স্বাচিপ সভাপতি ডা: জামাল উদ্দিন চৌধুরীর স্বাক্ষাৎকার
স্বাস্থ্যসেবার আধুনিকায়ন ও মৌলিক গবেষনার বিষয় বাস্তবায়নে কাজ করছে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সমর্থিত চিকিৎসকদের একটি সংগঠন। স্বাচিপের বর্তমান সভাপতি চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা: জামাল উদ্দিনি চৌধুরী এবং মহাসচিব কামরুল হাসান মিলন। ১৯৯৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী চিকিৎসকদের সমন্বয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) গঠিত হয়। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক এম এ কাদেরী এবং মহাসচিব ছিলেন ডা: মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। ২০০৩ সালে স্বাচিপের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে অধ্যাপক আ ফ ম রুহুল হক এবং মহাসচিব পদে অধ্যাপক এম ইকবাল আর্সলান নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালে ১৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে স্বাচিপের চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে এম ইকবাল আর্সলান সভাপতি এবং এম এ আজিজ মহাসচিব নির্বাচিত হন। স্বাচিপের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি দুই বছরে একবার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে সূচনাকাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মাত্র পাঁচটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৫ সালের ১৯ অক্টোবর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা ১০১ থেকে বাড়িয়ে ১৫১ সদস্য করা হয়। এছাড়া, স্বাচিপের বিভিন্ন আঞ্চলিক শাখা রয়েছে। স্বাচিপ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট এবং সংগঠনটির চলমান কার্যক্রম নিয়ে কথা হয় স্বাচিপের সভাপতি, চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা: জামাল উদ্দিন চৌধুরীর সাথে। স্বাক্ষাৎকার নিয়েছেন- নিশাত শাহরিয়ার
সকালের সময়: স্বাচিপ-এর সাথে কোন প্রেক্ষাপটে যুক্ত হয়েছিলেন এবং সংগঠনটির অগ্রগতিতে আপনার ভূমিকা সর্ম্পকে জানতে চাই।
ডা: জামাল উদ্দিন চৌধুরী: বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার পর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়নের গতিধারা ব্যহত হয়েছিল এবং চিকিৎসা পেশার মান ও মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়েছিল। এ অবস্থায় মহান মুক্তিযুদ্ধে পেশাজীবীদের মধ্যে সর্বোচ্চ আত্মদানকারী চিকিৎসক সমাজ জনস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণসহ চিকিৎসকদের স্বার্থ সংরক্ষনের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের চিকিৎসকবৃন্দকে সংগঠিত করার চেষ্টা করে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সমমনা চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত হয় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ- স্বাচিপ।
সকালের সময়: স্বাচিপের প্রথম কমিটির সাংগাঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আপনি। এরপর যুগ্ম মহাসচিব নির্বাচিত হন, পরবর্তীতে সংগঠনটির সহসভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। সে সময় স্বাস্থ্য সেবার কোন বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন?
ডা: জামাল উদ্দিন চৌধুরী: চিকিৎসা পেশার সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করা, চিকিৎসা ব্যবস্থাকে জনসাধারণের জন্য সহজলভ্য করা, জরুরী অবস্থায় মেডিকেল টিম গঠন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণসহ সবার জন্য স্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রচারণা, স্বাস্থ্য সাময়িকী প্রকাশনা, চিকিৎসা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও তৎসংক্রান্ত গবেষণার লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণসহ বিভিন্ন যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহনে অংশগ্রহন করি।
সকালের সময়: স্বাচিপের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর কোন বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
ডা: জামাল উদ্দিন চৌধুরী: স্বাচিপের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিশন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি।
সকালের সময়: স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)-এর সাংগাঠনিক কার্যক্রম কতটা বিস্তৃত?
ডা: জামাল উদ্দিন চৌধুরী: ১৯৯৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী চিকিৎসকদের সমন্বয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশের সকল মেডিকেল কলেজ এবং জেলায় স্বাচিপের কমিটি গঠন করা হয়েছে। সারাদেশে স্বাচিপের প্রায় ২০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে, যারা চিকিৎসক হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করছে।
সকালের সময়: স্বাচিপের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই বছর পরপর সম্মেলনের নির্দেশনা থাকলেও যথাসময়ে সম্মেলন হচ্ছে না- এ বিষয়ে কি বলবেন ?
ডা: জামাল উদ্দিন চৌধুরী: নিয়মতান্ত্রিকভাবে যথাসময়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলে নেতৃত্বের যেমন বিকাশ ঘটে, তেমনি সংগঠনও শক্তিশালী হয়। তবে বিগত দিনগুলোতে পরিবেশ পরিস্থিতির কারনে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যথাসময়ে সম্মেলন আহ্বান করা সম্ভব হয়নি। সে কারনেই প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত মোট পাঁচটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এখন থেকে তিন বছর পরপর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
সকালের সময়: মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী চিকিৎসকদের একত্রীকরণে স্বাচিপ কতটা সফল ?
