গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি হবে সরকারের জন্য আত্মঘাতী : এফবিসিসিআই

বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনীতির যে পরিস্থিতি চলছে, এতে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারকে বেকায়দায় ফেলা হবে। এটি সরকারের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে বলে মন্তব্য করেছেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। এই মুহূর্তে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম না বাড়াতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের এই শীর্ষ সংগঠন।
শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই আইকনিক টাওয়ারে সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআই সভাপতি এ কথা বলেন। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়া জানাতে এফবিসিসিআই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এ সময় এফবিসিসিআই ও বিভিন্ন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ালে জনজীবনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম না বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এই দুঃসময়ে পাইকারি পর্যায়ে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে বহুমাত্রিক মূল্যস্ফীতি উসকে দিয়ে এর বহুমুখী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার উদ্ভব হবে। ফলে কৃষি, শিল্প, সেবা এবং সার্বিকভাবে সাধারণ জনগণের জীবন ও জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে অচলাবস্থার সৃষ্টি করবে। সর্বোপরি, অর্থনৈতিক উন্নয়নের চলমান ধারা মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে।
জসিম উদ্দিন বলেন, জ্বালানি ও বিদ্যুতের পাইকারি (বাল্ক) দাম বৃদ্ধির আবেদনপত্র পর্যালোচনা করলে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় যে, বিদ্যুৎখাত বার্ক আইনের বিধান অনুযায়ী স্বচ্ছতা, মানসম্মত, দক্ষতা ও জবাবদিহিতা সহকারে সুচারুরূপে পরিচালিত হচ্ছে না। বরং এই খাতের সর্বত্র অদক্ষতা, যথেচ্ছ অনিয়ম, অস্বচ্ছতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এবং আইনের বিপরীতে পরিচালিত হচ্ছে।
জসিম উদ্দিন বলেন, এ অবস্থায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবস্থার আমূল সংস্কার না করে এ খাতে বিরাজমান অপব্যবস্থাপনার অহেতুক দায়ভার জাতীয় অর্থনীতি এবং জনগণের জীবন ও জীবিকা নির্বাহের সব ক্ষেত্রে সংক্রমিত করা কোনোভাবেই সমীচীন হবে না। তবে কোভিড এবং ইউক্রেন সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী বিরাজমান সংকটময় পরিস্থিতি প্রশমিত হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বর্তমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি সরকারের একটি আত্মঘাতী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। কোভিড এবং ইউক্রেন পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, শিপিং ও পরিবহন ব্যয় অত্যধিক বেড়ে যাওয়ার প্রভাব আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে পড়েছে।
ব্যবসায়ীদের এই নেতা বলেন, উৎপাদন ব্যয় অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানি খাতের পক্ষে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হলে ‘কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস’ আরও বেড়ে যাবে। ফলে আমাদের উৎপাদন ও রপ্তানি খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখা সম্ভব হবে না। মূল্যস্ফীতির কারণে জনজীবনে অস্থিরতার সৃষ্টি হবে। এছাড়াও জাতীয় ভিশন-২০৪১, এসডিজি-২০৩০ অর্জন ও এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্রেও বাধার সৃষ্টি হবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এমতাবস্থায় জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবটি আপাতত স্থগিত করে কোভিড এবং ইউক্রেন সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী বিরাজমান সংকটময় পরিস্থিতি প্রশমিত হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। এতে সাধারণ জনগণকে স্বস্তি দেয়ার পাশাপাশি শিল্পখাতের সক্ষমতা বজায় থাকবে। সার্বিক অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সেই সঙ্গে আমরা জাতীয় ভিশন-২০৪১, এসডিজি ২০৩০ অর্জন ও এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম হবো।
জসিম উদ্দিন বলেন, এখন কুইক রেন্টালের প্রয়োজন নেই। এগুলো হাই রেট। পর্যায়ক্রমে এর ভার আমাদের ওপর এসেই পড়ছে।
অবৈধ গ্যাস লাইন বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে জসিম বলেন, অবৈধ গ্যাস লাইন বন্ধ করতে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। এক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদেরও এগিয়ে আসতে হবে। না বুঝে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্যে এই প্রস্তাব (গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব) করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর চেষ্টার পেছনে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে দাবি করেননেশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ স্মল অ্যান্ড কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশ সভাপতি মির্জা নুরুল গনি শোভন। তিনি দাবি করেন, এর থেকে সরে আসতে হলে দরকার গণতান্ত্রিক সরকারের রাজনৈতিক দূরদর্শী সিদ্ধান্ত। এর বাইরে আমলাতন্ত্রের সিদ্ধান্তে কোন কাজ হবে না।
বাংলাদেশ চেম্বার অফ ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, দেশে এখন ডলার সংকট চলছে। ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে। এখন যদি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়, উৎপাদন খরচ বাড়বে। যার প্রভাব পড়বে ভোক্তার ওপর। এখন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সময় নয়।
রিহাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, বিশ্ববাজারে ঝড় চলছে। এ অবস্থায় ইচ্ছামত দাম বাড়িয়ে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য কে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবেন না।
বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে আমরা রপ্তানিতে বেশ ভালো করতে ছিলাম। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে রপ্তানিকারকদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। এতে বিশ্ববাজারে রপ্তানি প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়বে দেশের পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মো. সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, সাবেক সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন, এমসিসিআইর সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, ব্যারিস্টার নিহাদ কবির, বিএসএমএর সভাপতি মনোয়ার হোসেন, বিসিএমএর সভাপতি মো. আলমগীর কবিরসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সাদিক পলাশ / সাদিক পলাশ

সরকারের অগ্রগতি অন্তর্দৃষ্টিতে দেখার পরামর্শ অর্থ উপদেষ্টার

৭ ট্রিলিয়ন ডলারের হালাল অর্থনীতি খাতে অবস্থান দৃঢ় করতে চায় বাংলাদেশ

১০ লাখ টাকার বেশি আমানত ও সঞ্চয়পত্রে রিটার্ন বাধ্যতামূলক

১২ কেজি এলপি গ্যাসের দাম কমলো

যুক্তরাষ্ট্রের তুলায় তৈরি পোশাক রপ্তানিতে কিছুটা শুল্ক ছাড় পাবে বাংলাদেশ

‘সবজিই যদি এত দামে কিনে খেতে হয় তাহলে মাছ-মাংস কিনবো কিভাবে’

ব্র্যাক ব্যাংকের এএমডি হলেন মাসুদ রানা

শুল্ক কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের সবুজ সংকেত পেয়েছে বাংলাদেশ: বাণিজ্য সচিব

বোয়িং থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কিনবে সরকার : বাণিজ্য সচিব

মাথায় হাত বুলিয়ে, ধমক দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে: অর্থ উপদেষ্টা

বাজারে সবজির দাম নাগালের বাইরে, বৃষ্টি হলে আরও বাড়তে পারে দাম

৬০ থেকে ৮০ টাকার ঘরে সব সবজি
