জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় দ্বৈত নীতি পরিহার করতে হবে

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন, ঢাকার বায়ু দূষণ যেভাবে বাড়ছে এভাবে ক্রমাগত চলতে থাকলে ভবিষ্যতে বায়ু দূষণ জনিত বিশেষ স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চলে পানির লবনাক্ততা বৃদ্ধির কারণে নবাগত শিশুদের মাঝে নতুন নতুন রোগ দেখা দিচ্ছে এবং নারীদের বন্ধাত্ত্বতা বাড়ছে। সংকট মোকাবেলায় সমাজের সকল স্তরের সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এর অডিটোরিয়ামে বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ; বাংলাদেশ সেন্টার ফর গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি; সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরী রিসার্চ এন্ড ডেভলপমেন্ট (সিপিআরডি) এবং দ্যা আর্থ কর্তৃক আয়োজিত (জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক নীতি বিবরণ এবং জাতীয় পরিবেশ পরিস্থিতি) শীর্ষক একটি জাতীয় সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় তরুণ, একাডেমিশিয়ান, এডভোকেট সহ সর্বস্তরের মানুষের বিষয়টিকে বুঝতে হবে এবং এ থেকে পরিত্রাণের উপায় গুলো খুঁজে বের করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারকে সাধারণ জনগণকে সহযোগিতা করে এগিয়ে যেতে হবে।
প্রথম অধিবেশনের মূল বক্তব্যে সিপিআরডি এর প্রধান নির্বাহী জনাব মোঃ শামসুদ্দোহা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার একমাত্র উপায় হচ্ছে পৃথিবীর উষ্ণতা শিল্প বিপ্লব শুরুর সময় হতে বর্তমানে যেন তা ১.৫ক্ক সে. এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে তা নিশ্চিত রাখা। দুঃখের বিষয় হলো অধিক গ্রীন হাউজ গ্যাস নিঃসরণকারী উন্নত দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন না করে জলবায়ু ফান্ডের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে কম গ্রীন হাউজ গ্যাস নিঃসরণের জন্য প্রণোদনা প্রদান করছেন। বিশ্ব জলবায়ু রাজনীতির এ দ্বিমুখীতা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার পরিবর্তে জলবায়ু ঝুঁকিগ্রন্থ জনগোষ্ঠি ও দেশসমূহের বিপদাপন্নতা ক্রমেই বাড়াচ্ছে। তবে কপ২৬ ও কপ২৭ এ জীবাশ্ম জ্বালানী হতে সরে এসে পরিচ্ছন্ন জ্বালানী ব্যবহারে জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সবাই একমত হয়েছে।
দ্বিতীয় অধিবেশনের মূল বক্তব্যে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এর বিজ্ঞান অনুষদের ডীন এবং বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার তার মূল প্রবন্ধে বলেন, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রণীত বায়ুদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০২২-এ নির্ধারিত পরিবেষ্টক বায়ুর মানমাত্রা বিশ্বের উন্নত দেশ এমনকি অনেক উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় কয়েকগুন বেশী। পূর্বে বায়ুর দূষক বস্তুকনা২.৫ এর বার্ষিক মান প্রতিঘনমিটার বায়ুতে ১৫ মাইক্রোগ্রাম থাকলেও বর্তমানে এটি ৩৫ মাইক্রোগ্রাম নির্ধারন হয়েছে, যা দেশের বায়ুদূষণের বর্তমান খারাপ অবস্থা থেকে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, বায়ুদূষণ (নিয়ন্ত্রন) বিধিমালা ২০২২-এ তাপ বিদুৎ কেন্দ্র-এর জন্য নির্ধারিত স্ট্যাক নি:সরণ মান চীন, জাপান, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃক নির্ধারিত মানমাত্রার চেয়ে দুই-তিন গুণ বেশি। যারা বাংলাদেশের পাওয়ার সেক্টরের জন্য পলিসি প্রণয়নে ও প্লান্ট স্থাপনে সহায়তা করছেন তাদের দেশ থেকে বাংলাদেশের আদর্শমান অনেক বেশী, এই দ্বিমুখীতা অনাগত দিনগুলোতে বায়ুদূষণ বৃদ্ধিসহ বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্ত জনিত স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও জীববৈচিত্রের বিলুপ্তির কারণ হয়ে দাড়াতে পারে। তাই, সরকার কর্তৃক প্রণীত বায়ুদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০২২ পুনরায় বিবেচনা জরুরী এবং আন্তর্জাতিকভাবে অতিসত্ত্বর ক্লিন এনার্জির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক জনাব কাজী সারোয়ার ইমতিয়াজ হাশমী বলেন, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে আমাদেরকেই কাজ করতে হবে। স্টেক ইমিশনের মত সংবেদনশীল বিষয়ে মানমাত্রা নির্ধারনের পূর্বে আমাদের দেশীয় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে। সরকারের পাশাপাশি সাধারণ জনগণকে সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করতে হবে, বিশেষকরে তরুনদের নিয়ে সামাজিক সচেতনতা কার্যক্রম গ্রহন করতে হবে।
ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্ট বাংলাদেশ এর সহ-সভাপতি স্টেট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ আলী নকী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন একটি আন্তর্জাতিক বিষয়, এটি কারও ব্যক্তিগত বিষয় নয়। যদি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য কোন দেশ নিমজ্জিত হয় তবে ক্ষতি শুধু ঐদেশের নয়, আন্তর্জাতিকভাবে সবাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে কারণ গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে এক দেশ অপর দেশের উপর নির্ভরশীল। তিনি আরও বলেন, আমরা যখন চিন্তা করব যে জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের থেকেই শুরু হয়েছে তখনই আমরা সমস্যার সমাধানের ব্যবস্থা করতে পারবো।
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গনেশ চন্দ্র সাহা বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ক্ষতির মূল ভুক্তভোগী কিন্তু আমরা এর জন্য মূলত দায়ী নই। উন্নয়নশীল দেশগুলোর সংকট মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। জলবায়ু নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যা কিছু আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয় তার অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয় না; তাই বর্তমানে আমাদের বাস্তবায়নের দিকে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে।
দ্যা আর্থ সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মামুন মিয়া বলেন, “বাংলাদেশের পরিবেশ ও জ্বালানি নীতিগুলোতে একটু কঠোরতা রয়েছে যদিও বাজার-ভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এখানে নমনীয়তার সুযোগ আছে। আমাদের পরিবেশ ও জ্বালানি নীতির চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করতে এবং সুযোগগুলিকে কাজে লাগাতে, বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতার উন্নতি, জনসচেতনতা ও শিক্ষা বৃদ্ধি এবং টেকসই পদ্ধতি গ্রহণ ও প্রচারের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।
ইউএসএআইডি বাংলাদেশ এর প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিষ্ট জনাব মো. সাইয়েদুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে বিষয়ে বাংলাদেশের নগরায়ন এবং উন্নয়ন কার্যক্রমের ভূমিকা সচেতনভাবে মূল্যায়ন করতে হবে এবং টেকসই পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, কপ সম্মেলনগুলো নিঃসন্দেহে একটি ভাল উদ্যোগ এর ফলে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অনেক ইতিবাচক জিনিস উঠে এসেছে। বিশেষত কপ২৭-এ লস এন্ড ড্যামেজ ও কার্বন ইমিশন এর মত যে সকল আর্থিক বিষয়গুলো নিয়ে ঘোলাটে মনোভাব ছিল তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।
উক্ত সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এর বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগণ, বিভিন্ন সংস্থার গবেষকগণ, সামাজিক ও পরিবেশবাদি বিভিন্ন সংস্থার সদস্যগণ।
সেমিনারের সমাপ্তি অংশে বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এবং ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এবং আগামী ৩ মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গনে ক্যাপস এবং ইয়ূথনেট এর উদ্যোগে ফ্রাইডেস ফর ফিউচার এর আহবানে গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইক-২০২৩ এর সবাইকে অংশগ্রহন করার আহ্বান জানানো হয়।
এমএসএম / এমএসএম

৫ আগস্ট সব পক্ষের উপস্থিতিতে জুলাই ঘোষণাপত্র : প্রেস উইং

আগুনের ঝুঁকিতে সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট, আগেই জানিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস

আ. লীগ অপকর্ম করতে চাইলে কোনোভাবেই ছাড় পাবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

৫ আগস্টের আগেও জুলাই ঘোষণাপত্র হতে পারে : মাহফুজ আলম

সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে

জুলাই ঘোষণাপত্র এখন বাস্তবতা, ঘোষিত হবে ৫ আগস্টের মধ্যে: মাহফুজ আলম

ঐতিহাসিক চুক্তি কূটনৈতিক বিজয়

বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতার অবস্থান ধরে রেখেছি : ড. খলিলুর রহমান

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তি জরুরি : তাহের

কোনো দলের প্রতি সেনাবাহিনীর আলাদা নজর নেই : সেনা সদর

নির্বাচনের ঘোষণা কিছুদিনের মধ্যেই শুনবেন : আইন উপদেষ্টা

নির্বাচন নির্ধারিত সময়েই, একদিনও দেরি হবে না: প্রেস সচিব
