২৪ উপজেলায় ৪০ ডাকাতের ত্রাসের রাজত্ব
বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম জেলার ১৫ টি উপজেলা ও কক্সবাজার জেলার ৯টি উপজেলা মিলে ২৪ টি উপজেলার ছোট বড় সব খামারে বেড়েছে গরু-মহিষ-ছাগল চুরি ডাকাতির হিড়িক। বিগত এক যুগ ধরে রাত নামলেই দুর্ধর্ষ ডাকাত দল আতঙ্কে থাকে দুই জেলার ১০ হাজারের অধিক কৃষক ও খামারি। এসব এলাকায় ৪০ ডাকাত ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছে। মাঝে মাঝে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুটিকয়েক আটক হলেও চুরি, ডাকাতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেনা কেউ।
ডাকাতের কবলে খামারিদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন গবাদি পশু হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে অনেক দরিদ্র কৃষকের পরিবার। কিন্তু পুলিশের অভিযানে গরুসহ একাধিক চোর আটক হলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে অধরা মূলহোতা ও গডফাদাররা। তাই থামছেই না গরু চুরি-ডাকাতি। সব সময় অধরা থেকে যাচ্ছে বিশাল একটি ডাকাত বাহিনী।
অনুসন্ধানী তথ্য বলছে, দুই জেলা জুড়ে ৪০ সদস্যের একটি দুর্ধর্ষ ডাকাত দলের বাহিনী রয়েছে। এটি কক্সবাজারের চকরিয়া ভিত্তিক এই ডাকাত দলে রয়েছে বিভিন্ন মামলার আসামি ও অপরাধীরা। যাদের আতঙ্কে বৃহত্তম চট্টগ্রামের ২৪ উপজেলার হাজার হাজার খামারি। তাদের রয়েছে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। যে গ্রুপে নেতৃত্ব দিচ্ছেন চট্টগ্রামের মিরসরাই ও চকরিয়া উপজেলার ডাকাত সর্দার।
সম্প্রতি, কক্সবাজারে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আটক গরু চোরেরা অকপটে স্বীকারও করেছে, দুর্ধর্ষ ডাকাত বাহিনীর পিছনে রয়েছে খোদ জনপ্রতিনিধিরা। অনেক চেয়ারম্যান গরু চুরির কাজে জড়িত। খুব অবাক করা বিষয়, জনগণের হর্তাকর্তা সেজে জনপ্রতিনিধিরাই গোয়ালঘরের সর্বনাশ করে যাচ্ছেন।
প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে আরো উঠে এসেছে, যে জনপ্রতিনিধিরা গরু চুরিতে লিপ্ত সেই গরু চোর জনপ্রতিনিধির পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন আরও অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। যাদের কখনো সন্দেহজনক ভাবে আঁচ করা কঠিন। যদিও এসব প্রভাবশালীদের নাম কোথাও প্রকাশ হয়নি। বার বার তারা আড়ালে থেকে যাচ্ছেন।
কারণ এরা এতই প্রভাবশালী বা উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা যে, তারা আইন নিয়ে খেলা করেন প্রতিনিয়ত। অথচ তাদের নাম বলাতে বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও থ বনে গিয়েছেন। এসব ডাকাত দলের পিছনে আশ্রয় প্রশ্রয় ও আইনি সহযোগিতায় রয়েছেন এক শ্রেণির অসাধু শাসনকর্তা। যে কর্তাদের বাসায় ডাকাত দলের সদস্যরা নিয়মিত তাজা দেশী গরুর মাংস, ছাগল ও হরিণের মাংস পাঠিয়ে থাকেন বলেও সূত্রে জানা গেছে।
বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায় চুরি ডাকাতি করতে পারদর্শী ৪০ সদস্যের একটি ভয়ঙ্কর ডাকাত দল পুরো বছর জুড়ে সক্রিয় থাকেন। এরা কখনও প্রাইভেকট কারে, কখনও নোহা গাড়িতে, কখনও হাইস, কখনও মাইক্রোবাস, কখনও মিনি পিকআপ, কখনো ট্রাকে করে ডাকাতি করেন। এ গ্রুপে রয়েছে একাধিক মামলার ভয়ানক সব আসামি। যাদের নামে ডজন ডজন মামলা রয়েছে।
