বিএনপি ফের হারল

রাজনীতির বড় বিষয় কৌশল এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। এ দুই ক্ষেত্রে ভুল করলে বড় মাশুল দিতে হয় দলটিকে। বিএনপি এ দেশের একটি বড় দল এবং তাদের ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে- এ কথা মানতে হবে। তবে দলটি প্রায়ই ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। এর খেসারতও তারা দেয়। সবচেয়ে বেশি খেসারত দেয় তাদের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এখনো তারা হাজার হাজার মামলা নিয়ে দিশেহারা।
বিএনপি সব সময়ই দাবি করে আসছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা তলানীতে নেমেছে। ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ’ নির্বাচন হলে দলটি ৩০টি আসনও পাবে না। একাদশ সংসদ নির্বাচনে নানা নাটকীয়তার পর দলটি অংশ নেয়। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ৬ জন প্রার্থী বিজয়ী হোন বিএনপির ব্যানারে। কিন্তু অনিয়ম ও ভোট ডাকাতির অভিযোগ এনে মির্জা ফখরুল শপথ নেননি। শপথ নেন অন্য পাঁচজন। মির্জা ফখরুল বিজয়ী হয়েছিলেন বগুড়া-৬ আসন থেকে। যদিও তিনি তার নিজ আসন ঠাকুরগাঁও-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রমেশ সেনের কাছে হেরে যান। পরে বগুড়া-৬ আসনে ফের নির্বাচন হয় এবং এতে বিজয়ী হোন বিএনপির নেতা জিএম সিরাজ। বিএনপির এমপিদের শপথ নেওয়ার আগে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ সিনিয়র নেতারা বলেছিলেন, তাদের এমপিরা শপথ নেবে না। তারা এ সংসদ মানেন না। এটা জনগণের সংসদ না। জনগণের ভোটে এ সংসদের এমপিরা নির্বাচিত হয়নি। এ কারণে তারা শপথ নেবেন না। পরে তাদের বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে শপথ নেন বিএনপির এমপিরা। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হলো সিনিয়র নেতাদের কথা শোনেন না অন্যরা। আমি সেদিন আরটিভির টকশোতেও কথাটি বলেছিলাম।
আমার সঙ্গে সেদিন ছিলেন বিএনপির নেতা নিতাই রায় চৌধুরী। তিনি বিষয়টি অন্যভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন। মূলত বোঝালেন- তাদের ভয় দেখিয়ে শপথ গ্রহণ করানো হয়েছে। যদি ভয় দেখিয়েই শপথ গ্রহণ করানো হয়, তাহলে মির্জা ফখরুল কেন শপথ নিলেন না? তাকে কি ভয় দেখানো হয়নি? তার মানে ভয় দেখানোর গল্পটি কাল্পনিক। যদি ভয় সত্যিই দেখানো হত, তাহলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও শপথ নিতেন। যা হোক- তাদের শপথ নেওয়ার পর কেটে গেছে প্রায় ৪টি বছর। সংরক্ষিত আসনের একজনসহ ৭ জন প্রতিনিধি তাদের সংসদে ছিলেন। একাদশ সংসদের এক বছর মেয়াদ থাকতে বিএনপির এমপিরা পদত্যাগ করলেন। এ পদত্যাগে সরকার কিংবা সংসদের কি কোনো ক্ষতি হয়েছে? বিএনপির কোনো লাভ হয়েছে বলে আমি মনে করি না। তবে একটা লাভ হয়েছে। আর তা হলো তারা বিদেশে গিয়ে বলতে পারবে- এ দেশে গণতন্ত্র নেই।
তারা সংসদে কথা বলতে পারেন না। এ কারণে তারা পদত্যাগ করেছেন। আর এ কথা তো তারা সব সময় বলেই আসছেন। তাতে কি কোনো লাভ হয়েছে? বরং তাদের দুইজন এমপি হারুন-অর রশিদ এবং সংরক্ষিত আসনের এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা সরকারের কড়া সমালোচনা করতেন। তারা দুইজনই সংসদ মাতিয়ে রাখতেন। তাদের কথা মাঠের পাশাপাশি সংসদেও যেতো। এখন তো তাদের স্থান কেবল রাজপথ। আর রাজপথেও যে তারা খুব ভালো করছে, তেমন না। তাদের এই আন্দোলনে সরকার পতন ঘটানো সম্ভব না। সুতরাং এক বাক্যে বলা যায়, সংসদ থেকে পদত্যাগ করা তাদের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। এবার আসা যাক বিএনপির ছেড়ে দেওয়া ৬টি আসনের উপনির্বাচন প্রসঙ্গে। এ নির্বাচনেও বিএনপি কৌশলগতভাবেও অংশ নেয়নি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে তারা সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ২ (আশুগঞ্জ-সরাইল) আসনে বিএনপির সাবেক দুইজন নেতা অংশ নিয়েছেন। তারা হলেন- এ আসন থেকে সদ্য পদত্যাগী উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া এবং আবু আসিফ আহমেদ। তাদের মধ্যে উকিল আব্দুস সাত্তার পদত্যাগের বিএনপি থেকেও পদত্যাগ করেন। পরদিন বিএনপি তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে।
