সক্ষমতা বাড়াচ্ছে টিসিবি
বাজারে নিত্যপণ্যের চড়া দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নিম্ন আয়ের ১ কোটি পরিবারের কাছে স্বল্পমূল্যে খাদ্যপণ্য সরবরাহ করছে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ, টিসিবি। এরপরেও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না নিত্যপণ্যের বাজার। সাধারণ মানুষ আয়ের সাথে সমন্বয় করতে পারছে না ব্যয়ের। এই সময়ে অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষণে যে মহামন্দার আভাস পাওয়া যাচ্ছে, খাদ্যপণ্যের সংকট সমাধানে টিসিবি’র প্রস্তুতি কেমন? এবং সাধারণ মানুষের যাপিত জীবনের উন্নয়নে তা কিভাবে সহযোগিতা করবে? দৈনিক সকালের সময়ের কাছে তা তুলে ধরেছেন টিসিবি’র চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান, সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দৈনিক সকালের সময় এর যুগ্ম সম্পাদক- ফয়েজ রেজা
সকালের সময়: সাম্প্রতিক সময়ে টিসিবির উপর সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা বেড়েছে। কিভাবে সমন্বয় করছেন?
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান: বাজার নিয়ন্ত্রণ ও বাজারের দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা টিসিবি সরকারের একটি টুলস হিসেবে কাজ করে। বাজারে যখন কোনো নিত্য পণ্যের ঘাটতি তৈরি হয় এবং ঘাটতি থাকার কারণে কোনো পণ্যের দাম যদি বেড়ে যায়, তখন সরকারের পক্ষ থেকে টিসিবি সেই পণ্য সংগ্রহ করে বাজারে পণ্যের সহজপ্রাপ্তি নিশ্চিত করে। আগে রমজান মাসে বাজারে পণ্যের দাম হঠাৎ বেড়ে যেত, তখন টিসিবি রমজান মাসে বাজারে পণ্য সরবরাহ করার কাজেই সীমাবদ্ধ ছিলো।
সাম্প্রতিক সময়ে বৈশি^ক নানা কারণে প্রয়োজনীয় নিত্য পণ্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। তাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে টিসিবি বছরব্যপী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নিম্ন আয়ের মানুষদের সহায়তার জন্য ১ কোটি পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে দেওয়া হচ্ছে টিসিবির পণ্য। এই কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় গত মার্চ মাস থেকে টিসিবি নিত্য প্রয়োজনীয় তিনটি পণ্য- তেল, চিনি ও ডাল ভর্তুকি মূল্যে দিচ্ছে ১ কোটি পরিবারকে।
এছাড়াও রমজান মাসে খেজুর ও ছোলাও ভর্তুকি মূল্যে বিক্রয় করে টিসিবি। বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেলে টিসিবি ভর্তুকি মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করে। গেল ৩ বছরে টিসিবি’র কার্যক্রম অনেক বেড়েছে।
সকালের সময়: বর্তমান চলছে একটি সংকটের মধ্য দিয়ে। সামনে এই সংকট আরও বাড়বে অনুমান করা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য টিসিবি’র প্রস্তুতি কেমন?
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান: টিসিবি ইতোমধ্যে নিম্ন আয়ের ১ কোটি পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে নিত্য পণ্য সরবরাহ করে আসছে । যা মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ। বর্তমানে ১ কোটি মানুষ ভর্তুকি দেওয়া মূল্যে পাচ্ছে টিসিবি’র পণ্য, যা দেশের জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ। পরিকল্পনা অনুযায়ী এই ১ কোটি নিম্ন আয়ের পরিবারকে যদি স্বল্পমূল্যে নিত্যপণ্য সরবরাহ করা যায়, তাহলে খাদ্যপণ্যে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
সকালের সময়: টিসিবি’র পণ্য সংগ্রহ করার জন্য আগে মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখা যেতো? এর কি কারণ আপনার মনে হয়, দেশে নিম্ন আয়ের মানুষের সংখ্যা বেড়েছে?
