আড্ডা-জটলা-ঘোরাফেরায় নানা অজুহাত
ঢিলেঢালা নজরদারি!

সারা দেশে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও সড়কে যানবাহনের পাশাপশি লোকসমাগম বাড়ছে। নানা অজুহাতে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে রাস্তায় বেরিয়েছেন অনেকেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঢিলেঢালা নজরদারি এড়িয়ে অলিগলির চায়ের দোকানে ছিল জমজমাট আড্ডা।
একদিকে করোনা পরিস্থিতি দিনদিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে, অন্যদিকে বিধিনিষেধ অমান্য করার প্রবণতাও বাড়ছে। এ অবস্থায় রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।জনগণ সচেতন না হলে করোনা আরো ভয়ংকর রূপ দেখাতে পারে। এমন শঙ্কা প্রকাশ করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। দেশজুড়ে কঠোর লকডাউনের সময় যতই গড়াচ্ছে, ততোই বিধিনিষেধের ভীতি কমছে সাধারণ মানুষের। লকডাউনের প্রথমদিকে রাস্তাঘাটে গাড়ি কিংবা সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল বেশ কম। কিন্তু দিন যতই গড়াচ্ছে রাস্তায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বাড়ছে গাড়ির সংখ্যা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, কঠোর লকডাউন বা করোনা কোনো কিছুই আটকাতে পারছে না সাধারণ মানুষকে। তাই মূল রাস্তায় লোকজনের উপস্থিতি কম থাকলেও পাড়া-মহল্লায় সব ধরণের দোকানপাট খোলা রয়েছে। থাকছে সাধারণ মানুষের জটলা। তাদের মতে, জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া বিশ্বের কোনো দেশের সরকারের একার পক্ষে করোনা মহামারি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। পাশাপাশি জনগণকে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে সরকারের কিছু ভুল নীতিরও সমালোচনা করেছেন তারা।
আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. নিজামউদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ডিসেম্বর থেকেই সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করা যায়নি। অনেক ক্ষেত্রে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেগুলো উল্টা-পাল্টা হয়ে গেছে। যেমন-হোটেল রেস্তোরাঁ খোলা রাখা হয়েছে, অর্ডার দিয়ে খাবার সংগ্রহের শর্তে। কিন্তু ঢাকা শহরে রিকশা চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যাদের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। এই রিকশাওয়ালারা কোথায় খাবে সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। তারা ফুটপাতে ২০-৩০ টাকা দিয়ে খিচুড়ি খেত। সেই খিচুরির দোকানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাদের পক্ষে তো আর দামি হোটেল রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কিনে খাওয়া সম্ভব না। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ভারসাম্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।
স্বাস্থ বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণ মানুষকে জোর করে স্বাস্থ্যবিধি মানানো সম্ভব না। এজন্য সকলের সম্পৃক্ততার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে ডা. নিজামউদ্দিন আহমেদ বলেন, সাধারণ মানুষকে বোঝানো এবং রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ততার একটা ব্যাপার আছে। এটা ব্যবহারিক একটা বিষয়। শুধু অর্ডার দিয়ে মানুষকে মাস্ক পরানো যাবে না। পুলিশ মাইকিং করে মামলা দিয়ে জোর করে স্বাস্থ্যবিধি প্রয়োগ করানো যায় না। এখানে তাদের সম্পৃক্ত করে তাদের আচরণ পরিবর্তনে সহায়তা করতে হবে। আর এভাবেই বাংলাদেশ অতীতের প্রতিটি মহামারি মোকাবিলা করে জয়ী হয়েছে।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, বিভিন্ন চায়ের দোকানে মানুষের ভিড়। কারো মাস্ক নেই। টহল পুলিশের গাড়ি দেখলে দোকান বন্ধ হচ্ছে। ক্রেতারা আশেপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যাচ্ছে, কাজের ভান করছে। পুলিশের গাড়ি চলে যাওয়ার পরে আবারো আগের পরিস্থিতি।
কামরাঙ্গীরচরের বিভিন্ন অলিগলিতে দেখা যায় এলোমেলো আড্ডা। চায়ের দোকানগুলোতেও ভিড়। কোথাও কোথাও গাদাগাদি করে কয়েকজন মিলে গেমস খেলছেন। মুদি দোকানগুলোতে ক্রেতারা যে যার মতো করে কেনাকাটা করছেন। মুখে নেই মাস্ক। নেই সামাজিক দূরত্বও। পুলিশের গাড়ি এলেই দেওয়া হচ্ছে সিগন্যাল। সাথে সাথে বন্ধ হচ্ছে দোকানপাট। এরপর আবার সবকিছু আগের মতো।
শনির আখড়া, কাজলা, যাত্রাবাড়ী, সায়দাবাদের সড়কে রিকশা-ভ্যানের চাপে যানজট লক্ষ্য করা গেছে। যাত্রাবাড়ী সড়কে গাড়ি চলাচল বেশি থাকলেও বিজিবি ও পুলিশের তল্লাশি দেখা গেছে। বাইকগুলো যাত্রী পরিবহন করলে মামলার মুখে পড়ছে। আর রিকশায় চলাচলকারী যাত্রীদেরও পড়তে হচ্ছে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে। দেশের চলমান কঠোর বিধিনিষেধ অমান্য করার ফলে রোগীর সংখ্যা যদি অস্বাভাবিক বেড়ে যায় তাহলে আবারও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। এমনকি অক্সিজেন সরবরাহেও চ্যালেঞ্জ দেখা দেবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত ভার্চুয়াল বুলেটিনে এ শঙ্কা প্রকাশ করেন অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম।
চলমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত পাবলিক হেলথ কমিটির সদস্য জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, একদিকে দোকান মালিকরা বলছেন দোকান খুলে দিন। ব্যবসায়ীরা নানা শর্ত নিয়ে হাজির হচ্ছে। এই যদি হয় পরিস্থিতি সবকিছু খুলে দেওয়া হোক, আর কিছু বলার নেই।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেনিন চৌধুরী বলেন, এই যে পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে হলেও বাইরে অপ্রয়োজনে বের হওয়া এই ফাঁকি কি মানুষ পুলিশকে দিচ্ছে? তাকে বুঝতে হবে আক্রান্ত হলে সে এবং তার পরিবার সদস্যরা হবে। তাহলে কি এই ফাঁকি নিজেকে দেওয়া হলো না? লকডাউনের কথা উঠলেই জীবন জীবিকার কথা উঠে আসে। সেটি খুবই যৌক্তিক। কিন্তু বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার জন্য অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি, কিংবা পারিবারিক কোনো উৎসব-আয়োজন মহামারিকালে আসলে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ ছাড়া আর কিছুই না।
করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা রোধ করতে মানুষ যেন ঘর থেকে না বের হয় সেজন্য নেওয়া হয়েছে এসব উদ্যোগ। তারপরও মানুষকে আটকে রাখা যাচ্ছে না। নানা অজুহাতে ঘরের থেকে বের হতে দেখা যাচ্ছে দিনে-রাতে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিভাগের ডিসি, এডিসি ও এসিরা তল্লাশির বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য যে কোনো সময় যে কোনো চেকপোস্ট পরিদর্শন করছেন। এতে করে পুলিশ সদস্যরাও আরও বেশি কাজের বিষয়ে সিনসিয়ার থাকছেন।
মোহাম্মদপুর জোনের ট্রাফিক সার্জেন্ট মোখলেসুর রহমান বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত শিফটিং করে বিভিন্ন সড়কে ডিউটি করছি। চেক পোস্টগুলোতে সবসময়ই পুলিশ সদস্যরা থাকছেন। তবে মাঝে মাঝে দেখা যায় চেক করতে গিয়ে গাড়ির জ্যাম লেগে যায়।
তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার শাহেদ আল মাসুদ বলেন, তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের ৬টি চেকপোস্ট পরিচালিত হচ্ছে। এর পাশাপাশি ক্রাইম ডিভিশনও চেকপোস্ট পরিচালনা করছে। মহাখালী থেকে ফার্মগেট আসার পথে জাহাঙ্গীর গেটে, আগারগাঁও হেলিপ্যাডের ওখানে, বিজিপ্রেস এলাকায়, সাতরাস্তার মোড়ে, নাবিল ক্রসিংয়ে, কলেজ গেটের সামনে নিরাপত্তা তল্লাশি পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন সড়কে প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে আমরা চেকপোস্ট পরিচালনা করছি। যে রাস্তায় যানবাহন চলাচল বেশি করছে, সে রাস্তায় আমরা চেকপোস্ট পরিচালনা করছি।
গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, গুলশান, বাড্ডা, বনানী এলাকায় ক্রাইম ডিভিশনের পক্ষ থেকে ২২টি চেকপোস্ট পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া ট্রাফিক বিভাগ চেকপোস্ট পরিচালনা করছে। তবে আজ গাড়ির চাপ কিছুটা বেশি দেখা গেছে। ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল বেড়েছে।এজন্য স্থানীয় সরকার, মসজিদের ইমাম, কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মী, রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক বিভিন্ন সংগঠন সংস্থা এবং সর্বোপরি এনজিওগুলোকে একাজে সম্পৃক্ত করা। এনজিওদের সম্পৃক্ততা খুবই কম। অথচ তাদের সম্পৃক্ততা খুবই জরুরি। সরকার যা করছে মোটামুটি যথেষ্ট, কিন্তু অংশীদারিত্বটা বাড়াতে হবে।
মহামারির শুরুর দিকে করোনায় সবচেয়ে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং ল্যাটিন আমেরিকার ব্রাজিলসহ কয়েকটি দেশকে। সেই বিপর্যয় কাটিয়ে বর্তমানে এসব দেশে করোনা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে রয়েছে। কিন্তু এরপরই প্রতিবেশী ভারতে ভয়ঙ্কর আঘাত হানে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট।
ভারতের নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট মোকাবিলায় সরকার সীমান্ত এলাকা সিলগালা করে দেওয়াসহ নানামুখি পদক্ষেপ নিলেও শেষ রক্ষা হয়নি বাংলাদেশের। গত এপ্রিলে দ্বিতীয় দফা লকডাউনের মাধ্যমে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুললেও জনগণের অসচেতনতায় আবারো হু হু করে দেশে বিস্তার লাভ শুরু করে কোভিড-১৯ এর থাবা।
এমএসএম / এমএসএম

৬ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ

রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার ৭ প্রস্তাব

লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে পুরস্কার ঘোষণা: এলএমজি ৫ লাখ, শটগানে ৫০ হাজার

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী ৬ সেপ্টেম্বর

সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ প্রকোপ হতে পারে

অমীমাংসিত বিষয় সমাধানে বাংলাদেশ-পাকিস্তান একমত

৫ স্মারক ও এক চুক্তি সই করল বাংলাদেশ-পাকিস্তান

পেশাদারিত্বের সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার চেষ্টা করেছি : সিইসি

একাত্তরের অমীমাংসিত ইস্যুর দুইবার সমাধান হয়েছে

তৌহিদ-ইসহাক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শুরু

১৩ বছর পর ঢাকায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ডেঙ্গুতে আরো ৪ জনের মৃত্যু
