ঢাকা বৃহষ্পতিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৫

ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় ভিটামিন সি যুক্ত ফল ও সবজি


ডেস্ক রিপোর্ট  photo ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ৪-৯-২০২১ দুপুর ১০:৫১

বর্ষা মৌসুমে জ্বর-সর্দি-কাশির সমস্যা বাড়তেই থাকে। তার উপর করোনার ভয় তো আছেই। এর মধ্যে চিকিৎসক পরামর্শ দিচ্ছেন ভিটামিন সি যুক্ত খাবার বেশি করে খেতে। তাতে প্রতিরোধশক্তি বাড়বে। কারণ সবচেয়ে শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ভিটামিন সি। এটি দেহের ক্ষতিকর পদার্থ থেকে রক্ষা করে। বিশেষ করে চোখের লেন্স, কোষের ভেতরকার নিউক্লিয়াস, ত্বক ও হাড়ের কোলাজেনকে সুরক্ষা দেয় ভিটামিন সি। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষা বা রক্তের লৌহ শোষণেও ভিটামিন সির ভূমিকা রয়েছে। মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটারের চলাচল ও তথ্য আদান-প্রদানে এটি ভূমিকা রাখে। ভিটামিন সি যুক্ত খাবার বিভিন্ন ক্যানসার থেকে সুরক্ষিত থাকা যায়।

সাধারণত শরীর নিজে থেকে ভিটামিন সি উৎপাদন করতে পারে না। তাই এটা বাইরে থেকে গ্রহণ করতে হয়। এই গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন মূলত শাকসবজিতেই পাওয়া যায়। লেবু ও লেবুজাতীয় সব টক ফল ভিটামিন সির চমৎকার উৎস। কমলা, পেয়ারা, মরিচ, পেঁপে, জাম্বুরা, আনারস, ব্রকোলি, আলু ইত্যাদিতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি। সবুজ পাতা গোত্রের সব সবজি ও শাকেও পাওয়া যাবে এই ভিটামিন। এ ছাড়া কিছু মসলাজাতীয় উদ্ভিদ যেমন: কাঁচা মরিচ, পুদিনাপাতা বা পার্সলেপাতা ভিটামিন সির ভালো উৎস। এক কাপ কমলার রস, ব্রকলি, লাল মরিচ পর্যাপ্ত ভিটামিন সি সরবরাহ করে।

দৈনিক ভিটামিন সি’র চাহিদা হল ৬৫ থেকে ৯০ মি.লি. গ্রাম থেকে সর্বোচ্চ ২০০০ মি.লি.গ্রাম। যদিও অতিরিক্ত ভিটামিন সি গ্রহণ শরীরের কোনো ক্ষতি করে না। তবে অনেক সময় অতিরিক্ত ভিটামিন সি গ্রহণে বমিভাব, ডায়ারিয়া, মাথা ব্যথা, বুক জ্বালা, বমি, অনিদ্রা ও ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

কয়েকটি ফল ও সব্জি আপনার শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি-র জোগান দিতে পারে। যেমন—

পেয়ারা

পেয়ারায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। আপনি আরো জেনে অবাক হবেন যে, পেয়ারার ১৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। একটি বড় পেয়ারায় থাকে ৩৭৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। এছাড়াও, পেয়ারা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট লাইকোপিনি ভরপুর যা ক্যানসার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এমনকি, পেয়ারা আমাদের ব্লাড প্রেশার কমায় এবং শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমিয়ে থাকে যা হার্ট অ্যাটাকসহ আরো নানা রকম হৃৎরোগ থেকে আমাদের রক্ষা করে।

আনারস

পুষ্টিগুণে আনারস অতুলনীয়। আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান। যেগুলো শরীরের কোষকে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। ফলে অথেরোস্ক্লেরোসিস, হার্ট রোগ, বাত এবং বিভিন্ন ক্যানসার থেকে সুরক্ষিত থাকা যায়। প্রতি ১০০ গ্রামে আনারসে পাওয়া যায় ৫০ কিলোক্যালরি শক্তি। ১০০ গ্রাম আনারসে ভিটামিন- সি ৪৭.৮ মিলিগ্রাম। আনারস গলা ব্যথা, সাইনোসাইটিসজাতীয় অসুখগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে। হজমে সাহায্য করে। সঙ্গে শরীরের অন্য অঙ্গগুলোকেও ভালো রাখে।

লেবু

যেকোনো খাবার যেমন- ডাল, সবজি, সুপ, সালাদ বা অন্য যে কোনো কিছুর ওপরে লেবুর রস চিপে নিন। লেবু খাবারে কড়া স্বাদ যোগ করবে পাশাপাশি। শাকসবজি ও ফলমূল না খাওয়ার ফলে রক্তঘটিত রোগ ‘স্কার্ভি’ প্রতিহত করতে সহায়তা করে। খোসা সহ গোটা লেবুতে ৮৩ মি.গ্রা, ভিটামিন সি থাকে যা দৈনিক চাহিদার ৯২ শতাংশ পূরণ করে।

