পিবিআই তদন্তের বিরুদ্ধে নারাজি ব্রিটিশ নাগরিকের

পুলিশের সহযোগিতায় ৭টি মিথ্যা মামলায় নির্যাতন ও জেলখাটানোয় ন্যায়বিচার হতে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন এম মোহিদ আলী মিঠু নামে এক বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ নাগরিক। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর তদন্তে পুলিশের অপরাধের বিষয়টি উঠে এসেছে। সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার তদন্তে আসামিরা দোষী সাব্যস্ত হলেও তার অধীনস্ত অপর এক কর্মকর্তার তদন্তে আসামিদের দায় মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে ভুক্তভোগী ব্রিটিশ নাগরিক অভিযোগ করেছেন।
ভুক্তভোগি মামলার বাদী পিবিআই ঢাকা মেট্রো (দক্ষিণ) এর পুলিশ পরিদর্শক মো. হারুনুর রশিদ কর্তৃক গতবছরের ২ ডিসেম্বর দাখিলকৃত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজির আবেদন করেছেন। শুধু এম মোহিদ আলী মিঠুই নয়, হোটেল রিজেন্সিতে বিনিয়োগকারী ১২০ জন প্রবাসীর মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধেই মিথ্যা মামলায় হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। তাদের মধ্যে মোহাম্মদ জামাল উদ্দিনসহ আরও ১০ থেকে ১৫ জন লন্ডন প্রবাসী প্রতারণার শিকার হয়েছেন
ভুক্তভোগী জামাল উদ্দিন ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের সাবেক চেয়ারম্যান মোসলেহ উদ্দিনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে খিলক্ষেত আমলি আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। উক্ত মামলায় ব্রিটিশ নাগরিক এম মোহিদ আলী মিঠু লন্ডন থেকে বাংলাদেশে এসে আদালতে সাক্ষী দেন। কিন্তু মামলাটি পিবিআই’র তদন্তে প্রতারকদের দায় মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এর প্রেক্ষিতে তিনি আদালতে না-রাজি আবেদন করেছেন। আদালত মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন। সিআইডির পরিদর্শক মো. শফিকুল ইসলাম তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, প্রতারকচক্রের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও দুর্নীতির সংবাদ প্রচার করায় একজন সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে মতিঝিল আমলি আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। উক্ত মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযোগটি মিথ্যা হিসেবে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন পুলিশ। উল্লেখিত মামলার বাদী এম মোহিদ আলী মিঠু বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের দ্বৈত নাগরিক। প্রতারণার মামলার একমাত্র ফেরারি আসামি ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের সাবেক চেয়ারম্যান মুসেলহ উদ্দিন আহমেদ। আর আদালত থেকে জামিনপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন আরিফ মোতাহার ও কবীর রেজা।
অভিযোগে জানা গেছে, দেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের অর্থায়নে ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট নির্মাণে ২০০৫ সালে অর্থ সংগ্রহ করতে প্রচারণা চালানো হয়। ওই প্রচারণার মধ্যে ছিল ২৫ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ডের সমপরিমাণ ২৯ লাখ বাংলাদেশি টাকা বিনিয়োগ করলে তাদেরকে হোটেল মালিকানার অংশ, যুক্তরাজ্য হতে ঢাকায় আসার জন্য বছরে ২টি করে বিজনেস ক্লাসের এয়ার টিকিট, আর বাংলাদেশে অবস্থানের সময়ে থাকা-খাওয়ার সমস্ত খরচ বহনের সুবিধার কথা বলা হয়। প্রত্যেক শেয়ার হোল্ডারের ২৫ হাজার পাউন্ড বা ২৯ লাখ টাকার বিনিময়ে ২ লাখ ৯০ হাজার শেয়ার দেয়ার কথা ছিল। বিনিময়ে দিয়েছে মাত্র ১ লাখ ৭৪ হাজার শেয়ার। আর বাকি শেয়ারের হিসাব বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।
