বিসিক’র যন্ত্রাংশ ক্রয়ে অনীহা সরকারি প্রতিষ্ঠানের
* সরকারী ক্রয় কর্তৃপক্ষ আমদানিতে আগ্রহী * আন্তর্জাতিক টেন্ডারেও দেশীয় কারসাজি
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) আওতায় সাব-কন্ট্রাকটিং হাজারো প্রতিষ্ঠান। বিসিক নিবন্ধিত হওয়ার পরও বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ ও পণ্য ক্রয়ে অনীহা প্রকাশ করছে। আমদানী নির্ভর বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানগুলোর অনীহার কারনে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ক্রমশ রুগ্ন শিল্পে পরিণত হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে দেশীয় পণ্য ব্যবহার করছে না ৩১টি সরকারি বৃদায়তন প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও আর্ন্তজাতিক দরপত্রেও বিসিকের পণ্য কিনতে নারাজ ক্রয় কমিটি। তবে অভিযোগ রয়েছে, দেশীয় পণ্য ভাল ও গুণগত মান অক্ষুন্ন রাখার পরও অনৈতিক সুবিধা নিতে বিসিকের পণ্যে অনীহা রয়েছে ক্রয় কর্তৃপক্ষের।
এদিকে, বিসিকের জিডিপি গত বছরের তুলনায় চলতি বছর আরও কমে গেছে। এক্ষেত্রে সাব-কন্ট্রাকটিং প্রতিষ্ঠানের মালিকরা দাবি করছে বিসিকের মনিটরিং না থাকায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে তৈরি পণ্যগুলো ব্যবহার করছে না। গুণগত মানের দোহাই দিয়ে বৃহদায়তন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দেশীয় ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলোকে এড়িয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, সরকারি ৩১টি বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠান বিসিকের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করলেও বিসিকের আওতাধীন সাব-কন্ট্রাকটিং ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদিত পণ্য ও যন্ত্রাংশ ক্রয় করছে না।
এ ব্যাপারে বিসিক চট্টগ্রামস্থ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার নিজাম উদ্দিন সকালের সময়ের প্রতিবেদককে বলেন, সরকারী প্রতিষ্ঠান গুলোর সঙ্গে চুক্তি রয়েছে বিসিক পণ্য ক্রয়ের। এ ব্যাপারে সরকারী সিদ্ধান্ত রয়েছে। ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা সাবকন্ট্রাক্টি হিসেবে নিবন্ধন দিয়েছি। সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিসিকের পণ্য না কেনায় অনেক প্রতিষ্ঠান রুগ্ন হয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, ১৯৮৬ সালে সাব কন্ট্রাকটিং কর্মসূচি গ্রহনের সিদ্ধান্ত নেয় বিসিক। ১৯৮৯ সালের ১ অক্টোবর গেজেট আকারে প্রজ্ঞাপন জারি হলেও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উৎপাদিত পন্য ব্যবহারে নারাজ। অথচ, পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৭৬ এর উপবিধি ১ এর দফা ‘ছ’ এ অনুর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও পিপিআর ২০০৮ এর সাব-কন্ট্রাকটিং গেজেট বিধিমালা ১৯৮৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
আরও অভিযোগ রয়েছে, শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সাব কন্ট্রাকটিং ব্যবস্থায় লিংকেজ স্থাপনের মাধ্যমে ধাতব, প্লাস্টিক, চীনা মাটি ইত্যাদি হতে প্রস্তুতকৃত যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ সংগ্রহের জন্য ২০১০ এর জাতীয় শিল্প নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। খুচরা যন্ত্রাংশ ও যন্ত্রপাতির চাহিদা দেশীয় ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের মাধ্যমে পূরণ করতে নির্দেশনা দেয়া হলেও মানছে না সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। উল্টো খরচ বাড়াতে মরিয়া হয়ে বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানের উর্ধতন কর্মকর্তারা বিদেশী পণ্য আমদানি করছে। গুণগত মান অক্ষুন্ন রেখে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে যন্ত্রাংশ তৈরি করা হলেও কর্মকর্তারা অদৃশ্য আয়ের কারণে দেশীয় পণ্য পিপিআর ২০০৮ অনুযায়ী ক্রয় করছে না। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি (ডিপিএম) এবং সীমিত দরপত্র পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের পন্যগুলো সাব কন্ট্রাকটিং গেজেট বিধিমালা ১৯৮৯ অনুযায়ী ক্রয় করার কথা থাকলেও তা মানছে না বেশিরভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠান। তবে এক্ষেত্রে রেলের পক্ষ থেকে বিসিকের সাব কন্ট্রাকটিং প্রতিষ্ঠানগুলোর তৈরিকৃত ৯শটি আইটেম পাহাড়তলীস্থ ডিজেল ওয়াকশপ কারখানায় ব্যবহার হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বিসিকের আওতায় সাব কন্ট্রাকটিং প্রতিষ্ঠান খুললেও সরকারি ৩১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩০টি প্রতিষ্ঠানই নানা অজুহাতে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের পণ্য ক্রয় করছে না। এমনকি আন্তর্জাতিক টেন্ডারে দেশীয় তৈরি পণ্য অন্তর্ভুক্ত থাকলেও লোকাল এজেন্টের মাধ্যমে ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানের পণ্যের দাম হ্রাস করে টেন্ডার বাগিয়ে নিচ্ছে। এক্ষেত্রে টেন্ডার বাগিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থাৎ যে সকল পণ্য একচেটিয়াভাবে তৈরি করে সে সকল পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেশীয় পণ্যের দাম কমানোর পাঁয়তারা করে। ফলে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলোকে পিছু হটতে হয়। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক টেন্ডারের সঙ্গে দেশীয় পণ্য অন্তর্ভুক্ত না করে আলাদাভাবে টেন্ডার আহবানের পরামর্শ সাব-কন্ট্রাকটিং প্রতিষ্ঠান মালিকদের। এছাড়াও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সরবরাহকৃত পণ্যগুলো ত্রুটিযুক্ত হরেও ফেরত দেয়া যায় না। এ ধরনের প্রায় ৪২টি পণ্য পাহাড়তলীস্থ রেলওয়ে সপ ডিপোতে পড়ে রয়েছে বলে সরবরাহকারীরা অভিযোগ করেছেন।
বিসিক সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ৩১টি বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলোকে গত ৩৫ বছরে মাত্র ৬শ কোটি টাকার কার্যাদেশ দিয়েছে। অথচ, বিসিকের আওতায় সাব কন্ট্রাকটিং প্রতিষ্ঠান হিসাবে তালিকাভুক্ত ক্ষুদ্র শিল্পের সংখ্যা ১ হাজার ২৮৮টি। এদিকে, বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্ত ক্ষুদ্র শিল্পের লিংকেজকৃত সংখ্যা ২ হাজার ৮শটি। এসব প্রতিষ্ঠানে তৈরিকৃত পণ্য বা যন্ত্রাংশের সংখ্যা ৩ হাজার ৮২০টি। বিসিকের সঙ্গে ৩১টি সরকারি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান সমঝোতা স্বাক্ষর করলেও ক্ষুদ্র শিল্পে তৈরি পণ্যগুলো ব্যবহার করছে না। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর বিসিকের নিবন্ধন নবায়ন করতে হয়।
বিসিকের তথ্য অনুযায়ী, সাব কন্ট্রাকটিং ব্যবস্থায় বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর (এমওইউ) হয় ১৯৮৫ সালের ৩০ অক্টোবর। সর্বপ্রথম বিসিকের সঙ্গে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করলেও এ প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধি এখন আর বিসিকের সভা সেমিনারে অংশ নেয় না। গত ৩৫ বছরে সমঝোতা স্বাক্ষর করা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হল বাংলাদেশ বস্ত্র শিল্প কর্পোরেশন, পাটকল কর্পোরেশন, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পেট্রোবাংলা, অভ্যন্তরীণ জল পরিবহণ কর্পোরেশন, ঢাকা ওয়াসা, সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম ওয়াসা, বন শিল্প কর্পোরেশন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন, কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, রেলওয়ে, রসায়ন শিল্প কর্পোরেশন, মিল্ক ভিটা, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড, সেনা কল্যাণ সংস্থা, তার ও টেলিফোন বোর্ড, খুলনা সিটি কর্পোরেশন, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন, মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন ও বাংলাদেশ শিক্ষা উপকরণ বোর্ড।
এমএসএম / এমএসএম
ডেঙ্গুতে একদিনে ৮ মৃত্যু, হাসপাতালে ৭৭৮
সুষ্ঠু নির্বাচনে ইসিকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে সেনাবাহিনী
৮০ দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার সঙ্গে সংলাপে বসছে ইসি
নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা নেই
সার কারখানায় ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের ঘোষণা আজ
ঢাকায় ফের ভূমিকম্প
স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ ও ইন্টারনেট সংযোগে ভুটানের সঙ্গে দুই সমঝোতা
একইদিনে গণভোট করতে ইসিকে চিঠি সরকারের
ঢাকার পাশেই ভূমিকম্পের আঘাত, উৎপত্তিস্থল বাইপাইল
আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লঘুচাপ সৃষ্টির আভাস
সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী
ঢাকায় পৌঁছেছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং টোবগে