ঢাকা সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫

তৃণমূলে শেখ হাসিনার কড়া বার্তা


ইউসুফ আলী বাচ্চু photo ইউসুফ আলী বাচ্চু
প্রকাশিত: ৯-৭-২০২৩ দুপুর ৪:২৯

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বরের শেষ সাপ্তাহে অথবা আগামী বছরের প্রথম দিকে  অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এবারের নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ মনে করে তৃণমূলে সর্তক বার্তা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তারমধ্যে রয়েছে, জনসংযোগে দ্বন্দ্বে জড়ানো যাবে না। এমপিদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার বিষোদগার করা যাবে না। যারা এমপিদের নিয়ে গুজব কিংবা অপপ্রচার করবে, তাদের নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হবে না। আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে গণসংযোগে নামতে হবে। একইসঙ্গে সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের সন্ত্রাসী নৈরাজ্য কর্মকাণ্ড কৌশলে মোকাবিলা করতে হবে। পাশাপশি সহযোগী সংগঠনের কমিটিগুলো দ্রুত দিতে বলা হয়েছে। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতা ও গণভবনের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের আশায় মাঠে নেমেছেন অন্তত প্রায় হাজারের মতো মনোনয়ন প্রত্যাশী। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক আমলা, পুলিশ কর্মকর্তা, সেনা কর্মকর্তা, সাবেক ছাত্র ও যুবনেতা, প্রবাসী, আইনজীবী, সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ নানা পেশায় নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিবর্গ। তারা অনেকেই ইতিমধ্যে দলের এমপিদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের বিষোদগার করছেন। তাদের ওপর ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, যারা জনসংযোগকালে দলীয় এমপিদের সমালোচনা করবেন তাদের মনোনয়নের জন্য বিবেচনা করা হবে না।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা জানান, দলের সভাপতি শেখ হাসিনা জানিয়ে দিয়েছেন, যারা জনসংযোগকালে দলীয় এমপিদের সমালোচনা করবেন তাদের মনোনয়নের জন্য বিবেচনা করা হবে না। নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা মাঠে কর্মকাণ্ড বাড়াচ্ছেন। এমন দেখা যাচ্ছে অনেকেই জনসংযোগ কর্মসূচিতে গিয়ে বিরোধী দলের কথা না বলে দলের বর্তমান সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ আনছেন। এতে দলীয় শৃঙ্খলা নষ্ট হওয়ায় ক্ষুব্ধ দলের প্রধান শেখ হাসিনা। তিনি এরই মধ্যে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সতর্ক করে দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের।

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারি দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা কেউ এক বছর আবার কেউ গত ৮/১০ বছর যাবৎ মাঠে মানবিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে নিজেদের অবস্থানের জানান দিচ্ছেন। তাদের অনেকেই গত দুই ঈদসহ নিজ নিজ এলাকায় কর্মকাণ্ড বাড়াচ্ছেন। তাদের অনেকেই জনসংযোগ কর্মসূচিতে দলের বর্তমান সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ আনছেন এবং তাদের অযোগ্য প্রমাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে দলীয় শৃঙ্খলা নষ্ট হওয়ায় ক্ষুব্ধ দলের প্রধান শেখ হাসিনা। তিনি এরই মধ্যে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সতর্ক করে দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের। গত সোমবার দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাসহ একাধিক দলীয় বৈঠকে ওই সব মনোনয়নপ্রত্যাশীর বিষয়ে অসন্তোষ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন দুইজন নেতা জানান, দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যেসব মনোনয়নপ্রত্যাশী এলাকায় গিয়ে দলের এমপিদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন তারা একদিকে দলের ক্ষতি করছেন, অন্যদিকে নিজেরও ক্ষতি করছেন। যারা এমপিদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করবেন তাদের মনোনয়ন দেবেন না। তবে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা জনসংযোগ করলে  কোনো সমস্যা নেই। তাদের বেশি বেশি করে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরতে হবে এবং বিরোধী দলের অপকর্মের কথা প্রচার করতে হবে। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে উল্টোপথে হাঁটছেন নৌকার বেশির ভাগ মনোনয়ন প্রত্যাশী। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা মাঠে নিজেদের তৎপরতা বাড়াচ্ছেন। সাধারণত মনোনয়নের ক্ষেত্রে মূল প্রতিপক্ষ বর্তমান সংসদ সদস্যরা। ফলে মনোনয়নপ্রত্যাশী অনেক নেতাই নিজ দলের সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে সভা-সমাবেশে নানা অপকর্মের অভিযোগ তুলছেন। এতে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।

সম্প্রতি ঈদুল আজহা উপলক্ষে মনোনয়নপ্রত্যাশী অনেকেই নিজ এলাকায় যান। তারা নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন, গণসংযোগ করেন। সেখানে দলের সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন।গত ১ জুলাই রাজশাহীর বাগমারায় চারজন মনোনয়নপ্রত্যাশী মিলে স্থানীয় সংসদ সদস্য এনামুল হকের বিরুদ্ধে এক সমাবেশ ডাকেন। এই মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, তাহেরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকিরুল ইসলাম সান্টু, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ইব্রাহিম হোসেন এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক নেতা সফিকুল ইসলাম।

