প্রবীণ জনসংখ্যার রেকর্ডে জাপান, বোঝা না আশির্বাদ?
জাপানে একদিকে বাড়ছে প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা, অন্যদিকে কমছে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা। এজন্য জনসংখ্যা নিয়ে কঠিন সমস্যায় রয়েছে জাপান। প্রবীণ জনগোষ্ঠী বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে স্বাস্থ্যসেবা ও কল্যাণমূলক ব্যয়। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই বয়স্ক মানুষের সংখ্যায় দেশটিতে নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে জাপানের পুনরুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন দেশটির প্রবীণ জনগোষ্ঠী। তাদের সেই অবদানকে সম্মান জানাতে প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় সোমবার জাতীয়ভাবে ‘প্রবীণদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন দিবস’ পালন করা হয়। এ বছর দিবসটিকে সামনে রেখে সরকারিভাবে প্রবীণদের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
জাপানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এনএইচকে ওয়ার্ল্ড জানিয়েছে, এই তালিকার তথ্য অনুযায়ী দেশটিতে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে ৩ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজারে উন্নীত হয়েছে। ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সি মানুষের সংখ্যা এখন মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।
জাপানের স্বরাষ্ট্র ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বয়স্ক জনগোষ্ঠী দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৯ দশমিক ৩ শতাংশ, যা এক লাখের বেশি জনসংখ্যার যেকোনো দেশ বা অঞ্চলের মধ্যে সর্বোচ্চ। ৬৫ বা তার বেশি বয়সি মানুষের মধ্যে প্রায় ২ কোটি ৫ লাখ ৩০ হাজার নারী এবং ১ কোটি ৫০ লাখ ৭২ হাজার পুরুষ। গত বছর ৯১ লাখ ৪০ হাজার বয়স্ক মানুষ কর্মরত ছিলেন। অর্থাৎ কর্মরত প্রতি সাতজনের মধ্যে একজন প্রবীণ নাগরিক।
টোকিওর থিংকট্যাংক রিক্রুট ওয়ার্কস ইনস্টিটিউটের গত বছর প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, জনসংখ্যা হ্রাসের কারণে ২০৪০ সালের মধ্যে জাপানে এক কোটির বেশি শ্রমিকের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। প্রবীণ জনসংখ্যার দিক থেকে এই মূহূর্তে বিশ্বের ২০০টি দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে জাপান।
এ ছাড়া ইতালি, পর্তুগাল, গ্রিস, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, ক্রোয়েশিয়ার মতো দেশগুলো রয়েছে এই তালিকার শীর্ষ ১০ দেশের কাতারে। এই দেশগুলোর প্রতিটিতেই প্রবীণ জনগোষ্ঠীর শতকরা হার মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের বেশি।
টোকিওভিত্তিক ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পপুলেশন অ্যান্ড সোশ্যাল সিকিউরিটি রিসার্চের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৪০ সালের মধ্যে জাপানের ৩৪ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ হবেন প্রবীণ জনগোষ্ঠীর।
আলজাজিরা জানিয়েছে, গত বছরের শুরুর দিকে জাপানের মোট জনসংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৪০ লাখ; কিন্তু নিম্ন জন্মহারের কারণে গত দেড় বছরে জনসংখ্যা ৫ লাখ ৯৫ হাজার হ্রাস পেয়েছে।
কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী কমে যাওয়ায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাধ্য হয়ে প্রবীণদের নিয়োগ দিচ্ছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ৯০ লাখ ১৪ হাজার বয়স্ক মানুষ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। তাদের প্রত্যেকের বয়স ৬৫ কিংবা তারও বেশি। অর্থাৎ সরকারি হিসাবে বর্তমানে জাপানের মোট জনশক্তির ১৩ দশমিক ৫ শতাংশই বয়স্ক। কর্মক্ষেত্রে এত বেশি পরিমাণ বয়স্ক মানুষের উপস্থিতিও নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, জাপান সরকার ১৯৯০-এর দশক থেকেই দম্পতিদের বেশি সন্তান নেওয়ায় উৎসাহিত করার নীতি গ্রহণ করে। ২০০০ সালের পর দক্ষিণ কোরিয়াও একই নীতি নেয়। সিঙ্গাপুরে পড়তি জন্মহার ঠেকানোর জন্য বিশেষ নীতি নেওয়ার ইতিহাস আরও পুরোনো। চীনও এখন সেই পথ অনুসরণ করছে। কারণ, ৬০ বছরের মধ্যে চীনেও প্রথমবারের মতো জনসংখ্যা কমতে শুরু করেছে। জন্মহার বাড়ানোর নীতি কার্যকর করতে এসব দেশ ঠিক কত খরচ করছে তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন।
তবে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক-ইয়ল গত বছর জানান, জনসংখ্যা বাড়াতে তার দেশ ১৬ বছরে ২ হাজার কোটি ডলারের বেশি অর্থ খরচ করেছে। কিন্তু তারপরও ২০২২ সালে দেশটিতে প্রজনন হার ছিল বিশ্বে সবচেয়ে কম। নারীপ্রতি শিশু জন্মের হার ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৭৮ শতাংশ।
T.A.S / T.A.S