এ ডাকাত দলকে খামার ঘরের প্রহরীরা দেখলেও ডাকাত দল পালিয়ে যান না। বরং সরাসরি ডাকাতি করে বসেন। কোথাও বাঁধা ফেলে গুলি চালাতে এক মিনিটও সময় নেন না। না দেখলে চুরি বলে প্রচার পায় বেশি। তবে অনেক খামারের প্রহরীর সাথে তাদের সোর্সের যোগাযোগ। তাদের রয়েছে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সু-সজ্জিত বাহিনী। এরা ডাকাতি করা গবাদিপশু পরিবহনে ব্যবহার করেন কয়েকটি বিশেষায়িত যানবাহন। যে সব যানবাহনে একাধিক গরু উঠালেও সহজেই বুঝার উপায় নেই যে, এটি গরু পরিবহনের কোন গাড়ি।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর, স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছরে চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই, সীতাকুণ্ড, ফটিকছড়ি, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, সাতকানিয়া, পটিয়া, চন্দনাইশ, লোহাগাড়া, সন্দ্বীপ, বোয়ালখালি, আনোয়ারা, বাঁশখালী, কর্ণফুলী উপজেলা ও কক্সবাজার জেলার
মহেশখালী, রামু, ঈদগাঁও, পেকুয়া, টেকনাফ, চকরিয়া, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার সদর, উখিয়ায় অহরহ গরু চুরি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
এসব চুরি ডাকাতির ঘটনা ছিলো একই স্টাইলের। কখনও এসব ডাকাত দল কিংবা চোরেরা পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি, আনসার বাহিনীর পোশাক পড়ে ডাকাতিসহ নানা ছদ্মবেশে ডাকাতি অব্যাহত রেখেছেন। মামলা হচ্ছে কিন্তু আসামি গুটিকয়েক আটক গ্রেপ্তার হলেও গবাদিপশু চলে যায় তাদের নিয়ন্ত্রণে। এসব চোরাই পশু বিক্রি করে ভাগ বাটোয়ারা করেই তাদের জীবনে নানা পরিবর্তন। চোরদের বাড়ি গাড়ি আর আলিশান জীবন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণি সম্পদ বিষয়ক পরিসংখ্যান বলছে, চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় মোট ডেইরি খামার রয়েছে ৯ হাজার ৭৪২টি, এরমধ্যে নিবন্ধনকৃত মাত্র ৬২৫টি, অনিবন্ধিত ৯ হাজার ১১৭টি। চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় মোট গবাদিপশু (গরু) রয়েছে ২৩ লাখ ৭৪ হাজার ৬২৩টি। এরমধ্যে দেশী গরু রয়েছে ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ১১২টি আর শংকর জাতের গরু রয়েছে ৮ লাখ ৯১ হাজার ৫১১ টি, মহিষ রয়েছে ৪৬ হাজার ৪৭৪ টি। ছাগল রয়েছে
৫ লাখ ১৬ হাজার ৭৯৩ টি৷ ভেড়া রয়েছে ৩৯ হাজার ৩৭৬ টি ও ঘোড়া রয়েছে ১৫০ টি। এসব গবাদিপশুর মধ্যে শংকর জাতের উন্নত গাভী রয়েছে ৩ লাখ ২৬ হাজার ৫১৩ টি, বকনা রয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার ৯১৮ টি, ষাড় রয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৯৪৪ টি, বাছুরসহ মোট ৮ লাখ ৯১ হাজার ৫১১টি।
অপরদিকে, কক্সবাজার জেলার ৯ উপজেলায় মোট গবাদিপশু (গরু) রয়েছে ৪ লাখ ৬০ হাজার ৩৯০ টি, মহিষ রয়েছে ২৫ হাজার ১৮৫টি, ছাগল রয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ২২৫ টি, ভেড়া রয়েছে ১৯ হাজার ৫৯০টি। মোট গাভীর ডেইরি খামার রয়েছে ৩৬৯টি, হৃষ্টপুষ্টকরণ গরু রয়েছে ৫ হাজার ৩৩০টি, মহিষের খামার ২০৩টি, ছাগলের খামার ১ হাজার ৩৪৩ টি, ভেড়ার খামার ১২১টি। জেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানায়, বর্তমানে কক্সবাজার জেলায় ডিজিটাল সার্ভে শেষের পথে। সম্পূর্ণ তালিকা আপডেট করা হলে গবাদিপশুর সংখ্যার আরো নির্ভুল তথ্য জানা যাবে।
তথ্য সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ১২ নভেম্বর উপজেলার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের হুলাইন ছালেহ নুর ডিগ্রী কলেজের সম্মুখে ব্রীক ফিল্ড এলাকায় বেলাল-হেলাল নামের দুই সহোদর প্রবাসী এআরএইচ এগ্রো ফার্ম থেকে রাত ২ টার দিকে ২২ জনের একটি ডাকাত দল হানা দিয়ে ২১টি গরু ডাকাতি করে নিয়ে যায়। যা সিসিটিভির ফুটেজে স্পষ্ট প্রমাণ মিলে। যদিও পরে পুলিশি তদন্তে বের হয়েছে চমকপ্রদ তথ্য।
