জাবি সংস্কারে শিবিরের ৪১ দফাঃ কিভাবে দেখছে রাজনৈতিক দলগুলো
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা শেষে ২৯ অক্টোবর রাত এগারোটায় নিজেদের ফেসবুকে পেজে ঘোষণা দিয়ে প্রকাশ্যে আসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী ছাত্রশিবির। প্রকাশ্যে আসার পর থেকে বিভিন্ন মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠনগুলো। প্রকাশ্যে আসার তিনদিন না পেরোতে না পেরোতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের কনফারেন্স রুমে সংবাদ সম্মেলন করে তারা। সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারে ৪১ দফা দাবি উত্থাপন করে।
শিবিরের আত্মপ্রকাশে কী ভাবছে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো?
গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের মুখপাত্র ইমরান শাহারিয়ার বলেন, ক্যাম্পাসে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে সকল ধরণের লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রম স্থগিত রেখে ছাত্ররাজনীতির সংস্কার ও নতুন ছাত্রবান্ধব রাজনীতির প্রবর্তন প্রয়োজন। সেই রাজনীতি হবে সকল ছাত্ররাজনৈতিক দলের সহাবস্থানের ভিত্তিতে। নতুন প্রবর্তিত সেই ছাত্ররাজনীতিতে লেজুড়বৃত্তির কোনো স্থান থাকবে না এবং সেই ‘ইনক্লুসিভ’ রাজনীতিতে সকল সংগঠন-ই তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচার করতে পারবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলনেতা জাকিরুল ইসলাম বলেন, হত্যা, পঙ্গুকরা, সহিংসতা ও মুখোশের রাজনীতি ত্যাগ করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনীতি করাই সঠিক পথ। বিশ্ববিদ্যালয়ে সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ বজায় রাখতে গোপনীয়তা ও সহিংসতার পরিবর্তে মুক্ত ও স্বচ্ছ রাজনীতি অত্যন্ত জরুরি। শিবির কর্মীরা হাবিবুর রহমান কবিরকে আক্রমণ করেছিল, এবং ঘটনার পর তিনি হাসপাতালে মারা যান। তাদের এ হত্যার ঘটনা স্বীকার করতে হবে। শিবিরের রাজনীতি চালানোর অনুমতি তাদের ক্ষমা ও হত্যার বিচারের ওপর নির্ভর করে।
জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি শরণ এহসান বলেন, ছাত্রশিবির দীর্ঘদিন যাবত আন্ডাকাভারে ছিলো। ৩৫ বছর আগে একটা হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে তাদেরকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত করা হয়। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বর্তমান বাংলাদেশে এসে তাদের গুপ্ত ও সহিংস রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান থাকবে। তবে যেহেতু তারা দীর্ঘদিন যাবত আন্ডারকাভারে ছিলো, হঠাৎ প্রকাশ্যে এসে তাদের কার্যক্রম, রাজনৈতিক আচরণ কেমন হবে, তা না জেনেই কোন মন্তব্য করতে চাই না।
ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সেক্রেটারি ঋদ্ধ অনিন্দ্য বলেন, শিবির যদি ক্যাম্পাসে রাজনীতি করতে চাই তাহলে তাদের পূর্ববর্তী কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। তারপরে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেক হোল্ডাররা মনে করে শিবির রাজনীতি করতে পারবে, তাইলে কেবল পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। ছাত্ররা যে সিদ্ধান্ত নিবে সেটাই চূড়ান্ত।
জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক ইয়াহিয়া জিসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক ও সুস্থধারার রাজনীতির স্বার্থে শিবিরকে প্রকাশ্য রাজনীতিতে স্বাগত জানাই। আমরা যারা জাহাঙ্গীরনগরে একটিভিজম করেছি দীর্ঘদিন, ছাত্রলীগের নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে ভোকাল ছিলাম, ছাত্রলীগ এবং যারা আমাদের অপছন্দ করতো তাঁরা আমাদের অনেককেই শিবির ট্যাগ দিতো।এখন শিবির প্রকাশ্যে আসাতে আমাদের যে সুবিধা হলো তা হলো— এই ট্যাগিংয়ের খেলা কমে যাবে বা বন্ধ হবে হয়তো। 'জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলন' কোনো দল বা গোষ্ঠীকে বি-মানবিকীকরনের বিপক্ষে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা যে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত নিয়ে ভাবছে, যেখানে কোনো ফ্যাসিবাদি মনন থাকবে না। জাহাঙ্গীরনগরে তাদেরকে রাজনীতি করতে না দিতে চাওয়া মানে আপনিও ফ্যাসিবাদের অংশ হিসেবে মনে করছি। একটি গণতান্ত্রিক জাহাঙ্গীরনগর বিনির্মানে শিবিরসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে এগিয়ে আসার আহবান করছি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেট অর্গানাইজেশনের সভাপতি প্রাপ্তি তাপসী বলেন, যেহেতু ৩৫ বছর ধরে ছাত্রশিবির ক্যাম্পাসে প্রকাশ্য রাজনীতি করতে পারে নি, স্বভাবতই ছাত্রশিবির প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীদের মনে কিছু জিজ্ঞাসা রয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের অতীত কর্মকান্ড সম্পর্কে বর্তমান নেতৃবৃন্দের অবস্থান, মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা প্রশ্নে দলীয় ভূমিকার জায়গায় ছাত্রশিবিরের অবস্থান এবং আদতেই ছাত্রশিবির ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের অন্তর্ভুক্তিমূলক চেতনা লালন করে কি না- সেই সকল প্রশ্নের মীমাংসা ঘটিয়ে এবং শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করার মাধ্যমেই একমাত্র তাদের গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করা সম্ভব।
সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জিয়া উদ্দিন আয়ান বলেন, উদ্ভুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আমরা শঙ্কিত। আমরা বহুদিন ধরে আমরা অরাজনৈতিক ক্যাম্পাসের আন্দোলন করে আসছিলাম। কিন্ত প্রশাসন উল্লেখযোগ্য কোনো সাড়া পাইনি। ছাত্ররাজনীতি বন্ধ না হলে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন হিসেবে শিবিরেরও রাজনীতি করার অধিকার থাকা উচিত। যতদিন না ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হচ্ছে ছাত্র সংগঠন হিসেবে শিবিরও সমান্তরালে সুষ্ঠু রাজনীতির চর্চা করার অধিকার রাখে বলে মনে করি।
T.A.S / T.A.S