আঘাতপ্রাপ্ত রেটিনায় চোখের চিকিৎসা ও সম্ভাবনা
রেটিনা চোখের একটি গুরুত্বপূর্ণ পাতলা পর্দা অংশ যা দশটি লেয়ার দ্বারা তৈরি। এটি আলোকে নিউরাল সিগন্যালে রূপান্তরিত করার জন্য দায়ী যা মস্তিষ্কে দৃষ্টি হিসাবে ব্যাখ্যা করে। এটি ক্যামেরার ফিল্মের মতো কাজ করে, ছবি ধারণ করে এবং অপটিক নার্ভের মাধ্যমে মস্তিষ্কে পাঠায়।
বর্তমান প্রেক্ষাপট এ রেটিনায় রক্তক্ষরণ ও রেটিনাল ডিট্যাচমেন্ট নিয়ে অনেক রোগীর চিকিৎসা প্রদান করা হয়। আঘাতজনিত রেটিনাল ডিটাচমেন্ট এর বেশির ভাগ রেটিনা গুলির আঘাতপ্রাপ্ত। বিশেষ কিছু পরীক্ষ্যা যেমন সিটি স্স্ক্যান ও বি স্ক্যানের মাধ্যমেও গুলির উপস্থিতি ও অবস্থান নির্ণয় করা যায়। সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রোগীর চোখের অন্যান্য অংশ যেমন: গুলির এন্ট্রি পয়েন্ট যদি চোখের সাদা অংশ দিয়ে হয়ে থাকে তাহলে তা রিপেয়ার করে ঐ একই সিটিংয়ে রেটিনা সার্জারি করা হয়ে থাকে। আঘাতের এন্ট্রি পয়েন্ট যদি কর্ণিয়া দিয়ে হয়ে থাকে তবে তা লেন্সকেও একই সঙ্গে আঘাত করে সেক্ষেত্রে কর্ণিয়া রিপেয়ার, লেন্স এক্সট্রাকশন ও একই সঙ্গে অবস্থা বুঝে কৃত্রিম লেন্স সংযোজন ও রেটিনাল ডিটাচমেন্ট সার্জারি করা হয়।
গুলিবিদ্ধ চোখের রেটিনা সার্জারী কি:
সাধারণত চোখের ভিতরে গুলি প্রবেশ করা মাত্র তা চোখের ভিতর ব্যাপক রক্তক্ষরণ করে ও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা রেটিনা ছিঁড়ে ফেলে, ক্ষেত্র বিশেষে সোজা বরাবর আঘাতপ্রাপ্ত গুলি চোখের মধ্যমণি বরাবর ম্যাকুলায় আঘাত করে, যার ফলে চোখের দৃষ্টির প্রধান অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রেটিনা সার্জারিতে মূলত আমরা চোখের ভিট্রিয়াস জেলি ও একই সঙ্গে জমে থাকা জমাট রক্ত চোখের ভেতর থেকে ভিট্রেকটোমি কাটার দিয়ে বের করে আনি, এরপর ছিঁড়ে যাওয়া রেটিনার অংশ জোড়া লাগানো হয় এবং লেজার করা হয় যা ‘এন্ডেলেজার’ নামে পরিচিত।
এর পরবর্তী ধাপে এয়ারফ্লুইড এক্সচেঞ্জ করা হয় ও সিলিকন অয়েল নামক এক বিশেষ ধরনের অয়েল চোখে প্রবেশ করানো হয়, যাতে চোখের রেটিনা ও চোখের গঠন ও কাঠামো স্বাভাবিক থাকে।এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় হলো ভিট্রিকট্রোমি সার্জারির আগে এক্সরে, সিটি স্ক্যান ও বি-স্ক্যান আল্ট্রাসনোগ্রাম করে ভালোভাবে গুলির অবস্থান নির্ণয় করতে হবে। একমাত্র অবস্থান নির্ণয় করতে পারলেই অপারেশনের সময় চোখের অভ্যন্তরে গুলি বের করে আনা সম্ভব। গুলিগুলো সাধারণত ৩x৩ মিমি হয়ে থাকে যার জন্য বিশেষ ধরনের ফরসেপের মাধ্যমে গুলিগুলো চোখের ভেতর থেকে বের করা হয়।
গুলিবিদ্ধ চোখ থেকে কি গুলি বের করে আনা সম্ভব ?
