ঢাকা রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫

যেসব যোগাসনে ঘুমের সমস্যা দূর হয়


ডেস্ক রিপোর্ট  photo ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ৩০-৮-২০২১ দুপুর ৩:৪০

আধুনিক যুগে স্ট্রেস, উত্তেজনা, খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন প্রণালীর কারণে পর্যাপ্ত ঘুম হয় না। এতে করে ঘুমের অভাবে আমাদের শরীর দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। তাই সুস্থ থাকার জন্য পর্যাপ্ত ও ভালো ঘুম অত্যন্ত জরুরি। বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন, ঘুম কম হলে তা আপনার আয়ুও কমিয়ে দেয়। প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান এবং নিশ্চিত করুন যেন প্রতি রাতে আপনার সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম হয়। তবে এমন কিছু উপায় আছে, যার সাহায্যে ব্যক্তি চাপ এবং উত্তেজনা মুক্ত থাকতে পারে, যা তাদের ভালো ঘুম সুনিশ্চিত করার সহায়ক। এমনই একটি কার্যকরী উপায় হল যোগাসন।

মন ও শরীরকে চাপ মুক্ত করা, শরীরের প্রতি সচেতনতা গড়ে তোলা ইত্যাদি যোগাসনের মাধ্যমে লাভ করা যায়। যোগাসনে ধ্যান ও শ্বাস-প্রশ্বাসের নানান ভঙ্গি স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী। যোগাসনের ফলে আমাদের মনোযোগ তীব্র হয়, মন ভালো থাকে এবং শরীর স্বস্তি পায়। এ সব কারণই ভালো ও পর্যাপ্ত ঘুমে সাহায্য করে থাকে। পাশাপাশি আর্থ্রাইটিস ও হৃদয়ের সুস্থতায় যোগাসনের ভূমিকা রয়েছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং রোগ মুক্তি ঘটাতে যোগাসনের জুড়ি মেলা ভার।

তাই প্রতি রাতে ঘুমাতে গিয়ে সংর্ঘষ চালিয়ে থাকলে এই যোগাসনগুলোর সাহায্য নিন। এর ফলে স্ট্রেস, মন ও শরীরের অ্যাংজাইটিও কমবে, যা পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য ভারসাম্য প্রতিস্থাপিত করবে।

বৃক্ষাসন

মন ও মস্তিষ্কে ভারসাম্য পুনঃস্থাপন ঘটায় বৃক্ষাসন। পা ও নিতম্বের হাড় মজবুত করে। পায়ের শক্তি বৃদ্ধি হয়। জঙ্ঘা, পায়ের কাফ পেশী এবং গোড়ালিও মজবুত করে এই আসন। একটি পায়ে শরীরের ভার স্থানান্তরিত করার ফলে পায়ের লিগামেন্ট ও টেন্ডন মজবুত হয়। মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।

পদ্ধতি: বাঁ পায়ের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়াতে হবে। এ সময় শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখুন। ডান পা অর্ধেক মুড়ে বাঁ পায়ের জঙ্ঘায় লাগিয়ে রাখুন। হাত সোজা করে মাথার ওপরে তুলতে হবে। এর পর অঞ্জলি মুদ্রায় হাত রাখুন। দৃষ্টি স্থির রাখুন এবং বাঁ পায়ে ওজন স্থানান্তরিত করুন। কিছুক্ষণ এ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকুন। তার পর একই ভাবে অন্য পায়ে দাঁড়িয়ে এই আসনটি করুন।

বালাসন

বালাসন যোগব্যায়ামটি চাপ ও উত্তেজনা কম করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে নতুনদের জন্য এই আসন উপকারী। এর ফলে বুক, পিঠ ও কাঁধ থেকে স্ট্রেস ঝেড়ে ফেলা যায়। ক্লান্তি দূর করতেও এই আসন সহায়ক। পিঠের ব্যথা কমে। কারণ এর ফলে পিঠ, নিতম্ব, জঙ্ঘা ও গোড়ালি সামান্য প্রসারিত হয়।

পদ্ধতি: প্রথমে ম্যাটের ওপর নিজের গোড়ালিতে ভর দিয়ে বসুন। হাঁটু একসঙ্গে জুড়ে রাখতে পারেন অথবা একটু দূরত্বেও রাখা যায়। এবার শ্বাস ত্যাগ করে সামনের দিকে ঝুকে যান। কপাল দিয়ে মেঝে স্পর্শ করবেন। হাঁটু গেড়ে প্রণাম যে ভাবে করা হয়, সেই ভঙ্গিতে থাকবে হবে। হাত থাকবে পিছনের দিকে পায়ের পাতার ওপরে বা সোজা সামনের দিকে। হাত পিছনের দিকে থাকলে তালু ওপরের দিকে মুখ করে রাখবেন। হাত সামনের দিকে লম্বা করে রাখলে তালু থাকবে ম্যাট স্পর্শ করে। হাঁটু দুটি জুড়ে রাখলে বুক দিয়ে জঙ্ঘার ওপর আস্তে আস্তে চাপ দিন। আবার দুই হাঁটুর মধ্যে দূরত্ব থাকলে, জঙ্ঘার মাঝে বুক দিয়ে চাপ দিতে হবে। কাঁধ, চোয়াল, কপাল ও চোখকে বিশ্রাম দিন। যতক্ষণ সম্ভব এ ভাবে থাকবেন। এবার শ্বাস গ্রহণ করার সময় নাভি স্পাইনের দিকে তুলবেন। শ্বাস ছাড়ার সময় শরীর ও বাহু কোমল রাখতে হবে। কিছু ক্ষণ পর পর আগের অবস্থায় ফিরে আসুন।

ভুজঙ্গাসন

স্পাইন, নিতম্ব, নিতম্বের পেশী বুক, পেট, কাঁধ, ফুসফুস মজবুত করে ভুজঙ্গাসন। রক্ত চলাচল উন্নত করে এবং স্ট্রেস দূর করে।

পদ্ধতি: নিজের পেটের ওপর ভর দিয়ে ম্যাটে শুয়ে পড়তে হবে। হাত মুড়ে বুকের পাশে রাখুন। বাহু থাকবে শরীরের কাছে এবং কনুই বাইরের দিকে মুখ করে থাকবে। শ্বাস গ্রহণ করে ধীরে ধীরে মাথা, গলা ও কাঁধ ওপরে তুলুন। এর পর হাতের পাতার ওপর ভর দিয়ে শরীরের ওপরের অংশ তুলুন। এ সময় হাত সোজা থাকবে। নিজেকে কষ্ট না-দিয়ে যতটা সম্ভব ওপরে শরীর তুলবেন। শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকবে। পেট মেঝে স্পর্শ করে রাখবে। কয়েক সেকেন্ড পর আগের অবস্থায় ফিরে আসুন। পেটের ওপর ভর দিয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার মাথা এক দিকে ঘুরিয়ে নিন এবং শরীরের পাশে হাত রেখে বিশ্রাম করুন।

পরিবৃত্ত পার্শ্বকোণাসন

হ্যামস্ট্রিঙ্গসকে প্রসারিত ও নমনীয় করে পরিবৃত্ত পার্শ্বকোণাসন। পাশাপাশি এর ফলে স্পাইন পুনরুজ্জীবিত হয়। জঙ্ঘা, কাভস পেশী, গোড়ালিকে টোন করে। পিঠ হয় মজবুত। এই আসন মনোযোগ ও ভারসাম্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। শরীর ডিটক্স করতেও কার্যকরী পরিবৃত্ত পার্শ্বকোণাসন।

উল্লেখ্য, প্রথম বার এই আসন করার আগে নিজের অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ নিতে ভুলবেন না। আবার ইনসমনিয়া, ভার্টিগো, মাইগ্রেন, অ্যাস্থমা, ডাইরিয়া, ঘাড় ও পিঠের আঘাত, নিম্ন বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে এই আসন করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

পদ্ধতি: মুখ নীচের দিকে রেখে উপুর হয়ে থাকুন (কোনও চারপায়ী প্রাণীর মতো অঙ্গভঙ্গি রাখতে হবে)। এবার দুই হাতের মাঝখানে ডান পা আনুন। বাঁ পা সোজা রাখবেন। ভর দিতে হবে পায়ের আঙুলের ওপর এবং ধীরে ধীরে বাঁ পায়ের গোড়ালি ওপরের দিকে তুলে রাখবেন। শ্বাস ত্যাগ করে পেলভিককে নীচের দিকে রাখবেন। ডান জঙ্ঘা থাকবে মেঝের সঙ্গে সমান্তরালে। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া চালিয়ে যান এবং ডান হাত ওপরে তুলুন। লক্ষ্য রাখবেন, কাঁধ যেন সমান্তরালে থাকে। এ ভাবে ১০-১৫ সেকেন্ড থাকার পর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুন।

উষ্ট্রাসন

উষ্ট্রাসনের ফলে কাঁধ ও পিঠ প্রসারিত ও মজবুত হয়। এর সাহায্যে নিতম্ব মজবুত হওয়ার পাশাপাশি নিতম্বের ফ্লেক্সরসকেও প্রসারিত করে। শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়ায় উন্নতি ঘটায় এবং হজম শক্তি উন্নত করে। এই আসন ভার্টিব্রাকে শিথিল করে, লোয়ার ব্যাক পেন থেকে স্বস্তি দেয়। জঙ্ঘার মেদ ঝরাতে উপযোগী এই আসন।

পদ্ধতি: হাঁটুর ওপর ভর দিয়ে ম্যাটের ওপর বসে পড়ুন। হাঁটু ও পা সমান ভাবে রাখতে হবে। এবার নিতম্ব আগের দিকে আনুন এবং পিঠ পিছনের দিকে ঝোকান। এর পর নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী যতটা সম্ভব মাথা ও স্পাইন পিছনের দিকে ঝুকিয়ে রাখুন। হাত দিয়ে পায়ের গোড়ালি ধরে রাখবেন। পায়ের পাতার ওপরও হাত রাখতে পারেন। শরীর ও পিঠের পেশীগুলোকে রিল্যাক্স করতে দিন। কিছুক্ষণ থাকার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুন।

প্রীতি / প্রীতি