নিজ ক্যাম্পাসেই অমি-তানজুম হলুদ ছোঁয়ায় উচ্ছল
খোলা মঞ্চ। পেছনে গাঁদা ফুলের মালা দিয়ে সাজানো দেয়ালহীন বউ ঘর। সামনে বান্ধবীদের মাঝে চাঁদবরণ হাসিমাখা মুখে বসে আছেন কনে। কারো হাতে কাঁচা হলুদের রঙ আবার কেউ কনের গায়ে বাহারি ফুলের পাঁপড়ি ছিটাতে ব্যস্ত। আজ সবার আনন্দ যেন বাঁধ মানে না। এমনই এক বিয়ের প্রথম পর্ব গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান লক্ষ করা যায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।
ব্যতিক্রমধর্মী এ আয়োজনে হতবাক অনেকেই। কারণ, এর আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা খুব একটা ঘটেনি। সবাই একটু-আধটু উঁকি দিয়ে দেখছে, কী হয়! বাঁশের ডালা, কুলা, চালুন ও মাটির সরা, ঘড়া, মটকা দিয়ে বিয়ের বাড়ির আমেজ তৈরি করা হয়েছে যেন! এরকম ঘটনা রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিয়ের পিঁড়িতে বসবে কিন্তু সেখানে যেতে পারছে না বন্ধু ও সহপাঠীরা, তাই ক্যাম্পাসেই ঘটা করে আয়োজন হলো গায়ে হলুদের। এসময় বর ও কনের সহপাঠীরা একই রঙ্গের পাঞ্জাবি ও শাড়ি পরে হলুদ সন্ধ্যা উদযাপন করে।
বুধবার বিকালে ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অর্থনীতি বিভাগের প্রাঙ্গণে তাই অন্য দিনের চাইতে আলাদা রং লাগে। অর্থনীতি বিভাগ ও লোক প্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগ জুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ। কনে তানজুমকে সাজিয়ে সহপাঠীরা ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়েছে। আর সহপাঠীরা কেউ গায়ে হলুদ লাগিয়ে দিচ্ছেন, আবার কেউ তাকে কেক, মিষ্টি, বিভিন্ন ফল খাওয়াচ্ছেন। আবার কেউ ছবি তুলছেন। আবার কেউ গানের তালে নাচছেন।
অন্যদিনের মতো আড্ডা হয়নি; বরং সবার চোখ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী অমিত হাসান অমি এবং লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের স্নাতক ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তানজুমের গায়ে হলুদের মঞ্চে। হঠাৎ করেই ক্যাম্পাসের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অর্থনীতি বিভাগের সামনেই সবাইকে অবাক করে শুরু হয় হলুদের অনুষ্ঠান। নেই কোনো বাইরের অতিথির আনাগোনা।সন্ধ্যায় হলদে শাড়ি আর পাঞ্জাবি পরা একদল তরুণ-তরুণীর আনাগোনায় মুখর হয়ে ওঠে অর্থনীতি বিভাগের প্রাঙ্গণ। ক্যাম্পাসে গায়ে হলুদের আয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব কমই দেখা যায়।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলেন, গায়ে হলুদের এ আয়োজন বর ও কনের পরিবারের লোকজন কেউ করেনি। বিয়ের অনুষ্ঠানে সব বন্ধুরা উপস্থিত থাকতে পারবে না বলেই ক্যাম্পাসে সবার উদ্যোগে এমন ভিন্নধর্মী গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে।
চিরাচরিত গায়ে হলুদের নিয়মের মতোই হলুদ, মেহেদি মাখিয়ে করা হয়েছে আনুষ্ঠানিকতা। হলুদে তাদের বন্ধুরাসহ অংশ নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরাও।
ভিন্নধর্মী এ আয়োজন সম্পর্কে বরের বন্ধু বলেন, 'বিয়েতে সবার পক্ষে তার বাড়িতে যাওয়া সম্ভব না তাই বন্ধুর বিয়েতে মজা করার জন্য ক্যাম্পাসে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে। আমরা সব বন্ধু-বান্ধবী এ আয়োজন উপস্থিত হতে পেরেছি। এ আয়োজনে আমাদের বিভাগের সব জ্যেষ্ঠ ও কনিষ্ঠরা সহযোগিতা করেছে।'
উচ্ছ্বসিত কনে তানজুম বলেন, আজকে আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ স্মরণীয় দিন। এই দিনটি আমি কখনই ভুলবো না। যারা এত সুন্দর একট আয়োজন করেছে তাদের সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। সবার কাছে আমার নতুন জীবনের জন্য দোয়া চাই।
বর অমি বলেন, আমার বিয়ে উপলক্ষে এমন সুন্দর অনুষ্ঠান করতে পারবো এবং প্রিয়জনদের একত্রিত করতে পারবো কখনোই ভাবিনি। উপস্থিত হবার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। এরকম সবার ভালবাসা পাব আগে কখনো ভাবিনি। সবার কাছে নতুন জীবনের জন্য দোয়া চাই।
উল্লেখ্য, কনের নাম তানজুম ফেরদৌস। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী। বর অমিত হাসান অমি। সেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
এমএসএম / এমএসএম