জানা গেছে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি আনোয়ারা উপজেলার বরুমছড়া এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম কক্সবাজারের উখিয়া থেকে ১৮টি মহিষ ক্রয় করে ট্রাকভর্তি করে আনোয়ারার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথিমধ্যে রাত পৌণে দশটার দিকে মহিষ বোঝাই ট্রাকটির গতিরোধ করা হয় চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কের ডুলাহাজারার ডুমখালী রাস্তার মাথায়।
এ সময় সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা ১৮টি মহিষ, ৭টি মোবাইল ও নগদ ৭৫ হাজার টাকা লুঠ করে। এই ঘটনায় পরদিন ৮ ফেব্রুয়ারি থানায় মামলা রুজু করে মহিষ মালিক আব্দুর রহিম। ওই দিন ৩টি মহিষসহ একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
একই দিন কক্সবাজার-চকরিয়া মহাসড়কে ব্যারিকেড দিয়ে ডাকাতি করা ১১টি মহিষ উদ্ধার করেছে চকরিয়া থানা পুলিশ। এরমধ্যে একটি মহিষ পাওয়া গেছে লামা ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে। ১০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭ টার দিকে দ্বিতীয় দফায় ৮টি ছোট-বড় মহিষ উদ্ধার করে পুলিশ। তন্মধ্যে ডুলাহাজারার উলুবুনিয়ার ফাঁসিয়াখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন চৌধুরীর বাড়ি থেকে একটি ও ডাকাতের আস্তানা সংরক্ষিত বনের ডুমখালী থেকে ৭টি মহিষ উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ডুলাহাজারা এলাকা থেকে প্রথম দফায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ উদ্ধার করে আরও তিনটি মহিষ।
গত ১১ জানুয়ারি দিবাগত রাতে সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের শীতলপুর মদন হাট সাইনবোর্ড এলাকায় এক রাতে ৪ গরু চুরি হয়েছে। এতে নিঃস্ব কৃষক সাইফুল, মনোয়ারা ও নুরুল ইসলাম। গত ১৬ জানুয়ারি পিএমখালী ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকার আব্দুর রশিদের ১টি গরু, নুরুল আলমের ১টি, ইউসুফের ৫টি, মৌলভী ফেরদৌসের ১টি, আবু তাহেরের ১টি, আবুল কালামের ১টি, এমএ সাত্তারের ২টি, বেলারুশ আলমের ১টিসহ অনেক খামারির ছাগল চুরি হয়েছে।
গত ৩ মার্চ বোয়ালখালী পৌরসভার আমতল এলাকার বশরত নগরে পুলিশ পরিচয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৩টি গরু ডাকাতি করে নিয়ে গেছে সংঘবদ্ধ ডাকাত দল। ডেইরি ফার্মের মালিক মিজানুর রহমান বলেন, ডাকাতরা এসে খামারের দারোয়ান জয়নাল আবেদীনকে প্রথমে পুলিশ পরিচয় দেয়। এরপর তাঁকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে খামারের পিছনে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করে এবং খামারে থাকা ৪৫ টি গরুর মধ্যে ৩টি গরু নিয়ে যায় । এতে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
আবার গত ৬ মার্চ রাত ৮ টার দিকে কক্সবাজারের চকরিয়া থানাপুলিশ ডুলাহাজারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে লুট হওয়া ১৭টি গরু উদ্ধার করেছে । এ ঘটনায় জড়িত দুজনকে আটক করা হয়েছে। আটকরা হলেন— রামকৃষ্ণপুর উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের ঢাকিপাড়া এলাকার মিজানুর রহমান ও কক্সবাজারের ঈদগাঁহর মো. শাহীন।
গত ৯ মে ভোর ৫ টার দিকে কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড বড়বিল এলাকায় বার্মিজ গরু পাচারকে কেন্দ্র করে
দুর্বৃত্তদের গুলিতে আবুল কাশেম (৪৪) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
