বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ দিতে সম্মত আইএমএফ

বাংলাদেশকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন বা ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটির ঢাকা সফররত মিশন বুধবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার এবং আইএমএফ কর্মকর্তারা এ বিষয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছেছেন। মিশন বাংলাদেশের ঋণের বিষয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করে আইএমএফের নির্বাহী পরিষদে উপস্থাপন করবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, আইএমএফের এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) এবং এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি থেকে ৩২০ কোটি ডলার এবং রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনিবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় ১৩০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার বিষয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে তারা একমত হয়েছেন। এ ঋণের উদ্দেশ্য বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা এবং অসুবিধাগ্রস্ত মানুষকে রক্ষা করে শক্তিশালী, অর্ন্তভুক্তিমূলক এবং সবুজ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করা। ৪২ মাস ধরে বিভিন্ন কিস্তিতে এ ঋণ দেওয়া হবে।
গত জুলাই মাসে আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। ঢাকায় আইএমএফ মিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংস্থাটির এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ। মিশন এর সমাপনী দিনে আজ বিকেল ৪টায় সংবাদ সম্মেলন করবে।
‘আইএমএফ যেভাবে ঋণ চেয়েছি, সেভাবেই পেতে যাচ্ছি’
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে বাংলাদেশ যেভাবে ঋণ চেয়েছে, সেভাবেই পেতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বুধবার আইএমএফের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা যেভাবে ঋণ চেয়েছিলাম ঠিক সেভাবেই পেতে যাচ্ছি। আগামী ৩ মাসের মধ্যে এই ঋণের বিষয়ে সব প্রক্রিয়া শেষ হবে। যে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার চেয়েছি সেটা মোট ৭ কিস্তিতে পাওয়া যাবে।
চলতি বছরের ২৪ জুলাই ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়ে আইএমএফকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ। ঋণ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল গত ২৬ অক্টোবর ঢাকায় আসে।
যেসব শর্তে মিলছে আইএমএফের ঋণ
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মেনেই ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে এই ঋণের পরিমাণ কিছুটা কমে ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ঢাকা সফরকারী আইএমএফ-এর প্রতিনিধিদলের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ঋণের পরিমাণ কত হবে তা ডিসেম্বরে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিতব্য বোর্ড সভায় চূড়ান্ত হবে। ওই সভায় ঋণের বিষয়টি অনুমোদন করা হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে ঋণের প্রথম কিস্তির ১০০ কোটি ডলার জানুয়ারি কিংবা ফেব্রুয়ারিতে পাবার আশা করছে বাংলাদেশ। আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পেলে অন্যান্য সংস্থার কাছ থেকে ঋণ পেতে বাংলাদেশের পক্ষে সহজ হয়ে যাবে বলে মনে করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, শর্তের সব বিষয়ই ইতোমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। মঙ্গলবার আইএমএফ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এই বৈঠকে মূলত ঋণ পাওয়ার শর্তগুলোর খুঁটিনাটি বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, আইএমএফের শর্ত প্রসঙ্গে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বেশকিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এগুলো ইতোমধ্যে আইএমএফকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওসব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সরকার এখনই ঋণ পেতে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়াবে না। জিডিপির হিসাব আধুনিকায়ন পদ্ধতি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। তবে এটি প্রকাশ করতে সময় লাগবে।
এছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের নিট হিসাব করা হবে, তবে এটি এখনই প্রকাশ করা হবে না। এ বিষয়টি প্রকাশ করা হবে সময় নিয়ে। সুদের হারের সীমা তুলে দেওয়া হবে পর্যায়ক্রমে। খেলাপি ঋণের নীতিমালা আন্তর্জাতিক মানের করা হবে। কর জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি কমানো হবে পর্যায়ক্রমে। সরকারের ওসব সিদ্ধান্তের কথা ইতোমধ্যে আইএমএফকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, আইএমএফের স্বল্প মেয়াদে পালনীয় শর্তের মধ্যে রয়েছে ভর্তুকি কমানোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। তবে এ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ, গ্যাস বা সারের দাম সমন্বয় বা বাড়ানোর সরাসরি কোনো শর্ত দেয়নি আইএমএফ।
সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশকে উদ্যোগ নিতে হবে কিভাবে তারা ভর্তুকির বোঝা কমাবে। ভর্তুকি কমানোর কৌশলপত্র আইএমএফের কাছে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। বাংলাদেশ এই শর্তের বিষয়ে একমত পোষণ করেছে। তবে কৃষকদের দেওয়া সারের ভর্তুকি এই মুহূর্তে কমানো সম্ভব নয় বলে আইএমএফকে জানানো হয়েছে।
অন্য যে শর্তের বিষয়ে বাংলাদেশ রাজি হয়েছে বলে জানা গেছে তার মধ্যে রয়েছে, দ্রুত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হিসাবায়ন পদ্ধতি আন্তর্জাতিক মানের করা, কিছু ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণের সুদের ঊর্ধ্বহারের পরিবর্তন, জিডিপি ও মূল্যস্ফীতির হিসাবের পরিবর্তন আনা, খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা পরিবর্তন, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা জোরদার করা, ব্যাংকের আমলা পরিচালকদের সংখ্যা ধাপে ধাপে কমিয়ে আনা, কর-জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধি করা এবং পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেন্টাল পাওয়ার থেকে সরে আসা।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খুব দ্রুত রিজার্ভের হিসাব নতুন পদ্ধতিতে করা হবে। এই শর্ত মানার ফলে এখনকার রিজার্ভ থেকে ‘রফতানি উন্নয়ন তহবিলে’ (ইডিএফ) দেওয়া সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার বাদ দিতে হবে। এই ঋণ করোনার সময় ব্যবসায়ীদের দেওয়া হয়েছে। যা ফেরত পাবার সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু এখান থেকে সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে প্রকৃত রিজার্ভ দাঁড়াবে ২৮ বিলিয়ন ডলার। আর খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হলে ৯০ দিনের মধ্যে ঋণের কিস্তি শোধ না হলে সেই ঋণকে খেলাপি হিসেবে গণ্য করা হবে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এখনই এই শর্ত মানা সম্ভব নাও হতে পারে। এটি মধ্য বা দীর্ঘমেয়াদে পরিপালন করা হবে।
এমএসএম / সাদিক পলাশ

