উচ্চ বায়ু দূষণের কারণে বছরে মারা যাচ্ছে দেশের ৮৮ হাজার মানুষ

উচ্চ মাত্রার বায়ু দূষণের কারণে বছরে বাংলাদেশের ৭৮ থেকে ৮৮ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে জিডিপির ক্ষতি হচ্ছে ৩ দশমিক ৯ থেকে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। পাশাপাশি বায়ূ দুষণের সংস্পর্শে আসায় উল্লেযোগ্যভাবে শ্বাসকষ্ট, কাশি, নিম্ন শ্বাস নালীর সংক্রমণ এবং বিষন্নতার ঝুঁকি বাড়ছে। এছাড়া অন্যান্য স্বাস্থ্যগত অবস্থার ঝুঁকি বাড়ায় পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, বয়স্ক এবং সহজাত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের যেমন ডায়াবেটিস, হার্ট বা শ্বাসযন্ত্রের অবস্থা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের একটি নতুন প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এসময় সভাপতিত্ব করেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ড্যান ড্যান চেন। অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী এবং স্বাস্থ্য সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। বক্তব্য দেন বিশ^ব্যাংকের হেলথ স্পেশালিস্ট ওয়ামেগ আজফার রাজা প্রমুখ।
‘ব্রিদিং হেভি: নিউ ইভিডেন্স অন এয়ার পলিউশন অ্যান্ড হেলথ ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক প্রতিবেদনে ঢাকা ও সিলেটের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বহিরাঙ্গন বায়ু দূষণের প্রভাব মূল্যায়ন করা হয়েছে। স্বাস্থ্যের উপর বায়ু দূষণের প্রভাব কমানোর জন্য, প্রতিবেদনে জনস্বাস্থ্য পরিষেবা এবং প্রতিক্রিয়া প্রক্রিয়ার উন্নতি, বায়ু দূষণের ডেটা মনিটরিং সিস্টেমের উন্নতি, প্রারম্ভিক ওয়েমিং সিস্টেমে বিনিয়োগ এবং আরও গবেষণায় জড়িত করাসহ অবিলম্বে পদক্ষেপের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ঢাকা শহরের বড় বড় নির্মাণ এবং ক্রমাগত যানবাহন সহ সাইটগুলিতে বায়ু দূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। এই সাইটগুলিতে, সূক্ষ্ম কণা পদার্থ, যা স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বিপদজ্জনক বলে মনে করা হয়। ঢাকায় বায়ূ দুষণের অবস্থা হচ্ছে এয়ার কোয়ালিটি নির্দেশিকা থেকে গড়ে ১৫০ শতাংশ বেশি, যা প্রতিদিন প্রায় ১ দশমিক ৭ শতাংশ সিগারেট ধূমপানের সমতুল্য। মাত্রার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঘনত্ব বৃহত্তর ঢাকার ইট ভাটার কাছে পাওয়া যায়, যা সহনীয় মাত্রার চেয়ে ১৩৬ শতাংশ বেশি, প্রতিদিন ১ দশমিক ৬ সিগারেট খাওয়ার সমান।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ইট ভাটা সহ দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় প্রধান নির্মাণ এবং যানজটের কাছাকাছি বসবাসকারী শিশুদের মধ্যে নিম্ন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল। সিলেট বিভাগ, যেখানে দেশের সবচেয়ে বিশুদ্ধ বায়ু রয়েছে, এখনও ডব্লিউএইচও নির্দেশিত জিআই এম ডব্লিউ পিএম-২ ঘনত্বের মাত্রা ৮০ শতাংশ বেশি অনুভব করে। এটি প্রতিদিন ১২ টি সিগারেট খাওয়ার সমান।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ধূমপান বন্ধ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা অনুযায়ী গত ৭ বছরেও এ নিয়ে কোন গাইডলাইন হয়নি। এটা দু:খজনক। বৃটিশ আমেরিকা টোব্যাকোতে সরকারের ৭ শতাংশ শেয়ার থাকলেও এর বোর্ডে আছে ৬০ শতাংশ প্রতিনিধি সরকারের সিনিয়র সচিব ও সচিবের মতো মানুষ। ফলে তাদে কারণে ধুমপান বন্ধে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। এখন তামাক নিয়ন্ত্রণে কর বাড়ানে এবং জ¦ালানি তেল আমদানি করতে হলে এমন জ¦ালানি আনতে হবে যাতে পরিবেশ দূষন কম করে। দেশের আইন থাকলেও কার্যকর ব্যবহার হচ্ছে না।
আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, অবকাঠামো তৈরির সময় পরিবেশ সংক্রান্ত নিরাপত্তা মানা হচ্ছে না। সরকারি বরাদ্দ থাকলেও ঠিকাদাররা কাজে লাগাচ্ছে না। ইটভাটা ও এসব কাজে যারা যুক্ত তারা এত ক্ষমতাবান যে আমরা কুলিয়ে উঠতে পারি না। কিন্তু তাই বলেতো হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না।