শুরুতে ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি ছিল। বর্তমানে পাবলিক লিমিটেড করা হয়েছে। এই কোম্পানিতে মোট ১২০ জন প্রবাসী ব্রিটিশ বাংলাদেশি নাগরিক বিনিয়োগ করেছেন। তাদের মধ্যে লন্ডন প্রবাসী এম মোহিদ আলী মিঠু ২টি শেয়ার হোল্ডারের চুক্তি করেন। এরপর আসামি পক্ষ চুক্তিভঙ্গ করে একক সিদ্ধান্তে কোম্পানির নামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে তা আত্মসাৎ করে। এতে বিনিয়োগকারীরা বৈধ লভ্যাংশ হতে বঞ্চিত হন এবং তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। পরে এম মোহিদ আলী মিঠু কোম্পানির আয়ব্যয়ের হিসাব-নিকাশ পেতে ব্যর্থ হয়ে ২০১৮ সালে হাইকোর্টে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেন।
২০১৯ সালের ১৪ জুন এম মোহিদ আলী মিঠু যুক্তরাজ্য হতে বাংলাদেশে আসার পর বিভিন্ন এলাকায় থানা পুলিশের সহযোগিতায় তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। একপর্যায়ে তিনি কোম্পানির হিসাব-নিকাশ চাইলে তাকে হত্যার হুমকি দেয়। পরে ২০১৯ সালের ৯ জুলাই বিকালে বনশ্রী এলাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে দাওয়াত খেতে যান এম মোহিদ আলী মিঠু। তখন রামপুরা থানা পুলিশ সেখান থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায়। তৎকালীন থানার ওসির নির্দেশে তাকে মারধর করে তার কাছ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার মোবাইল সেট ও ১০ লাখ টাকা দামের ওমেগা ব্র্যান্ডের হাতঘড়ি ছিনিয়ে নেয়। এরপর তাকে আদালতে পাঠানো হয়। ওই সময় রামপুরা থানার ওসি ছিলেন আব্দুল কুদ্দুস ফকির।
অপরদিকে এম মোহিদ আলী মিঠুর বিরুদ্ধে যেসব মামলা করা হয়েছে, সব মামলার বাদির নাম-ঠিকানা তদন্তে সবই ভুয়া প্রমাণিত হয়। পরে ভুক্তভোগি আদালত হতে জামিনে এসে তার মালামাল ফেরত চান। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার মালামাল ফেরত দেওয়া হয়নি। ভুক্তভোগী মিঠু ২০১৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর আদালতে সিআর মামলা দায়ের করেন। মামলাটি পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-কে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। পিবিআই এর পরিদর্শক হারুন অর রশিদ তদন্তভার পান। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা যে প্রতিবেদন আদালতে দিয়েছেন ওই প্রতিবেদনে মামলার বাদি সন্তুষ্ট হননি। তিনি আদালতে নারাজি দেন।
এম মোহিদ আলী মিঠু সকালের সময়কে জানান, তিনি মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে যুক্তরাজ্য হতে বাংলাদেশ আসতে থাকেন। পিবিআই’র তদন্ত কর্মকর্তা আসামিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছেন। আর মামলার আসামিদের মধ্যে ১৯ নম্বর হতে ২৬ নম্বর আসামির বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৩৭৯ ধারা প্রমাণিত হলেও আদালতে দাখিলকৃত প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করা হয়নি। তার মালামাল পুলিশ হেফাজতে রাখা হলেও তাও এখনো ফেরত দেওয়া হয়নি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এ বিষয়গুলো গুরুত্ব না দিয়েই তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছেন।
তিনি আরও জানান, রামপুরা থানার পুলিশ যে মামলায় তাকে গ্রেফতার করেছিল ওই মামলার বাদীর নাম-ঠিকানা মিথ্যা ও কাল্পনিক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। আর ঘটনাস্থল যেখানে দেখানো হয়েছে, সেখানে তার কোনো ঘর-বাড়ি ছিল না। তারপরও পিবিআই’র তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান মুসলেহ উদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক আরিফ মোতাহার ও কবীর রেজার বিরুদ্ধে মহানগর হাকিম আদালতে এম মোহিদ আলী মিঠু মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইতে প্রেরণ করেন আদালত। পিবিআই তদন্ত শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে।
