ক্রীড়াঙ্গনেরও স্বপ্ন সারথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু

গ্রিক পুরাণের ফিনিক্স পাখির মতোই গল্পটা। মৃত্যুকে জয় করে ফের তিনি প্রিয় মাতৃভূমিতে। দেশ তখন দশ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ। বিধ্বস্ত সেই দেশটিকে পুনর্নির্মাণে হাত দিলেন এক মহানায়ক। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার হাত ধরেই এগিয়ে চলার গল্প শুরু বাংলাদেশ নামের এই চিরসবুজ দেশটির।
ক্রীড়াঙ্গনেরও স্বপ্ন সারথি তিনি। বঙ্গবন্ধুই বুনে দিয়েছিলেন স্বপ্নের বীজ। তিনি নিজে ছিলেন ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ। স্বাধীন বাংলাদেশে অন্যসব কিছুর মতো ক্রীড়াঙ্গনেও চোখ ছিল তার। সবসময় পাশে ছিলেন সদ্য স্বাধীন দেশটাকে গড়ে তোলার পথে খেলার জগতের মানুষদের সুখে-দুঃখেও।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে ক্রীড়াঙ্গনের কথা বললেই অবধারিতভাবে এসে যায় বঙ্গবন্ধুর নাম। শূন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগার, শত সমস্যাকে একপাশে সরিয়ে বাংলাদেশকে মাথা উঁচু করে পথচলার মন্ত্রটা দিয়েছিলেন তিনিই।
স্বাধীনতার পর দেশের ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর যাত্রা শুরু বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে। গঠন করা হয় ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। কীভাবে স্রেফ শূন্য থেকে এগিয়ে নেওয়া খেলাধুলাকে,
বঙ্গবন্ধুর কথা মনে পড়তেই আবেগি হয়ে ওঠা হারুনুর রশিদ বলছিলেন, ‘খেলোয়াড় ও খেলার প্রতি উনার ছিল অফুরন্ত ভালোবাসা। এখন আসলে এমন কিছু কল্পনাও করা যায় না। বঙ্গবন্ধু খেলা ও খেলোয়াড়দের ভালবাসতেন। তাদের ভরণ-পোষনের জন্য বৃত্তি চালু করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যদি ওদের খাওয়া-পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তা মুক্ত রাখা যায় তবে দেশের মুখ উজ্জ্বল হবে। সবার আগে খেলোয়াড়দের আর্থিক দিকটা নিয়ে ভেবেছেন। আবার তখনই তিনি গড়ে তুলেছেন ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। পরে যেটা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ হয়েছে।’
সদ্য স্বাধীন একটা দেশ যখন শত সমস্যার মুখোমুখি, তখন একজন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সবসময় পাশে থেকেছেন ক্রীড়াঙ্গনের। বঙ্গবন্ধুর সেই ভূমিকার প্রসঙ্গ উঠতেই হারুনুর রশিদ মনে পড়ল পুরোনো দিনের স্মৃতি, ‘দেখুন সব সময়ই খেলোয়াড়দের খোঁজখবর নিতেন বঙ্গবন্ধু। আমাদের ডেকে জিজ্ঞেস করতেন সব ঠিকঠাক চলছে কি না। খেলোয়াড়রা ইনজুরিতে পড়লে ফোন করে ডাক্তারদের বলে দিতেন যেন পরিপূর্ণ চিকিৎসা পায়।’
স্কুলে পড়ার সময়ই ফুটবল প্রেম শুরু বঙ্গবন্ধুর। খেলেছেন ঢাকার ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে। ভলিবল, বাস্কেটবল আর হকিও খেলতে পারতেন। ক্রীড়াপ্রেমের শুরু মূলত সেসব থেকেই। নিজেই সেই ক্রীড়াপ্রেমের কথা লিখে গেছেন তার সাড়া জাগানো ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে।
