বিইআরসিতে আসতে চান পেট্রোবাংলার আইয়ুব খান চৌধুরী

নিয়োগ সংক্রান্ত বাছাই কমিটির আহ্বায়ক সদস্য নিয়োগের জন্য দরখাস্ত আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন’। ১৫ জানুয়ারি ছিলো আবেদনের শেষ তারিখ। ওই বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বিআইআরসি’র সদস্য পদে নিয়োগ লাভের জন্য পেট্টোবাংলার অবসরপ্রাপ্ত পরিচালক (প্ল্যানিং) আইয়ুব খান চৌধুরী। যার বিরুদ্ধে জালিয়াতি, দুর্নীতি আর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
ঘটনা ১: বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৪ মেট্টিক টন কয়লা কথিত ‘চুরি যাওয়া’র অবতারণা করেন আইয়ুব খান চৌধুরী। স্বাভাবিক সিস্টেম লসকে তিনি ‘চুরি’ দেখিয়ে বিষয়টি প্রথমে কৌশলে মিডিয়ায় আনেন তিনি। পরে প্রতিষ্ঠানটিতে তার অনুগত ম্যানেজার (প্রশাসন) মোহাম্মদ আনিছুর রহমানকে দিয়ে মামলা করান। মামলাটি তদন্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
এ মামলায় ২০২১ সালের ১২ জানুয়ারিতে কারাগারে যান প্রতিষ্ঠানটির সাবেক এমডি মো. আব্দুল আজিজ খান, প্রকৌশলী খুরশিদ আলম, প্রকৌশলী কামরুজ্জামান, মো. আমিনুজ্জামান, প্রকৌশলী এসএম নুরুল আওরঙ্গজেব ও প্রকৌশলী হাবিব উদ্দীন আহমেদ।
এছাড়া সাবেক মহাব্যবস্থাপক (জিএম) শরিফুল আলম, মো. আবুল কাশেম প্রধানিয়া, আবু তাহের মো. নুরুজ্জামান চৌধুরী, ব্যবস্থাপক মাসুদুর রহমান হাওলাদার, মো. আরিফুর রহমান ও সৈয়দ ইমাম হাসান, উপ-ব্যবস্থাপক মো. খলিলুর রহমান, মো. মোর্শেদুজ্জামান, মো. হাবিবুর রহমান, মো. জাহিদুর রহমান, সহকারী ব্যবস্থাপক সত্যেন্দ্র নাথ বর্মন, মো. মনিরুজ্জামান, কোল হ্যান্ডেলিং ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপক মো. সোহেবুর রহমান, উপ-মহাব্যবস্থাপক এ কে এম খাদেমুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক অশোক কুমার হাওলাদার ও উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জোবায়ের আলী।
মামলাটির চার্জশিট দাখিল হওয়ার পর প্রচন্ড মানসিক চাপে বড়পুকুরিয়ার সাবেক এমডি মাহবুবুর রহমান মারা যান। যাদেরকে এ মামলার আসামি করা হয়েছে তাদের অধিকাংশই ছিলেন সৎ। শুধুমাত্র আইয়ুব খান চৌধুরীর রোষানলে পড়ে আসামি হয়েছেন তারা। অথচ যার হাত দিয়ে বড়পুকুরিয়া প্রকল্পের অর্থ খরচ হয়েছে, যিনি বিল পেমেন্ট করেছেন সেই আব্দুল মান্নান পাটোয়ারিকে স্পর্শও করা হয়নি। মান্নান পাটোয়ারি ছিলেন বড়পুকুরিয়ার তৎকালিন মহাব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব)র দায়িত্বে। ‘নন-টেকনিক্যাল’ লোক হওয়া সত্ত্বেও ফিন্যান্সে পড়াশুনা করা মান্নান পাটোয়ারিকে ২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারি পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লি. এর (পিজিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে বসান আইয়ুব খান।
ঘটনা ২: পেট্টোবাংলার অধীন কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. এর তৎকালিন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আইয়ুব খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে নিজ দুই পুত্রসহ ৩৭ জনকে ভুয়া নিয়োগ প্রদান, পদোন্নতি প্রদান এবং কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লি. কোম্পানির জমি ক্রয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ২০১৮ সাল থেকে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক (স্মারক নং- ০০.০১.১৫০০.৬২২.০১.১২৬.১৮)। ভুয়া নিয়োগ এবং পদোন্নতির অভিযোগটি অনুসন্ধান করে সংস্থার সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ (চট্টগ্রাম-২’র ই/আর নং-২৬/২০১৮)। দুই বছরের বেশি অনুসন্ধানে অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি, প্রতারণা এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অকাট্য প্রমাণ মেলে। এ প্রেক্ষিতে আইয়ুব খান চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্টদের অপরাধের ফিরিস্তিসহ তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি’র ২০১/৪০৯/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় মামলা রুজুর সুপারিশ করা হয়।