গত ১৭ আগস্ট কক্সবাজারের শহরের ১২ নং ওয়ার্ডের সৈকত পাড়া এলাকায় গরু চুরির অপবাদে সাজ্জাদ হোসেন (২১) কে রাতভর পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গত ২ অক্টোবর ভোররাত ৩ টার দিকে উপজেলার কধুরখীল ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের হাজী আবুল বশরের বাড়িতে বোয়ালখালীতে গরুর খামারের চার কর্মচারীর হাত-পা ও চোখ বেঁধে পিটিয়ে নগদ টাকাসহ গরু লুট করে নিয়ে গেছে সশস্ত্র ডাকাত দল। খামারের মালিক আবু নাঈম মো.মুছা বলেন, ভোর ৩ টার দিকে সীমানা প্রাচীর টপকে ডাকাতদলের কয়েকজন সদস্য বাড়ির ভিতর প্রবেশ করে। পরে ফটকের তালা ভেঙে মাইক্রোবাস নিয়ে বাড়ির আঙিনায় চলে আসে।
আবার ২৯ অক্টোবর রাত সাড়ে ৩ টার দিকে পটিয়া পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের সজল দাশ প্রকাশ এ্যাপোলো নামের একব্যক্তির গোয়াল ঘর থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার একটি উন্নতজাতের গরু লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতদল।
গত ২ নভেম্বর রাত ৩ টায় পটিয়া জঙ্গলখাইন উজিরপুর গ্রামে গরু চুরির কাজে বাঁধা দেওয়ায় চোরের দল স্থানীয় লোকজনকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। এ সময় আবদুল হক (৪৮) ও রাজু (২৪) নামের দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়। তার দুই দিন পর ৪ নভেম্বর আবার উপজেলার কাশিয়াইশ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের নিমার্নাধীন একটি পোষাক শিল্প কারখানায় দুর্ধর্ষ ঘটনা ঘটেছে। চোরের দল এ শিল্প প্রতিষ্ঠানের মো. সেলিম (৪০), নুর মোহাম্মদ (৫৮), নৈশ প্রহরী মো. মুনা (৪০), মো. আহাদ (২০), মো. বাবু (২১), মো. জায়েদ (১৯), মো. করিম (৩০) কে রশি দিয়ে হাত বেঁধে তাদেরকে মারধর করে প্রায় ২২ লাখ টাকার মালামাল ২টি পিকআপে করে নিয়ে যায়। ৫ নভেম্বর রাত ১টার দিকে পটিয়া পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডে ঘরের তালা ভেঙ্গে স্ট্রিলের আলমিরা থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণ চুরি করে নিয়ে যায়।
ধারাবাহিকতায় ৮ নভেম্বর উপজেলার খরনা ইউনিয়নের খরনা রেলস্টেশন বাজারে একটি গণডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতদল বাজারের নৈশপ্রহরী নাছির উদ্দিন (৬৫), আবদুল গণি (৬৫) ও দোকান কর্মচারী মো. হাসানের (৩২) হাত-পা বেঁধে স্বর্ণের দোকানসহ ৪টি দোকানের মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
বিগত ২০১৬ সালের ২৪ মার্চ কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও জালালাবাদের মোহনভিলা গ্রামে গরু চোর চক্র একই রাতে ২ বাড়ী থেকে ৮টি গরু চুরি করে নিয়ে গেছে। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও চাঁন্দের ঘোনা এলাকার আলি আহমদের বাড়ি থেকে ১ টি, মনজুর আলমের বাড়ি থেকে ১টি, শাহজাহানের বাড়ি থেকে ২ টি, জহিরের বাড়ি থেকে ৩ টিসহ মোট ৭টি গরু চুরি করে নিয়ে গেছে চোর চক্র। একই বছরের ১৩ অক্টোবর গভীর রাতে কক্সবাজার সদরে ৬টি খামার ১১টি গরু চুরি হয়ে যায়। পর দিন বৃহস্পতিবার ভোরে ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ইউছুপের খীল এলাকায় গিয়াস উদ্দীনের ২টি ও ইসমাঈলের ২টি গরু চুরি হয়ে যায়।
২০১৯ সালের ৫ জুলাই কক্সবাজারের চকরিয়ায় রাত ৩ টার দিকে ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পূর্ব পাগলির বিল এলাকায় গরু চুরি করতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়ে দুই গরু চোর। এরা হলেন-উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডস্থ গর্জনতলী এলাকার মোহাম্মদ ইসলামের ছেলে জয়নাল আবেদীন (৩৬)।
২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি দিবাগত রাতে পিএমখালী ইউনিয়নের ডিকপাড়া এলাকার আমান উল্লাহর বাড়ি থেকে চারটি গরু নিয়ে গেছে ডাকাত দল। এরপর ১৭ মার্চ গভীর রাতে দক্ষিণ মাইজ পাড়া গ্রামের আবুল বশরের গোয়াল ঘরে হানা দিয়ে একটি গরু লুট করে নিয়ে যায় ডাকাত দল। আবার ১৯ মার্চ কক্সবাজার সদরের জালালাবাদ ইউনিয়নের দক্ষিণ মাইজ পাড়া গ্রাম থেকে লুট হওয়া গরুসহ সক্রিয় গরু লুটকারী দুই ডাকাত সদস্য ফারুক ও বেলাল কে আটক করেছে ঈদগাঁও থানা পুলিশ।
