বিনা টিকেটে যাত্রী পরিবহন
৮ হাজার কোটি টাকা হারিয়েছে রেল
সারাদেশে অবৈধ যাত্রী পরিবহনের ফলে প্রতি বছর ৫শ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সেই হসেবে বিগত ১৬ বছরে রেলের গচ্চা গেছে ৮ হাজার কোটি টাকা। বিনা টিকিটে যাত্রী বহন ঠেকাতে সকল চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। সম্প্রতি ট্রেনের খাবার গাড়িতে অবৈধ যাত্রী পরিবহনের বিষয়টি ধরা পড়ায় ২ টি ট্রেনের ক্যাটারিং লাইসেন্স বাতিল হলেও অন্যসব পথগুলো এখনো চলমান রয়েছে। তাই সেবামূলক এই প্রতিষ্ঠানটির আয় বাড়াতে নতুন কৌশল হাতে নেয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। রেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কতিপয় অসৎ কর্মকর্তা কর্মচারির সরাসরি সম্পৃক্ততার ফলে এই নৈরাজ্য ঠেকানো সম্ভব হচ্ছেনা। তবে এই খাতে নজরদারি বৃদ্ধি করতে পারলে রেলের ভূর্তুকি আরো কমিয়ে আনা সম্ভব এবং সেই টাকা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করা যেত বলে মনে করছেন অনেকে।
রেল ভবন সুত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ রেলওয়ের ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। একই সময়ে আয় করেছে ১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ আয়ের চেয়ে ১ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা বেশি ব্যয় করেছে রেলওয়ে। শুধু অবৈধ যাত্রী পরিবহনের দিকে একটু কঠোর দৃষ্টি দিলেই আরো ৫০০ কোটি টাকা ভূর্তুকি কমানো যেত। যেভাবে ট্রেনে ওঠেন অবৈধ যাত্রী: নিরাপদ যাত্রীসেবা নিশ্চিতে ট্রেন পরিচালনার জন্য ট্রেনে কিছু অত্যাবশ্যকিয় কর্মচারির প্রয়োজন হয়। তারা প্রত্যেকেই বেতনভুক্ত কর্মচারি। কিন্তু তবুও তারা নিজেদের স্বার্থে ট্রেনে চুক্তিভিত্তিক ভাড়ায় অবৈধ যাত্রী তোলেন। ট্রেনে সাধারণত ২ ধরণের অবৈধ যাত্রী ওঠেন। অনেকে বাধ্য হয়ে আবার অনেকে কম টাকায় ভ্রমনের সুবিধা নেয়ার জন্য। তারা সেই কর্মচারিদের সাথে কন্ট্রাক্ট করে অবৈধভাবে ট্রেন ভ্রমন করেন। সাধারণত একটি আন্তঃনগর ট্রেনে ২ টি খাবার গাড়ি থাকে। খাবার পরিবেশনের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা প্রত্যেকটি গাড়িতে ২৫ থেকে ৩০ জন করে প্রতিটি ট্রেনে ৫০ থেকে ৬০ জন লোক ক্যারি করেন। এভাবে দায়িত্বরত পুলিশ ১৫ থেকে ২০ জন, আরএনবি ৮/১০ জন, অনবোর্ড এটেন্ডেন্ট ৫০/৬০ জন, ২ গার্ড ৫/৬ জন, পাওয়ার কার অপরেটর ১০/১২ জন, ইলেক্ট্রিশিয়ান ১০/১২ জন, ট্রাভেল স্যুটিং স্টাফ ৪/৫ জন, কোন কোন চালকও মাঝে মাঝে ২/১ জন করে তোলেন। রেলের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার বক্তব্য ও স্টেশনে সরেজমিনে গিয়ে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। সবমিলিয়ে প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেনে ১৫০ থেকে ২০০ জন যাত্রী অবৈধভাবে যাতায়াত করেন। বাংলাদেশে মোট ১১০ টি আন্তঃনগর ট্রেনের হিসেবে ১৫০ জন হিসেবে দৈনিক ১৬ হাজার ৫০০ অবৈধ যাত্রী থাকে। সপ্তাহে একদিন বন্ধ হিসেব থেকে বাদ দিলেও প্রায় ৫৫ লাখ অবৈধ যাত্রী বহন করে আন্তঃনগর ট্রেন। জনপ্রতি ৫০০ টাকা ধরা হলেও যার টাকার পরিমান দাঁড়ায় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। অপরদিকে সারাদেশে ১৩০ টি মেইল, এক্সপ্রেস ও ডেমুসহ বেশকিছু লোকাল ট্রেন চলাচল করছে। এসব ট্রেনেও অবৈধ যাত্রী পরিবহন নেহায়েত কম নয়। এছাড়াও ঢাকা থেকে এগারো সিন্ধু ঢাকা টু কিশোরগঞ্জ চলাচল করা ৪টি ট্রেনে (৭৩৭,৭৩৮,৭৪৯,৭৫০) হাওড় এক্সপ্রেস ঢাকা টু সিলেট (৭৭৭,৭৭৮), মহানগর এক্সপ্রেস (ঢাকা টু চট্টগ্রাম ৭২২), যমুনা, মোহনগঞ্জ, উপকূল, জয়ন্তিকা, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ও সোনার বাংলা ও সুবর্ণ এক্সপ্রেসসহ অনেকগুলো ট্রেনে টিটিই বুক হয় না। যেখানে খাবার গাড়ির লোক ও স্টুয়ার্ডের মাধ্যমে সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে মোটা অংকের টাকা নিয়ে থাকেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এসব গাড়িতে অবৈধ যাত্রী পরিবহনের মাধ্যমে বছরে কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে রেলওয়ে। সবমিলিয়ে সারাদেশে শুধু টিকেট বিহীন যাত্রী পরিবহনে বছরে ৫০০ কোটি টাকা হিসেবে ১৬ বছরে ৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে রেল তথা সরকার।