সরকারের অগ্রগতি অন্তর্দৃষ্টিতে দেখার পরামর্শ অর্থ উপদেষ্টার

৭ ট্রিলিয়ন ডলারের হালাল অর্থনীতি খাতে অবস্থান দৃঢ় করতে চায় বাংলাদেশ

১০ লাখ টাকার বেশি আমানত ও সঞ্চয়পত্রে রিটার্ন বাধ্যতামূলক

১২ কেজি এলপি গ্যাসের দাম কমলো

যুক্তরাষ্ট্রের তুলায় তৈরি পোশাক রপ্তানিতে কিছুটা শুল্ক ছাড় পাবে বাংলাদেশ

‘সবজিই যদি এত দামে কিনে খেতে হয় তাহলে মাছ-মাংস কিনবো কিভাবে’

ব্র্যাক ব্যাংকের এএমডি হলেন মাসুদ রানা

শুল্ক কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের সবুজ সংকেত পেয়েছে বাংলাদেশ: বাণিজ্য সচিব

বোয়িং থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কিনবে সরকার : বাণিজ্য সচিব

মাথায় হাত বুলিয়ে, ধমক দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে: অর্থ উপদেষ্টা

বাজারে সবজির দাম নাগালের বাইরে, বৃষ্টি হলে আরও বাড়তে পারে দাম

৬০ থেকে ৮০ টাকার ঘরে সব সবজি