ডা: জামাল উদ্দিন চৌধুরী: বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী চিকিৎসকদের একত্রীকরণে নিরলসভাবে কাজ করছে স্বাচিপ। জোরপূর্বক কিংবা দলাদলি করে নয়, বরং স্বেচ্ছায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণকারী চিকিৎসকরা স্বাচিপের সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। স্বাচিপ শুধু নিজস্ব সংগঠনের জন্যই কাজ করে না, চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত দলমত নির্বিশেষে সকলেরই পাশে থাকবার চেষ্টা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী চিকিৎসকদের এই সংগঠনটি। যৌক্তিক দাবি আদায়সহ সকল ক্ষেত্রে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করে আসছে স্বাচিপ।
সকালের সময়: চিকিৎসকদের কর্মদক্ষতার উন্নয়ন এবং চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে সংগঠন হিসেবে কিভাবে কাজ করে?
ডা: জামাল উদ্দিন চৌধুরী: প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই চিকিৎসকদের কর্ম দক্ষতার উন্নয়ন এবং চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করছে স্বাচিপ। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি সর্ম্পকে চিকিৎসকদের ধারণা দেয়া, মেডিকেল এডুকেশন প্রোগামের মাধ্যমে চিকিৎসকদের কর্মদক্ষতার উন্নয়ন, চিকিৎসা সংক্রান্ত দিবস পালন, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সাথে সমন্বয় করা, গঠনমূলক মতামত প্রদানসহ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে যৌক্তিক পরামর্শ ও চিকিৎসকদের দাবি আদায়ে কাজ করছে স্বাচিপ। নিশ্চিতকরাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ এবং সহযোগিতা প্রদান করছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী চিকিৎসকদের এই সংগঠনটি।
সকালের সময়: অনেকে মনে করেন, গ্রুপিং লবিংয়ের কারণে স্বাচিপের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে- বিষটা কতখানি সত্যি ?
ডা: জামাল উদ্দিন চৌধুরী: গ্রুপিং লবিং কম বেশী সব সংগঠনেই থাকে। সেক্ষেত্রে এতবড় একটি সংগঠনে পছন্দের ভিন্নতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে সেটা গঠনমূলক হলে সংগঠনের চলমান কার্যক্রমে কখনোই বাধা হতে পারে না। ব্যক্তিগত ইচ্ছা অনিচ্ছার প্রতিফলন, পারস্পরিক বিরোধীতা কিংবা ক্ষুদ্র স্বার্থ বর্জন করে সংগঠনের আদর্শ এবং উদ্দেশ্যকে এগিয়ে নেয়াই স্বাচিপের মূল লক্ষ্য।
সকালের সময়: বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় দেশের চিকিৎসাসেবায় স্বাচিপের ভূমিকা কেমন ছিল ?
ডা: জামাল উদ্দিন চৌধুরী: করোনাভাইরাসের শুরুর দিকে সাধারণ মানুষের মাঝে মারাত্বক ভীতি কাজ করতো। করোনাভাইরাস থেকে কিভাবে নিরাপদ থাকবে, আক্রান্ত হলে কি করতে হবে এসব বিষয়ে একটা ভীতির সঞ্চার হয়েছিল। সেক্ষেত্রে একটি পূর্নাঙ্গ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে পর্যাপ্ত ধারনা দেয়া এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসকদের নিয়ে মেডিকেল টিম গঠন, সভা-সেমিনার করে সাধারন মানুষকে সচেতন করার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে স্বাচিপ।
গোটা দেশে করোনা টেস্ট সেন্টার চালু করার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগীতা করেছে স্বাচিপ। বিশেষ পরিস্থিতিতে কাজ করতে আগ্রহী প্রায় পাঁচশো চিকিৎসকের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে জমা দেয়া হয়েছিল স্বাচিপের পক্ষ থেকে। এছাড়া, হাসপাতালের বেড মবিলাইজড করা, অক্সিজেন সিলিন্ডারের সঠিক ব্যবহার অক্সিজেন সিলিন্ডারের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতকরাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ এবং সহযোগিতা প্রদান করেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী চিকিৎসকদের এই সংগঠন।
সকালের সময়: স্বাচিপের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সর্ম্পকে কি বলবেন ?
ডা: জামাল উদ্দিন চৌধুরী: স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ আওয়ামী লীগের একটি সহযোগী সংগঠন হিসেবে শুরু থেকেই কাজ করে আসছে। দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে যেকোন আন্দোলন সংগ্রামে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে জনগনের পাশে থেকে জনসেবায় কাজ করছে স্বাচিপ। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে গবেষনাধর্মী বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহনে কাজ করছে সংগঠনটি। চিকিৎসক এবং চিকিৎসা সেবার মানোন্নয়নে শিগ্রই আর্ন্তজাতিক রাউন্ড টেবিল ডিসকাসনসহ বেশ কয়েকটি সেমিানারের আয়োজন করা হবে। আর্ন্তজাতিক খ্যাতি সম্পন্ন স্কলাররা এসব আয়োজনে অংশ নেবেন। একটি রোডম্যাপ তৈরী করে স্বাস্থ্যসেবার আধুনিকায়নে মৌলিক গবেষনার বিষয়টি বাস্তবায়নে কাজ করছে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ।
সকালের সময়: দৈনিক সকালের সময় পত্রিকার পক্ষ থেকে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ডা: জামাল উদ্দিন চৌধুরী: দৈনিক সকালের সময় পরিবারকেও স্বাচিপ এবং আমার পক্ষ থেকে রইল শুভেচ্ছা।
এমএসএম / এমএসএম