ড্যান ড্যান চেন বলেন, পরিবেষ্টিত বায়ু দূষণ একজন শিশু থেকে বয়স্ক সকলকেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। ২০১৯ সালে বায়ু দূষণ ছিল বাংলাদেশে মৃত্যু ও অক্ষমতার দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ। দেশের জিডিপির প্রায় ৩ দশমিক ৯ থেকে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ খরচ হয়েছে" এ কারনে। "দেশের টেকসই এবং সবুজ প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য বায়ু দূষণ মোকাবেলা গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্লেষণমূলক কাজ এবং নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে বায়ু দূষণ কমাতে সাহায্য করছে।
বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশে ২০১৯ সালে প্রায় ৭৮-৮৮ জন মারা গেছে। দেশের অভ্যন্তরে বায়ু দূষণের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হলেও, সমস্ত অঞ্চলে পিএম-এর ঘনত্ব এয়ার কোয়ালিটি নির্দেশিকা দিয়ে সুপারিশ করা থ্রেশহোল্ডের উল্লেখযোগ্যভাবে উপরে। সবচেয়ে দূষিত বিভাগ ঢাকা এবং সবচেয়ে কম দূষিত সিলেট। ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্বের দ্বিতীয় দূষিত শহর হিসাবে স্থান পেয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল (খুলনা ও রাজশাহী) পূর্বাঞ্চলের (সিলেট ও চট্টগ্রাম) চেয়ে বেশি দূষিত। ঢাকা বিভাগে, স্থানীয় দূষণ ছাড়াও, মোট পিএমএস ঘনত্বের এক-পঞ্চমাংশ পর্যন্ত আন্তঃসীমান্ত উৎস থেকে আসে।
ডব্লিউএইচও নির্দেশিত মাত্রার তুলনায় পিএমএএসএর সংস্পর্শে এক শতাংশ বৃদ্ধির ফলে একজন ব্যক্তির শ্বাসকষ্টের সম্ভাবনা ১২ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। ভেজা কাশি হওয়ার সম্ভাবনা ১২ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে এবং নিম্ন শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৮ দশমিক ১ শতাংশ বেশি হতে পারে। বায়ু দূষণ মানসিক স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করে। বড় নির্মাণ এবং ক্রমাগত ট্র্যাফিক সহ অবস্থানগুলিতে বিষন্নতা সবচেয়ে বেশি রিপোর্ট করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে ডব্লিউএইচও নির্দেশিত মাত্রার উপরে পিএম-২এর সংস্পর্শে এক শতাংশ বৃদ্ধি হতাশাগ্রস্ত হওয়ার ২০ শতাংশ উচ্চ সম্ভাবনার সাথে যুক্ত।
ওয়ামেগ আজফার রাজা বলেন, বায়ু দূষণের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হয়, এবং জলবায়ু পরিবর্তন বায়ুর গুণমানকে আরও খারাপ করে। সময়ের সাথে সাথে, জলবায়ুপরিবর্তন এবং নগরায়ন বায়ু দূষণকে আরও তীব্র করবে স্বাস্থ্য খাত। বায়ু দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আসন্ন স্বাস্থ্য সংকট মোকাবেলা করার জন্য ভালভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জরুরী পদক্ষেপগুলির মধ্যে নিরাময় মূলক যত্ন দেওয়ার জন্য জনস্বাস্থ্য পরিষেবা প্ল্যাটফর্মের উন্নতি এবং প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রচার অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। বায়ু দূষণের হটস্পটগুলিতে বসবাসকারী লোকেদের ক্রমাগত কাশি এবং শ্বাসকষ্টের জন্য সম্প্রদায়-স্তরের স্ক্রীনিং সরকারকে উদীয়মান স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির সমাধান করতে সাহায্য করবে। বায়ু মানের ডেটার নিবিড় পর্যবেক্ষণ এবং আরও গবেষণা বায়ু দূষণের স্বাস্থ্যের প্রভাবগুলি মোকাবেলা করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা তৈরি করতে সহায়তা করবে।
প্রীতি / প্রীতি

ড. ইউনূসের ভাষণ আজ: জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার সম্ভাবনা

বাংলাদেশিদের জন্য ভারতীয় ভিসার খরচ বাড়লো

বিকেলে রায়েরবাজার কবরস্থান থেকে অজ্ঞাত লাশ উত্তোলন শুরু

নির্বাচনের আগ পর্যন্ত অভিযান চলবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

১১ মাসে পুলিশের বিরুদ্ধে ৭৬১ মামলা হয়েছে : টিআইবি

রোববার শাহবাগ এলাকায় যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ করবে পুলিশ

৫ আগস্ট সব পক্ষের উপস্থিতিতে জুলাই ঘোষণাপত্র : প্রেস উইং

আগুনের ঝুঁকিতে সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট, আগেই জানিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস

আ. লীগ অপকর্ম করতে চাইলে কোনোভাবেই ছাড় পাবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

৫ আগস্টের আগেও জুলাই ঘোষণাপত্র হতে পারে : মাহফুজ আলম

সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে

জুলাই ঘোষণাপত্র এখন বাস্তবতা, ঘোষিত হবে ৫ আগস্টের মধ্যে: মাহফুজ আলম