ডিজির বক্তব্য:
এব্যপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) সরদার শাহাদাত আলী বলেন, শুধু অবৈধ যাত্রী পরিবহন নয়, যেকোন অনিয়মের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার, বিনা টিকেটে যাত্রী পরিবহনের অপরাধে দুটি ট্রেনের ক্যাটারিং সার্ভিস বাতিল করা হয়েছে। এই কাজের সাথে যারা জড়িত পর্যায়ক্রমে সকলের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের হিসেবে রেলের মোট আয়ের প্রায় ৭৩ দশমিক ৩ শতাংশ আয় এসেছে আন্তঃনগর ট্রেন থেকে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ২ টি অঞ্চলে (পূর্ব ও পশ্চিম) বর্তমানে আন্তঃনগর ট্রেন আছে ১১০টি বা ৫৫ জোড়া। এরমধ্যে পূর্বাঞ্চলে ৫৪ ও পশ্চিমাঞ্চলে ৫৬ টি।
সুত্র জানায়, ১৯৮৫ সালে দেশে আন্তঃনগর রেল সেবা চালু হওয়ার পর ২০০৮ সালে মোট যাত্রীর প্রায় ৩৮.৫% আন্তঃনগর ট্রেনের মাধ্যমে যাত্রা করে। ২০১৬ সালে দেশে মোট ৩৪৭টি যাত্রীবাহী ট্রেন পরিচালিত হয়, যার মধ্যে আন্তঃনগর ৯০টি; মেইল, এক্সপ্রেস ও ডেমু ১২০টি এবং লোকাল ১৩৫টি। ২০২০ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ে মোট ১০৪টি আন্তঃনগর (আপ ও ডাউন), ৫২টি মেইল/এক্সপ্রেস, ৬৪টি কমিউটার (ডেমু) ও ১৩৫টি শাটল/লোকাল ট্রেন পরিচালনা করে। এসব ট্রেনে ২০০৩/৪ অর্থবছরে প্রায় ৪ কোটি ৩০ লক্ষ যাত্রী ভ্রমণ করেন। আবার ২০১৩/১৪ অর্থবছরে রেলপথে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি যাত্রী ভ্রমণ করে। রেলভবন সুত্র জানায়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত রেলওয়ের ৯৯টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। গত এক যুগে দেশে ৯৪৭ দশমিক ৯৯ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ, ৩৪০ দশমিক ১৭ কিলোমিটার মিটারগেজ রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর, ১৩৯১ দশমিক ৩২ কিলোমিটার রেললাইন সংস্কার, ১৪৮টি নতুন স্টেশন ভবন নির্মাণ, ২৩৮টি স্টেশন ভবন সংস্কার, ১০৬২টি নতুন রেলসেতু নির্মাণ, ৭৯৪টি রেলসেতু সংস্কার ও ১৩৭টি স্টেশনে সিগন্যালিং ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এসব উন্নয়ন কাজের মাধ্যমেও কমিশনের নামে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে একটি দুষ্টু চক্র।
T.A.S / T.A.S
ডেঙ্গুতে একদিনে ঝরলো ১০ প্রাণ
নির্বাচন হলে দেশ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে : সেনাসদর
পাইলটের উড্ডয়নের ত্রুটির কারণে মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটেছে
পদত্যাগ করে নির্বাচনে অংশ নেবেন অ্যাটর্নি জেনারেল
ঢাকায় পেঁয়াজের দাম আরও বেড়ে ১২০ টাকা
পুলিশি বাধায় সড়ক অবরোধ করে বসে পড়েছেন শিক্ষকরা
রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের অবৈধ সুবিধা দিলে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
ইসির নিবন্ধন পাচ্ছে তিন দল : ইসি সচিব
রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের অবৈধ সুবিধা দিলে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
জোটেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে
২৩৭ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা
অপেক্ষা করেও রাজনৈতিক মতামত না পেলে নিজের মতো পদক্ষেপ নেবে সরকার