কমলা

ভিটামিন সি-তে ভরপুর কমলার কদর রয়েছে সব ডাক্তারদের কাছেই। কাজেই, কারো যদি সি ভিটামিনের অভাব দেখা দেয়, তবে ডাক্তাররা কমলা সাজেস্ট করে থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম কমলার জুসে ৫৩.২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে যা আমাদের দৈনিক চাহিদা মেটানোর জন্যে যথেষ্ট। এছাড়াও, কমলায় ১৭০টি ভিন্ন ভিন্ন ফাইটো-কেমিক্যাল রয়েছে যা মানব দেহের পুষ্টি উৎপাদনে প্রচুর ভূমিকা রাখে। সেই সাথে, ভিটামিন সি-তে রয়েছে ৬০টিরও বেশি ফ্ল্যাবোনয়েড যা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটোরি হিসেবে আমাদের দেহে দারুণ কাজ করে।

জাম্বুরা

জাম্বুরা অনেকটাই কমলার মতো। কাজেই, বিস্ময়ের কারণ নেই যে জাম্বুরায় ভিটামিন সি থাকবে। তবে, আপনি এই জেনে বিস্মিত হতে পারেন যে জাম্বুরায় ভিটামিন সি এর পরিমাণ কমলার চেয়ে খুব একটা কম নয়। প্রতি ১০০ গ্রাম জাম্বুরার জুসে ভিটামিন সি আছে ৪৫ মিলিগ্রাম যেখানে কমলায় আছে ৫৩ মিলিগ্রাম।

পাকা পেঁপে

একটি ছোট পাকা পেঁপেতে থাকে ৯৫.৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। যদি হাড়ের ব্যথা কিংবা সর্দি-কাশির সমস্যায় ভোগেন, তখন প্রাতরাশে রাখতে পারেন বেশ খানিকটা পাকা পেঁপে। পেঁপে প্রধানত মেমোরি বুস্টিংয়ে সাহায্য করে থাকে।

লাল মরিচ

লাল মরিচেও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। এক কাপ কাঁচা লাল মিষ্টি মরিচে ১৯০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়। আর এ-রকম এক কাপে ক্যালোরির পরিমাণ মাত্র ২৪। এছাড়াও এই মরিচে ফাইবার ও ভিটামিন এ রয়েছে। এমনকি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্সও পাওয়া যায় লাল মিষ্টি মরিচে।

সরিষা শাক

এক কাপ কাঁচা সরিষা শাকে ২১৭% ডিবি বা ১৯৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি আছে। আর এক কাপ রান্না করা সরিষা শাকে ১১৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি এর উপস্থিতি থাকে। এছাড়াও সরিষা শাকে ভিটামিন এ, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফাইবার, ফোলেট ও ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে। যে কোনও সবুজ শাকেও থাকে যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন সি। এ ছাড়াও, নিয়মিত শাক খেলে অনেকটা আয়রন প্রবেশ করে শরীরে।

মিষ্টি আলু

মিষ্টি আলু ভিটামিন সি ও ডি-এর সমৃদ্ধ উৎস। মিষ্টি আলুতে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিকারসিনোজেনিক উপাদান যা ক্যানসার নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকরী। হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখতে এবং কিডনি সুরক্ষাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষকদের মতে, মিষ্টি আলুতে থাকা সুগার রক্তে মিশে শরীরে শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখে। মিষ্টি আলুতে ইনসুলিনের নিঃসরণ হতে সাহায্য করে, যা শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। একটি মিষ্টি আলু থেকে প্রতিদিনের চাহিদা ২৬০ ভাগ ভিটামিন এ, ১২.৬ ভাগ ভিটামিন বি৬ ও ২৮ ভাগ ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এছাড়া সাধারণ একটি বড় আলুতেও থাকে ৭২. ৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। ফলে প্রতিরোধশক্তি বাড়তে পারে নিয়মিত আলু খেলেও।

ব্রকোলি

ব্রকোলির মধ্যে রয়েছে সালফরফেন। যা ক্যানসার রুখতে উপকারী। লো ক্যালরির এই সব্জি স্তন, লিভার, ফুসফুস, প্রোস্টেট, ত্বক, পেট ও ব্লাডার ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে অব্যর্থ বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা। হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতেও উপকারী ব্রকোলি। এক কাপ ভর্তি ব্রকোলি কুচিতে থাকে ৮১.২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। তবে বেশি ঠান্ডা বা অতিরিক্ত গরমে রাখলে তার পরিমাণ কিছুটা কমে যায়। অর্থাৎ, কাঁচা ব্রকোলিতে যতটা ভিটামিন থাকে, রান্নার পর ততটা থাকে না। তবুও অনেক খাদ্যের তুলনায় বেশি ভিটামিন সি শরীরে প্রবেশ করে নিয়মিত ব্রকোলি খেলে।

প্রীতি / প্রীতি