বাংলাদেশ মনোবিজ্ঞান সমিতির আয়োজনে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উদযাপন

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ মনোবিজ্ঞান সমিতি আয়োজিত সেমিনার ও আলোচনা সভা। সোমবার (১০ অক্টোবর) ফিকামলি সেন্টার-প্লাটিনাম জিম প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। ফিকামলি তত্ত্বের জনক, বাংলাদেশ মনোবিজ্ঞান সমিতির প্রধান পৃষ্ঠপোষক, মনোবিজ্ঞান গবেষক ড. আবদুল ওয়াদুদ সভাপতির বক্তব্যে বলেন, বিশ্বব্যাপীবব্যা মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিতকল্পে জনগণকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে 'মানসিক স্বাস্থ্য দিবস' পালিত হয়ে আসছে।
মানসিক স্বাস্থ্য হলো ব্যক্তির মনের এমন এক ভালো থাকার অনুভূতির অবস্থা যেখানে ব্যক্তি তার নিজের ভিতরের দক্ষতা সমূহকে কার্যকর করে তুলতে পারে। জীবনের স্বাভাবিক মানসিক চাপ সমূহের মোকাবিলা করতে পারে, উৎপাদনশীল ও কার্যকর ভাবে কাজ করতে পারে এবং তার নিজ সমাজে সে অবদান রাখতে পারে।
কিন্তু এখন আমরা কি দেখছি? বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে আমাদের কারো মানসিক স্বাস্থ্য ভালো নেই, ভালো থাকার কথা নয়। কোভিড-১৯ করোনা মহামারী পরবর্তী গত দুই বছর মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতে পারেনি। কোনো শিক্ষার্থী স্কুল-কলেজে যেতে পারেনি, খেলার মাঠে যেতে পারেনি; এক কথায় ঘরে বন্দি ছিলাম আমরা। সবার মনে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ভয় ছিল, আতঙ্ক ছিল। এখন আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধ মানেই ধ্বংস। অনাকাঙ্ক্ষিত ভীতি, আতঙ্ক, জীবন নিয়ে পালানো। যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের মূল্য বৃদ্ধি, তেলের মূল্যবৃদ্ধি, লোডশেডিং আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করছে, অস্থির করে তুলছে আমাদের স্বাভাবিক জীবন। প্রতিনিয়ত আমাদের মানো-দৈহিক জগৎকে প্রভাবিত করছে। ফলশ্রুতিতে আমাদের মানসিক চাপ বাড়ছে। এটা শুধু আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বের সব দেশের মানুষের মধ্যে একই অবস্থা, অভিন্ন পরিস্থিতি। একটু কম আর বেশি। এ অবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্য কী করে ঠিক থাকে? ঠিক থাকার কথা নয়।
আবার নির্বাচনকে সামনে রেখে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বিএনপি, জামাত-শিবির দেশে সন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি শুরু করে দিয়েছে। রাস্তায় লাঠিসোটা নিয়ে বিএনপি সন্ত্রাসীদের মারমুখী আচরণ মানুষের মধ্যে ভীতি ছড়াচ্ছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কুচক্রী মহল আমাদের দেশের মধ্যে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার ব্যর্থ পায়তারা করছে। মায়ানমার গায়ে পড়ে আমাদের সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করছে।
দুশ্চিন্তা, টেনশন, ভয় ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আমরা প্রায় সকলেই আছি। মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছি। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে আতঙ্ক তত বাড়ছে। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকার জন্য যে ধরনের পরিবেশ পরিস্থিতির প্রয়োজন তা মানবসৃষ্ট নানান কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এসব ম্যান মেইড প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার পথ নেতৃবৃন্দকে খুঁজতে হবে।
আমরা কি কখনও জানতে চাই, 'আপনার মনটা কেমন আছে?' মানসিক স্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয়তা আমরা কখনও অনুভব করি কি? অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ২০০১ সালের রিপোর্টে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে মানসিক স্বাস্থ্য বাদ দিয়ে কোনো স্বাস্থ্য হতে পারে না। ড. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, স্বাস্থ্যের প্রধান তিনটি উপাদানে শারীরিক, মানসিক, ও সামাজিক ভাবে সুস্থতার স্বীকৃতি থাকলেও আর একটি সুস্থতা আমাদের জীবনে অতীব প্রয়োজন। আর তা হলো আত্মার সুস্থতা। আমাদের পিনিয়াল গ্ল্যান্ড কী যেন চায়। কোনো মনোবিজ্ঞানী বা চিকিৎসাবিজ্ঞানী এখন পর্যন্ত আবিষ্কার করতে পারেননি। চাওয়ার সাথে পাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের অনেক পার্থক্য থাকে। ফলে আমাদের টেনশন, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, রাগ, ভয় ইত্যদি হয়। মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ রাখার জন্য তথাকথিত পদ্ধতি হতে বেরিয়ে আসার সহজ উপায় আমাদের খুঁজতে হবে ।
আসলে আমাদের মধ্যে সন্তুষ্টির বড় অভাব। আমরা 'যথেষ্ট' (Enough) বলতে পারি না। আমরা 'আরও' (More) চাই। তাই এই 'আরও' -এর কারণে সমাজে যত অনাসৃষ্টি , শরীরের মধ্যে তৈরি হয় বিরূপ প্রতিক্রিয়া যার ফলশ্রুতিতে আমরা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় দেখা গেছে ভাইরাসজনিত রোগ ছাড়া শরীরে বেশিরভাগ রোগ তৈরিতে কমবেশি ভূমিকা নেয় মানসিক দুশ্চিন্তা আর উদ্বেগের ধারাবাহিকতা।
