ডা. এনামুল হক টিটু
রোজায় সুস্থ থাকবেন কিভাবে
বছর ঘুরে আবারও ফিরে এলো পবিত্র মাহে রমজান। মাহে রমজানের সময়টাতে মহান আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির জন্য সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়। একারণে বছরের চিরাচরিত অভ্যাসগুলোর পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। রোজা সুষ্ঠভাবে পালন করার জন্য শরীর সুস্থ রাখা প্রয়োজন। আর শরীর সুস্থ রাখার জন্য স্বাস্থ সংক্রান্ত কিছু টিপস মেনে চলা উচিত। পবিত্র মাহে রমজানে শরীর সুস্থ রাখার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার গ্রহনে গুরত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন ইয়র্ক হাসপাতালের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এনামুল হক টিটু।
আসুন জেনে নেই রমজানের স্বাস্থ্য বিষয়ক কিছু টিপস:
১. ইফতারের খাদ্য তালিকায় শরীরকে সুস্থ এবং সতেজ রাখে এমন খাবার রাখা উচিৎ। যেমন- পানি, জুস, শরবত, খেজুর, কলা, পেঁপে, শশা/খিরা, কাঁচা ছোলা, ভিজা চিড়া, খিচুরি, পায়েস, মিষ্টি, হালিম, কাঁচা ফলমূল ইত্যাদি।
২. রোজার সময় খাবার তালিকায় তেমন একটা পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই তবে পানি বেশি করে খেতে হবে। সারাদিন রোজা রেখে ইফতারে পানি কম খেলে হজমে সমস্যা, কোষ্ঠকাটিন্য কিংবা অনেক রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে, তাই ইফতারের সময় থেকে সেহরীর সময় পর্যন্ত প্রচুর পরিমানে পানি খাবেন। এছাড়া, ভাত, ডাল, শাক-সবজি, মাছ, মাংস, ডিম একটু ঝোল করে খেতে পারেন। তবে মসলা এবং তেল দিয়ে কসানো তরকারি খাবার না খাওয়াই ভাল। কেননা এটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
৩. ভাজাপোড়া, শুকনো খাবার ও তৈলাক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো। আর খেলেও কম খাওয়া উচিত। কারণ, এ জাতীয় খাবার বুকে জ্বালাপোড়া, বদহজমসহ গ্যাসের সৃষ্টি করে।
৪. রোজা রেখে অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করা থেকে বিরত থাকুন। বেশি পরিশ্রমের ফলে শারীরিক ক্ষতি হতে পারে।
৫. রোজায় ইফতারের সময় অতিরিক্ত খাবার না খেয়ে পরিমাণমত খাবার খাওয়াই ভাল। রোজায় যেসব খাবার খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে হয় ঐসব খাবার পরিহার করাই ভাল।
৬. দাঁতকে ভাল রাখা এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য সেহরীর পর দাঁত ব্রাশ করুন। মনে রাখবেন, অতিরিক্ত শর্করাযুক্ত স্ন্যাকস এবং পানীয়ও দাঁতের সুস্থ্যতার জন্য ক্ষতিকর।
৭. খেজুর শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি যোগায়। তাই ইফতারে নিয়মিত খেজুর খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
৮. পর্যাপ্ত ঘুমের বিষয়টিকেও প্রাধান্য দিতে হবে। কেননা ৭-৮ ঘণ্টার কম ঘুম আপনার রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দিতে পারে।
৯. রোজায় ধূমপান থেকে দূরে থাকুন। ধূমপান করা কখনোই স্বাস্থ্যের জন্য ভাল না।
১০. রোজায় চা বা কফি পান না করাই হবে সঠিক সিদ্ধান্ত। কেননা এতে করে দেহে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। চা-কফির স্থলে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর পানীয় পান করুন।
১১. যারা ডায়েট করে থাকেন রোজায় খাবারের পরিমান সাধারনত সীমিত থাকে তাই এ সময়টাতে ডায়েট করার প্রয়োজন নেই।
১২. ডায়াবেটিসের রোগীরা স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহনের প্রতি অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। কেননা অস্বাস্থ্যকর খাবার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রার ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।
১৩. যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন তারা রোজায় ব্যায়ামের মাত্রা কিছুটা কমিয়ে দিতে পারেন। আর সকালে ব্যায়াম না করে ইফতারের কিছুক্ষণ পর আধা ঘণ্টা ব্যায়াম করতে পারেন। রাতে বা সেহরীর সময় হাটাচলা করা যেতে পারে। এটা স্বাস্থ্যের জন্য ভাল।
১৪. যারা বিভিন্ন রোগের জন্য ঔষধ সেবন করেন তারা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ইফতার ও সেহরীর সময় ঔষধ সেবন করতে পারেন।
Sunny / Sunny