আর আবু আসিফ আহমেদ দলটির সাবেক নেতা এবং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। রুমিন ফারহানা আশুগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় কালে তারেক রহমানের বার্তা পৌঁছে দেন। তিনি বলেন, ভোট কেন্দ্রে যাওয়া যাবে না। কেউ ভোট কেন্দ্রে গেলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটা তাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশনা। এখন প্রশ্ন হলো- বিএনপির এ নির্দেশনা কি সত্যিই সঠিক ছিল? আমার মনে হয় সঠিক ছিল না। কেননা, বিএনপির যদি টার্গেট হত আওয়ামী লীগ কিংবা মহাজোট প্রার্থীকে পরাজিত করা তাহলে তারা নেতাকর্মীদের কেন্দ্রে যাওয়ার নির্দেশনা দিতেন। বলতেন সরকারবিরোধী প্রার্থীকে বিজয়ী করতে হবে। কেননা, ওই সব আসনে কিন্তু বিএনপি জিতেছিল এবং তাদের ব্যাপক জনসমর্থন আছে। তাহলে তারা যদি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অন্য প্রার্থীকে ভোট দিতেন, ওই প্রার্থী বিজয়ী হত এবং আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা নেই- এটা প্রমাণ করা সহজ হত।
কিন্তু তারা সেটা করেননি। এর ফলে কী হলো? আওয়ামী লীগ আর মহাজোটের প্রার্থীরা বিজয়ী হলেন। আর উকিল আব্দুস সাত্তারের বিষয়টি কিন্তু বিএনপির জন্য একটা বড় পরাজয়। তিনি দল থেকে পদত্যাগ করলেন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হলেন। তিনি দেখিয়ে দিলেন- বিজয়ের জন্য তার বিএনপির দরকার নেই। যদিও তিনি আওয়ামী লীগের ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। তার মানে এখানেও আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলো। দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন তো প্রকাশ্যেই বলেছেন, আওয়ামী লীগ হিরোকে জিরো করতে পারে আর জিরোকে হিরো করতে পারে। সাত্তার আওয়ামী লীগের প্রার্থী। কলারছড়িকেই এখন নৌকা মনে করতে হবে। ভোটের মাঠেও কিন্তু সেটাই প্রমাণ হলো। এবার আসি হিরো আলম প্রসঙ্গে। তিনি মূলত জোকার। এই জোকার কিন্তু মাত্র ৮৩৪ ভোটে মহাজোট প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেনের কাছে হেরেছেন। যদি বিএনপি তাকে ভোট দিত, তাহলে তিনি বিজয়ী হতেন।
হিরো আলম বিজয়ী হলে বিএনপি বলতে পারতো- একজন জোকারের কাছে মহাজোট প্রার্থী হেরেছেন। তার মানে এই জোট এবং তাদের মূল দল আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা নেই। তারা সেটা করেননি। মানে তারা রাজনীতিতে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিএনপির সাবেক নেতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর রাষ্ট্রপতি পদ চলে যাওয়ার কথা আপনাদের মনে আছে নিশ্চয়ই? রাষ্ট্রপতি পদ যাওয়ার পর তার ছেলে মাহি বি চৌধুরী এবং আরেক নেতা মেজর মান্নান বিএনপি ছাড়েন এবং সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে তারা উপনির্বাচনে বিজয়ী হন। আওয়ামী লীগ তাদের সমর্থন দিয়ে বিজয়ী করেন এবং বিএনপিকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখান। আর এ সিদ্ধান্ত নেন তখনকার বিরোধী দলীয় নেতা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার মানে বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এত বছর পরে এসেও রাজনীতির সেই মারপ্যাঁচে ভুল করল বিএনপি।
লেখক: বার্তা সম্পাদক, দৈনিক সকালের সময়
এমএসএম / এমএসএম

শোকজের জবাব দেবেন বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান

কাঠামোগত পরিবর্তন না এলে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করব: নাহিদ ইসলাম

খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে ফিরোজায় পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী

পাঞ্জাবি পরা একজন আমাকে প্রথমে ধাক্কা দিয়েছেন : রুমিন ফারহানা

বিএনপির আ.লীগ বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা : হাসনাত আবদুল্লাহ

রাষ্ট্রের সিস্টেমটাই হয়ে গেছে ‘দখলের’ : মির্জা ফখরুল

নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদের আইনী স্বীকৃতি দিতে হবে, সংস্কার না করে পুর্বের নিয়মে নির্বাচন হতে পরে না-পীর সাহের চরমোনাই

যারা নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছে তারা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি নয়

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে গণতন্ত্র ফিরবে না: আনিসুল ইসলাম মাহমুদ

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সতর্ক থাকতে বললেন গয়েশ্বর

এনসিপির নেতার কথোপকথন ভাইরালঃ ‘দেখো আরও পাঁচ লাখ নিতে পারো কি না’

দল নিবন্ধনের প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এনসিপিসহ ১৬ দল
