ঢাকা বৃহষ্পতিবার, ২৬ জুন, ২০২৫

অ্যাজমা বা হাঁপানি হলে করণীয় 


নিশাত শাহরিয়ার photo নিশাত শাহরিয়ার
প্রকাশিত: ৯-৫-২০২৩ দুপুর ২:৪২

ডাঃ নিয়ামুল মাওলা আকাশ
মেডিসিন কনসালটেন্ট ও ডিরেক্টর
লং লাইফ হসপিটাল লিমিটেড, ধানমন্ডি, ঢাকা। 

অ্যাজমা বা হাঁপানি হল শ্বাসযন্ত্রের একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেটি শ্বাসনালী ফুলে যাওয়া এবং সরু হয়ে যাওয়া দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, এটি অতিরিক্ত শ্লেষ্মা তৈরি করতে পারে। এর কারণে রোগী শ্বাস গ্রহণকালে অসুবিধা অনুভব করেন। রোগী শ্বাস নেয়ার সময় শ্বাসকষ্টের শব্দ হয় এবং শ্বাসকষ্ট অনুভূত হয়। এটির ফলে কাশিও হয়ে থাকে। অ্যাজমা বা হাঁপানি সম্পর্কে করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন লং লাইফ হসপিটাল লিমিটেডের মেডিসিন কনসালটেন্ট ও ডিরেক্টর ডা: নিয়ামুল মাওলা আকাশ। সাক্ষাতকার নিয়েছেন দৈনিক সকালের সময়ের প্রতিবেদক নিশাত শাহরিয়ার। 

দৈনিক সকালের সময়: অ্যাজমা বা হাঁপানি কেন হয়?

ডা: নিয়ামুল মাওলা আকাশ: জেনেটিক কারণে যাদের অ্যালার্জি হয়, বংশগত ভাবে মা-বাবা, দাদা-দাদি বা অন্য কারো হাঁপানি থাকলে অ্যাজমা হতে পারে।

দৈনিক সকালের সময়: অ্যাজমা কখন বাড়ে?

ডা: নিয়ামুল মাওলা আকাশ: ঘরবাড়ির ধুলা, ময়লা, মাইট, ফুলের রেণু, পাখির পালক, জীব-জন্তুও পশম, ছত্রাক ইত্যাদি অ্যালার্জিজনিত পদার্থ থেকে হাঁপানি হতে পারে। ফ্রিজের ঠান্ডা পানি, আইসক্রিম বা অন্যান্য ঠান্ডাপদার্থও হাঁপানি বাড়ায়।

দৈনিক সকালের সময়: অ্যাজমা কত ধরনের হতে পারে?

ডা: নিয়ামুল মাওলা আকাশ: অ্যাজমা মূলত ৮ ধরনের হয়ে থাকে। যেমন:-
মিশ্র অ্যাজমা:- এক্ষেত্রে রোগী পূর্বোক্ত এলার্জিক ও নন-এলার্জিক দু’ধরনের অ্যাজমাতেই ভোগেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রকোপ বেড়ে যায়।


রাত্রি কালীন অ্যাজমা:- এ ধরনের হাঁপানি রাতের বেলা বিশেষত রাত ২ টা থেকে ৪ টার মধ্যে হতে পারে। শারীরিক দুর্বলতার জন্য রোগী রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে। এমনকি দিনের বেলায় স্বল্পকালীন নিদ্রা যায়। রাত্রিকালীন অ্যাজমা গুরুত্বের সাথে নেয়া উচিত কারণ এক্ষেত্রে রেসপিরেটরী এরেস্ট হয়ে রোগীর মৃত্যু ঘটারও সম্ভাবনা থাকে।

ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা:- এটি মূলত এক ধরনের এলার্জিক রিএ্যাকশন যাতে শ্বাসকষ্ট ও বুকে সাঁই সাঁই
শব্দ হয়। শ্বাসনালীর চারপাশের পেশী ও মিউকাস মেমব্রেন সমূহের সংকোচন দেখা দেয়। শ্বাসনালীর সংক্রমণ, বায়ুবাহিত এলার্জেন, খাদ্যের এলার্জেন ও অত্যধিক মানসিকচাপ এর প্রধান কারণ।

কার্ডিয়াক অ্যাজমা:- হৃদপিন্ড যখন তার স্বাভাবিক রক্ত সংবহন হারিয়ে ফেলে তখন পালমোনারি ইডিমা বা ফুসফুসে পানি জমে বায়ুনালীকে সংকুচিত করে ফেলে এবং হাঁপানি সৃষ্টি হয়। এটি অত্যন্ত মারাত্মক। সাধারনত ঘুমানোর কয়েক ঘণ্টা পর এটি আক্রমণ করে কারণ শুয়ে থাকলেই ফুসফুসে পানি জমে। শ্বাসকষ্টে রোগীর ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং কিছুক্ষণ বসে থাকার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়।

ব্যায়াম জনিত অ্যাজমা:- এ ধরনের অ্যাজমা ব্যায়ামকালীন সময়ে অথবা ব্যায়ামের কিছুক্ষণ পর থেকে শুরু হয়। বিশেষত শীতকালে এ ধরণের সমস্যা বেশি হয়।

পেশাগত অ্যাজমা:- অকুপেশনাল বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাজমা সাধারণত চাকরি নেয়ার কয়েক মাস থেকে শুরু করে কয়েক বছরের মধ্যে দেখা দেয়। সাধারণত কর্মস্থল ত্যাগ করার সাথে সাথে বা ছুটিতে থাকাকালীন সময়ে লক্ষণ সমূহ কমে যায়। কাঠের মিলের গুড়া, রাসায়নিক ধোঁয়া, সর্বদা ধুলাবালিযুক্ত পরিবেশ, সিমেন্ট কারখানা, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী, আটা ও মসলার মিল, রাইস মিল, জুট মিল, স্পিনিং মিল, রংয়ের কারখানা, রাসায়নিক সার কারখানা, ফটোকপি মেশিন, ড্রাইভিং, পোল্ট্রি ফার্ম, বেডিং স্টোর ইত্যাদিতে কর্মরত শ্রমিকরা এ ধরনের হাঁপানিতে বেশি আক্রান্ত হন।

মৌসুমি অ্যাজমা:- মৌসুমি অ্যাজমা সাধারণত বিশেষ ঋতুতে দেখা দেয়।যেমন- কারো কারো গরমে অ্যাজমা বাড়ে, কারো ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ফুল বাগানে গেলে অ্যাজমা বাড়ে। গাছ, ঘাস, ফুলের রেণু ইত্যাদির কারনেও অ্যাজমা হয়।

নীরব অ্যাজমা:- এ ধরনের হাঁপানির আক্রমণ অত্যন্ত ভয়াবহ ও জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ। কোনরূপ পূবর্ লক্ষণ ছাড়াই বুকে হালকা শব্দ করেই আক্রমণ করে।

কফ ভেরিয়েন্ট অ্যাজমা:- এ ধরনের অ্যাজমা দীর্ঘ মেয়াদী ও বিরক্তিকর কাশি যুক্ত হয়ে থাকে।

দৈনিক সকালের সময়: অ্যাজমার উপসর্গগুলো কি কি?

ডা: নিয়ামুল মাওলা আকাশ: শ্বাস নিতে ও ছাড়তে কষ্ট, বুকের ভেতর বাঁশির মতো সাঁই সাঁই শব্দ, বুক ভার হয়ে থাকা, দম বন্ধ ভাব, ঘন ঘন কাশি হওয়া।

দৈনিক সকালের সময়: অ্যাজমা রোগীদের খাদ্যাভ্যাস কেমন হওয়া উচিৎ?

ডা: নিয়ামুল মাওলা আকাশ: খাদ্য তালিকায় যদি বিভিন্ন নিউট্রেন্ট ব্যালেন্স করে রাখা যায় তবে একজন অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগীর কষ্ট কমে যায়। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একটু কুসুম গরম পানি রাখা উচিৎ। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে যদি একটু আদার রস, তুলসির রস অথবা লেবু-মধুর পানীয় পান করা যায় তাহলে রোগী অনেকটা বেটার ফিল করবেন। আদায় এমন কিছু পুষ্টি উপাদান থাকে যা সব ধরনের প্রদাহ কমিয়ে দেয়। সেক্ষেত্রে ফুসফুসকে প্রসারিত করে এবং অক্সিজেন ইনহেল করতে অনেকটা হেল্প করে। সেজন্য সারাদিনের খাদ্য তালিকায় এক কাপ আদা চা রাখা যেতে পারে। বিকেলের নাশতায় মুড়ির সাথে আদা চা অথবা মসলা চা রাখতে পারেন যেটি আপনাকে অনেকটা ফুরফুরে রাখবে। খাদ্য তালিকায় অবশ্যই ভিটামিন সি রাখতে হবে। ভিটামিন সি ফুসফুসকে প্রসারিত করে, অক্সিজেন ইনহেল করতে হেল্প করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে। যেভাবেই হোক খাদ্য তালিকা এনরিচ করতে হবে এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ করতে হবে। কারণ এক্ষেত্রে ব্যালেন্স ডায়েট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য তালিকায় সুপারফুড রাখতে হবে। এমন কিছু রাখা যাবে না যে খাবার গুলো অ্যালার্জির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। আবার যে খাবারটা সেনসিটিভ সেই খাবারটা রোগীকেই সিলেক্ট করতে হবে যে, কোন খাবারটা রোগীর জন্য সেনসিটিভ মনে হচ্ছে।

দৈনিক সকালের সময়: অ্যাজমা রোগীদের করণীয় কি কি ?

ডা: নিয়ামুল মাওলা আকাশ: অ্যাজমার ওষুধ বা ইনহেলার সব সময় হাতের কাছে রাখুন, ভিটামিন-এ জাতীয় খাবার, কলিজা, গাজরসহ শাক-সবজি ও মধু খেতে হবে, নিয়মিত চেকআপ করাতে হবে, নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করতে হবে, ধূমপান ও ধুলোবালি এড়িয়ে চলতে হবে, বালিশ লেপ তোশক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, ঘরে কার্পেট ব্যবহার না করা , ঠাণ্ডা খাবার আইসক্রিম ইত্যাদি না খাওয়া, বাড়িতে পোষা প্রাণী (কুকুর, বিড়াল) থাকলে নিয়মিত গোসল করানো বা পরিচ্ছন রাখা, মানসিক চাপ, উৎকণ্ঠার মত বিষয়গুলি এড়িয়ে চলতে হবে।

 

Sunny / Sunny

বিএসএমএমইউয়ে নতুন নামের ব্যানার, বাদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব

মেডিকেলে থাকছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা, যাচাই-বাছাই ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত

ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৫৭ রোগী

ডেঙ্গুতে ঢাকায় কর্মক্ষম মানুষের মৃত্যু বেশি

ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ৮৮৮

বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষায় অশনি সংকেত অটোমেশন; ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা

ইডেন মাল্টি কেয়ার হাসপাতালের বিরুদ্ধে অপচিকিৎসার অভিযোগ

ক্যানসার রহস্যের জট খোলার নতুন ‘সূত্রের’ সন্ধান মিলেছে

বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির ইসি গঠনে সাত সদস্য বিশিষ্ট সার্চ কমিটি

বিশ্ব হার্ট দিবস ২০২৪ উদযাপন করলো এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা

আঘাতপ্রাপ্ত রেটিনায় চোখের চিকিৎসা ও সম্ভাবনা

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

পদত্যাগ করলেন স্বাস্থ্য সংস্কার কমিটির সভাপতি এম এ ফয়েজ