আজ বিশ্ব শ্রবণ দিবস
আজ বিশ্ব শ্রবণ দিবস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে কর্মসূচী গ্রহন করেছে জাতীয় নাক কান গলা ইন্সিটিটিউট। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় শনিবার সকালে জনসচেতনতামূলক র্যালির মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচী শুরু হবে বলে জানান অডিওলজী ও ভেসটিবুলার সাইন্সেস ডিপার্টমেন্টের প্রধান ডা: জুনায়েদ রহিম।
এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হল- সবার জন্য কর্ণ শ্রবন সেবা প্রদান, আসুন করি বাস্তবায়ন ।সবার আগে জনসচেতনতা সৃষ্টির তাগিদ অনুভব করে ডা: জুনায়েদ রহিম বলেন, শ্রুতিহীনতা বা বধিরতাকে দ্রুত শনাক্ত করা এবং জরুরী পদক্ষেপ গ্রহনে জনসাধারনকে উৎসাহিত করতে বিশেষ নির্দেশনা সম্বলিত ব্রুশিয়ার, লিফলেট বিতরন করা হবে।
এছাড়া, দিবসটির গুরত্ব সম্পর্কে আলোচনা অনুষ্ঠান থাকছে বলেও জানান প্রতিষ্ঠানটির অডিওলজী ও ভেসটিবুলার সাইন্সেস ডিপার্টমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক ডা: জুনায়েদ রহিম। এসব কর্মসূচীতে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীরা অংশ নিবেন বলে জানানো হয়।
উল্লেখ্য, বিশ্ব শ্রবন দিবস বা আন্তর্জাতিক কর্ণ পরিচর্যা দিবসটি প্রতি বছর ৩রা মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। কানের বহিরাংশ বা বহিকর্ণ দেখতে অনেকটা ইংরেজি সংখ্যা থ্রি-এর মতো। তাই ইংরেজি বছরের তৃতীয় মাস মার্চ মাসের তৃতীয় দিনকে বিশ্ব কর্ণ যত্ন দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে ২০০৭ সালে চীনের বেইজিংয়ে শ্রুতিহীনতার প্রতিরোধ এবং পুনর্বাসনের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনেই কর্ণ সেবার মাধ্যমে বধিরতা প্রতিরোধ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়। সেবারই প্রথমবারের মত পালিত হয় ‘ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার কেয়ার ডে’ বা আন্তর্জাতিক কর্ণ যত্ন দিবস। তবে ২০১৬ সাল থেকে ওয়ার্ল্ড হিয়ারিং ডে হিসেবে পালিত হচ্ছে এই দিনটি। প্রতিবছরই একটি নির্দিষ্ট প্রতিপাদ্য বিষয়কে কেন্দ্র করে দিবসটি পালন করা হয়। আমাদের দেশে ২০১৪ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
বধিরতা বা শ্রুতিহীনতার নেপথ্যে বেশকিছু কারণ লক্ষ্য করা যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- মধ্য কর্ণের প্রদাহ, কানে খৈল জমা, কানের পর্দায় আঘাত, মধ্য কর্ণে তরল জাতীয় পদার্থ জমা, কোলাহল, উচ্চ শব্দ, প্রসবকালীন জটিলতা, গর্ভাবস্থায় মায়ের রুবেলা, সাইটোমেগালো ভাইরাস সংক্রমণ, শিশুদের হাম, মস্তিস্কের প্রদাহ, ঔষধের প্রভাব। এছাড়াও এক বা একাধিক কারনে শ্রুতিহীনতা ঘটতে পারে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।
তবে শ্রুতিহীনতা প্রতিরোধের জন্য বেশকিছু উপায় অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এ প্রসঙ্গে জাতীয় নাক কান গলা ইন্সিটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা: জুনায়েদ রহিম বলেন, মধ্য কর্ণের প্রদাহ দ্রুত সনাক্ত করা ও চিকিৎসা করা, কানের সঠিক যত্ন নেয়া ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা, উচ্চ শব্দ পরিহার করা,মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম কর্মসূচী শক্তিশালী করা, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অন্তকর্ণের জন্য ক্ষতিকারক ঔষধ ব্যবহার থেকে বিরত থাকা, কান ও শুনানীর যন্ত্রে সমন্বয় করাসহ সর্বদা কানের যত্ন নেয়া। কর্ণ সেবায় বিনিয়োগের পাশাপাশি দক্ষ জনবল গড়ে তোলার উপরও গুরুত্বারোপ করেন ডা: জুনায়েদ রহিম।
দেশে শতকরা ৯ দশমিক ৬ ভাগ মানুষের শ্রবন সমস্যা রয়েছে। সে হিসেবে এক কোটি ৫০ লাখ মানুষের এই সমস্যা রয়েছে। এছাড়া আরও ৫০ লাখ মানুষ প্রকট আকারে শ্রবন সমস্যায় ভুগছেন বলে জানান তিনি।
উল্লেখিত এই সংখ্যাটিকে ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বেশকিছু কর্মপরিকল্পনা নিয়ে জাতীয় নাক কান গলা ইন্সিটিটিউট কাজ করছে উল্লেখ করে ডা: রহিম জানান, মধ্যকর্ণের প্রদাহ সনাক্ত করা ও সঠিক চিকিৎসা দেয়া, দ্রুত শ্রুতিহীনতা সনাক্ত করা, শুনানী যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে পূনর্বাসন করা, ককলিয়ার ইমপ্লান্ট প্রতিস্থাপন সহজসাধ্য করাসহ সমাজের প্রতিটি স্তরে জনসচেতনতা বৃদ্ধির বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। ২০৩০ সাল নাগাদ মধ্যে বধিরতার সংখ্যা অনেকখানি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন চিকিৎসকরা।
এমএসএম / এমএসএম