সূত্র জানায়, ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেডের নামে প্রবাসীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া কোম্পানির কর্মকর্তা ও তাদের সহযোগিরা প্রবাসীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানি ও নির্যাতন করছে। এ ঘটনায় রামপুরা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কুদ্দুস ফকিরসহ তৎকালীন অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাদের পিবিআই এর তদন্ত কর্মকর্তা বাঁচানোর চেষ্টা করছেন ভুক্তভোগীর অভিযোগ।
ব্রিটিশ নাগরিক এম মোহিদ আলী মিঠুর দায়েরকৃত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ফলে আদালত মামলার একমাত্র ফেরারি আসামি মোসলেহ উদ্দিন, আর আসামি কবির রেজা ও আরিফ মোতাহার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির উল্লেখিত ধারা মোতাবেক অপরাধ আমলে নেন। মামলার আসামি মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ এখনো পলাতক হিসেবে রয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান। আর শর্ত সাপেক্ষে কবির রেজা ও আরিফ মোতাহার জামিন নেন। কিন্তু কোর্টের শর্ত সাপেক্ষ বাস্তবায়ন করা হয়নি বলে মামলার বাদী এম মোহিদ আলী মিঠু অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, উচ্চ আদালতে ১৪৯ নং মামলা বিচারের জন্য অপেক্ষমাণ। তাছাড়া উচ্চ আদালতে আরও দুইটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। মামলার বাদি জানান, তার বিরুদ্ধে পুলিশের সহযোগিতায় মিথ্যা ভিত্তিহীন মামলার বিভাগীয় তদন্ত হয়েছে। তদন্তে কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ, কবির রেজা ও আরিফ মোতাহার দোষী প্রমাণিত হয়েছেন। তাছাড়া মামলার বাদী একটি ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি ঢাকা প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
এম মোহিদ আলী মিঠুর দুদকে দায়েরকৃত একটি অভিযোগের অনুসন্ধান শেষে মামলার জন্য প্রক্রিয়াধীন আছে।
তিনি বলেন, ‘ন্যায়বিচারের জন্য আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। আদালতের আইনের প্রতি সম্মান রেখে আমরা বিশ্বাস করছি বাংলাদেশের সমস্ত আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাবো।’
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক মো. শফিকুল ইসলাম সকালের সময়কে বলেন, ‘পুলিশের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তার অভিযোগের বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আর হোটেল রিজেন্সির বিষয়ে আদালত ব্যবস্থা নিয়েছেন। তারপরও বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।’
এমএসএম / এমএসএম

রাষ্ট্রপতিকে প্রধান বিচারপতির শপথ পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে রিট

জেলা ও দায়রা জজ,ঢাকার সাথে কোর্ট রিপোর্টাস এসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত কমিটির সৌজন্যে সাক্ষাৎ

মাগুরার সেই শিশু ধর্ষণের বিচার ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ

ধর্ষণের শিকার শিশুটির সব ছবি অপসারণ করতে হাইকোর্টের নির্দেশ

অর্থপাচার মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান ও গিয়াস উদ্দিন আল মামুন

রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নির্দেশিকায় প্রধান বিচারপতিকে হেয় করা হয়েছে

অর্থপাচার মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান ও গিয়াস উদ্দিন আল মামুন

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের ৩৯ ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ

আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মানিক রিমান্ডে নতুন মামলায় গ্রেফতার মন্ত্রী এমপিসহ ৯ জন

আগামী নির্বাচনের জন্য দোয়া চাইলেন শাজাহান খান

আদালতে সাদিক অ্যাগ্রোর ইমরান

অর্থপাচার মামলায় তারেক রহমান ও মামুনের আপিলের রায় ৬ মার্চ
