তৃতীয় লিংগের নারীদের উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্র তৈরী করার পরিকল্পনা করছিঃ শারমিন সুলতানা জিতু

♦️ আপনার ব্যবসায়িক জীবন

ব্যবসায়ীক জীবনের তো শেষ হয় না  চলমান, আমার বেলায় শুরু বলা যেতে পারে। 
 আমি অর্কিড জিও টেক্সটাইল কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে কার্যত আছি ২০১৫ সাল থেকে।  ব্যবসায়িক ক্যারিয়ার শুরু হয়েছে ২০০৫ সাল থেকে বাবার
 ব্যবসায়ী কোম্পানিতে যুক্ত থাকার মাধ্যমে।বাবার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির নাম মাদার টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড (যা বৃহত এবং বাংলাদেশের প্রথম দিকের স্পিনিং মিল ছিলো)  এবং ইউরেশিয়া ইন্টেরিয়র এন্ড ফার্নিচার্স লিমিটেড। আল্লাহর অশেষ রাহমাতে নিজের প্রতিষ্ঠিত অর্কিড জিওটেক্সটাইল কোম্পানি যা বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহৎ জিও টেক্সটাইল কোম্পানি হিসেবে সুনামের সাথে।  নতুন ভাবে উদ্যোক্তা ভিত্তিক ব্যবসায়ীক পরিকল্পনা করছি।

♦️ব্যবসায়ীক কর্মকাণ্ডের বাহিরে আর কি ভাবে নিজেকে যুক্ত রাখছেন?

ব্যবসায়ীক ব্যস্ততার মাঝেও নিজেকে বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুক্ত রাখছ। একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে কার্যক্রম করছি, বিভিন্ন অর্গানাইজেশন, অ্যাসোসিয়েশনে যুক্ত আছি LABCCI, EEBCCI, DBCCI, BCI, DCCI, KBCCI, BPGMEA, FBCCI এছাড়াও এসব চেম্বার, এসোসিয়েশন, অর্গানাইজেশন এর বিভিন্ন স্ট্যান্ডিং কমিটির একজন এক্টিভ মেম্বার হিসেবে কাজ করছি দীর্ঘদিন যাবত। বিশেষভাবে বলতে গেলে প্রত্যাশা কমিউনিটি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড (PLC), যা বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার কর্তৃক পরিচালিত, ফান্ডেড বাই ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (EU), ইমপ্লিমেন্টেড বাই ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অফ মাইগ্রেশন (IOM) ও ইন পার্টনারশিপ উইথ ব্র্যাক (BRAC) এ একজন ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডাইরেক্টর হিসেবে কার্যত আছি  বিগত ৪ বছর যাবত। 
বর্তমানে  District Chairperson হিসেবে District Cabinet of Lions Club Internation এ আছি। তাছাড়াও Vice President হিসেবে Lions Club of Dhaka Central Pioneer এ আছি। যার দ্বারা সমাজের বিভিন্ন দরিদ্র সম্প্রদায়কে সহায়তার হাত বাড়িয়ে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বাংলাদেশ লায়ন্স ফাউন্ডেশন (BLF) এর ও একজন আজীবন সদস্য হিসেবে আছি।

♦️আপনার জীবনে অনুপ্রেরণা কে?

অনুপ্রেরণার সংজ্ঞা একেকজনের কাছে একে রকম হয়। আমি খুব ভালো শিক্ষার্থী বটে। আমি প্রতিনিয়ত শেখার চেষ্টা করি, বিভিন্ন মানুষের থেকে ভিন্ন ভিন্ন কিছু জানার আগ্রহ আমার খুব ছোট থেকে। বাবা সনামধন্য ব্যবসায়ী ছিলেন, বাবার থেকে ব্যবসায়ীক, নেতৃত্বগুন, সেবার অনুপ্রেরণা। আমার -মা এর কাছ থেকে ধৈর্য্য'র অনুপ্রেরণা আমার 'মা' খুব ধৈর্য্যশীল মানুষ ছিলেন।  মা কে খুব কম সময় পেয়েছি যতটুকু পেয়েছি তা প্রতিনিয়ত আদর্শিক অনুপ্রেরণা যোগায়। বাবা - মা এর পড়ে আমার স্বামীর কাছ থেকে বিশেষ ভাবে অনুপ্রাণিত হই। নানান প্রতিকূল মুহূর্তে নিজেকে সহজ ভাবে মানিয়ে নেয়ার অনুপ্রেরণা।  আমার ২ সন্তান তারা আমার অনুপ্রেরণার অন্যতম উৎস। তাছাড়া কলিগ,বন্ধু, ছোট, বড় সবার কাছ থেকেই অনুপ্রানিত হই। চলার পথে পতিকুলতা গুলোকে অনুপ্রেরণা হিসেবে পুজি করি। 

♦️একজন নারীর সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে মুখ্য ভুমিকা কি হতে পারে ? 

একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য সবার আগে প্রয়োজন নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস। সেটা নারীই হোক বা পুরুষ। সারাক্ষণ প্রতিবন্ধকতা-প্রতিকূলতার কথা ভাবলে হবে না।

নারীর নিজেকে নিজের ক্ষমতায়িত করতে হবে। ইচ্ছে, আগ্রহ ও স্বপ্ন থাকলে নারীকে আটকে রাখার ক্ষমতা কারও নেই বলেই আমি  মনে করি

♦️. নিজেকে কোথায় দেখতে চান ?

 আমি খুব আত্নবিশ্বাসী মানুষ, পারিবারিক ভাবে ব্যবসায়ীক পরিবারে বড় হলেও আমার অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে এবং যা প্রতিনিয়ত করছি ভবিষ্যতে করবো এ চিন্তা মাথায় রেখে তা পাশ  কাটিয়ে চলার মনোভাব নিয়েই আমি সামনে আগাচ্ছি। জীবনে সফল হতে হলে অবশ্যই আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। ”যদি নিজের প্রতিভার প্রতি  আত্মবিশ্বাস না থাকে তাহলে কোন ভাবেই সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয়। নিজে বার বার  খুঁজে নিয়েছি  কোন বিষয় গুলো আমাকে  আত্মবিশ্বাসী করে তলে এবং সেই পথ ধরেই এগিয়ে যেতে চাই। 
আমার আত্নবিশ্বাসের যায়গা থেকে আমি সমাজের বিভিন্ন স্তরে কাজ করতে চাই এবং সর্বপরি নিজেকে পরিশুদ্ধ সামাজিক দায়বদ্ধতা সম্পুর্ন মানুষ হিসেবে দেখতে চাই।

♦️ আপনার সাফল্য আর পরাজয় কি ?

আমি আক্ষরিক অর্থেই ধ্বংসস্তূপ থেকে ভাঙাচোরা অবস্থায় উঠে আসা এক মানুষ। পরাজয় এ শব্দ গুলো আমি শুনে দেখে পরিচিত তবে এ শব্দগুলো বিশ্বাস করে নিজের মধ্যে লালন করি না। আমি ব্যবসায়ীর পরিমন্ডলে বেড়ে উঠলেও জীবনের একটা সময়ে অনির্ধারিত বাস্তবতার সম্মুখীন আমাকে হতে হয়েছে। শূন্যতা উপভোগ করার ভাগ্য আমার হয়েছে। সে শূন্যতা থেকে বা 
যে জায়গা থেকে আমি আজ এ অবস্থানে এসেছি, আমার আশেপাশে কাউকে সে রকম জায়গা থেকে ফিরে উঠে দাঁড়িয়ে লড়ে হাস্যজ্বল ভাবে চলতে আমি  এখন অবদি দেখিনি। আমার জীবনে যা কিছু ঘটেছে, এরপর আমার আর হারানোর কিছু নেই। এ জন্যই হয়তো আমার ভেতর একটা ভীষণ মনোবল কাজ করে। আমি যা করি, মরিয়া হয়ে করি।’ জয়ী হওয়ার জন্য করি না তা না আমি আমার আত্নবিশ্বাসের যায়গা থেকে করি আত্মসন্তুষ্টির যায়গা থেকে করি যেখানে পরাজয় শব্দ বেমানান।

♦️নারীদের নিয়ে আপনার কাজ করার কোন পরিকল্পনা আছে কি?

শুধু নারীদের নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা আছে ব্যপারটা তা- না আমি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কাজ করতে চাই নারী পুরুষ উভয় কে নিয়ে। নিজেকে গোছাচ্ছি এবং পরিকল্পনা করছি, ইনশাআল্লাহ নারীদের নিয়েও বিশেষ পরিকল্পনা আছে সমাজের অনেক মানুষ তাদের মতো করে কাজ করছে সবাই কে আমার শুভকামনা আমি বিশেষ ভাবে সমাজের পিছিয়ে পরা ও নিম্নবিত্ত নারীদের ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সল্প পুজিতে ভিন্ন চিন্তার ব্যবসায় যুক্ত করার ব্যপারে কাজ করতে আগ্রহী এবং  তৃতীয় লিংগের নারীদের উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্র তৈরী করার পরিকল্পনা করছি।