বৈশ্বিক ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি সবসময় অনুকূলে নাও থাকতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে সুস্থ থাকার উপায় খুঁজতে হবে নিজেকেই। ড. আবদুল ওয়াদুদ আরও বলেন, দৃশ্যমান শারীরিক সুস্থতা সুস্থতার মাপকাঠি নয়। শরীর, মন ও আত্মার সম্মিলিত সুস্থতাই প্রকৃত অর্থে সুস্থতা। দীর্ঘ গবেষণালব্ধ ও পরীক্ষিত 'ফিকামলি' অনুশীলন মানসিক চাপকে অগ্রাহ্য করে শরীর ও মনকে সুস্থ রাখে। শরীর সুস্থ থাকার জন্য ব্যায়ামের মাধ্যমে ফিজিওথেরাপি, মন সুস্থ থাকার জন্য পাখি বা পেট এর মাধ্যমে ক্যাথারসিস থেরাপি, আত্মা সুস্থ রাখার জন্য মেডিটেশনের মাধ্যমে মলিফিকেশন থেরাপি যদি আমরা তিনটি থেরাপি নিয়মিতভাবে অনুশীলন করতে পারি শারীরিক ও মানসিকভাবে আমরা সুস্থ থাকব একথা আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি। শারীরিক, মানসিক ও আত্মিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য তিনি সবাইকে ফিকামলি অনুশীলন এর আহ্বান জানান।
ড. আব্দুল ওয়াদুদ আরও বলেন, স্বাস্থ্যখাতে জাতীয় বাজেটের ২ থেকে ৫ শতাংশ বরাদ্দ থাকার কথা অথচ এ খাতে আমাদের দেশে জাতীয় বাজেটের মাত্র ১ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়। এর মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ হলো স্বাস্থ্য বাজেটের ২০০ ভাগের এক ভাগ মাত্র। মানসিক স্বাস্থ্য খাতে যেটুকু বাজেট ও ব্যবস্থাপনা রয়েছে, সেটা আবার শরীরকেন্দ্রিক চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ভর। সাইকো সোশ্যাল মডেল নির্ভর নয়। আমাদের দেশে অদ্যাবধি যা চলছে তা হলো শরীরের যত্ন-কেন্দ্রিক স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থা। অর্থাৎ দুটি ক্ষেত্রেই মন ও সমাজ স্বাস্থ্যের এ দুটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান উপেক্ষিত।
তবে আশার আলো হলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের মহান জাতীয় সংসদে "মানসিক স্বাস্থ্য আইন ২০১৮" পাস হয়েছে যা দেশবাসীর জন্য এক পরম পাওয়া। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং কিছু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সার্বিক অবস্থান ও ব্যবস্থার পর্যালোচনা শেষে মানসিক স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বাড়ানোর জন্য তিনি উদাত্ত আহ্বান জানান।
সভায় প্রধান অতিথি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পিরোজপুর এর ভাইস চ্যান্সেলর মনোবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, শরীরের আমরা যেমন যত্ন নেই মনেরও যত্ন নেয়া প্রয়োজন। মানসিক অসুস্থতার জন্যই আজ পৃথিবীতে এমনসব হানাহানি, যুদ্ধ ও অশান্তি। জৈবমনোসামাজিক (Biopsycho social) কারণে মনের উপর চাপ (stress) পরে, এর প্রভাব থেকে কেউ মুক্ত নয়। স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট করার জন্য আমাদের মনোভাব, বিশ্বাস, চিন্তাধারা ও আচরণে পরিবর্তন আনতে পারলে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য ইতিবাচক জীবনচর্চা খুবই প্রয়োজন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মনোবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ মাহমুদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মো. শামসুদ্দীন ইলিয়াস, প্রফেসর ড. মো. রওশন আলী, প্রফেসর আজিজুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন, প্রফেসর মাসুদা বেগম, প্রফেসর যোগেন কুমার মন্ডল, প্রফেসর আমিনুল ইসলাম, বাংলাদেশ টেলিভিশন- এর সাবেক মহাপরিচালক ম. হামিদ, ড. নাহিদ আনোয়ার, ডাক্তার আবু কামরান রাহুল ও অন্যান্য শিক্ষকগণ ও ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ।
এমএসএম / এমএসএম

স্বাস্থ্যখাতে ‘দুর্নীতির হোতা’ মিঠু গ্রেপ্তার

ডেঙ্গুতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ জনের মৃত্যু

চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু ১০০ ছুঁইছুঁই

সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি, নতুন ব্যাখ্যায় নিহত ৩৪

বিএসএমএমইউয়ে নতুন নামের ব্যানার, বাদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব

মেডিকেলে থাকছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা, যাচাই-বাছাই ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত

ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৫৭ রোগী

ডেঙ্গুতে ঢাকায় কর্মক্ষম মানুষের মৃত্যু বেশি

ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ৮৮৮

বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষায় অশনি সংকেত অটোমেশন; ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা

ইডেন মাল্টি কেয়ার হাসপাতালের বিরুদ্ধে অপচিকিৎসার অভিযোগ

ক্যানসার রহস্যের জট খোলার নতুন ‘সূত্রের’ সন্ধান মিলেছে
