হংকং থেকে হেলেনার ‘জয়যাত্রা’ স্যাটেলাইটে চলছিল

আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত আলোচিত নেত্রী হেলেনা জাহাঙ্গীরের অন্যতম সহযোগী হাজেরা খাতুন এবং সানাউল্ল্যাহ নূরীকে রাজধানীর গাবতলী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। র্যাব জানায়, জয়যাত্রা টিভি হংকং এর একটি ডাউন লিংক চ্যানেল হিসেবে সম্প্রচার হয়ে আসছে। এই ফ্রিকুয়েন্সির জন্য হংকংকে প্রতি মাসে প্রায় ৬ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হয়। দেশের গুরুত্ব বিবেচনায় এক থেকে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রতিনিধিরা নিয়োগ পেতেন। এই আইপিটিভিটির প্রতিনিধিদের প্রতি মাসে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দিতে হতো।
আজ মঙ্গলবার ভোরে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৪ অভিযান চালিয়ে হাজেরা ও সানাউল্ল্যাহকে গ্রেপ্তার করে। এসময় দুইটি ল্যাপটপ ও দুইটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুর একটায় কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ও ব্যক্তিদের সম্মানহানি করার অপচেষ্টার অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হাজেরা জানায়, জয়যাত্রা টিভি বাংলাদেশের প্রায় ৫০টি জেলায় সম্প্রচারিত হয়ে থাকে। টিভি চ্যানেলটি রাজধানী ও জেলা পর্যায়ের পাশাপাশি মফস্বল ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত পরিকল্পনা নেয়া হয়। যাতে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অধিকসংখ্যক প্রতিনিধি নিয়োগের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা যায়। গুরুত্ব বিবেচনায় জেলা প্রতিনিধি ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা, উপজেলা প্রতিনিধি ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা এককালীন দিতে হয়।
এছাড়া প্রতিনিধিদের কাছ থেকে প্রতি মাসে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। এই আইপিটিভিটি বিশ্বের প্রায় ৩৪টি দেশে সম্প্রচারিত হয়। যেখানে দেশের গুরুত্ব বিবেচনায় এক থেকে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রতিনিধিরা নিয়োগ পেয়ে থাকেন। যারা প্রতি মাসে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে থাকেন। নিয়োগ বাণিজ্য, অর্থ সংগ্রহ ও যাবতীয় হিসাবপত্র গ্রেপ্তার হাজেরা খাতুন এর উপর ন্যাস্ত বলে তিনি জানান।
গ্রেপ্তার হাজেরার উত্থান
র্যাব জানায়, হাজেরা খাতুন ২০০৯ সালে কুমিল্লার একটি কলেজ থেকে মাস্টার্স করেন। এরপর তিনি হেলেনা জাহাঙ্গীরের মালিকানাধীন মিরপুরে একটি পোশাক কারখানায় অ্যাডমিন (এইচ আর) পদে চাকরি শুরু করেন। তিনি হেলেনা জাহাঙ্গীরের কাছের আত্মীয় এবং কর্মদক্ষতা গুনে হেলেনা জাহাঙ্গীরের অত্যন্ত আস্থাভাজন হয়ে উঠেন।
২০১৬ সালে তিনি ‘জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন’ এর ডিজিএম হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর তিনি ‘জয়যাত্রা টিভি’ প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে জিএম (অ্যাডমিন) এর পদে নিযুক্ত হন। গ্রেপ্তার হাজেরা খাতুন মূলত দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কার্যক্রমসহ হেলেনা জাহাঙ্গীরের আর্থিক বিষয়াদি দেখভাল করতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।
জয়যাত্রা টিভি সম্পর্কে গ্রেপ্তার হাজেরা খাতুনকে জিজ্ঞাসাবাদে, জয়যাত্রা টিভি ২০১৮ সাল থেকে হংকং এর একটি ডাউন লিংক চ্যানেল হিসেবে সম্প্রচার হয়ে আসছে। যার ফ্রিকুয়েন্সি হংকং থেকে বরাদ্দ করা হয়েছে। এই ফ্রিকুয়েন্সির জন্য হংকংকে প্রতি মাসে প্রায় ৬ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হয়।
তবে হংকং থেকে বরাদ্দ ফ্রিকুয়েন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশে সম্প্রচারের কোন বৈধ অনুমোদন নেই বলে গ্রেপ্তার হাজেরা খাতুন জানান।
সম্প্রচারের জন্য ক্যাবল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে রিসিভার জয়যাত্রা টিভি বা তার প্রতিনিধির দ্বারা ক্যাবল ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। প্রতিনিধিরা ক্যাবল ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সম্প্রচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে চাকরিচ্যুত হয়ে থাকেন বলেও জানান হাজেরা।