স্কুলে পড়ার সময়ই ফুটবল প্রেম শুরু বঙ্গবন্ধুর। খেলেছেন ঢাকার ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে। ভলিবল, বাস্কেটবল আর হকিও খেলতে পারতেন। ক্রীড়াপ্রেমের শুরু মূলত সেসব থেকেই। নিজেই সেই ক্রীড়াপ্রেমের কথা লিখে গেছেন তার সাড়া জাগানো ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব লিখেছেন, ‘আমার আব্বাও ভালো খেলোয়াড় ছিলেন। তিনি অফিসার্স ক্লাবের সেক্রেটারি ছিলেন। আমি মিশন স্কুলের ক্যাপ্টেন ছিলাম। আব্বার টিম আর আমার টিমের মধ্যে যখন খেলা হতো, তখন জনসাধারণ খুব উপভোগ করত। আমাদের স্কুল টিম খুব ভালো ছিল। মহকুমায় যারা ভালো খেলোয়াড় ছিল, তাদের এনে ভর্তি করতাম এবং বেতন ফ্রি করে দিতাম। ১৯৪০ সালে আব্বার টিমকে আমার স্কুল টিম প্রায় সকল খেলায় পরাজিত করল। অফিসার্স ক্লাবের টাকার অভাব ছিল না। খেলোয়াড়দের বাইরে থেকে আনত। সবাই নামকরা খেলোয়াড়।’
ঢাকা একাদশের বিপক্ষে খেলতের ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে এসেছিল রাশিয়ার মিন্সক ডায়নামো ক্লাব। ছোট্ট ছেলে শেখ রাসেলকে নিয়ে ওই খেলা দেখতে মাঠে হাজির হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ফাইল ছবি
গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের হয়ে খেলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। এখনকার ফুটবলপ্রেমীদের হয়তো জানা নেই যে এই ক্লাবটি তখন জয় করেছিল ১৯৫০, ১৯৫১, ১৯৫৩, ১৯৫৪, ১৯৫৫, ১৯৫৬ ও ১৯৬০ সালের ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগের শিরোপা। এই ক্লাবটির হয়ে ১৯৪০ থেকে ১৯৪৮ সালের মধ্যে স্ট্রাইকার পজিশনে খেলেছেন বঙ্গবন্ধু। এমন কী নেতৃত্বও দিয়েছেন। ১৯৪৩ সালে বগুড়ায় ওয়ান্ডারার্স শিরোপা জেতে বঙ্গবন্ধুর অধিনায়কত্বে।
খেলোয়াড় বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গে হারুনুর রশীদ বলছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শৈশব থেকে যখন যে স্কুলেই পড়তেন সেখানে অধিনায়ক থাকতেন। উনার বাবার ফুটবলের একটি দল ছিল। উনারও ছিল আরেকটা দল। উনি বাবার বিরুদ্ধে মাঠে ফুটবল খেলতেন। তারপর যখন উনি বড় হলেন তখন তো ওয়ান্ডারার্সে খেলেছেন। তখন ঢাকার লিগে চুন্না রশিদের মতো বড় তারকাদের সঙ্গে খেলতেন বঙ্গবন্ধু।’
শুধু ফুটবলই নয়, ক্রিকেটেরও পথ চলা শুরু জাতির জনকের হাত ধরে। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিবি) পরে এখন যেটি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নামে পরিচিত, এটিরও প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু।
দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু। এখন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ নামে পরিচিত এটি। একই বছর ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) গঠন করেন। সময়ের পথ ধরে ৭৪ সালে ফিফার সদস্যপদ পায় এই সংস্থা।
শুধু ফুটবলই নয়, ক্রিকেটেরও পথ চলা শুরু জাতির জনকের হাত ধরে। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিবি) পরে এখন যেটি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নামে পরিচিত, এটিরও প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু।
ক্রীড়াঙ্গনে নারীদের এখন বিচরণ। এর ভিত্তিটাও গড়া হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে। ওই সময় প্রতিষ্ঠিত করেছেন জাতীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স (বর্তমানে সুলতানা কামাল জাতীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স)। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতে ১৯৭৩ সালে ভারতের একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় বাংলাদেশের নারী ক্রীড়া দল।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে আবাহনী লিমিটেড। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ক্লাবটি। হারুনুর রশীদ ছিলেন আবাহনী লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। ক্লাব গড়ার গল্প শোনাচ্ছিলেন তিনি।
