ঢাকা বৃহষ্পতিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির শেষ হওয়া সব প্রকল্প ও চুক্তিই বহাল


নিজস্ব প্রতিবেদক photo নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৯-৮-২০২৪ দুপুর ৩:১২

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সম্পন্ন হওয়া সব প্রকল্প ও চুক্তি বহাল রাখার ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একই সঙ্গে যেসব প্রকল্প চলমান ও যাচাই-বাছাই পর্যায়ে রয়েছে, সেগুলো সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।  রোববার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, বিশেষ বিধানের অধীনে চলমান সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। আগে যেসব চুক্তি করা হয়েছে, সেগুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কারণ যেহেতু চুক্তি হয়ে গেছে তাই চাইলে তা বাতিল করা যাবে না। এজন্য আইনগত দিক খতিয়ে দেখতে হবে। 

খাতসংশ্লিষ্টরা অবশ্য বলছেন, এরই মধ্যে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে, সেগুলোর কারণে একদিকে ভোক্তার ওপর ভয়াবহ চাপ বেড়েছে, অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব শৃঙ্খলাও ভেঙে পড়েছে। বর্তমান প্রকল্পগুলোর চুক্তি সংশোধন ছাড়া বিদ্যুতের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

এর আগে ২০১০ সাল থেকে বিদ্যুৎ খাতে সক্ষমতা বাড়াতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার বিশেষ আইনের আওতায় ১৪ দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। ভোক্তা পর্যায়ে দাম বেড়েছে ১৮৮ শতাংশ। এরপরও ২০০৮-০৯ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিক্রি করে ৭০ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি লোকসান করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। পাশাপাশি সরকারি কোষাগার থেকে সংস্থাটিকে ভর্তুকি হিসেবে দেয়া হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। 

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বিদ্যুৎ, জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ) আইন, ২০১০ (সংশোধিত ২০২১)-এর অধীনে চলমান সব ধরনের নেগোসিয়েশন, প্রকল্প যাচাই বা প্রক্রিয়াকরণ এবং ক্রয় পরিকল্পনাকরণ কার্যক্রম আপাতত বন্ধ থাকবে। তবে এ আইনের অধীনে এরই মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির আওতায় গৃহীত সব কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এ বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদকে অবহিত করে নেয়া হবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত।

এ প্রসঙ্গে বিদ্যুতের নীতি ও গবেষণা সংস্থা পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতউল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, এই খাতের অপ্রয়োজনীয় যেসব চুক্তি করা হয়েছে সেগুলো রিভিউ করা যেতে পারে। এজন্য একটি রিভিউ কমিটি করা যেতে পারে। এর সঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়কে সংযুক্ত করে তাদের মতামত নেয়া যেতে পারে।

আওয়াল পর্যন্ত বিমী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিশেষ আইনের আওতায় শুধু বিদ্যুৎ খাতে ৯১টি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়। দেশে ১৫৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ হয়েছে এ আইনে। বিশেষ করে ২০১০ ও ২০১১ সালের দিকে বিদ্যুৎ খাতের রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছিল এ আইনের আওতায়। 

সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সংসদে দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, গত দেড় দশকে বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০টি কোম্পানি সবচেয়ে বেশি ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে সামিট গ্রুপ, ইউনাইটেড গ্রুপ, ব্যাংলা ক্যাট, আরপিসিএল, কেপিসিএল, মোহাম্মদী গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠান। তারা ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বাবদ অন্তত ৪৪ হাজার কোটি টাকা বেশি নিয়ে গেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গ্যাস সক্ষমতা ও পূর্ণ সক্ষমতায় গ্যাস পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে প্রায় ১ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এর মধ্যে ৭১৮ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স পাওয়ার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপের নির্মিত কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা ৫৮৩ মেগাওয়াট ও একই এলাকায় আরো একটি ৫৮৪ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে ইউনিক গ্রুপ।