এ সমাবেশ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা সংসদ সদস্য এনামুল হককে এলাকায় প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। তারা এনামুল হকের বিরুদ্ধে বিএনপি, জামায়াত, জেএমবি, সর্বহারা পার্টির নেতাকর্মীদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। শুধু এনামল হক শামীমই নয়, সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মণ্ডলের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, বেলকুচি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সাজেদুল এবং বেলকুচি পৌরসভার মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজা। তারা সম্প্রতি একাধিক সমাবেশ থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অভিযোগ তুলেছেন। একইভাবে নড়াইল-১ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব খাজা মিয়া। তিনি ঈদুল আজহার আগে ও পরে কয়েকটি সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বক্তব্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন। অন্যতম অভিযোগ হলো নিয়োগ বাণিজ্য করে বিপুল অর্থের মালিক হওয়া।

আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আব্দুস সোবহান গোলাপ বলেন, ‘নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশীরা যেন এলাকায় গিয়ে দলের সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে কথা না বলেন, সে বিষয়ে আমাদের নেত্রীর কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। যারা দলের এমপির বিরুদ্ধে সভা, সমাবেশে কথা বলবেন তাদের মনোনয়নের জন্য বিবেচনায় নেওয়া হবে না।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘সভা-সমাবেশ থেকে এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থী বলে বিবেচিত হয়। কোথাও কোথাও এ ধরনের কাজ হচ্ছে। এটা যেন না হয় সে বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের আচরণকে আগামী দিনেও কিন্তু শক্তভাবেই দেখা হবে।’

তিনি বলেন, ‘কারো কোনো অভিযোগ থাকলে তা দলের শীর্ষ পর্যায়ে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। দলের নীতিনির্ধারকরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। নির্বাচনী প্রচারকালে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরা, নিজের পরিকল্পনার কথা বলে মানুষকে আকৃষ্ট করতে হবে। দলের শৃঙ্খলার পরিপন্থী কাজ করা যাবে না।’

এদিকে, সরকারের টানা তিন মেয়াদের সাফল্য ও অর্জন জনগণের (ভোটার) সামনে তুলে ধরতে আগামী সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে দেশব্যাপী প্রচারে নামবে আওয়ামী লীগ। এই জনসংযোগের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণেরে সামনে তুলে ধরে নৌকার পক্ষে ভোট চাইবেন তারা। পুরো সেপ্টেম্বর মাসজুড়েই সারা দেশে চলবে এই প্রচার কর্মসূচি। সর্বশেষ ৫ জুলাই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও সহযোগি সংগঠনগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের যৌথসভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠকে উপস্থিত নেতারা জানিয়েছেন। সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে সারাদেশের জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ইউনিট পর্যায়ে এ গণসংযোগ করবে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘বৈঠকে কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এরমধ্যে আগস্ট শোকের মাস- এ মাসের কর্মসূচি ঠিক করা হয়েছে। শোকের মাসে আমরা নানা কর্মসূচির আয়োজন করবো।’ শোকের মাস পার হলেই সারা দেশে মাসব্যাপী গণসংযোগ করবেন বলে জানান তিনি। এই গণসংযোগের মাধ্যমেই সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড জনগণের সামনে তুলে ধরে নৌকার পক্ষে স্ব স্ব এলাকায় ভোট চাইবেন দলের নেতাকর্মীরা। তার আগে আগস্ট মাসে ব্যাপক পরিসরে শোক দিবসের কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ।
তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা আওয়ামী লীগ নেতাদেরকে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কিমিটি দিতে আমাদের সাধারণ সম্পাদক অনুরোধ করেছেন। 

 

এমএসএম / এমএসএম

কাঠামোগত পরিবর্তন না এলে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করব: নাহিদ ইসলাম

খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে ফিরোজায় পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী

পাঞ্জাবি পরা একজন আমাকে প্রথমে ধাক্কা দিয়েছেন : রুমিন ফারহানা

বিএনপির আ.লীগ বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা : হাসনাত আবদুল্লাহ

রাষ্ট্রের সিস্টেমটাই হয়ে গেছে ‘দখলের’ : মির্জা ফখরুল

নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদের আইনী স্বীকৃতি দিতে হবে, সংস্কার না করে পুর্বের নিয়মে নির্বাচন হতে পরে না-পীর সাহের চরমোনাই

যারা নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছে তারা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি নয়

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে গণতন্ত্র ফিরবে না: আনিসুল ইসলাম মাহমুদ

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সতর্ক থাকতে বললেন গয়েশ্বর

এনসিপির নেতার কথোপকথন ভাইরালঃ ‘দেখো আরও পাঁচ লাখ নিতে পারো কি না’

দল নিবন্ধনের প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এনসিপিসহ ১৬ দল

অতি শিগগির আপনাদের সঙ্গে সরাসরি দেখা হবে: তারেক রহমান

নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব