আজ সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর মৃত্যুবার্ষিকী

বিশ্ববিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাসপাড়ের সূর্যসন্তান সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে এক সঙ্গীত পরিবারে ১৮৬২ সালের ৮ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা সবদর হোসেন খাঁ ওরফে সদু খাঁও ছিলেন বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ। মাতার নাম সুন্দরী বেগম। তার সঙ্গীতগুরু ছিলেন আগরতলা রাজদরবারের সভাসঙ্গীতজ্ঞ তানসেনের কন্যাবংশীয় ওস্তাদ কাশিম আলী খাঁ।
আলাউদ্দিনের ডাকনাম ছিল ‘আলম’। বাল্যকালে অগ্রজ ফকির আফতাবউদ্দিন খাঁর কাছে সঙ্গীতে তার হাতেখড়ি হয়। সুরের সন্ধানে তিনি ১০ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে একটি যাত্রাদলের সঙ্গে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ান। ওই সময় তিনি জারি, সারি, বাউল, ভাটিয়ালি, কীর্তন, পাঁচালি প্রভৃতি গানের সঙ্গে পরিচিত হন। পরে কলকাতা গিয়ে তিনি সঙ্গীত সাধক গোপালকৃষ্ণ ভট্টাচার্য ওরফে নুলো গোপালের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সরোদে বিশেষত্ব অর্জন করেন। সহজাত প্রতিভাগুণে তিনি সরোদ বাদনে ‘দিরি দিরি’ সুরক্ষেপণের পরিবর্তে ‘দারা দারা’ সুরক্ষেপণ পদ্ধতি প্রবর্তন করেন। সেতারে সরোদের বাদনপ্রণালী প্রয়োগ করে সেতার বাদনেও তিনি আমূল পরিবর্তন আনেন। এভাবে তিনি সঙ্গীত জগতে এক নতুন ঘরানার প্রবর্তন করেন, যা ‘আলাউদ্দিন ঘরানা’ বা শ্রেণি ‘মাইহার ঘরানা’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর নির্দেশে ও পরামর্শে কয়েকটি নতুন বাদ্যযন্ত্র উদ্ভাবিত হয়। সেগুলোর মধ্যে ‘চন্দ্রসারং’ ও ‘সুরশৃঙ্গার’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি অনেক রাগ-রাগিনীও সৃষ্টি করেন। যেমন- হেমন্ত, দুর্গেশ্বরী, মেঘবাহার, প্রভাতকেলী, হেম-বেহাগ, মদন-মঞ্জরী, মোহাম্মদ (আরাধনা), মাঞ্ঝ খাম্বাজ, ধবলশ্রী, সরস্বতী, ধনকোশ, শোভাবতী, রাজেশ্রী, চণ্ডিকা, দীপিকা, মলয়া, কেদার মাঞ্ঝ, ভুবনেশ্বরী ইত্যাদি। তিনি স্বরলিপিতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন।
ভারতের মাইহারের রাজা ব্রিজনারায়ণ ওস্তাদজী আলাউদ্দিন খাঁকে নিজের সঙ্গীতগুরুর আসনে অধিষ্ঠিত করলে তিনি মাইহারে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। বেরিলির পীরের প্রভাবে তিনি যোগ, প্রাণায়াম ও ধ্যান শেখেন। এভাবে জীবনের একটা বড় অংশ তিনি অতিবাহিত করেন।
১৯৩৫ সালে বিশ্বখ্যাত নৃত্যশিল্পী উদয় শঙ্করের সঙ্গে বিশ্ব ভ্রমণে বের হন তিনি। এ সময় তিনি ইংল্যান্ডের রানী কর্তৃক 'সুর সম্রাট' খেতাবপ্রাপ্ত হন। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ‘খাঁ সাহেব’ উপাধিতে ভূষিত করে। ভারত সরকার তাঁকে একে একে ‘সঙ্গীত নাটক আকাদেমি সম্মান’ (১৯৫২), সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব ‘পদ্মভূষণ’ (১৯৫৮) ও ‘পদ্মবিভূষণ’ (১৯৭১); বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ‘দেশিকোত্তম’ (১৯৬১) এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ‘ডক্টর অব ল’ উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৫৪ সালে তিনি ভারত সরকার কর্তৃক প্রথম সঙ্গীত নাটক আকাদেমির ফেলো নির্বাচিত হন। তিনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমন্ত্রণে শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীতে আমন্ত্রিত অধ্যাপক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এসব দুর্লভ সম্মান ও খেতাব সঙ্গীতবিদ্যায় আলাউদ্দিন খাঁর অসাধারণ কীর্তি ও সাফল্যকেই সূচিত করে।
ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর তালিমের গুণে তাঁর পুত্র সরোদশিল্পী ওস্তাদ আলী আকবর খান বিশ্ববিখ্যাত হয়েছেন। ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মভূষণ’ ও ‘পদ্মবিভূষণ’ এবং তাঁর জামাতা সেতারশিল্পী পন্ডিত রবিশঙ্কর বিশ্বখ্যাত হয়েছেন এবং ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মভূষণ’, ‘পদ্মবিভূষণ, ও ‘ভারতরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামী জনগণের সাহায্যার্থে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ারে ১৯৭১-এর ১ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ। এ আয়োজনের সঙ্গে যাঁরা সম্পৃক্ত ছিলেন তাঁদের অন্যতম ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ। কনসার্টে অনেকের মধ্যে সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন জর্জ হ্যারিসন, তাঁর গানের শিরোনাম ‘বাংলাদেশ’। এ গানের জন্য তৈরি হয়েছিল ‘বাংলাদেশ ধুন’ নামক নতুন সুর। ‘বাংলাদেশ ধুন’ যুগলবন্দি বাদনে রবিশঙ্করের সঙ্গে আলী আকবর খাঁ সেদিন অসাধারণ পারঙ্গমতা প্রকাশ করেন। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ-তনয় হিসেবে সঙ্গীত-সাধনায় আত্মমগ্ন আলী আকবর জন্মভূমির দুর্গতি মোচনে সেদিন উদগ্রীব হয়েছিলেন। বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে, যে অনুষ্ঠান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত গঠনে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছিল। এ কনসার্টের প্রাপ্ত অর্থ বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য ইউনিসেফের শরণার্থী ফান্ডে দান করা হয়।
১৯৭২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ভারতের মাইহারে বিশ্ববরেণ্য সঙ্গীত সাধক ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ মৃত্যুবরণ করেন। তিনি সুর সম্রাট হিসাবে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন চিরকাল।
এমএসএম / জামান

জুলাই আন্দোলনে মোজো সাংবাদিকদের সাহসী ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে : শহীদুল হক

চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের ১৯ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ

কুমিল্লা-৯ আসন পূর্নবহাল রাখাতে মানববন্ধন

নতুন বাংলাদেশ গড়ার বীর সন্তানদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানালেন শেখ সাদী

জুলাই শহিদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের মাঝে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন -খোরশেদ আলম

কক্সবাজারে এসিআই ক্রপ কেয়ারের পরিবেশক সম্মেলন: কৃষি উন্নয়নে নতুন উদ্ভাবনের প্রতিশ্রুতি

বিদ্যালয়ের জমি দখল ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে চিতলমারীতে মানববন্ধন

মাদারীপুরে কুকুরের উপদ্রব: জনভোগান্তি চরমে, প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা

সাভারে সাবেক ইউপি সদস্যের নির্মানাধীন বাড়ি অবরুদ্ধ করে চাঁদা দাবি

বড়লেখায় দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনায় যুবক গ্রেপ্তার

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে নাগেশ্বরীতে মাদক বিরোধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহসচিবের সাথে ইরানী প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত
