বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবসে বক্তরা
বিপর্যয় ঠেকাতে বিয়ের আগে ব্লাডটেস্ট বাধ্যতামূলক হওয়া জরুরি

বিয়ের আগে স্বাস্থ্য ও ব্লাড টেস্ট বাধ্যতামূলক করার আইন প্রনয়নের কোন বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন দেশের চিকিৎসা খাতের বিশেষজ্ঞগণ। জিনগত ব্যাধি থ্যালাসেমিয়ার যন্ত্রনায়ক পরিস্থিতি থেকে দেশকে জিরো থ্যালাসেমিয়ায় আনতে বিয়ের আগেই পাত্র-পাত্রীর ব্লাড টেস্ট বাধ্যতামূলক হলে সহজে এ রোগের প্রাদূর্ভাব থেকে রক্ষা পাবে দেশ। এর বাইরে এ রোগের তেমন কোন চিকিৎসা নেই বলে মত দেন বিশেষজ্ঞ মহল।
গতকাল বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস ২০২২ পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি ও হেমাটোরেকেয়ার এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত থ্যালাসিমিয়া প্রতিরোধ জাতীয় পরিকল্পনা প্রনয়নে বাহক নির্নয়ের গুরুত্ব শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ড. এম এ মতিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ডাক ও টেলিযোগযোগ বিভাগ, ডাক, টেলিযোগযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এবাদুল করিম এমপি, ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ, , সাবেক সচিব এনআইন খান, সাবেক সচিব মিহির কান্তি মজুমদার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণারয়ের অতিরিক্ত সচিব এনামুল হক,। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হেমাটোলজি সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক এম এ আজিজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ টিটো মিযা, থ্যালাসেমিয়া হাসপাতালের সাধারণ সম্পাদক ডা. জাহিদুল ইসলাম, উপদেষ্টা সাংবাদিক ও রাজনীতিক দিদার বখত। অনুষ্ঠান উপাস্থাপন করেন ডা. মাফরুহা আক্তার।
অনুষ্ঠানে জানানো হয় দেশের ১৪ শতাংশ মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক বা কেরিয়ার। কিন্তু তারা এটা জানেনা। থ্যালাসেমিয়া কেরিয়ার বা বাহক কোন সমস্যা নয়। কিন্তু স্বামী স্ত্রী উভয়ে বাহক হলেই সন্তানরা থ্যালসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হবে। এ কারণে কোন অবস্থাতে একজন থ্যালাসেমিয়া কেরিয়ারের সঙ্গে আর একজন কেরিয়ারের বিয়ে হওয়া ঠেকাতে জনসচেতনতার কোন বিকল্প নেই। এটা আইন করে বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়া অতি জরুরী বলেও উল্ল্যেখ করা হয়।
প্রধান অতিথি বলেন, বাংলাদেশকে থ্যালসেমিয়া মুক্ত করতে যা করা লাগে সব কিছু করার আন্দোলনে তিনি সকল সময় সক্রিয় থাকবেন। সেই সাথে এ বিষয়ে যাতে আইন পাশ হয় সে ব্যপারে তিনি ভূমিকা রাখবেন। একই সাথে গণমাধ্যমের পাশাপাশি সোস্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারণা করতে তিনি দায়িত্বশীল ধেমের সকল নাগরিকের প্রতি আহবান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এবাদুল করিম এমপি বলেন, বাংলাদেশে অনেক কাজ হচ্ছে। তবে এখানে এখনো ইন্ডাস্ট্রিজ ও ইউনিভার্সিটি এক সঙ্গে কাজ করছে না। একটি দেশের উৎপাদন ও গবেষণা যদি সমন্বিতভাবে না এগোয় তাহলে দেশের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। তিনি গবেষণাহ ইতিবাচক সকল উদ্যোগে সহযোগিতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। বিশেষ অতিথি ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, থ্যালসেমিয়া নিরাময় যোগ্য না হলেও এটা প্রতিরোধ মূলক রোগ। মাত্র দু’দশক আগেও এ বিষয় নিয়ে আমাদের অনেক কিছু জানা ছিলো না। সময় এগিয়েছে। সেই সাথে আমাদের সুযোগও বেড়েছে । কিন্তু এ রোগের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। আর যেহেতু সচেতন হলেই আমরা বড় একটা বিপর্যয় থেকে বেঁচে যেতে পারে তাহলে এটা আমরা করবো না কেন? তিনি সবাইকে যার যার জায়গা থেকে দায়িত্ব পালনের আহবান জানান।
সাবেক সচিব মিহির কান্তি মজুমদার বলেন, আমাদের দূর্ভাগ্য হচ্ছে ভাল কোন কাজের ব্যাপারে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা। কিন্তু ব্যক্তি লাভের জন্য আমরা অনেক দুষ্টু কাজ দ্রুত করে ফেলি। তিনি বলেন, থ্যালাসেমিয়া নির্মূলে সচেতনতা দরকার, গবেষণা দরকার। এটা করলে বড় একটি বিপর্যয় থেকে বেঁচে যাবে জাতি। এ কথাটি প্রধানমন্ত্রীকে বোঝাতে পারলেই তিনি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিবেন। এটা আমার বিশ^াস। সাবেক সচিব এন আই খান বলেন, আমরা মানুষ হিসেবে ভাল থাকতে চাই দায়িত্ব পালন করতে চাই। এটাই বড় কথা। যার ঘরে একজন থ্যালাসেমিয়া রোগী আছেন কেবল তিনিই বুঝতে পারেন এটা কত যন্ত্রণার একটি ব্যাপার। তাই যেহেতু এটা নির্মলের উদরণ রয়েছে সেই হেতু এটাকে ভয় না পেয়ে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা পারবো। এটা পারতে হবে।
সৈয়দ দিদার বখত বলেন, এদেশের জন্ম উৎসবের সাথে ছিলাম। এদেশের বিকাশের সাথে আছি। বন্ধুর ছেলে থ্যালাসেমিয়া হয়ে দেশে বিদেশে ব্যয় বহুল চিকিৎসা শেষে ২২ বছর বয়সে মারা গেছে। তার পর সন্তান হারানো পিতার বুকভরা দীর্ঘশ^াস থেকে জন্ম হয়েছিলো এ সমিতির । আমরা এটাকে এখন একটা জাতীয় প্লাট ফর্মে নিয়ে আসতে পেরেছি। সে দিন বেশী দূরে নয় যে দিন বাংলাদেশকে আমরা থ্যালসেমিয়া মুক্ত ঘোষণা করবো।
অনুষ্ঠানে আবেগ ঘন প্রতিক্রিয়া ব্রক্ত করেন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত মেধাবি ছাত্রী নওশিন তানজিন। তিনি বলেন, আমাদের জীবনটাই একটা যুদ্ধের । আমাদের বন্ধুরা সপ্তাহ শেষে যেদিন বন্ধু বা পরিবারের সাথে আনন্দে কাটাতে পারেন আমাদের সে দিনটি কাটে হাসপাতলে বা ব্লাড ব্যাংকের বারান্দায়। দুঃখজনক হলো এটা শুধু একদিনের ব্যাপার নয়। এটা সারা জীনের রুটিন। অথচ এটা প্রতিরোধ যোগ্য বিষয়। তিনি সমাজের সকলের সহযোগিতা ও সচেততনা প্রত্যাশা করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডা. এ,কে.এম একরামুল হোসেন স্বপন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রীকে সাথে নিয়ে থ্যালাসেমিয়া পতিরোধ- জনসচেতনতা এবং বাহক নির্নয় কার্যক্রম এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
আবেগ ঘন ছিলো অনুষ্ঠানের পুরোটা সময়
জাহিদুল ইসলাম শিশির: আবেগ জড়িয়ে ছিলো গতকাল থ্যালাসেমিয়া সমিতির আয়োজিত অনুষ্ঠানের পুরোটা সময় জুড়ে। প্রধান অতিথি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, সভাপতি ডা. এম. মতিন. সঞ্চালক ডা. মাফরুহাসহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার কেউ না কেউ এ রোগের বাহক বা পেসেন্ট। তাদের দুঃখ ভরা আবেগময় বক্তব্য সকলের জন্য বেদনার আবহ তৈরী করে। থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত বা জিনগত রোগ । এটা নিরাময় যোগ্য নয়। তবে সহজে প্রতিরোধ যোগ্য। এ কারণে জনসচেতনতা বাড়ানোর ব্যাকুলতা ছিলো অংশ গ্রহণকারিদের সার্বিক আয়াজনে। বিয়ের আগে কেন পাত্র পাত্রীর ব্লাড টেস্ট স্বাধীনতার ৫০ বছরেও বাধ্যতামূলক করা গেল না! সে প্রশ্নটিও ছিলো অনেকের কন্ঠে। দেশের প্রায় দেড় কোটি মানুষ থ্যলাসেমিয়া রোগের বাহক। কিন্তু অনেকেই তা জানেনা। অথচ একটি পরিবারে একজন থ্যালাসেমিয়া রোগী রোগী থাকলে অবশ্যই সে পরিবারটির জন্য কতটা মানসিক চাপ থাকে তা বোঝানো কঠিন। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত মেধাবি ছাত্রী নওশান ডায়াসে এসে বক্তব্য দেয়া শুরু করলে আবেগ ঘিরে ধরে পুরো অনুষ্ঠানে। সে তার জীবন যুদ্ধের কথাবলতে গিয়ে নিজেকে সব সময় একটা যুদ্ধের মধ্যে রাখতে হয় বলে জানান। এর পর জানা যায় অনেক বেদনার কাব্য। মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার নিজেই জানান তিনি থ্যালাসেমিয়ার কেরিয়ার। তাদের প্রথম সন্তান থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়ারপর উৎস সন্ধ্যানে গিয়ে জানা যায় তিনি নিজেই ক্যারিয়ার। সে সন্তান এখন পৃথিবীতে নাই। সেই সাথে উপস্থিত অনেকেই তাদের অনেক বেদনার কথা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে বার বার ঘুরে ফিরে আসে থ্যালাসেমিয়া সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার গোলাম রাব্বানীর কথা। তার সন্তান থ্যালসেমিয়ায় আক্রান্ত হলে দেশে বিদেশে চিকিৎসা করেও তাকে শেষ বাচানো যায়নি। ২২ বছর বয়সে মারা যান তাদের আদরের সন্তান। এর পর পিতার উদ্যোগে সারা দেশের থ্যালাসেমিয়া রোগী ও পরিবারকে সমর্থন দিতে জন্ম হয় এ সমতির। এখন এ সমতি অনেক দূর গেছে। ৪ হাজার রেজিস্টার রোগী নিয়মিত রক্তসহ সেবা নিচ্ছে এ সমিতির প্রতিষ্ঠিত হাসপাতাল থেকে। মাসে কোন কোন রোগীে ৪ বার পর্যন্ত রক্ত নিতে হয় । কিন্তু আসল কাজটাই শুরু করা যায়নি। সারা দেশে থ্যালাসেমিয়া ক্যারিয়ারদের সনাক্ত করে তাদের ডাটাবেজ করা গলে সে নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই এগিয়ে যেত। এখন থেকে সে কাজের প্রথম ধাপ শুরু হতে যাচ্ছে। এখন এ সমিতির দরকার আইনগত ও সামাজিক সমর্থন। যা বিশে^র বহু দেশের মতো বাংলাদেশকেও থ্যালাসেমিয়া ফ্রি হতে সাহায্য করবে। গণমাধ্যম, সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে দাবি ওপ্রয়োজনটির ব্যাপক প্রচারের আকুতি ছিলো আয়োজকদের কন্ঠে।
এমএসএম / জামান

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী ৬ সেপ্টেম্বর

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী ৬ সেপ্টেম্বর

সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ প্রকোপ হতে পারে

অমীমাংসিত বিষয় সমাধানে বাংলাদেশ-পাকিস্তান একমত

৫ স্মারক ও এক চুক্তি সই করল বাংলাদেশ-পাকিস্তান

পেশাদারিত্বের সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার চেষ্টা করেছি : সিইসি

একাত্তরের অমীমাংসিত ইস্যুর দুইবার সমাধান হয়েছে

তৌহিদ-ইসহাক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শুরু

১৩ বছর পর ঢাকায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ডেঙ্গুতে আরো ৪ জনের মৃত্যু

জনগণ নির্বাচনমুখী হলে কোনো ষড়যন্ত্র কাজে আসবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

দ্বিপক্ষীয় সফরে ঢাকায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