ঘটনা ৩: নাম প্রকাশ না করার শর্তে পেট্রোবাংলার একাধিক কর্মকর্তা জানান, দুর্নীতির মাধ্যমে আইয়ুব খান চৌধুরী অন্তত ৩শ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। অবৈধ নিয়োগ, ঘুস বাণিজ্য, অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদান, ভবন নির্মাণ ও জমি ক্রয় দেখিয়ে তিনি পেট্টোবাংলা থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বিভিন্ন কনস্ট্রাকশনের কাজে ঠিকাদারদের কাছ থেকে বিল আটকে হাতিয়ে নিতেন অর্থ। ‘ইমারসন’ নামক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় পরবর্তীতে তিনি প্রতিষ্ঠানটির অনেক ক্ষতি করেন। তবে অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ তার এক শ্যালক (যুক্তরাজ্য প্রবাসী) এর মাধ্যমে সুইসব্যাংকসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেছেন। রাজধানীর খিলগাঁওয়ে রয়েছে বহুতল আবাসিক ভবন, এটি তার আয়কর নথিতে অপ্রদর্শিত। তার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করলে দ্রুত ট্যাক্স দিয়ে ৬ কোটি কালো টাকা তিনি ‘হোয়াইট’ করেন। পরবর্তীতে এই ট্যাক্সফাইল দুদক গ্রহণ করে তাকে দায়মুক্তি দেয়।
ঘটনা ৪: একাধিক সূত্র বলছে, আইয়ুব খান চৌধুরীকে বিইআরসি’র সদস্য পদে নিয়োগ নিয়ে দেয়ার ‘ঠিকাদারি’ নিয়েছেন জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা। বহুমাত্রিক দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত আইয়ুব খান দুর্নীতি দমন কমিশন থেকেও দায়মুক্তির সনদ সংগ্রহ করেছেন। দুদকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম নিবাসী দুদকের একজন মহাপরিচালক তাকে দায়মুক্তির মাধ্যমে পথ পরিষ্কার করে দেন। ফলে আইয়ুব খান চৌধুরী ও তার দোসরদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অকাট্য প্রমাণ পেয়েও মামলা করেনি কমিশন। উল্টো মামলার সুপারিশকারী কর্মকর্তা উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফউদ্দীনকে চাকরিচ্যুত করে।
ঘটনা ৫: কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. (কেজিডিসিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকাকালে প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগ বাণিজ্য এবং জমি ক্রয় বাবদ হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। আইয়ুব খান অবসরোত্তর ছুটিতে গেলেও কর্ণফুলী গ্যাসের জিএম (প্রশাসন) পদে বসিয়ে রেখে যান বিশ্বস্ত কালেক্টর ফিরোজ খানকে। এছাড়া তার মদদপুষ্ট দুর্নীতিবাজ অনেক কর্মকর্তাকেই পেট্টোবাংলার অধীনস্থ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। পদ-পদবি হারিয়ে অবসরে যাওয়া এই কর্মকর্তা এখনো বসে নেই। এরই অংশ হিসেবে তিনি এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য পদে বসতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। এ জন্য লগ্নি করেছেন কোটি কোটি টাকা।
ঘটনা ৬: ভুক্তভোগী প্রকৌশলী আতিকুজ্জামান, বাপেক্স’র এমডি মীর আব্দুল হান্নান, রূহুল চৌধুরী, মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্পের এমডি প্রকৌশলী ফজলুর রহমান, তিতাসের আলী নূর মো. মামুন জানান, তার দায়িত্বপালনকালে পেট্টোবাংলার প্রায় সবগুলো নিয়োগে তিনি জালিয়াতির আশ্রয় নেন। তার আগে নিয়োগপ্রাপ্ত অনেক সিনিয়র কর্মকর্তাকে নানা কৌশলে দমন করে নিজের পদোন্নতির পথ পরিষ্কার করেন। যে কারণে তার সিনিয়র অনেক কর্মকর্তা ম্যানেজার কিংবা ডিএমডি হয়ে পড়ে থাকলেও তর তর করে উঠে যান পরিচালক (প্ল্যানিং) এর মতো পদে। অবসরে যাওয়ার পরও আইয়ুব খান কর্ণফুলি থেকে তুলতেন নিয়মিত মাসোহারা।
ঘটনা ৭: ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কর্ণফুলীর বিপণন দক্ষিণ ডিভিশনের মহা-ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আমিনুর রহমান, ফিরোজ খান একাধারে ছিলেন কর্ণফুলীর মহা-ব্যবস্থাপক এবং কোম্পানি সেক্রেটারি। শফিউল আজম প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক (বিপণন, উত্তর ডিভিশন)। তাদের মাধ্যমে আইয়ুব খান আবুল খায়ের গ্রুপসহ চট্টগ্রামের বহু বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদান এবং মিটার টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। শিল্পপ্রতিষ্ঠানে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে তিনি বড় বড় শিল্পপতি এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। কর্ণফুলীর ডেপুটি ম্যানেজার (ডিপ্লোমা প্রকৌশলী) মোর্শেদুল ইসলাম আইয়ুব খান চৌধুরীর সঙ্গে থাকতেন অনেকটা দেহরক্ষীর মতো। তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করে মামলার সুপারিশ করা হলেও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সেটি ধামাচাপা দেয়।
ঘটনা ৮: সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তোফায়েল আহমেদ আইয়ুব খান চৌধুরীর আজ্ঞাবহ লোক। এখান থেকেও তিনি নিয়মিত তুলছেন মাসোহারা। গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লি. (জিটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী রুখসানা নাজমা ইছহাক একবার আইয়ুব খান চৌধুরীর নামে রিপোর্ট করেন। সেটির ওপর তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়। ওই রিপোর্টের প্রেক্ষিতে পেট্টোবাংলার বর্তমান চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) নাজমুল আহসান আইয়ুব খান চৌধুরীর বিষয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে তার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিতে উদ্যত হন। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে ঘুরে এসে রহস্যজনক কারণে তিনি নমনীয় হয়ে যান।
ঘটনা ৯: অভিযোগ আছে, নিজের ফায়দা লুটতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ব্ল্যাকমেইল করেন আইয়ুব খান চৌধুরী। পেট্টোবাংলার বর্তমান চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান যোগদানের পর তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উদ্যত হন। বিষয়টি টের পেয়ে যান তিনি। নাজমুল আহসানের সাথে সাক্ষাত করে আইয়ুব খান চৌধুরী এবং কর্ণফুলী গ্যাসের এক কর্মকর্তা। এরপর থেকে আইয়ুব খান চৌধুরী ইস্যুতে চুপসে যান পেট্টোবাংলার চেয়ারম্যান। সামনে পদোন্নতি। অতিরিক্ত সচিব থেকে সচিব হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে নাজমুল আহসানের। সূত্র বলছে, নাজমুল আহসানকে ব্ল্যাকমেইল করেছেন আইয়ুব খান চৌধুরী।
ঘটনা ১০: অভিযোগ রয়েছে কাউকে হুমকি মনে করলে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন আইয়ুব খান চৌধুরী। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই পেট্টোবাংলার চেয়ারম্যান, মন্ত্রণালয় এবং দুদকে বেনামী চিঠি দিয়ে তদন্তের নামে হয়রানি করেন। এ কারণে প্রাপ্যতা সত্ত্বেও তাদের পদোন্নতি এবং এক্সটেনশন হয়নি। কাউকে কাউকে বিভাগীয় শাস্তি দেখিয়ে পদাবনতি ও (ডিমোশন) দিয়েছেন। তার কথা না শোনায় শাস্তি হিসেবে আমির হামজাকে ডিমোশন দেন। পিডি আবু সালেহকে পদাবনতি দেন।
