সারাদেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৩ লাখ

ঢাকায় পানি ও গ্যাসের সংকট থাকায় ঠিক সময়ে রান্না-বান্না করতে না পেরে অনেকেই দূষিত পানি পান এবং পচা-বাসি খাবার খেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন৷ চলতি বছরে সারাদেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় তিন লাখেরও বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে মৃত্যুর হিসাব না থাকলেও রাজধানীর মহাখালীতে কলেরা হাসপাতালে মারা গেছেন ২৯ জন৷

এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ঢাকার মহাখালীতে আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) বা কলেরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯,২৩৩ জন রোগী৷ শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত একদিনে ৯৯৭ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন এই হাসপাতালে যা একদিনে সর্বোচ্চ রোগী ভর্তি হওয়ার নতুন রেকর্ড৷

আইসিডিডিআর,বির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মো. ইকবাল হোসেন জানান, গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি৷ এটার কারণ মূলত বিশুদ্ধ পানির অভাব৷ ঢাকা শহরেই আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি৷

আইসিডিডিআর,বির গণসংযোগ বিভাগ জানায়, সারাবছরই ডায়রিয়া হয়৷ তবে এ বছরের মার্চ মাস থেকে এর প্রকোপ বেড়ে গেছে৷ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত মহাখালী কলেরা হাসপাতালে ৪৩ হাজারেরও বেশি ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন৷ এর মধ্যে মার্চ মাসে ভর্তি হয়েছেন ৩০ হাজার ৫০০৷ আর চলতি মাসে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ৩০০'র বেশি রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন৷ ৮ এপ্রিল ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৩৮২ জন৷ এখন প্রতি ঘণ্টায় ওই হাসপাতালে প্রায় ৬০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন৷

মার্চ মাস থেকে এ পর্যন্ত ডায়রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে ২৫ জন৷ এরা হাসপাতালে আনার পথে মারা গেছেন৷ হাসপাতালে ভর্তির এক ঘণ্টার মধ্যে মারা গেছেন চার জন৷

কলেরা হাসপাতালের প্রধান ডা. বাহারুল আলম জানান, ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়ার পর হাসপাতালের সামনে দুইটি আলাদা তাঁবু করা হয়েছে৷ দুইটি তাঁবুতে মোট শয্যা ১৫০টি৷ আর হাসপাতালে আছে ৪৫০টি৷ আরো কিছু রোগীকে অতিরিক্ত বেড করে জায়গা দেয়া হচ্ছে৷ এখন হাসপাতালে সার্বক্ষণিকভাবে কমপক্ষে ৬৫০ জন ডায়রিয়া রোগি ভর্তি থাকছেন৷

তিনি আরো জানান, প্রতিদিন ১ হাজার ৩০০’র বেশি রোগী এলেও সবাইকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন পড়ে না৷ ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আমরা অনেক রোগীকে ফ্লুইড দিয়ে ‘স্ট্যাবল' করে ফেলি৷ এরপর চিকিৎসাপত্র দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিই৷ আর যাদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন পড়ে তারাও চার-পাঁচ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যান৷ তবে এখন আমরা রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি৷

এই সময়ে বিশুদ্ধ পানির অভাব এবং পঁচা-বাসি খাবার খেয়েই বেশি মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানান আইসিডিডিআর,বির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মো. ইকবাল হোসেন৷ তিনি জানান, এখন গরম এবং বাতাসে আর্দ্রতা আছে৷ তাই খাবারে ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়, এটাও ডায়রিয়ার কারণ৷ ঢাকায় এমনিতেই এখন পানির সংকট চলছে৷ আবার গ্যাসের সংকট থাকায় ঠিক সময়ে রান্না-বান্না করা যাচ্ছে না৷ ফলে অনেকেই দূষিত পানি পান এবং পচা- বাসি খাবার খেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে ন৷

তিনি জানান, সাধারণত শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয় বেশি৷ কিন্তু এবার প্রাপ্তবয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন৷ এর কারণ তারা নানা কাজে বাইরে থাকছেন৷ বিশেষ করে যারা নিম্নবিত্ত তারা এই গরমে বাইরের দূষিত পানি এবং শরবত বা জুস খাচ্ছেন৷ নিম্নবিত্ত মানুষই আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি৷ তারা রাস্তার পাশে কাজ করেন, কেউ রিকসা চলান৷ এই গরমে তারা যা পাচ্ছেন তাই খাচ্ছেন বলে জানান তিনি৷

ডা. মো. ইকবাল হোসেন সবাইকে পানি ফুটিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেন৷ আর সেটা যে পরিমাণ পানি হোক না কেন, বলক ওঠার পর আরো পাঁচ-সাত মিনিট ফুটাতে হবে বলে জানান তিনি৷ এছাড়া ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে প্রথমেই হাসপাতালে না গিয়ে খাবার স্যালাইন নিয়ম মেনে খাবার পরামর্শ দেন৷ যদি বেশি বেশি বমি হয়, চোখ মুখ শুকিয়ে যায়, অবসাদ লাগে তাহলে দ্রুত কাছের হাসপাতালে নেয়ার পরার্শ দেন৷

তিনি জানান, প্রতি বছর এই সময়ে এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়৷ এবার একটু বেশি, তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে৷ টয়লেট শেষে ঠিকমত হাত ধুতে হবে৷ এটা পানি বাহিত রোগ তাই বিশুদ্ধ পানি যেভাবেই হোক ব্যবহার করতে হবে৷

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশের সব বিভাগ ও জেলায়ই ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে৷ তবে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি৷ তাদের হিসেবে ঢাকায় এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখেরও বেশি মানুষ৷

সূত্র : ডয়েচে ভেলে