বলছিলেন, ‘তরুণদের আড্ডা থেকে মাঠে এনেছিলেন বঙ্গবন্ধু। অনেকেই প্রশ্ন করেন, আমরা কেন আবাহনী ক্লাব করেছিলাম? ওই গল্পটা বলি, যুদ্ধ শেষে তরুণদের পকেটে তখন পিস্তল। কোমরে রিভালভার। তখন বঙ্গবন্ধু বললেন এইভাবে তো দেশ চলবে না। দেশ তোমরা স্বাধীন করেছো, এখন দেশ পরিচালনা যাদের করার কথা। তারা করবে। তোমাদের তরুণ প্রজন্মকে খেলার মাঠে আসতে হবে। পড়ার টেবিলে বসতে হবে। তিনি বললেন- তোমরা এমনভাবে একটা ক্লাব বানাও ছেলেরা যেন আগ্রহী হয়। এভাবেই বঙ্গবন্ধুর পুত্র শেখ কামালের নেতৃত্বে আবাহনী ক্লাব গড়ে উঠল।’
বঙ্গবন্ধুর পুরো পরিবারই ক্রীড়াপ্রেমী। ছেলে শেখ কামাল আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা। জাতির জনকের বড় পুত্র শেখ কামাল সারা দিন মাঠেই পড়ে থাকতেন। তার হাতেই গড়ে উঠেছে আবাহনী ক্লাব। তার স্ত্রী সুলতানা কামাল খুকীও ছিলেন নামী ক্রীড়াবিদ। ১৯৭৫ এর ১৪ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে শেখ কামালের স্ত্রী হয়ে আসেন বঙ্গবন্ধুর পরিবারে।
এই দেশের স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দিয়েছেন, জাতিকে উপহার দিয়েছেন একটি পতাকা, স্বাধীন দেশ- সেই জাতির জনক বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সময় পেয়েছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছর। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কিছু উচ্ছৃঙ্খল সেনা সদস্যের হাতে সপরিবার নির্মমভাবে নিহত হন বঙ্গবন্ধু। জাতির পিতা হারানোর ওই দীর্ঘশ্বাস, হাহাকার এখনো বাংলার আকাশে-বাতাসে।
তার হৃদয় জুড়ে ছিল বাংলাদেশ। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এই রাষ্ট্রনায়কের স্বপ্নের পথ ধরেই তো এখন গর্বে মাথা উঁচু করে জাতি পালন করছে স্বাধীনতার ৫০ বছর। বঙ্গবন্ধুর ‘ভিশন’নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে দেশ, এগিয়ে যাচ্ছে দেশের ক্রীড়াঙ্গন!
এমএসএম / এমএসএম

‘তরুণরা সক্রিয় থাকলে কোনো সমস্যাই আর অমীমাংসিত থাকতে পারে না’

১২ অক্টোবর থেকে দেশব্যাপী টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন

বাংলাদেশ-ভারতসহ ৬ দেশে ৫.৯ মাত্রার ভূমিকম্প

ফেব্রুয়ারিতে মহোৎসবের নির্বাচন হবে: প্রধান উপদেষ্টা

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে যোগ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা

মানুষের জন্ম হয়েছে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য : প্রধান উপদেষ্টা

যারা রাস্তা অবরোধ করেছে, তারা কেউ ছাড় পাবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ঢাকাসহ ৬ বিভাগে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা

ঢাকায় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি, ধীরগতি যানবাহনে অফিসগামীদের দুর্ভোগ

টানা ৪ দিনের ছুটি মিলছে সরকারি কর্মচারীদের

নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন প্রধান উপদেষ্টার

সাবেক ডিআইজি নাহিদুল ইসলাম গ্রেফতার