ঘটনা ১১: ২০২০ সালে ২২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের একটি দৈনিকে কর্ণফুলী গ্যাসের ৩৭ ভুয়া কর্মকর্তাকে রাতের আঁধারে পদোন্নতি দেয়ার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়, নিয়োগ পরীক্ষায় ৩৭ কর্মকর্তা ফেল করেন। এদের অনেকের শিক্ষাগত যোগ্যতাও ছিলো না। তবু ১০ বছর আগে ৩৭ জন লোক ‘নিয়োগ’ পেয়েছিলেন সহকারী ব্যবস্থাপক পদে। জালিয়াতি ধামাচাপা দিতে এমনকি তাদেও কোনো নথিপত্রও রাখা হয়নি। এদের নিয়োগ পরীক্ষার কোনো নথি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার খাতার কিছুই পাওয়া যায়নি। কারো কারো সনদও জাল। কেউ কেউ পাশের আগে পাশ দেখিয়ে সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন নিয়োগের সময়। নিয়োগ পাওয়া সেই ‘কমকর্তারা’ গত ১০ বছরে পদোন্নতিও বাগিয়ে নিয়েছেন। এ ঘটনা জেনে তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ঘটনা ১২: কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. মহা-ব্যবস্থাপক (ইঞ্জি. সার্ভিস) মো. সারওয়ার হোসেন ৩৩ দিন এ দায়িত্বে ছিলেন। এ সময় তিনি অসৎ উদ্দেশ্যে দুদকে অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন থাকা অবস্থায় ২০১১ সালে সহকারী ব্যবস্থাপক (সাধারণ) পদের মূল নিয়োগ নথি অসৎ উদ্দেশ্যে বিলুপ্ত করেন। নিয়োগপ্রাপ্ত মো. মহিউদ্দিন চৌধুরীর ব্যক্তিগত নথি জব্দ থাকা অবস্থায় ২০১৫ সালের উপ-ব্যবস্থাপক (কারিগরি) পদের নিয়োগ নথি এবং মো. আশেক উল্লাহ চৌধুরী ও শাপলা দেওয়ানজির ব্যক্তিগত নথি দুদকে জব্দ ছিলো। এ ছাড়া ৩১/১২/২০১৭ ও ৩১/১২/২০১৮ তারিখের রেটিং শীটও। এ অবস্থায় দুদকের ছাড়পত্র ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অনুমোদন ছাড়া সারোয়ার হোসেন আপন ছোট ভাই প্রকৌশলী রফিক খানকে ব্যবস্থাপক থেকে উপ-মহাব্যবস্থাপক পদে পদোন্নতি দেন। ৫৭ জনকে পদোন্নতি প্রদানে সহযোগিতা করেন। এ পদোন্নতিতে কেজিডিসিএল’র উপ-মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) লুৎফুল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রমাণিত হয় অভিন্ন অভিযোগ। ব্যবস্থাপক সুলতান আহম্মেদ নিজেই নিজের পদোন্নতি নিয়েছেন-মর্মে প্রমাণিত হয়।
ঘটনা ১৩: আইয়ুব খান চৌধুরীর ব্যাচের অন্যান্যদের পদোন্নতি প্রদানের ক্ষেত্রে দুদকে ২০১১ সালে নিয়োগ সংক্রান্ত নথি জব্দ থাকার তথ্য গোপন করেন। নিয়োগের মূল নথি গায়েব করেন। তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি’র ২০১/৪০৯/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় মামলা রুজ করা হয়।
ঘটনা ১৪: নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, দুদকে প্রমাণিত জালিয়াতির অভিযোগ থেকে পেট্টোবাংলার অধীন কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. এর সাবেক এমডি আইয়ুব খান চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট ৮ জনকে দায়মুক্তির প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে। দীর্ঘ অনুসন্ধানে অভিযোগের অকাট্য মিললেও অনুসন্ধান কর্মকর্তা বদলিয়ে তাকে দিয়ে লেখানো হয় দায়মুক্তির সুপারিশ। এভাবে অনুসন্ধান প্রতিবেদন ‘উল্টে দেয়া’ বাবদ আইয়ুব খান চৌধুরী দুদকের সুনির্দিষ্ট কিছু কর্মকর্তাদের ‘টেবিল খরচা’ দেন প্রায় ২ কোটি টাকা।