বিগত ২০২১ সালের ১২ জুলাই গরু চুরি করতে গিয়ে কক্সবাজারে আটক হয়েছেন-উপজেলার ফাসিয়াখালী ৯নং ওয়ার্ডের ছাইরাখালী এলাকার মৃত মীর আহমদের ছেলে মো. আলম (৪২), চকরিয়া পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের তরছঘাট এলাকার সুলতান আহমদের ছেলে মো. আক্কাস (২৮), ৭নং ওয়ার্ডের বড় ভিওলা সিকদারপাড়া এলাকার বদিউল আলমের ছেলে মো. আলমগীর (২৮) ও ৩নং ওয়ার্ডের ভাঙ্গারমুখ এলাকার মৃত শহর মুল্লকের ছেলে দেলোয়ার (২৭)।
একই বছরের ১৮ জুলাই রামু থেকে গরু চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় ঈদগাঁও বাজারে আটক হন ৩ চোর চক্র। আটকরা হলেন-রামুর শ্রীমুরার নাসিরপাড়া গ্রামের মনির আহম্মদের ছেলে ইমরান হোসেন (২৫), ধাউনখালীর বজল করিমের ছেলে মো. জুয়েল (২৪) ও কক্সবাজার শহরের বাছা মিয়ারঘোনা এলাকার আব্দুর রব কামরুলের ছেলে সাইফুল ইসলাম (২৯)। ২০২১ সালের ১৯ শে নভেম্বর পেকুয়ায় এক রাতে ৫টি স্পটে দুর্ধর্ষ গরু লুটের ঘটনা ঘটে।
২০২২ সালের ১লা জানুয়ারি পুরো মাসে মিরসরাই উপজেলায় ১০ দিনে ২০ টির অধিক গরু চুরি হয়ে যায়। একই বছরের ২০ জুন সকালে কক্সবাজারের পেকুয়ায় একটি চোরাই গরুসহ আটক হন মুবিনুল ইসলাম (২১) নামে এক চোরচক্র। ২০২২ সালের ১১ নভেম্বর কক্সবাজারের টেকনাফে ব্যাপক হারে গরু চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে গরু চুরিতে লিপ্ত প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিদের পৃষ্ঠপোষকতায় এ ধরনের কর্মকাণ্ড ঘটছে বলে তথ্য শোনে কক্সবাজারের তৎকালিন জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বিস্ময় প্রকাশ করেন।
এরপর ২০২৩ সালের ৩ অক্টোবর রাতে ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়া কোনার পাড়া গ্রাম থেকে ৩টি গরু চুরি হয়। একই রাতে ছৈয়দ আলম কন্ট্রাক্টরের বাড়ি থেকে ২টি গরু, জসিম উদ্দিনের ১টি গরু লুট হয়। এর দুইদিন আগে খরুলিয়া নয়াপাড়া এলাকা থেকে ৩টি গরু চুরি করে নিয়ে যায়। ৩ আগস্ট রাত ১ টার দিকে আবার পিএমখালী ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম পাতলী গ্রামের বাদশা মিয়া বাড়ির গোয়াল ঘরে ভয়াবহ চুরির ঘটনা ঘটে।
২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি ভোর ৪টার দিকে
সীতাকুণ্ড উপজেলার মুরাদপুর এলাকায় প্রাইভেট কারে পুলিশের স্টিকার লাগিয়ে গরু চুরির ঘটনা ঘটে। একই বছরের ২৯ আগস্ট দিবাগত রাত পৌনে ৪টার দিকে রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের হাইটুপী ভুতপাড়া এলাকার মোজাফ্ফর আহমদের বাড়িতে অস্ত্রের মুখে পিতা-পুত্রকে জিম্মি করে গরু ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন সময়ে গরু চুরি করতে গিয়ে আটক হয়েছেন কোনাখালী গ্রামের টুক্কুর ছেলে কাইসার (২৫), পূর্বভেওলার জামালের ছেলে রিপন (২৪) ও রামপুর এলাকার শহীদুল ইসলাম (২২)। কাইসার সাহারবিল ইউপির নতুন চেয়ারম্যান নবী হোসনের বড় ভাই টুক্কুর ছেলে বলে জানা গেছে। শুধু কী আটক! ডাকাতি করতে গিয়ে কক্সবাজার জেলায় একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন একাধিক ডাকাত।
