জি এম কাদের আপাতত চেয়ারম্যান নন
জাপায় নতুন সঙ্কট

দলীয় কয়েকজন নেতাকে বহিষ্কারের পর জাতীয় পার্টিতে (জাপা) যে সঙ্কট তৈরি হয়েছিল, তা কাটিয়ে উঠছিল দলটি। তাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের নেতৃত্বে দলটি ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রমও থেমে গিয়েছিল। থাইল্যান্ডে চিকিৎসা শেষে রওশন এরশাদ দেশে ফিরে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে এক টেবিলে নাস্তা সারেন। এরপর মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন জাপা চেয়ারম্যান। সেখানেও রওশন এরশাদ উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যদিয়ে দলটির সঙ্কট কেটে গেছে বলে মনে করা হয়। কিন্তু বুধবার আপিল বিভাগের রায়ে দলটি নতুন সঙ্কটে পড়ল। ওই রায়ের আলোকে আইনজীবীরা বলছেন, জিএম কাদের আপাতত জাপার চেয়ারম্যান নন। তবে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলছেন, জিএম কাদের চেয়ারম্যান আছেন। তবে একক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। আপাতত তার এক সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো ইস্যু নেই।
জানা গেছে, জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরের দায়িত্ব পালন-সংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে করা আবেদন নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ বুধবার এই আদেশ দিয়েছেন। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে জাপা থেকে বহিষ্কৃত নেতা ও দলটির সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা আপিল বিভাগে আবেদন করেছিলেন। আপিল বিভাগের আদেশের পর জিয়াউল হক মৃধার আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ বলেন, হাইকোর্ট রুলসহ যে আদেশ দিয়েছিলেন, তা বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ। ফলে জি এম কাদের এখন দলের চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করতে পারছেন না।
সাঈদ আহমেদ বলেন, নিম্ন আদালতের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে জি এম কাদেরের করা আপিল দ্রুত শুনানি করতে বলা হয়েছে। ৯ জানুয়ারি জেলা জজ আদালতে এ-সংক্রান্ত শুনানির তারিখ ধার্য রয়েছে।জি এম কাদেরের আইনজীবী শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, জিয়াউল হক মৃধার করা আবেদন নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে জেলা জজ আদালতে জি এম কাদেরের করা আপিলটি ৯ জানুয়ারি শুনানি করতে বলেছেন আপিল বিভাগ। ফলে জি এম কাদের জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কি-না, তা জানতে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
গত ৪ অক্টোবর জিয়াউল হক মৃধা দলীয় কার্যক্রমে জি এম কাদেরের অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা করেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ অক্টোবর ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত গঠনতন্ত্রের আলোকে জি এম কাদেরকে দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন। এ আদেশের প্রত্যাহার চেয়ে জি এম কাদের একই আদালতে আবেদন করেন; যা ১৬ নভেম্বর খারিজ হয়। এর বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আপিল করেন তিনি। এ আপিলের গ্রহণযোগ্যতার ওপর ৯ জানুয়ারি শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়। এ অবস্থায় শুনানির তারিখ এগোনোর আবেদন করেন জি এম কাদের, সেটি ২৪ নভেম্বর খারিজ হয়। এর বিরুদ্ধে ২৮ নভেম্বর হাইকোর্টে আবেদন (রিভিশন) করেন জি এম কাদের। শুনানি নিয়ে ২৯ নভেম্বর হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। এই আদেশে ৩০ অক্টোবর ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতের দেওয়া অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি স্থগিত করা হয়। তবে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন জিয়াউল হক মৃধা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ নভেম্বর চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। জিয়াউল হক মৃধার করা আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় গত সোমবার আবেদনের ওপর আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানি হয়।
সূত্র জানায়, জাপায় দীর্ঘদিন ধরেই অস্থিরতা চলছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ১৪ সেপ্টেম্বর প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বিরোধী দলীয় চিফ হুইফ মশিউর রহমান রাঙ্গাকে দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেন চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তখনই অস্থিরতা প্রকাশ্যে আসে। বহিষ্কারের পর মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, আমাদের গঠনতন্ত্র অনুসারে চেয়ারম্যান এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে কেন তিনি এটা করেছেন, আমি সেটা জানি না। আমাদের চেয়ারম্যান গঠনতন্ত্র অনুসারে শুধু মেয়ে মানুষকে পুরুষ করতে পারেন না, আর পুরুষকে মেয়ে করতে পারেন না। এর বাইরে তিনি সব করতে পারেন। এ জন্য এ দলকে গণতান্ত্রিক দল বলা যায় না। তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান যার পরামর্শে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাদের কপালে দুঃখ আছে। তবে ব্যক্তিগতভাবে উনি এটা করার কথা নয়। কোনো কারণ ছাড়া এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার পর জাতীয় পার্টি যে গণতান্ত্রিক দল নয়, এ বিষয়টি দলীয় চেয়ারম্যানকে স্বীকার করতে হবে। শুধু রাঙ্গাকে বহিষ্কার করেই ক্ষান্ত হননি জাপা চেয়ারম্যান। রওশন এরশাদকেও বিরোধী দলীয় নেতার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। জি এম কাদেরকে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা করতে স্পিকার বরাবর চিঠি দিয়েছেন দলের সংসদ সদস্যরা। একইসঙ্গে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদকে বিরোধী দলীয় নেতার পদ থেকে সরিয়ে দিতে বলা হয়েছে। জাপা মহাসচিব জানান, জাতীয় পার্টির ২৪ জন সংসদ সদস্য ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। তবে চিঠিতে রওশন এরশাদ ও তার ছেলে সাদ এরশাদ এমপি স্বাক্ষর করেননি। এক প্রশ্নে চুন্নু বলেন, উনি (রওশন এরশাদ) দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। উনি তো সংসদে সময় দিতে পারছেন না।
এর আগে দলের কাউন্সিল আহ্বান করেন রওশন এরশাদ। মূলত এ কাউন্সিল আহ্বান করাকে কেন্দ্র করেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যদিও এ কথা মানতে নারাজ জাপা মহাসচিব মুজিবুুল হক চুনু। তিনি বলেন, সে ঘটনার সঙ্গে এই চিঠির কোনো সম্পর্ক নেই। দীর্ঘদিন ধরেই এমন পদক্ষেপ গ্রহণের চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছিল। তবে হ্যাঁ, দলের গঠনতন্ত্র মতে রওশন এরশাদ কাউন্সিল ডাকতে পারেন না। তাকে না জানিয়ে কাউন্সিল ডাকাকে ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেছিলেন চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জাপায় অস্থিরতা তৈরি হয়। দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বেঁচে থাকতেই দলটিতে অস্থিরতা ছিল। তিনি নানা সময়ে নানাজনকে দল ও পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। আবার অনেককে কাছে টেনে নিয়েছেন। এরশাদ মারা যাওয়ার কিছু দিন আগে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় ছোট ভাই জি এম কাদেরকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে যান। ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই বর্তমান সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা এরশাদ মারা যান। এরপর দলের নেতৃত্ব নিয়ে রওশন এরশাদের সাথে বিরোধ দেখা দেয় জি এম কাদেরের। একই সাথে সংসদে বিরোধী নেতার পদ নিয়েও প্রতিযোগিতা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত দেবর ভাবির মধ্যে সমঝোতা হয়। সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা থেকে নেতা হন রওশন এরশাদ। আর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পদে স্থায়ী হন (২৮ ডিসেম্বর ২০১৯, নবম কাউন্সিলে) জি এম কাদের। অন্য দিকে এরশাদের আসনে ছেলে সাদ এরশাদকে এমপিও বানিয়ে নেন রওশন। প্রায় দুই বছর ছোটখাটো ঘটনা ছাড়া মোটামুটি ঠিকঠাকই চলছিল জাতীয় পার্টি। জি এম কাদেরই চালাচ্ছিলেন দল। প্রধান উপদেষ্টা রওশন এরশাদ সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবেই কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন। বছর খানেক হলো অসুস্থ রওশন