ডিসেম্বরে ভারত থেকে আসছে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ

জ্বালানি সংকটের কারণ দেখিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দেশের তেলভিত্তিক সব বিদ্যুৎ কেন্দ্র। উৎপাদন কমিয়ে আনা হয়েছে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রেরও। এতে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি হচ্ছে। ফলে লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে এই ঘাটতি সমন্বয় করা হচ্ছে।

নীতিনির্ধারকরা বলছেন, এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে অপেক্ষা করতে হবে আরো দুই মাস। এরমধ্যে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন শুরুর কথা রয়েছে। এছাড়া ভারতের ঝাড়খন্ডে নির্মাণাধীন আদানি পাওয়ার প্লান্ট থেকেও ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির কথা রয়েছে। তবে ওই বিদ্যুৎ মিলবে ডিসেম্বরে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে ৪০০ মেগাওয়াট দিয়ে এর পরীক্ষামূলক সঞ্চালন শুরু হবে সেপ্টেম্বরে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার লক্ষ্যে ২০১১ সালে ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতামূলক ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট সই হয়। ওই চুক্তির আওতায় ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় ভারতের বিশিষ্ট ধনী ব্যবসায়ী আদানি গৌতম প্রতিষ্ঠিত আদানি গোড্ডা পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণে সমঝোতা সই করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)।

ওই সমঝোতা চুক্তির আওতায় শুধুমাত্র বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দেয়ার জন্য ভারতের ঝাড়খন্ড প্রদেশের গোড্ডা জেলায় ১৬০০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতার একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে আদানি গ্রুপ। ২৫ বছর মেয়াদি বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তিতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ টাকা ৮০ পয়সা। তবে অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর চেয়ে আদানি গ্রুপ বেশি দাম ধরেছে।

বিপিডিবি সূত্র বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে চুক্তি অনুযায়ী ওই দামে বিদ্যুৎ আমদানি সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে দাম সমন্বয় করা হতে পারে। বিপিডিবির তথ্যানুযায়ী, আদানি পাওয়ার চলতি আগস্ট থেকে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাবে। সে লক্ষ্যে কাজও শেষের পথে। চুক্তি অনুযায়ী আদানি পাওয়ারের গত বছর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ অন্তত ৬ মাস পিছিয়ে যায়।

চুক্তি অনুযায়ী আদানি পাওয়ার গোড্ডা থেকে ইন্টারকানেকশন পয়েন্ট পর্যন্ত ১০৬ কিলোমিটার ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন স্থাপন হচ্ছে। ওই পয়েন্ট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত থেকে বাংলাদেশের রোহনপুর ও বগুড়ায় দুটি সাব-স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। সে পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণে ২২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)।

এদিকে বিপিডিবি সূত্র জানিয়েছে, আদানি পাওয়ারের কাজ শেষের দিকে। এখন বাংলাদেশ অংশে সঞ্চালন লাইনের পরীক্ষা চালানো হবে। শিগগিরই এ কাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, শিগগিরই পাওয়ার ব্যাকফিড (পরীক্ষা) চালানো হবে। তবে সাব-স্টেশন নির্মাণের কাজ শেষ না হওয়ায় প্রাথমিকভাবে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন দিয়ে শুরু হবে।

এ প্রসঙ্গে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন জানান, সব কাজ শেষ করে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশ অংশের কাজ এখনো শেষ হয়নি। ফলে আগামী মাস থেকে পরীক্ষামূলক সঞ্চালন শুরু হবে। মূল বিদ্যুৎ আমরা ডিসেম্বরে পাব।

সরকারের সবশেষ মহাপরিকল্পনায় ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। এরমধ্যে ৩৫ শতাংশ গ্যাস থেকে, ৩৫ শতাংশ কয়লা থেকে উৎপাদনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। বাকি ৩০ শতাংশ তেল, হাইড্রো ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্য স্থির করা হয়।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, এখন জীবাশ্ম জ্বালানি চালিত ক্যাপটিভ এবং নবায়নযোগ্য মিলিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ২৫ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। দেশের ১৫২টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে অর্ধেকের বেশি আসে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে।

পিডিবির তথ্যানুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৫৭টি কেন্দ্রের গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ১১ হাজার ১৭ মেগাওয়াট। কিন্তু গ্যাসের উৎপাদন কম হওয়ায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয় এখন চাহিদার তুলনায় কম গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে এসব কেন্দ্রে অর্ধেকের কম বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। চলমান সংকট নিরসনে বিদ্যুৎ আমদানিতে সরকারের চিন্তা রয়েছে। দেশের জ্বালানি নীতিতেও মোট ব্যবহৃত বিদ্যুতের ১৫ শতাংশ আমদানির নির্দেশনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ। চলতি বছরে আরো ১৬০০ মেগাওয়াট যোগ হওয়ার কথা রয়েছে।

উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনায় ২০৪০ সালের মধ্যে প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল এবং ভুটান থেকে মোট ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত। আবার দেশের কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে যাওয়ার অপেক্ষায়। সব মিলিয়ে আগামী দুই মাসের মধ্যে চলমান বিদ্যুৎ সংকট অনেকটা কেটে যাবে।