যবেক্ষণে রেখেছিল, সে কারণে আমরা পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় একটু সুবিধাজনক অবস্থানে আছি।
প্রশ্ন: এই সংকটের সময়েও দেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক রাখার জন্য কি করা দরকার?
উত্তর: জ্বালানি সংকটে পড়ার আগেই আমাদের সরকার আগাম কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। তাই আমাদের অর্থনীতিতে এখনো তেমন অস্বাভাবিক অবস্থা তৈরি হয়নি। তবে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে, আমাদের কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা যেনো কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়। সেদিকে জোর দিতে হবে। সারা পৃথিবীতেই খাদ্য স্বল্পতা ও দুর্ভিক্ষের একটি আভাস সবাই দিচ্ছে। এটি থেকে রক্ষা করতে হবে আমাদের দেশকে। কৃষিখাতে উৎপাদন সচল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। পৃথিবীর যেসব দেশ বেশি সমস্যাগ্রস্ত সেসব দেশের পণ্য উৎপাদন ব্যাহত হবে। বর্তমান বিশ্বে এক দেশের সমস্যার প্রভাব পড়ে অন্য দেশেও। সে জন্য আমাদের এখন থেকেই সতর্ক থাকতে হবে।
প্রশ্ন: সরকার তার রাজনৈতিক অঙ্গীকার অনুযায়ী দেশকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় এনেছে। প্রশ্ন হচ্ছে দেশের মানুষ তো এখন সেই সুবিধা পাচ্ছে না। সরকারের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ কি?
উত্তর: দীর্ঘ ৩ বছরের করোনা এবং সাম্প্রতিক রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধসহ চলমান ঘটনা প্রবাহের কারণে পৃথিবীর প্রায় সব দেশের মতো বাংলাদেশও আর্থিক চাপের মধ্যে আছে। ফলে আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে এই বৈশ্বিক সমস্যা থেকে উত্তোরণ। সরকার যদি চলমান বৈশ্বিক সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারে, আবারও শতভাগ বিদ্যুতায়নের সুবিধা পাবে বাংলাদেশের মানুষ। বর্তমান চাপ কাটিয়ে টিকে থাকাই মূল লক্ষ্য। এর জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের একসাথে কাজ করতে হবে। এই সংকটকালে অনুৎপাদনশীল খাতে অর্থ জোগান ও ব্যয় করা যাবে না। আমদানি খাতে ব্যয় কমাতে হবে। রপ্তানী খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। কৃষি উৎপাদনের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। বাজার ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সর্বোপরি মুদ্রাস্ফীতিকে সহনীয় পর্যায়ে রাখা সরকারের চ্যালেঞ্জ।
এমএসএম / এমএসএম

পূবালী ব্যাংকে শেখ হাসিনার লকার জব্দ

বরবটি-করলার সেঞ্চুরি, কাঁচা মরিচের ডাবল সেঞ্চুরি

ব্রয়লার ১৬৫, ভরা মৌসুমেও ইলিশের দাম চড়া

৩০ বছর পর মাতারবাড়ী-মহেশখালীকে সাংহাই-সিঙ্গাপুরের মতো দেখতে চাই

এলপি গ্যাসের দাম কমলো ৩ টাকা

সবজির পর দাম বেড়েছে মুদি পণ্যের, চড়বে আলুর বাজারও

চট্টগ্রাম বন্দরে জট কমাতে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা ১০০০ কনটেইনার বিক্রি

ডিজিটাইজেশন না হওয়ায় সময়ের কাজ সময়ে হয় না: এনবিআর চেয়াম্যান

ন্যূনতম কর একটা কালাকানুন: এনবিআর চেয়ারম্যান

শাহজালালে নারী যাত্রীর লাগেজ থেকে ১৩০ কোটি টাকার কোকেন জব্দ

চট্টগ্রাম বন্দরে মাশুল বাড়বে ৪১ শতাংশ, বৈঠকে বসছে নৌ মন্ত্রণালয়

ইলিশের দেখা মিললেও দামে হাত পোড়ার জোগাড়
