ঢাকা বৃহষ্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

টাকা নেয়ার ১০ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি

পণ্য পাওয়ার পর টাকা পরিশোধ : ই-কমার্সের পেমেন্ট নির্দেশনা জারি


নিজস্ব প্রতিবেদক photo নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১-৭-২০২১ দুপুর ১:৩৫

ইভ্যালি, আলেশা মার্টের মতো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো এখন থেকে গ্রাহকের পণ্য বা সেবা বুঝিয়ে না দিয়ে বিক্রয়মূল্য পাবে না। নিত্যপ্রয়োজনী জরুরি পণ্য ৫ দিন ও অন্যান্য পণ্য বা সেবার মূল্য পরিশোধ হবে ৭ দিনের মধ্যে। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই ক্রেতা পণ্য হাতে পাওয়ার পরই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের হিসাবে অর্থ পরিশোধ হবে। বুধবার (৩০ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে। বাংলাদেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংক, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস), পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) ও পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটরগুলো (পিএসও) ডিজিটাল কমার্স লেনদেনের ক্ষেত্রে পণ্য-সেবার বিপরীতে গ্রাহকের পরিশোধ করা অর্থ কীভাবে ই কমার্স প্রতিষ্ঠান (মার্চেন্ট) পেমেন্ট করবে তার নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ক্রেতাদের স্বার্থ নিশ্চিত করতে ই-কমার্স ব্যবসায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ক্রম বিকাশমান ডিজিটাল কমার্সের মূল্য পরিশোধে ব্যাংক, পিএসও এবং ই-ওয়ালেট ব্যবহার করা হচ্ছে। সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ নিয়েও অনেক ক্ষেত্রেই পণ্য পেতে বিলম্ব হচ্ছে বা পণ্য পাচ্ছেন না। বিধায় গ্রাহক ও পরিশোধ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে যা ডিজিটাল কমার্স সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর জনগণের আস্থার সংকট তৈরি করছে। এই পরিস্থিতিতে গত ২৪ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ই-কমার্স ব্যবসা নিয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, পণ্য ডেলিভারির আগে টাকা পাবে না ইভ্যালির মতো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। 

ক্রেতার অর্ডার করা পণ্য হাতে না পাওয়া পর্যন্ত ওই পণ্যের পেমেন্ট সংশ্লিষ্ট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে জমা হবে না। এ জন্য পণ্য অর্ডারের বিপরীতে পরিশোধিত টাকা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং সরকার অনুমোদিত মিডলম্যান প্রতিষ্ঠানের কাছে টাকা জমা থাকবে। 

এ খাতের যথাযথ বিকাশ, পরিশোধের সেবা প্রদানকারীদের ঝুঁকি নিরসন, গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ ও ডিজিটাল কমার্সের উপর জনগণের আস্থা ধরে রাখতে ডিজিটাল কমার্স সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

যা ‍আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায়

১. খাদ্য, মুদি, ওষুধ, রাইড শেয়ারিং, মোবাইল রিচার্জ, সার্ভিস ডেলিভারি বা ইউটিলিটি, এডুকেশন ফি, হোটেল বুকিং, টিকিটিং (বাস, এয়ার, ট্রেন, লঞ্চ) কিংবা অনুরূপ নিত্যপ্রয়োজনীয় ও জরুরি পণ্য/সেবা সঙ্গে সঙ্গে বা সর্বোচ্চ পাঁচ দিনের মধ্যে সরবরাহকারী ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ লেনদেনের ঝুঁকি, গ্রাহক সেবার মান, পণ্য সরবরাহ সম্পর্কে সন্তুষ্টি এবং পারস্পরিক ব্যবসায়িক সম্পর্ক ইত্যাদি পর্যালোচনা করে স্বীয় বিবেচনায় বিদ্যমান সেটেলমেন্ট প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে পারবে।