এরশাদ। দীর্ঘ দিন ধরে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে চিকিৎসাধীন। মাঝখানে ৮ দিন (২৭ জুন থেকে ৪ জুলাই) ঢাকায় ফিরে আসেন তিনি। যোগ দেন জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে। তবে বাসায় না উঠে রাজধানী তারকা হোটেলে অবস্থান করে নিজ অনুসারীদের নিয়ে বৈঠক করেন রওশন। জি এম কাদের অনুসারীরা অভিযোগ করছেন, বছর খানেকের বেশি হলো পার্টি চেয়ারম্যান সরকারের নানা নেতিবাচক কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনা করে আসছেন। আগামী নির্বাচন নিয়েও অনেকটা মাঠের বিরোধী দল বিএনপির সুরেই কথা বলছেন জি এম কাদের। আর এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হন দলের সরকারপন্থী হিসেবে পরিচিতরা। তারাই অসুস্থ রওশন এরশাদকে দেশে এনে ওয়েস্টিন হোটেলে জাতীয় পার্টির ব্যানারে সভা ডাকেন। যদিও ওই বৈঠকে জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত এবং পদ হারানো নেতারা ছাড়া কেউ যোগদান করেননি। এমনকি রওশন ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সিনিয়র নেতাদেরও দেখা যায়নি বৈঠকে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিরোধীদলীয় নেতাকে দেখতে পর্যন্ত যাননি জি এম কাদের- এমন অভিযোগ রওশন পন্থীদের। ক্ষোভ ও অভিমান নিয়েই ফের চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে যান তিনি। তবে হঠাৎই ৩১ আগস্ট জাতীয় পার্টির ১০ম জাতীয় কাউন্সিলের ডাক দেন রওশন এরশাদ। নিজেকে আহ্বায়ক ঘোষণা করে ২৬ নভেম্বর কাউন্সিল করার জন্য ৮ সদস্যের এই কমিটি ঘোষণা করেন। যাতে তার রাজনৈতিক সচিব সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহকে সদস্যসচিব করা হয় এবং জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, আবু হোসেন বাবলা, সালমা ইসলাম ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। যদিও পরে এই নেতারা জানান, তাদের সাথে আলাপ করে এই কমিটি করা হয়নি। ওই দিন রাতেই জাতীয় পার্টি থেকে বিবৃতিতে বলা হয়, রওশন এরশাদ দলের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কাউন্সিল আহ্বান করতে পারেন না। আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই পরে দলছুট এবং পদ হারানো নেতাদের নিয়ে আরেকটি আহ্বায়ক কমিটি (কাউন্সিল) করেন রওশন এরশাদ। এ অবস্থায় গত ১ সেপ্টেম্বর সংসদীয় কমিটির বৈঠক করে রওশন এরশাদকে বাদ দিয়ে জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করার জন্য স্পিকারকে চিঠি দেয়া হয়।
বর্তমান সঙ্কট ইস্যুতে কথা হয় জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর সাথে। তিনি বলেন, জাপায় কোনো সঙ্কট নেই। তিনি (জিএম কাদের) চেয়ারম্যান আছেন। তবে একক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। বিষয়টি তারা আইনীভাবে মোকাবেলা করবেন। হাইকোর্ট দ্রুত নিম্ন আদালতে শুনানি করতে বলেছেন। ৯ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য আছে।
এমএসএম / এমএসএম

শোকজের জবাব দেবেন বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান

কাঠামোগত পরিবর্তন না এলে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করব: নাহিদ ইসলাম

খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে ফিরোজায় পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী

পাঞ্জাবি পরা একজন আমাকে প্রথমে ধাক্কা দিয়েছেন : রুমিন ফারহানা

বিএনপির আ.লীগ বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা : হাসনাত আবদুল্লাহ

রাষ্ট্রের সিস্টেমটাই হয়ে গেছে ‘দখলের’ : মির্জা ফখরুল

নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদের আইনী স্বীকৃতি দিতে হবে, সংস্কার না করে পুর্বের নিয়মে নির্বাচন হতে পরে না-পীর সাহের চরমোনাই

যারা নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছে তারা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি নয়

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে গণতন্ত্র ফিরবে না: আনিসুল ইসলাম মাহমুদ

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সতর্ক থাকতে বললেন গয়েশ্বর

এনসিপির নেতার কথোপকথন ভাইরালঃ ‘দেখো আরও পাঁচ লাখ নিতে পারো কি না’

দল নিবন্ধনের প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এনসিপিসহ ১৬ দল