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান: পৃথিবীর যে কোনো দেশে ২শ গজ দূরে যদি বিশেষ ছাড়ে কোনো পণ্য পাওয়া যায়, তাহলে মানুষ কম দামে সেই পণ্য কেনার চেষ্টা করবে। এটি মানুষের সাধারণ অভ্যাস। আগে যে কোনো মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবি’র ট্রাক থেকে পণ্য সংগ্রহ করতে পারত। তখন টিসিবি.র পণ্য সংগ্রহ করার জন্য মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখা যেতো। বর্তমানে টিসিবি নির্দিষ্ট ১ কোটি পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য দিচ্ছে। তারা তাদের চাহিদা মত টিসিবি’র নির্দিষ্ট ডিলার এর কাছ থেকে নিত্য পণ্য সংগ্রহ করতে পারছে। ফলে টিসিবি’র পণ্য সংগ্রহ করতে মানুষের ভোগান্তি কমেছে। মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্য পণ্য পাওয়ার কারণে টিসিবি’র পণ্য সংগ্রহ করতে আগ্রহী হয়েছে।
সকালের সময়: সাধারণ মানুষের অভিযোগ, টিসিবি নিম্ন মানের পণ্য বিতরণ করে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান: শুধুমাত্র পেঁয়াজের ক্ষেত্রে এমন অভিযোগ আসতে পারে। পেঁয়াজ একটি পচনশীল পণ্য। গোডাউনে দ’ুদিন থাকলে পেঁয়াজে পচন ধরা শুরু করে। গোডাউন থেকে পণ্য যখন ডিলারের কাছে যায়, সেখানে এক দুই দিন থাকে। এজন্যই পেঁয়াজের ক্ষেত্রে একটু সমস্যা হয়। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে এই ধরণের কোনো অভিযোগ নেই। তেল, চিনি, ডাল সবচেয়ে ভালোটাই সরবরাহ করে টিসিবি।
সকালের সময়: গেল ৩ বছরে তেলের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। বিভিন্ন সময় তেলের দাম কমানোর চেষ্টা করলেও টিসিবি দাম কমাতে পারেনি কেন?
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান: বিশ্ব বাজারে তেলের দাম ছাড়াও অন্যান্য ভোগ্য পণ্যের দাম গত ৩ বছর ধরে বেড়েই চলছে। এছাড়াও ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশি দামে তেল আমদানি করতে হচ্ছে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কিছুটা কমলেও ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় অতটা সমন্বয় করা যাচ্ছে না। প্রতি লিটার তেলের দাম ২শ টাকা থেকে কমিয়ে ১৮০ টাকা করা হয়েছে। এটি হয়তো আরও কমতো, যদি ডলারের দাম অতটা না বাড়তো। আমদানিকারক যদি বেশি দামে পণ্য কিনেন, তাহলে অল্পদামে বাজারে বিক্রি করতে পারবেন না। এখানে কারও কিছু করণীয় নেই। বিশ^বাজারের সাথে দাম সমন্বয় করার জন্য দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়াতে হয়েছে।
সকালের সময়: অর্থসংকটের কারণে দেশে যদি নিম্ন আয়ের মানুষের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পায়, তাহলে কি আরও বেশি সংখ্যক পরিবার টিসিবি’র পণ্য কিনতে পারবে?
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান: প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে টিসিবি এখন যে কার্যক্রম পরচিালনা করছে, ভবিষ্যতে যদি নিত্য পণ্যের দাম আরও বৃদ্ধি পায়, তাহলে নিশ্চয়ই টিসিবি নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। ১ কোটি পরিবারকে খাদ্য সরবরাহ একটি বিরাট চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। আমরা আমাদের সাধ্যের মধ্যে যতটুকু সম্ভব তা করার চেষ্টা করছি। সেবার পরিধি যদি বাড়ে এবং সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সেবা প্রদানের জন্য টিসিবি’র জনবল ও মজুদ সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। আগে টিসিবি’র জনবল ছিল ১ হাজার ৪০০ এর উপর। বর্তমানে আমরা কাজ করছি ২৭৫ জন জনবল নিয়ে। তাই জনবল বাড়ানোর প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও মজুদ সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার ও রংপুরে নিজস্ব গোডাউন নির্মাণের কাজ চলছে।
সকালের সময়: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ এবং দৈনিক সকালের সময় এর পাঠকদের জন্য শুভেচ্ছা।
এমএসএম / এমএসএম