এ ক্ষেত্রে বিষেস ভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে ও এক্সরে, সিটি স্ক্যান ও বি স্ক্যান আল্ট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষায় বুঝে নিতে হবে গুলি এখনও চোখের ডিট্রিয়াস ক্যাভিটিতে আছে কি না? কেবলমাত্র গুলি ভিট্রিয়াস ক্যাভিটিতে থাকলেই তা বের করে আনা সম্ভব। যদি তা ভেদ করে অপটিক নার্ভ হেডের কাছে চলে যায় অথবা করোয়েড পর্দা দিয়ে স্ক্লেরায় চলে যায় অথবা রেট্রো অরবিটাল স্পেসে চলে যায় তবে তা বের করার চেষ্টা না করাই ভালো, বের করতে গেলে চোখের ক্ষতির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আমরা যে সব সার্জারি করেছি এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে গড়ে ৫০ ভাগ রোগীর গুলির উপস্থিতি পেয়েছি এবং বের করেছি, বাকি ৫০ ভাগ গুলি ভিট্রিয়াস ক্যাভিটির বাইরে চলে গেছে। লক্ষণীয় বিষয় হল যে সব ক্ষেত্রে গুলি ভেদ করে বাইরে চলে গেছে সেগুলোর পোস্ট অপারেটিভ আউট কাম, গুলি বের করে নিয়ে আসার চেয়ে কিছুটা ভালো। কারণ গুলি বের করে আনতে গেলেও চোখের কিছু লেয়ার ইনজুরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
গুলিবিদ্ধ চোখে গুলি রয়ে গেলে কি কোনো সমস্যা হবে:
এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন ,কারণ রোগী সব সময় অপারেশন পরবর্তী রেখে আসা গুলী নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন, যা খুবই সাভাবিক।
ভিট্রিয়াস ক্যাভিটি যদি ক্লিয়ার থাকে এবং গুলি যদি রেট্রো অরবিটাল স্পেসে থাকে, তাহলে রয়ে যাওয়া গুলি চোখের বা অন্য কোনো অঙ্গের সমস্যা করবে না। অতএব অপারেশন পরবর্তী গুলি বের না করা হলেও দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।
গুলিবিদ্ধ চোখ অপারেশনের পর দৃষ্টি কি ফিরিয়ে আনা সম্ভব:
অপারেশন পরবর্তী দৃষ্টি ফিরে আসা সম্পূর্ণ নির্ভর করে গুলিটি চোখের রেটিনার কোন অংশে আঘাত করেছে। পেরিফেরাল রেটিনায় আঘাত করলে অপারেশন পরবর্তী দৃষ্টি ফিরে আসার সম্ভাবনা বেশি। তবে ম্যাকুলা ও অপটিক নার্ভ ইনজুরি হলে দৃষ্টি ফিরে আসে তবে ক্ষেত্র বিশেষে খুব ক্ষীণ দৃষ্টি ফিরে আসে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আশার কথা হল গুলিবিদ্ধ সব চোখে আমরা এ পর্যন্ত সফল অস্ত্রপচার করেছি এবং এ বিষয়ে সার্জারির জন্য বাংলাদেশে যন্ত্রপাতি ও ব্যবস্থাপত্রের সব সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান আছে। অর্থাৎ চোখের ভিট্রিও রেটিনা সার্জারির আধুনিকায়ন পৃথিবীর অন্যান্য দেশ ও বাংলাদেশ সমানভাবে এগিয়ে চলছে।
সব প্রকার আঘাতজনিত রেটিনা ইনজুরি বিষয়ে সচেতন হওয়া ও কোনো প্রকার দ্বিধাগ্রস্থ না হয়ে অতিসত্তর একজন রেটিনা বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া ও কিছু পরীক্ষা নীরিক্ষার মাধ্যমে প্রয়োজনে উপযুক্ত ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ করা।
ডা: মোহাম্মদ আফজাল মাহফুজউল্লাহ
সহযোগী অধ্যাপক (ভিট্রিও-রেটিনা)
ভিট্রিও-রেটিনা বিশেষজ্ঞ ও ফ্যাকো সার্জন
চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
পাবলিকেশন সেক্রেটারি
বাংলাদেশ ভিট্রিও রেটিনা সোসাইটি
এমএসএম / এমএসএম