ইলিশের ২৭৬ কোটি টাকার প্রকল্প থাকার পরও বাড়েনি উৎপাদন
ইলিশ উৎপাদনে সরকার ২৭৬ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিলেও আশানুরূপ বাড়েনি বৃদ্ধির হার। প্রকল্প শুরু হয়েছে ২০১৯সালে । প্রকল্প শেষ হবার কথা ছিলো ২৫সালে এবং প্রকল্প শেষে উৎপাদন বৃদ্ধির কথা ছিলো ১৬পাসেন্ট। সে তুলনায় প্রতি বছর ইলিশ উৎপাদনের কথা ছিলো ৩% এর বেশি। কিন্তু প্রকল্প গ্রহন করার পর প্রতি বছর ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে ২% এর নিচে।
মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে ইলিশ উৎপাদন ছিলো ৫ লাখ ৩২ হাজার মে.টন। ২০২০ সালে উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৫লাখ ৫০মে.টন। অর্থৎ বছর বৃদ্ধির হার ০.২৯%। ২০২৩ সালে উৎপাদন ছিলো ৫লাখ ৬৫হাজার মে.টন,২০২২সালে ৫লাখ ৬৬হাজার মে.টন এবং ২০২৩ সালে উৎপাদন ছিলো ৫লাখ ৭১হাজার মে.টন। অথৎ ২০২৩সালে বৃদ্ধির পরিমান ছিলো ০.৮৩%।
অথাৎ যে হারে ইলিশের উৎপাদন বাড়ার কথা ছিলো সে হারে উৎপাদন বাড়েনি। প্রকল্পটি দেশের ২৯ জেলার ১৩৪টি উপজেলায় রয়েছে। বিশেষ করে চাঁদপুর বরিশাল ,ঝালকাঠি,পটুয়াখালি,বরগুনা পিরোজপুর ভোলা,চট্রগ্রাম,কক্রাবাজার, ফেনী লক্ষীপুর,চাঁদপুর, ঢাকা মাদারীপুর,নারায়ণগঞ্জ,মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ.ফরিদপুর রাজবাড়ী, নরসিংদী,জামালপুর খুলনা,বাপগেরহাট কুষ্টিয়া রাজশাহী নাটোর,পাবনা, সিরাজগঞ্জ এ অঞ্চলগুলোতে ইলিশ পাওয়া যায় এবং এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তবে, প্রকল্প সূতে জানা গেছে, ইলিশের উৎপাদন বাড়ানো জন্য আন্তরিক ভাবে কাজ করছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা । কিন্তু অর্থের অভাবে কাজ করতে পারছেনা তারা। প্রকল্প এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) জিয়া হায়দারের বিরুদ্ধে গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ আমলে দলীয় মনোনয়নে নিয়োগপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তা প্রতিটি টেন্ডার পাস করতে দীর্ঘ সময় নিতেন এবং যোগ্য ঠিকাদারদের বদলে পছন্দের বা সেকেন্ড লোয়েস্ট ঠিকাদারদের কাজ দিতেন। এছাড়াও চট্টগ্রামের কক্সবাজারে একটি হ্যাচরির কাজ বিপুল ঘুষের বিনিময়ে জেলার সাবেক একজন এমপিতে পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠে ছিলো। বর্তমানে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে শহীদ ঠিকাদারের প্রতিষ্ঠান মোনালিসা এবং হাওলাদার নামে আরেক ঠিকাদারকে একচেটিয়া কাজ করে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে এই দুটি কোম্পানি নিয়মিত জিয়া হায়দারকে ঘুষ দিয়ে টেন্ডার বাগিয়ে নিতেন। ইলিশ প্রকল্পের ৯০ শতাংশ কাজই শহীদ ঠিকাদার পেয়ে থাকেন বলে জানা গেছে। নোয়াখালীর কোস্টগার সিভিল কনস্ট্রাকশন কক্রাবাজারের কলাতলী ঘাটসহ আরোও অনেক কাজ শহীদ ঠিকাদারকে পাইয়ে দিয়েছেন তিনি। দায়িত্বশীল পদে থেকে এমন অনিয়ম ও দুর্নীতি মৎস্য খাতের স্বচ্ছতাতে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে মৎস্য সেক্টরের কর্মকর্তারা মনে করেন। এ বিষয় জিয়া হায়দার সাথে যোগা যোগা করেও তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হযনি। তবে বর্তমান প্রকল্প পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্যাহ বলেন, আমার মতে, ইলিশ উৎপাদন আরো কমা উচিৎ কারন দেশে নদীগুলোকে যে ভাবে পলিথিন দ্বারা দুষিত করা হচ্ছে তাতে মাছের উৎপাদন আসবে কোথা থেকে। এ ছাড়া নদীর মোহনায় পলি জমে নদীর গভীরতা কমছে, এতে মাছ সাগর থেকে নদীতে আসতে বাঁধা পাচ্ছে। এ জন্য নদীতে মাছ কম পাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা শত পাহারা দিয়েও ইলিশের প্রজনন এর সময় মাছ ধরা বন্ধ করতে পারছিনা। রাতে ও অন্ধকারে চুরি করে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ ধরে নিয়ে যায়। আমরা ঝুকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে বেতন দিয়ে পাহারদার রেখেছি কিন্তু কাজ হচ্ছেনা।
ইলিশ উৎপাদন প্রকল্প থেকে ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধকালিন সময় মৎস্যজীবীদের জীবীকা নির্বাহ করার জন্য যে সাহায্য সহযোগীতা করা হয়েছে সেখানেও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ, নাম না প্রকাশ করার শর্তে চাঁদপুর মোহনার এক মৎস্য জীবী বলেন ঘুষের বিনিময় মূখ দেখে দেখে সাহায্য সহযোগীতা করা হয়েছে। প্রকল্প থেকে যে গরু ও জাল দেয়া হয়েছে তা নিদিষ্ঠ কয়েকজন জেলেকে দেয়া হয়েছে এবং তাদের কাজ থেকে টাকা নেয়া হয়েছে। এবিষয় বর্তমান প্রকল্প পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্যাহর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয় আমার জানা নেই, তবে খোঁজ নিয়ে দেখবো।
এ বিষয় মৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউট,চাঁদপুর, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আবু কাউছার দিদার বলেন, প্রকৃতি ভাবেই ইলিশের বৃদ্ধি হয়, আমরা শুধুপরিচর্য করতে পারি। ইলিশের মৌসুম আছে, এখন আসলে ইলিশের মৌসুম না এজন্য এখন ইলিশ পাওয়া যাচ্ছেনা। এ ছাড়া আমাদের মনে রাখতে হবে ইলিশ মূলত সাগর থেকে নদীতে আসে এবং নদীতে ডিম দিয়ে আবার সাগরে চলে যায় এ জন্য আমাদের নদীর পরিবেশ মাছের অনুকূলে রাখতে হবে। আমাদের দেশে অধিকাংশ নদীতে মেহন্দি জাল কারেন্ট জাল ব্যবহার করা হয় যার ফলে ইলিশ মাছ যখন লাভা ছাড়ে তখন কিন্তু এই জালে ধরা পরে যায়, যার কারনে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছেনা। এ ব্যাপারে সরকার আইন করলে ঠিক মত প্রয়োগ হচ্ছেনা।
এমএসএম / এমএসএম