ঘটনা ১৫: নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র বলছে, আইয়ুব খান চৌধুরী ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের মামলায় নিজে কারাভোগ করেন। ফৌজদারি মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও বয়স লুকিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে পেট্টোবাংলায় চাকরি নেন। বেশিরভাগ সময় প্রশাসন ডেস্কে থাকায় সবার প্রোফাইল তার কাছে রয়েছে। এ কারণে তিনি জানতেন কবে কোন কর্মকর্তা পদোন্নতি পাবেন, কে কবে অবসরে যাবেন। তাদেরকে সুপারসিড করে কিভাবে শীর্ষ চেয়ারটিতে বসবেন-এই ছিলো তার ধ্যান-জ্ঞান। তিনি ব্যক্তিগতভাবে একটি অফিস মেইন্টেইন করেন। সেখানে তিনি তার ষড়যন্ত্র সংশ্লিষ্ট বিশেষ ফাইলগুলো কঠোর গোপনীয়তা সংরক্ষণ করেন। চাকরির প্রথম দিন থেকে শুরু করে চাকরির শেষ দিন পর্যন্ত প্রতিটি কাগজ তার কাছে রয়েছে।
তিনি এতটাই প্রতিশোধ পরায়ণ ছিলেন যে, তার উত্থানের পথে যাকেই তিনি হুমকি মনে করতেন তার বিরুদ্ধেই বেনামী চিঠি দিয়ে তদন্তের ফাইল বানাতেন। এমন ব্যক্তিকে তদন্তের দায়িত্ব দিতেন যিনি কথিত অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অপছন্দ করেন। স্বভাবতই তদন্তকারী কর্মকর্তা মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতেই অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে প্রতিবেদন দিতেন। এতে পরিষ্কার হয়ে যেত তার উত্থানে পথের কাঁটা। বেনামী উড়ো চিঠি দিয়ে আইয়ুব খান এভাবে পেট্টোবাংলার বহু কর্মকর্তার ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীদের অনেকেই। অনেককে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করেছেন। অনেককে করেছেন বরখাস্ত। কারাভোগও করেছেন কেউ কেউ।
১৯৯১ সালে পেট্টোবাংলার সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) হিসেবে নিয়োগ নেন আইয়ুব খান চৌধুরী। সেখান থেকে ডেপুটি ম্যানেজার, ম্যানেজার, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর, জেনারেল ম্যানাজার, সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (অ্যাডমিন), কর্ণফুলী গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লি. এর এমডি এবং সর্বশেষ পেট্টোবাংলার পরিচালক (প্ল্যানিং) পদে উন্নীত হন। অবসর-পূর্ব ছুটিতে যান ২০২১ সালের ৪ আগস্ট পেট্টোবাংলার পরিচালক (পরিকল্পনা) হিসেবে।
এসব অভিযোগ বিষয়ে তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, সবগুলো অভিযোগই মিথ্যা, বানোয়াট এবং মনগড়া। তবে তিনি ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন’ নিয়োগ সংক্রান্ত বাছাই কমিটির আহ্বায়ক সদস্য হিসেবে নিয়োগ পেতে আবেদন করেছেন বলে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
প্রীতি / প্রীতি

সরকারের কিছু কিছু সিদ্ধান্ত মানুষের কাজে আসবে না : রাশেদা কে চৌধুরী

৭ জেলায় নতুন পুলিশ সুপার

দেশ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত: প্রধান উপদেষ্টা

সরকারের হাজার প্রকল্প থাকলেও ওয়েবসাইটে পর্যাপ্ত তথ্য নেই

সংসদ নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি হলে ব্যবস্থা নেবে দুদক

ডেঙ্গুতে আরো ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪১২

৬ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ

রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার ৭ প্রস্তাব

লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে পুরস্কার ঘোষণা: এলএমজি ৫ লাখ, শটগানে ৫০ হাজার

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী ৬ সেপ্টেম্বর

সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ প্রকোপ হতে পারে

অমীমাংসিত বিষয় সমাধানে বাংলাদেশ-পাকিস্তান একমত