২. নিজস্ব উৎপাদিত পণ্য/সেবা বা দোকান বা শোরুম (এইরূপ উদ্দেশ্যে ট্রেড লাইসেন্সপ্রাপ্ত) এর মাধ্যমে পণ্য/সেবা বিক্রয়ের পাশাপাশি ডিজিটাল কমার্স ব্যবস্থায়ও পণ্য/সেবা বিক্রয় করে এবং বিক্রিত পণ্য/সেবা সঙ্গে সঙ্গে বা অনধিক ৭ (সাত) দিনের (পণ্য/সেবার ধরন ও স্থান বিবেচনায়) মধ্যে সরবরাহ করে থাকে এইরূপ ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ লেনদেনের ঝুঁকি, গ্রাহকসেবার মান, পণ্য/সেবা সরবরাহ সম্পর্কে সন্তুষ্টি এবং পারস্পরিক ব্যবসায়িক সম্পর্ক ইত্যাদি পর্যালোচনা করে স্বীয় বিবেচনায় বিদ্যমান সেটেলমেন্ট প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে পারবে।

৩. ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান ব্যতীত অন্যান্য ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানসমূহের ক্ষেত্রে পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ মার্চেন্ট পেমেন্টের ক্ষেত্রে গ্রাহকের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থ নিজস্ব সেটেলমেন্ট হিসাবে ধারণ করবে এবং সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে উক্ত অর্থ ছাড়করণের জন্য নিম্নবর্ণিত নির্দেশনা অনুসরণ করবে :

ক) সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান গ্রাহককে পণ্য/সেবা সরবরাহ/প্রদানের পর অর্থ ছাড়করণের জন্য গ্রাহকের নাম, মোবাইল নম্বর এবং সরবরাহকৃত ক্রয়াদেশের বিবরণসহ এ সংক্রান্ত একটি তালিকা ব্যাংক/ পিএসও এবং ই-ওয়ালেট সেবা প্রদানকারী এমএফএস/ পিএসপি (পরিশােধ সেবাদানকারী) প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করবে।

খ) ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত ক-এ বর্ণিত তালিকা হতে দৈবচয়ন ভিত্তিতে গ্রাহকের পণ্য/সেবা প্রাপ্তির বিষয়ে সন্তুষ্ট হওয়া সাপেক্ষে পরিশােধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান অর্থ ছাড় করবে এবং এ সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ করবে।

গ) ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পণ্য সেবা সরবরাহের বিপরীতে অর্থ ছাড়করণের জন্য দাবিকৃত তালিকার কোনো গ্রাহকের পণ্য সেবা সরবরাহ না হওয়ার বিষয়ে পরবর্তীতে গ্রহণযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানকে ভুল তথ্য প্রদানের বিষয়ে পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সঙ্গে সঙ্গে কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ প্রদান করবে এবং নোটিশ প্রাপ্তির ১০ দিনের মধ্যে উক্ত প্রতিষ্ঠান জবাব প্রদান করবে।

ঘ) ভুল তথ্য প্রদানের বিষয়ে ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান সন্তোষজনক কারণ প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ সেবা প্রদান স্থগিত করতে হবে এবং তালিকাভুক্ত করত পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করতে হবে। এ ধরনের তালিকাভুক্ত ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান পরবর্তীতে সব ধরনের পরিশোধ সেবা প্রাপ্তির যোগ্যতা হারাবে।

ঙ) ভবিষ্যতে অর্থ ছাড়করণের প্রক্রিয়াটি অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে পরিশােধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ স্বীয় বিবেচনায় প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থাদি গ্রহণ করবে, যেখানে গ্রাহক কর্তৃক পণ্য/ সেবা সরবরাহ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিতকরণ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

৪. ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান (মার্কেটপ্লেস) কর্তৃক ইস্যুকৃত ভাউচারের বিপরীতে পণ্য ক্রয়/ সেবা গ্রহণ না করা পর্যন্ত অর্থ ছাড় করা যাবে না। ভাউচার ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দাবি করা খরচের অর্থের পরিমাণ সম্পর্কে সন্তুষ্ট হয়ে খরচের সমপরিমাণ অর্থ ছাড় করা যাবে।

৫. পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের কাছ থেকে সংগৃহীত এরূপ অর্থ মার্চেন্ট দায় পরিশোধ ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না এবং অপরিশোধিত মার্চেন্ট দায়ের সমপরিমাণ অর্থ এ হিসাবে সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।

৬. রিফান্ড বা চার্জব্যাকের ক্ষেত্রে গ্রাহকের পরিশোধিত মাধ্যমেই উক্ত অর্থ ফেরত দিতে হবে এক্ষেত্রে কোনো চার্জ প্রযোজ্য হলে তা ডিজিটাল কমার্স সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে বহন করতে হবে। 

