প্রায় চার দশক পরে
অবশেষে ডিডিটি-মুক্ত হলো চট্টগ্রাম

গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বন্দর নগরী চট্টগ্রামের কেন্দ্রস্থলে মজুদ করে রাখা হয়েছিল বর্তমানে নিষিদ্ধ কীটনাশক ডিডিটি। ধারণা করা হয়, ক্ষতিকর বিষাক্ত ডিডিটির এটি বিশ্বের বৃহত্তম মজুদ, অবশেষে যা বাংলাদেশ থেকে সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে বিশেষজ্ঞ তত্ত্বাবধানে বিনষ্ট করতে ফ্রান্সে পাঠানো হচ্ছে।
ডিডিটি অপসারণ, বন্দর নগরী চট্টগ্রামের বিপদজনক রাসায়নিক দ্রব্যের গুদাম পরিচ্ছন্নতাকরণের অত্যন্ত জটিল আন্তর্জাতিক এ ব্যবস্থাপনাকে নেতৃত্ব দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ১৯৮৫ সালে ৫০০ মেট্রিক টন কীটনাশক আমদানি করা হয়েছিল, ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহনকারী মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য। অথচ এই চালানটি পরবর্তী পর্যায়ে প্রযুক্তিগতভাবে অকার্যকর হিসাবে গণ্য করা হয়। ডিডিটির এই চালানটি পৌঁছানোর পর এটিকে, আগ্রাবাদ জেলার ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ হেলথ সার্ভিসেস (ডিজিএইচএস) এর মেডিকেল সাব-ডিপোতে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছিল। বছরের পর বছর ধরে, পড়ে থাকার ফলে কীটনাশক বহনকারী বাক্স এবং ব্যাগগুলির অধিকাংশই ছিঁড়ে গিয়ে সাদা ডিডিটি পাউডারের স্তূপগুলি উন্মোচিত হয়। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে ডিডিটির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, কিন্তু সেটির এ বিশাল চালানটির কথা সবাই সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয় আর তা চট্টগ্রামে থেকে যায়।
এফএও’র, কীটনাশক বিশেষজ্ঞ মার্ক ডেভিস ডিডিটির এই উত্তরাধিকার সূত্রে মজুদপক ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমার জানামতে আর কোথাও একটি সুনির্দিষ্ট এলাকা থেকে সর্ব বৃহৎ পরিমাণ কীটনাশক অপসারণের এমন ঘটনা আর নেই। এটি অত্যন্ত অস্বাভাবিক যে এটি একটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে সংরক্ষণ করা হয়েছিল শুধু এ কারণে যে তা দীর্ঘ সময় ধরে সেখানে ছিল।
ডিটিটি যেহেতু ভেঙে যায় না, তাই চালানটির সক্রিয় উপাদানগুলি আজও ঠিক একই ঘনত্বে রয়েছে যেমনটা পাঠানো হয়েছিল। ডিডিটি মানুষ এবং অন্যান্য জীবের জন্য বিষাক্ত এবং বিপদজনক। এটি জীবের উর্বরতা, প্রজনন প্রক্রিয়া ও স্বাভাবিক হরমোন সঞ্চালনাকে ব্যাহত করে। সেই সাথে এটি জীবদেহে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ডিডিটি স্থায়ী জৈব দূষণকারী (পিওপি) হিসাবে, প্রাণীদেহের পাশাপাশি বৃহত্তর পরিবেশে জমা হয়।
এফএও জানায়, চট্টগ্রামের ডিডিটির মতো অপ্রচলিত কীটনাশকের উত্তরাধিকার মজুদ অপসারণ করাই শেষ কথা নয়। আরও বিভিন্নধরনের কীটনাশক রয়েছে যেগুলোর দায়িত্বজ্ঞানহীন ফলে সেগুলো পরিবেশ, খাদ্য, কৃষকদের এবং কখনও কখনও ভোক্তাদের দেহে প্রবেশ করে, যা প্রতিরোধ করা আরও কঠিন। এফএও এ কারণেই সম্ভাব্য সব ধরনের অ-রাসায়নিক কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ কৌশলকে উৎসাহিত করে থাকে।
শহরেরে প্রাণকেন্দ্রে গুদামের অবস্থানের কারণে, ডিডিটি অপসারণের প্রক্রিয়াতে বিষাক্ত ধুলো যাতে সৃষ্ট না হয় তা নিশ্চিত করতে বিশেষ ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়েছিল। ভবনগুলি সিল করে দেওয়া হয়েছিল এবং সব ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক যাতে ভেতরেই থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য ঋণাত্মক বাতাসের চাপের অধীনে কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছিল। বিশেষজ্ঞ মার্ক ডেভিস, যিনি অপারেশনটি তত্ত্বাবধান করেছিলেন, তিনি এ অপসারণের এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার নিরাপত্তা রক্ষার মান নিয়ন্ত্রণের উপর জোর দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, এটি শহুরে পরিবেশে সঞ্চিত বিপুল পরিমাণের বিপজ্জনক পদার্থের মজুদ। কিন্তু অপসারণের কার্যক্রমের সময় এই বিপদজনক রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ এড়াতে এবং পরিবেশে রাসায়নিক যাতে ছড়িয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে আমাদের দিক থেকে সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হয়েছিল। সেক্ষেত্রে ইউরোপীয় নিরাপত্তা মান প্রয়োগ করা হয়েছিল।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার অভিজ্ঞ কর্মী এবং বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে গ্রীস ভিত্তিক একটি বিশেষজ্ঞ কোম্পানি সাইটটিতে ডাইক্লোরো ডিফেনাইল ট্রিক্লোরোইথেন (ডিডিটি) পুনরায় প্যাকিং সম্পন্ন করতে চার মাস সময় নেয়। গরম এবং আর্দ্র পরিস্থিতিতে সুরক্ষামূলক স্যুট পরে প্রশিক্ষিত কর্মীরা বিশেষজ্ঞ যন্ত্রপাতির পাশাপাশি কাজ করেছিলেন। কিছু পরিস্থিতিতে তাদের হাত দিয়ে ডিডিটি সরাতে হয়েছিল কারণ ভবনের ভিতরে যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা অনিরাপদ ছিল। ডিডিটি জাতিসংঘ-অনুমোদিত রাসায়নিক পাত্রে রাখা হয়েছিল যেগুলো ২৪টি শিপিং কন্টেইনারে তোলা হয়।