র্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, অর্থ বাণিজ্যের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনেক বিতর্কিত ব্যক্তিরা নিয়োগ পেয়েছেন। হেলেনা জাহাঙ্গীরের পরিকল্পনা, উৎসাহে বা চাপে, নির্দেশনায় জয়যাত্রা টিভির কোন কোন প্রতিনিধি নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়েছেন। এছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যক্তি প্রচার, প্রার্থিতা প্রচার, সাক্ষাতকার ইত্যাদির মাধ্যমে অর্জিত অর্থের একটি অংশ গ্রেপ্তারদের মাধ্যমে হেলেনা জাহাঙ্গীর গ্রহণ করে থাকতেন বলে গ্রেপ্তাররা জানান। যে সমস্ত বিজ্ঞাপন প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমে প্রচারিত হত না সেগুলো জয়যাত্রা টিভিতে প্রচার করা হতো। যেমন-তাবিজ- কোবজ, টুটকা- ফাটকা, ভাগ্য বলে দিতে পারে, জ্বীনের সাথে সরাসরি যোগাযোগ, ফারা কেটে যাওয়া এবং গোপন সমস্যার সমাধান ইত্যাদি।
তিনি আরো জানান, হাজেরা খাতুন জানিয়েছেন, হেলেনা জাহাঙ্গীর জয়যাত্রা টিভিকে নিজের প্রচার ও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য ব্যবহার করতেন। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বিভিন্ন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জয়যাত্রা টিভি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতিবাচক প্রচারণা চালাতেন। তিনি তার প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরিচ্যুতদের একইভাবে হেনস্থা করতেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, জয়যাত্রা টিভি এর বিশাল নেটওয়ার্ক নিয়ে হেলেনা জাহাঙ্গীর নেতিবাচক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করেন। মূল মিডিয়া জগতের বিপরীতে তিনি একটি সংগঠন তৈরির পরিকল্পনা করেন যেখানে ৫ হাজার সংবাদকর্মীর একটি বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি হবে। তিনি দেশব্যাপী এই নেটওয়ার্ক ব্যক্তি হীন স্বার্থে ব্যবহারের পরিকল্পনা করেন। মাঝে মধ্যে তিনি ঢাকায় কর্মী সমাবেশ করতেন এবং ক্ষেত্র বিশেষে নিজের শো-ডাউনে তাদেরকে ব্যবহার করতেন।
কে এই সানাউল্ল্যাহ নুরী
গ্রেপ্তার সানাউল্ল্যাহ নুরী সম্পর্কে র্যাব কর্মকর্তা মঈন জানান, জয়যাত্রা টিভির প্রতিনিধি সমন্বয়ক ছিলেন নুরী। তিনি হেলেনা জাহাঙ্গীরের নির্দেশনায় প্রতিনিধিদের কাছ থেকে টাকা তুলতেন। কেউ মাসিক টাকা দিতে গড়িমসি করলে ভয় ভীতি প্রদর্শন করতেন। এলাকাতে তার নামে চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে। তিনি গাজীপুর গার্মেন্টস সেক্টরে চাঁদাবাজি করে তার একটি অংশও জয়যাত্রা টিভিতে দিতেন। এছাড়াও তিনি গাজীপুর ও আশেপাশের এলাকার অনুমোদনহীন জয়যাত্রা টিভির সম্প্রচার নিশ্চিত করতেন।
প্রীতি / প্রীতি

সাবেক এমপি সাইফুলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ আজ

চার বিচারপতির বিষয়ে তদন্ত চলমান : সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন

চার বিচারপতির বিষয়ে তদন্ত চলমান : সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন

বিচারপতি আক্তারুজ্জামানের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি

জাকসু নির্বাচন স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট

আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ২য় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ

ডাকসু নির্বাচন স্থগিত চেয়ে সিজারের রিট কার্যতালিকা থেকে বাদ

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে কোনো রিট শুনব না : হাইকোর্ট

‘র্যাবের বন্দিশালায় থাকা ব্যারিস্টার আরমানের মুক্তির চেষ্টা করেছি’

জিএম কাদের ও তার স্ত্রীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা

শেখ হাসিনার মামলায় রাজসাক্ষী মামুনের জেরা শুরু

সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে প্রমাণিত তারেক রহমান নির্দোষ : কায়সার কামাল