এদের মধ্যে বারবার নাম উঠে এসেছে-চকরিয়ার নবী হোছাইন প্রকাশ নইব্যা চোরা, ভিআইপি চোর ডাকাত তৌহিদ (৩২) মো. নাহিদ (২১), মো. সোহেল (২৬), মো. জাহাঙ্গীর আলম (৩৫), আশরাফুল হাসান (২৪), সাইফুল ইসলাম ( ২৫), মো. রমজান আলী (২৩), ইমরান হোসেন টিপন (২৫) ও মো. রাজীব (২১)।)। ৪ গরু চোর হলো- কাউছার (২০), মাহিম (২১), মো. দিদার (২০), হেলাল (৩০), মো. নুরু (২২), মো. সাইদুল (২৩) ও গাড়ি চালক চকরিয়া ইলিশা এলাকার চুয়ারফাড়ী এলাকার মো. ছালামতুল্লার ছেলে সেনাম (৩২), চকরিয়া পৌরসভার লক্ষ্যারচর আমান পাড়ার মোঃ আমির হোসেনের ছেলে মো. মুবিন উদ্দিন (৩২), পশ্চিম ভাটাখালী তরছঘাটার নবাব মিয়া ও আব্দুল শুক্কুর (৩৪) অন্যতম।
শুধু ডাকাতি নয়। কক্সবাজারের রামু থেকে চুরি হওয়া গরু চকরিয়া থেকে উদ্ধার করেছেন পিবিআই পুলিশ। চকরিয়ার কাকারা লোটনি গ্রামের জনৈক রাসেলের বাড়ি থেকে দুইটি চোরাইকৃত গরু উদ্ধার করে হয়। পরে গরুর মালিক হাজেরা বেগম নামের এক নারী স্থানীয় চেয়ারম্যান এমডি শাহ আলম কে ১নং আসামী করে ৭ জনের নাম উল্লেখ করে রামুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের জন্যে দেয়। মামলা দায়ের ১ মাস ১৫ দিন পর সন্ধ্যায় কাকারা ৩নং ওয়ার্ড দক্ষিন লোটনি এলাকা থেকে এ গরুগুলো উদ্ধার করে পুলিশ।
অনুসন্ধান বলছে, দক্ষিণ চট্টগ্রামের গরুচোর সিন্ডিকেটের প্রধান হোতা কক্সবাজারের চকরিয়ার উপকূলীয় এলাকার ত্রাস সাহারবিলের নবীর হোছাইন প্রকাশ নইব্যা চোরা। কয়েক মাস আগে সে গরু চুরির মামলায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কিছুদিন জেলে থাকলেও অদৃশ্য ক্ষমতাবলে জামিনে বেরিয়ে পড়ে আবারো সক্রিয়।
তার রয়েছে অবৈধ অস্ত্রের ভাণ্ডার এবং বিশাল একটি বাহিনী।
কক্সবাজারের রামু থানা পুলিশ জানিয়েছে, রামুর গরু ডাকাতির ঘটনার দক্ষিণ চট্টগ্রামের গরুচোর সিন্ডিকেট প্রধান চকরিয়ার নবী হোছাইন প্রকাশ নইব্যা চোরার সংশ্লিষ্টতা পেয়েছিলো। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মানস বড়ুয়া জানান, ‘আলোচিত নইব্যা চোরার বিরুদ্ধে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও পুরো কক্সবাজার জেলায় গরু চুরি, ডাকাতিসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। আমি কয়েক মাস আগে তাকে চকরিয়ার একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে গ্রেপ্তার করেছিলাম। কিন্তু তাকে ছাড়িয়ে নিতে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি তদবির করে।’
সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমার সীমান্ত থেকে কক্সবাজারের কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে অবৈধভাবে গরু পাচার হয়। এসব গরু চকরিয়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পৌছানোর জন্য গড়ে উঠেছে কয়েকটি পাচার চক্র। এর মধ্যে অন্যতম ইউপি সদস্য রুস্তমের পাচার চক্র। রুস্তম বড় বড় গরু ব্যাবসায়ীদের সাথে গরু প্রতি ২২ হাজার টাকা চুক্তির মাধ্যমে গরু পৌছে দেন। মিয়ানমারের সীমান্ত থেকে আর এস ও সশস্ত্র বাহিনী গরু নিয়ে ঈদগড়ের ইউপি সদস্য রুস্তমের চক্রের সদস্যদের বুঝিয়ে দেয়। সেখান থেকে অস্ত্র নিয়ে পাহারা দিয়ে ঈদগাহ পর্যন্ত নিয়ে যায় তারা। ঈদগাহ থেকে ৪ হাজার টাকা চুক্তিতে চকরিয়াসহ বিভিন্ন জায়গার ব্যাবসায়ীদের গরু বুঝিয়ে দেন ঈদগাঁহ কালির ছড়া এলাকার কাইয়ুম উদ্দিন।
নির্ভরযোগ্য সূত্র আরো বলছে, এসব গরু চোর ও ডাকাত দলেরা খামার খেকে গবাদিপশু গুলো নিয়ে তাদের সুরক্ষিত ডেরায় নিয়ে যান। সেখানে বন্দি করে রাখেন। বৃহত্তর চট্টগ্রামে এ ধরনের দুটি চোরাই গরু রাখার ডেরা রয়েছে। একটি চকরিয়া উপজেলায় আরেকটি মিরসরাই উপজেলায়। যেখানে সমস্ত চুরি ডাকাতি করা পশু মজুদ করেন। পরে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাচার করেন চক্রটি।