৭. সার্কুলারের নির্দেশনা পরিপালনের জন্য পরিশোধ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কোনো চার্জ/মাশুল আরোপ করতে পারবে না।

৮. গ্রাহক কর্তৃক পণ্য/ সেবা প্রাপ্তির পর পরিশোধের (ক্যাশ অন ডেলিভারি) বিদ্যমান পদ্ধতি অব্যাহত থাকবে।

৯. বর্ণিত নির্দেশনাসমূহ শুধুমাত্র ব্যক্তি গ্রাহক পর্যায়ের লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

‍এদিকে, ইভ্যালি, আলিশা মার্টসহ দেশের ডিজিটাল কমার্স (ই-কর্মাস) কিভাবে পরিচালনা হবে তার নির্দেশনা চূড়ান্ত করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। শিগগির নির্দেশনাটি ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে অগ্রিম টাকা নেয়ার ১০ দিনের মধ্যে ই-কমার্স কোম্পানিগুলো ক্রেতাদের কাছে পণ্য সরবরাহ করতে হবে। বুধবার (৩০ জুন) বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান মো. হাফিজুর রহমান।

মন্ত্রণালয়ের ই-কমার্স সেলের প্রধান বলেন, ক্রেতা-বিক্রেতার অবস্থান ভিন্ন শহরে হলে পণ্য ডেলিভারির জন্য সর্বোচ্চ ১০ দিন সময় পাবে ই-কমার্স কোম্পানিগুলো। এই নির্দেশিকা কার্যকর হলে দ্রুত বিকাশমান এই খাতটিতে শৃঙ্খলা নিশ্চিত হবে এবং সুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি হবে।

নির্দেশিকাটি আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে। আইন মন্ত্রণালয় যদি মনে করে, নির্দেশিকাটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে, তাহলে এটি জারি করতে একটু সময় লাগবে। না হলে ভেটিং শেষে খুব দ্রুত এটি জারি করা হবে বলে জানান হাফিজুর রহমান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ক্রেতা যাতে প্রতারিত না হয়, সেজন্য নির্দেশিকায় বিভিন্ন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। কোনো কোম্পানি এসব নিয়ম না মানলে সরকার ওই কোম্পানি বন্ধ করে দিতে পারবে, ক্রেতারাও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আদালতে মামলা করতে পারবে।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) সভাপতি শমী কায়সার বলেন, এই নির্দেশিকা কার্যকর হলে ই-কমার্স খাতে সুস্থ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত হবে, ক্রেতার অধিকারও সুরক্ষিত থাকবে। ক্রেতারা বিভিন্ন সময় নানা ভাবে প্রতারিত হয়ে আসছিলেন বলে এতদিন ধরে আমরা শুনেছি। নির্দেশিকায় এসব অনিয়ম দূর করার জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা রাখা রয়েছে।

জামান / জামান

পূবালী ব্যাংকে শেখ হাসিনার লকার জব্দ

বরবটি-করলার সেঞ্চুরি, কাঁচা মরিচের ডাবল সেঞ্চুরি

ব্রয়লার ১৬৫, ভরা মৌসুমেও ইলিশের দাম চড়া

৩০ বছর পর মাতারবাড়ী-মহেশখালীকে সাংহাই-সিঙ্গাপুরের মতো দেখতে চাই

এলপি গ্যাসের দাম কমলো ৩ টাকা

সবজির পর দাম বেড়েছে মুদি পণ্যের, চড়বে আলুর বাজারও

চট্টগ্রাম বন্দরে জট কমাতে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা ১০০০ কনটেইনার বিক্রি

ডিজিটাইজেশন না হওয়ায় সময়ের কাজ সময়ে হয় না: এনবিআর চেয়াম্যান

ন্যূনতম কর একটা কালাকানুন: এনবিআর চেয়ারম্যান

শাহজালালে নারী যাত্রীর লাগেজ থেকে ১৩০ কোটি টাকার কোকেন জব্দ

চট্টগ্রাম বন্দরে মাশুল বাড়বে ৪১ শতাংশ, বৈঠকে বসছে নৌ মন্ত্রণালয়

ইলিশের দেখা মিললেও দামে হাত পোড়ার জোগাড়

৮০ টাকার নিচে নামছেই না সবজি