এর মধ্যে রিলায়েন্সের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সিম্পল সাইকেল এবং বাকি দুটি কম্বাইন্ড (জ্বালানি তেল ও গ্যাসচালিত) সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট। এছাড়া খুলনার রূপসায় ৮০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। চলতি বছরে গ্যাসের বড় চুক্তিগুলোর আওতায় ২০২৬ সাল নাগাদ এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র গ্যাস দেয়ার কথা ছিল বিদায়ী সরকারের।

দেশের বিদ্যুৎ চাহিদার প্রাক্কলনকে সামনে রেখে বিপুল অর্থায়নে নির্মিত এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারেনি বিপিডিবি। বরং চাহিদার চেয়ে সক্ষমতা বেশি থাকায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর যথাযথ ব্যবহারে সুনির্দিষ্ট অ্যানালাইসিস প্রয়োজন। যাতে বিদ্যুৎ খাতে খরচ ও ব্যয় কমিয়ে আনা যায় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের (আইইইএফএ) বাংলাদেশের জ্বালানি খাতবিষয়ক লিড অ্যানালিস্ট শফিকুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো অ্যানালাইসিস করে এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে যাতে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা যায়। তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করে খরচ কমানো যেতে পারে। দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায়, অন্যান্য খরুচে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করে দেখার সুযোগ আছে কিনা, সেটি দেখতে হবে।

দেশে অনুমোদন এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র তিস্তা সোলার লিমিটেড। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো পাওয়ার লিমিটেড এটি নির্মাণ করেছে। গত ডিসেম্বর থেকে কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ যুক্ত হয়েছে জাতীয় গ্রিডে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় অনাবাদি চরের ৬৫০ একর জমিতে ২০১৭ সালে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়।

আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি সরবরাহের চুক্তি করে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেটের সঙ্গে। বিশেষ বিধানের আওতায় দেশে গ্যাস অনুসন্ধানে ৪৮টি কূপ খননের প্রকল্পও বাস্তবায়িত হচ্ছে। তবে এখানেও চীন ও রাশিয়ার কোম্পানিগুলোকে স্থানীয় কোম্পানি বাপেক্সের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেশি দামে কাজ দেয়ার অভিযোগ।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, বিশেষ আইনের আওতায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চলমান প্রকল্প স্থগিত রাখা হয়েছে এটি ভালো উদ্যোগ। তবে আইনটির আওতায় যেসব কাজ হয়েছে এখন সেগুলো যৌক্তিকতা খতিয়ে দেখা যেতে পারে।

বিশেষ আইনটি বাতিলের প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, এজন্য উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে যে সিদ্ধান্তই নেয়া হোক তাতে জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন থাকবে।

এমএসএম / এমএসএম

ডেঙ্গুতে আরও ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৭৮৮

নির্বাচন উৎসবমুখর করতে সেনাবাহিনীর সহায়তা দরকার : প্রধান উপদেষ্টা

সাংবাদিক সোহেলের সঙ্গে ব্যক্তিগত বা পেশাগত কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই

নির্বাচন সফল করতে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকাই বড়: সিইসি

দেশে ফিরেছেন আলী রীয়াজ

বিজয় দিবসে অস্থিরতার আশঙ্কা নেই, এবারও প্যারেড হচ্ছে না

শেখ হাসিনার রায় ঘিরে দেশে কোনো অস্থিরতা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ইসি ওয়াদাবদ্ধ : সিইসি

গত ১০ মাসে ঢাকায় ১৯৮ খুন : ডিএমপি

শিক্ষা ক্যাডারের প্রভাষকদের পদোন্নতির দাবিতে কর্মবিরতি

৬৭৮ কোটি মানিলন্ডারিং, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড মালিকের বিরুদ্ধে সিআইডির মামলা

পুলিশের নতুন ইউনিফর্ম : ভেতরে-বাইরে মিশ্র আলোচনা

কিডনি ডায়ালাইসিসের রাসায়নিকে তৈরি হচ্ছে ‘গোলাপজল’ ও ‘কেওড়া জল’