দুই জেলার একাধিক স্থানীয় নেতা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা সামাজিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে স্থানীয় সরকার বিভাগের একদম প্রান্তিক লেবেল ইউপি চেয়ারম্যানদের ক্ষমতা নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। যে কারণে এলাকায় চুরি ডাকাতি বাড়লেও মানুষজন নাগরিক সেবা কিংবা ন্যায় বিচার পাচ্ছে না। দ্রুত স্থানীয় সরকার বিভাগ ইউনিয়ন পরিষদ গুলো সচল করলে ভালো হবে বলে মনে করেন সচেতন মহলও।
যদিও ক্রাইম অ্যানালিস্ট বা নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ খামারে যে হারে ডাকাতি ও চুরির ঘটনা বাড়তেছে তা অবশ্য উদ্যোগজনক। এ ধরনের ঘটনায় সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। দেশীয় খামারে বিরুপ প্রভাব পড়তেছে। এসব বিচার বিশ্লেষণ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অতি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে খামারে গরু চুরি ও ডাকাতি ঠেকাতে।
গবাদিপশু চুরি ডাকাতির বিষয়ে কক্সবাজার জেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের তেতৈয়া বাজারের কৃষক জিয়া উদ্দিন বলেন, 'গাড়িতে করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র নিয়মিত গরু মহিষ ছাগল চুরি ডাকাতি করে নিয়ে যাচ্ছে। দেশের খামারিদের সুরক্ষা দেওয়া দরকার প্রশাসনের। এ চুরি ডাকাতি বন্ধে সম্বেলিত ভাবে জেলা মেট্টো পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীকে মহাসড়কে পুরো রাত জুড়ে টহল জোরদার ও সন্দেহজনক গাড়ি তল্লাশি করা জরুরী।'
মিরসরাই, বোয়ালখালী ও সীতাকুন্ড উপজেলার খামারি মো. সোবহান, করিম আলী ও জাফর আহমদ বলেন, 'হঠাৎ গৃহপালিত পশু চুরি ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়া উদ্বেগজনক হারে। পশু পালনকারীদের বেশির ভাগই গরিব। বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে কিংবা প্রবাসীরা শখের বশে অনেক আশা নিয়ে গবাদিপশু লালন পালন করে থাকেন। পুলিশ প্রশাসন যদি এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ না নেয় তাহলে পশু চুরি-ডাকাতি থামানো কঠিন হবে।'
কক্সবাজারের রামু উপজেলা ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর আহমদ বলেন, 'সারা দেশের মতো কক্সবাজারেও অনেক প্রতিষ্ঠিত ও প্রান্তিক জনপদের ব্যক্তি ও কৃষকরা গরু পালনে এগিয়ে এসেছেন। এ কারণে ডেইরি শিল্পের প্রসার ঘটেছে। পাশাপাশি দেশের মাংস ও দুধের চাহিদা পূরণে ডেইরি খামার ও গরু পালনকারী কৃষকরা অবদান রাখছেন। কিন্তু প্রতি রাতে সন্ত্রাসী কায়দায় অস্ত্রধারী ডাকাত দলের সদস্যদের গরু চুরি-ডাকাতির ফলে ডেইরি শিল্পের নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ব্যক্তি পর্যায়ে গরু পালন কঠিন হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে দ্রুত বৈঠক বসে সমস্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপর ও সাড়াশি অভিযান চালানো উচিত বলে মনেকরি।'
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারে এক আইন শৃঙ্খলা সভায় জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম গরু চুরির এক ভয়ঙ্কর তথ্য তুলে ধরে বলেছিলেন, ‘পুলিশ সর্বদা গরু চুরি ঠেকাতে তৎপর রয়েছে। ইতিমধ্যে চুরি যাওয়া বেশ কিছু গরুও উদ্ধার হয়েছে। সেই সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বেশ কয়েকজন গরু চোরও।’ কিন্তু গরু চোরদের জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে তা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। এমনকি গ্রেপ্তার হওয়া গরু চোরের দেওয়া জবানবন্দি রীতিমতো পিলে চমকানোর মতো ঘটনা বের হচ্ছে। এতে খোদ জনপ্রতিনিধিরা গরু চুরি ডাকাতিতে জড়িত বলে ভয়ঙ্কর তথ্য মিলছে। যাদের আরো গভীরে পৃষ্ঠপোষকতা করছেন এক শ্রেণির
শাসনকর্তা।'
হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা রিজিয়নের চট্টগ্রাম সার্কেলের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহকারী পুলিশ সুপার মাসুম সরদার বলেন, 'গরু চুরি ডাকাতি ঠেকাতে রাতে মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের টিম জোরদার করা হয়েছে। সন্দেহজনক কোন গাড়ি দেখলেই তল্লাশি করা হচ্ছে। সবাইকে সচেতন হতে হবে। খামারিদের রক্ষায় সবাই একযোগে তাজ করলে ভালো কিছু সম্ভব।'
কক্সবাজার জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ, এম, খালেকুজ্জামান বলেন, 'কক্সবাজার জেলায়ও গরু চুরি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। কিন্তু খামারিরা সহজে লিখিত দিতে চায় না। তবুও আমরা মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করি। পুলিশ বাহিনী আগের মতো সক্রিয় হলে এসব ঘটনা দ্রুত কমে যাবে বলে আশা করি।'
চট্টগ্রাম জেলা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর বলেন, 'চট্টগ্রামে গত কয়েক বছরে খামারে চুরি ডাকাতির ঘটনা শুনতে পাচ্ছি। বিভিন্ন বাহিনীর পোশাক পড়েও ডাকাতির ঘটনা জনমনে আতঙ্ক ছড়ায়। খামার থেকে লাখ লাখ টাকার গরু চুরি হলেও উদ্ধার হওয়ার ঘটনা কম। এক্ষেত্রে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি আগের মতো মনোবল নিয়ে মাঠে সক্রিয় থাকে তাহলে অপরাধ প্রবণতা চুরি ডাকাতি কমে যেতে বাধ্য।'
চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান বলেন, 'গরুর খামারে যাতে নির্বিঘ্নে গবাদিপশু লালন পালন করতে পারে সেজন্য পুলিশ সব সময় তৎপর। চুরি-ছিনতাই-ডাকাতির মতো ঘটনা প্রতিরোধে পুলিশের টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। খামারিদের সুরক্ষায় প্রতিটি খামারে সিসিটিভি বসানো উচিত।'
কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, 'এসব বিষয় গুলো মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় উঠে আসে। তা নিয়ে পুলিশ কাজ করছেন। দেশের পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে খামারে চুরি ডাকাতি বেড়েছে তা অস্বীকার করব না। তবে পুলিশ আন্তরিক ভাবে এসব দমনে কাজ করছেন।'
চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের বন্দর ও পশ্চিম জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) পদোন্নতি প্রাপ্ত এডি. ডিআইজি মুহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, 'সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাবার সাথে সাথেই আমরা অভিযান পরিচালনা করি। এমনকি মহানগরের ঘটে যাওয়া অনেক গরু চুরি ও পুলিশ পরিচয়ে খামারে ডাকাতি মামলাও তদন্ত করছে মহানগর ডিবি। শুধু গরু চুরি বা ডাকাতি নয়, যেকোন অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ডিবি পুলিশ সব সময় সক্রিয় ভূমিকায় রয়েছে।'
চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম) মোঃ মাহফুজুর রহমান বলেন, 'সকল জেলার পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে মহাসড়কে যেন রাতে টহলবৃদ্ধি করা হয়। ইদানিং গরু চুরি ডাকাতির নানা অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
সার্বিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। তারপরও গৃহস্থদের সতর্ক থাকতে হবে। কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানাতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রাণি সম্পদ দপ্তরের পরিচালক ডা. মো. আতিয়ার রহমান এর কাছে গবাদিপশু ডাকাতি ও চুরি বন্ধে কোন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ততার অজুহাতে পরে এ বিষয়ে কথা বলবো বলে এড়িয়ে যান।
এমএসএম / এমএসএম