ডিডিটি অপসারণ সম্পূর্ণভাবে একটি প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়া এবং এটি আন্তর্জাতিক আইন, নিয়ম ও প্রবিধানের আওতায় পরে। শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, মিশর, মাল্টা, ইতালি, স্পেন, পর্তুগাল, মরক্কো, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, জার্মানি এবং ফ্রান্স - এই ১৪টি দেশ বর্জ্য বহনকারী জাহাজটিকে তাদের আঞ্চলিক জলসীমা দিয়ে ট্রানজিট করার জন্য অনুমতি দিয়েছিল। অল্প কিছু দেশই ডিডিটি নিষ্পত্তি করার ক্ষমতা রাখে- ফ্রান্স তাদের মধ্যে একটি। এছাড়াও ফ্রান্স নিরাপদে এবং অন্যান্য দেশ থেকে বিপজ্জনক বর্জ্য আমদানির অনুমতি দেয়।
গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (জিইএফ) এর অর্থায়নে এবং বাংলাদেশ সরকার ও এফএও বাংলাদেশের সহ-অর্থায়নে প্রতিষ্ঠানটির পেস্টিসাইড রিস্ক রিডাকশন ইন বাংলাদেশ প্রকল্পের আওতায় কাজটি করা হয়। দেশ থেকে সমস্ত অপ্রচলিত কীটনাশক অপসারণের সামগ্রিক লক্ষ্যের অংশ হিসেবে এফএও বাংলাদেশ অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার ভিত্তিতে এ অপারেশনটি ডিজাইন করেছে। বাহ্যিক অর্থায়নে বর্জ্য নিষ্পত্তির কার্জক্রমগুলো পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এজন্য কৃষি, স্বাস্থ্য, শিল্প এবং পরিবহন সহ সমস্ত সেক্টর থেকে বিপজ্জনক বর্জ্য মোকাবেলা করার জন্য জাতীয় সক্ষমতা তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। এই অভিযানের অংশ হিসেবে, এফএও বাংলাদেশ বিপজ্জনক বর্জ্য মোকাবেলা করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে।
এফএও বাংলাদেশের প্রতিনিধি রবার্ট ডি. সিম্পসন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চলমান এই সমস্যাটি মোকাবেলা করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করতে পেরে এফএও অত্যন্ত আনন্দিত। দুর্ভাগ্যবশত, এ বিষয়টি আরও তাড়াতাড়ি সমাধান করা হয়নি। ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে বা আধুনিক কৃষিতে ডিডিটি ব্যবহারের কোনো জায়গা নেই।
তিনি আরও বলেন, এত দীর্ঘ সময় পরে ডিডিটি অপসারণ বাংলাদেশের জন্য, বিশেষ করে চট্টগ্রামের জনগণের জন্য, এই উন্নতি বিশেষভাবে সমাদৃত। মন্ত্রনালয়, চট্টগ্রামের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, ডিডিটি অপসারণকারী কোম্পানি এবং বিশেষ করে গত মাসে ডিডিটি প্যাকেজ করা ফ্রন্টলাইন কর্মীরা প্রশংসার দাবি রাখে।
এফএও বাংলাদেশের ডিডিটি অপসারণকারী প্রকল্পের নেতৃত্বে ছিলেন সাসো মার্টিনভ। তিনি বলেন, এটি একটি বড় অর্জন, কিন্তু বাংলাদেশে অন্যান্য কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে এখনও অনেক দূর যেতে হবে। আমরা কীটনাশক ব্যবহারের প্রশাসনিক দক্ষতা ও প্রয়োগকে শক্তিশালী করতে চাই, খাদ্যে অবশিষ্ট কীটনাশকের ব্যবহারের ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ ও রিপোর্টিং ব্যবস্থা উন্নত করতে চাই এবং পরিবেশের জন্য কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে চাই।
সাদিক পলাশ / সাদিক পলাশ

ড. ইউনূসের ভাষণ আজ: জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার সম্ভাবনা

বাংলাদেশিদের জন্য ভারতীয় ভিসার খরচ বাড়লো

বিকেলে রায়েরবাজার কবরস্থান থেকে অজ্ঞাত লাশ উত্তোলন শুরু

নির্বাচনের আগ পর্যন্ত অভিযান চলবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

১১ মাসে পুলিশের বিরুদ্ধে ৭৬১ মামলা হয়েছে : টিআইবি

রোববার শাহবাগ এলাকায় যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ করবে পুলিশ

৫ আগস্ট সব পক্ষের উপস্থিতিতে জুলাই ঘোষণাপত্র : প্রেস উইং

আগুনের ঝুঁকিতে সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট, আগেই জানিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস

আ. লীগ অপকর্ম করতে চাইলে কোনোভাবেই ছাড় পাবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

৫ আগস্টের আগেও জুলাই ঘোষণাপত্র হতে পারে : মাহফুজ আলম

সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে

জুলাই ঘোষণাপত্র এখন বাস্তবতা, ঘোষিত হবে ৫ আগস্টের মধ্যে: মাহফুজ আলম
