শীতকালে ভিটামিন ডি এর অভাব দূর করতে যা যা করবেন
গ্রীষ্মের তাপদাহ থেকে মুক্তি মেলে বলেই শীতকাল অনেকেরই পছন্দ। পিঠা উৎসব, খেজুরের রস, অতিথি পাখি সব মিলিয়ে শীত এক অন্যরকম আমেজ নিয়ে আসে। কিন্তু শীতকালে ভিটামিন ডি এর অভাবজনিত সমস্যা গুলো প্রকট আকার ধারন করে। ভিটামিন ডি এর অভাব হলে যে সমস্যা গুলো হতে পারে:-
• হঠাৎ মাথার চুল পড়তে শুরু করে,
• ক্ষত শুকাতে দেরি হয়,
• হাড়ে - জয়েন্টে ব্যথা হয়,
• পিঠে ও পেশীতে ব্যথা হয়,
• রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়,
• ক্লান্তি ও মানসিক অবসাদ চেপে বসে।
ভিটামিন ডি চর্বিতে দ্রবণীয় এমন এক পুষ্টি উপাদান যা খাবার গ্রহণের মাধ্যমে পুরোপুরি আমাদের শরীর তৈরি করতে পারে না। সূর্যের আলোতে প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন ডি উৎপন্ন হয় বলে একে সানশাইন ভিটামিনও বলা হয়। সূর্যের সংস্পর্শে আসলে ভিটামিন ডি রিসেপ্টর কোষগুলি কোলেস্টেরল কোলেক্যালসিফেরোলে রূপান্তরিত হয়। সূর্যের UVB রশ্মি অনেক শক্তিশালী হওয়ায় দ্রুত ভিটামিন ডি তৈরি করে।
শীতের মাসগুলিতে সূর্যের আলো সীমিত থাকে, সেই সাথে দীর্ঘসময় ধরে সোয়েটার পড়ে থাকার কারণে সূর্যের আলো ত্বকে পৌঁছাতে পারে না বলে এসময় অভাব জনিত জটিলতা বেশী দেখা দেয়। এছাড়া যারা সবসময় ঘরে থাকে বা ডেস্ক জব করেন সূর্যের সংস্পর্শ না থাকায় তাদেরও অভাব দেখা দিতে পারে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের ত্বকের পুরুত্ব কমে যাওয়ায় ভিটামিন ডি তৈরির ক্ষমতা কমে যায় ফলে বয়স্ক ব্যক্তিরা ( >৬৫) সহজেই ভিটামিন ডি এর অভাবে ভুগে থাকেন। শুধুই মায়ের দুধ পান করা শিশুরা সামান্য পরিমাণ ভিটামিন ডি পেয়ে থাকে। মেলানিন সূর্য থেকে ভিটামিন ডি সংশ্লেষ করতে বাধা দেয় বলে উজ্জ্বল বর্ণের মানুষের তুলনায় চাপা বর্ণের মানুষের রক্তে ভিটামিন ডি এর মাত্রা কম দেখা যায়। মেডিসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভিটামিন ডি শোষণ ব্যহত হতে পারে। কিডনি বা লিভার ফেইলিউর হলে, সিলিয়াক ডিজিজ, প্যানক্রিয়াটাইটিস, ক্রন্স ডিজিজ, সিস্টিক ফাইব্রসিসের মত হজমে সমস্যা জনিত কোন রোগ থাকলে ভিটামিন ডি শোষণ কমে যায়। তাই লক্ষণ গুলো দেখা মাত্রই হাসপাতালে গিয়ে ভিটামিন ডি টেস্ট করতে হবে।
ভিটামিন ডি কে দুটি রুপে পাওয়া যায়। ভিটামিন ডি২ ( এরগক্যা্লসিফেরল) এবং ডি৩ (কোলেক্যালসিফেরল)।
ভিটামিন ডি২ (উদ্ভিজ উৎস ও ফরটিফাইড খাবার) থেকে এবং ভিটামিন ডি৩( প্রানিজ উৎস) পাওয়া যায়। ভিটামিন ডি২ এর চেয়ে ভিটামিন ডি৩ এর শরিরে সহজেই শোষিত হয়। ভিটামিন ডি এর উৎকৃষ্ট উৎস ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার( দই, ছানা,পনির),গরুর কলিজা, সামুদ্রিক মাছ, কডলিভার ওয়েল , কমলা, মাশরুম, ইত্যাদি। আমরা সকলেই জানি, ক্যালসিয়াম দাত ও হাড় গঠনে সাহায্য করে। আবার হাড় ও দাত গঠনে প্রয়োজনীয় ক্যলসিয়াম ভিটামিন ডি ছাড়া শোষিত হয় না। তাই পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি সূর্যালোকে যেতে হবে।
বর্তমান সময়ে তরুণীদের মাঝে সানস্ক্রিন ব্যবহারের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সৌন্দর্যচর্চা করতে গিয়ে যেমন হাড়ের দফারফা হয়ে যাচ্ছে, তেমনি কমে যাচ্ছে ইমিউনিটি বা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তাই শীতে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের পাশাপাশি সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৩ টার মধ্যে অন্তত ৩০ মিনিট সানস্ক্রিন ছাড়া সান বাথ নেয়া অত্যন্ত জরুরি। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট নিতে হবে।
লেখক:- পুষ্টিবিদ হিয়া মল্লিক
এক্স ডায়েটেশিয়ান, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ধানমন্ডি-২, ঢাকা।
এমএসএম / এমএসএম