চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নি নিরাপত্তা আইন অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা

বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন জরুরী সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হলো ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। এ প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম জনগণের সেবায় নিবেদিত। ফায়ার সার্ভিসের অন্যতম কাজ হলো অগ্নিকান্ড যাতে না ঘটে সেই বিষয়ে জনসাধারনকে সচেতন করা, অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে গেলে ক্ষতিগ্র¯’দের জান, মাল রক্ষা ও উদ্ধারে জীবন বাজি রেখে কাজ করা। পাশাপাশি বিভিন্ন অফিস এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহে ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স আছে কিনা সেটার তদারকি করা। লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন এবং ফায়ার সেফটির জন্য সঠিক নিয়মে ফায়ার ইকুয়েপমেন্টস ব্যবহার করা হ”েছ কিনা এই বিষয়গুলিও দেখভাল করে থাকে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ। তবে চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সমূহে ফায়ার সেফটির বিষয়টি বিশেষ গুরত্ব বহন করে। হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনোস্টিক সেন্টার, ব্লাড ব্যাংকসহ চিকিৎসা সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান সমূহে ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম সম্পর্কে কথা হয় রাজধানীর মিরপুর ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোঃ শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে। সাক্ষাতকার নিয়েছেন দৈনিক সকালের সময়ের প্রতিবেদক নিশাত শাহরিয়ার।
সকালের সময়: চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়গুলিকে প্রাধান্য দেয়া হয় ?
মোঃ শাহাবুদ্দিন: প্রতিটা প্রতিষ্ঠানে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স আইন অনুযায়ী বাধ্যতামূলক। প্রতিটা প্রতিষ্ঠানেই অগ্নি ঝুঁকি থাকে সেদিক বিবেচনায় হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনোস্টিক সেন্টারসহ চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে তুলনামূলকভাবে লোক সমাগম বেশি হয়। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অসু¯’ রোগীর সংখ্যাটাও বেশি থাকে। এসব প্রতিষ্ঠানে কখনো কোন দূর্ঘটনা ঘটলে একজন সুস্থ মানুষের পক্ষ্যে নিরাপদে বেরিয়ে আসা কষ্টকর হয়ে যায় সেক্ষেত্রে একজন অসু¯’ মানুষের পক্ষে অগ্নিকান্ডের স্থান থেকে নিরাপদে বের হয়ে আসা অসম্ভব। সার্বিক দৃষ্টিকোন থেকে এই জায়গাগুলি ভেরী সেনসিটিভ। তাই চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে বেশকিছু বিষয়কে গুরত্ব দেয়া হয় যেমন- ভবনটি কত তলা, কি পরিমান লোক ভবনে থাকবেন, কি পরিমানের লোকের যাতায়াত রয়েছে, ভবনে কতটি সিঁড়ি আছে, ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সিঁড়ির বিষয়টি খুবই গুরত্বপূর্ণ। পাঁচশত লোক যদি ঐ ভবনে বসবাস করে তাহলে দুটি সিঁড়ি থাকতে হবে। পাঁচশর বেশি লোক বাস করলে তিনটি সিঁড়ি থাকতে হবে। এছাড়া ফায়ার এলার্ম, হিট ডিটেক্টোর, মাল্টি ডিটেক্টোর থাকতে হবে। বড় প্রতিষ্ঠান হলে পর্যাপ্ত পরিমানে পানি মজুদের জন্য রিজার্ভার থাকবে, ফায়ার পাম্প সিস্টেম থাকবে, স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষন প্রাপ্ত ফায়ার ফাইটার থাকবে যারা প্রাথমিক অবস্থায় অগ্নি নির্বাপনে সক্ষম হবে। এছাড়া আরও বড় প্রতিষ্ঠান হলে অটো ফায়ার সিস্টেম থাকতে হবে।
সকালের সময়: উঁচু ভবন নির্মাণের জন্য ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়গুলি গুরত্ব পায় ?
মোঃ শাহাবুদ্দিন: উঁচু ভবনের জন্য অগ্নি নির্বাপক লাইসেন্স প্রাপ্তির বিষয়টি গুরত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। কোন দূর্ঘটনা ঘটলে লোকজন নিরাপদে বের হতে পারবে কিনা, উক্ত ভবনটি অগ্নি ঝুঁকিমুক্ত কিনা, ভবনটিতে কি ধরনের অগ্নি নিরাপত্তা বিরাজমান সেটা যাচাই বাছাই করা হয়। নূন্যতম সাত তলা ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিসের আইন অনুযায়ী ছাড়পত্র গ্রহন করতে হবে। ভবনে সঠিক সিঁড়ি আছে কিনা, ভবনে প্রবেশের জন্য উপযুক্ত রাস্তা আছে কিনা, যেকোন দূর্ঘটনা ঘটলে ফায়ার ফাইটিংয়ের কাজ পরিচালনা করা যাবে কিনা এসব বিষয় বিবেচনা সাপেক্ষে ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়।
সকালের সময়: চিকিৎসা সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ফায়ার ইকুয়েপমেন্টস সঠিক নিয়মে ব্যবহার করছে কিনা সেটা কিভাবে মনিটর করা হয় ?
মোঃ শাহাবুদ্দিন: চিকিৎসা সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই গুরত্বপূর্ণ বিষয়। তাই ফায়ার ইন্সপেক্টরগণ নিয়মিত দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে চিকিৎসা সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করেন। ফায়ার সেফটি নিশ্চিতের ক্ষেত্রে কোন রকম অনিয়ম পেলে উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করেন এবং লাইসেন্সের নির্দেশনাগুলি মেনে চলার ব্যাপারে তাগিদ দেয়া হয়।
সকালের সময়: চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যদি লাইসেন্সের নির্দেশনা অমান্য করে কিংবা মিথ্যে তথ্য দেয় অথবা নবায়ন না করে তাহলে কি ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা রয়েছে ?
মোঃ শাহাবুদ্দিন: ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সের আইন অনুযায়ী ফায়ার লাইসেন্সের নিয়ম ভঙ্গ করলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। সেক্ষেত্রে অপরাধের ধরন অনুযায়ী ছয় মাসের জেল, মালামাল বাজেয়াপ্ত, আর্থিক জরিমানাসহ কখনো কখনো প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। অপরাধের ধরন বুঝে ক্ষেত্র বিশেষে তিন বছরের জেলেরও ব্যবস্থা রয়েছে।
সকালের সময়: ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অনুমোদন না পাওয়ার কারনগুলো কি কি ?
মোঃ শাহাবুদ্দিন: সাধারনত ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স প্রাপ্তির আবেদনের তিনমাসের মধ্যে আবেদনকারী প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স প্রাপ্তির যোগ্য কিনা সেটা জানিয়ে দেয়া হয়। কিছু কিছু ভবন আছে যেখানে নির্মাণগত ত্রুটির কারনে অগ্নি নিরাপত্তার লাইসেন্স দেয়া সম্ভব হয় না। অনেক হাসপাতাল আছে যাদের চলাচলের জন্য একটি মাত্র সিঁড়ি থাকে। এমন হাসপাতালগুলোতে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে লাইসেন্স দেয়া হয় না। অগ্নিঝুঁকি মুক্ত করা যেখানে মূল উদ্দেশ্য সেখানে কোন ঝঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে লাইসেন্স দেয়া সম্ভব না। অনেকেই ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন। তবে আবেদনকারী ব্যক্তির প্রতিষ্ঠান যদি অগ্নিঝুঁকি মুক্ত না থাকে তাহলে তিনি আবেদনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবেন, লাইসেন্স পাবেন না। অনেক সময় বহুতল ভবন এবং চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সমূহে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, অনেকেই ফায়ার ইকুয়েপমেন্টস সরিয়ে ফেলেছে কিংবা নষ্ট হয়েছে, ভবন সম্পর্কে মিথ্যে তথ্য দিয়েছে আবার অনেকে মনে করে লাইসেন্স আছে আর কিছু দরকার নেই-এমন সব অভিযোগগুলো প্রমাণিত হলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়। আবার কখনো কখনো অনুমোদন বাতিলের মত বিষয়টিও প্রাধান্য পায়।
সকালের সময়: পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে কোন অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে গণমাধ্যমকর্মীরা কিভাবে সহযোগীতা পেতে পারে ?
মোঃ শাহাবুদ্দিন: যারা দেশের প্রচলিত আইন সম্পর্কে সচেতন না, যাদের মধ্যে আইন ভঙ্গ করার প্রবনতা রয়েছে, ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশনা অমান্যকারীদের এমন বিষয়গুলি যদি যৌক্তিকভাবে গণমাধ্যমকর্মীরা তুলে ধরেন কিংবা ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরকে অবহিত করেন সেক্ষেত্রে অবশ্যই দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
সকালের সময়: দৈনিক সকালের সময়ের পক্ষ থেকে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
মোঃ শাহাবুদ্দিন: আপনাকেও ধন্যবাদ।
মো: শাহাবুদ্দিন
সিনিয়র স্টেশন অফিসার
ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর।
মিরপুর, ঢাকা।
এমএসএম / এমএসএম

বিএসএমএমইউয়ে নতুন নামের ব্যানার, বাদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব

মেডিকেলে থাকছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা, যাচাই-বাছাই ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত

ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৫৭ রোগী

ডেঙ্গুতে ঢাকায় কর্মক্ষম মানুষের মৃত্যু বেশি

ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ৮৮৮

বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষায় অশনি সংকেত অটোমেশন; ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা

ইডেন মাল্টি কেয়ার হাসপাতালের বিরুদ্ধে অপচিকিৎসার অভিযোগ

ক্যানসার রহস্যের জট খোলার নতুন ‘সূত্রের’ সন্ধান মিলেছে

বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির ইসি গঠনে সাত সদস্য বিশিষ্ট সার্চ কমিটি

বিশ্ব হার্ট দিবস ২০২৪ উদযাপন করলো এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা

আঘাতপ্রাপ্ত রেটিনায় চোখের চিকিৎসা ও সম্ভাবনা

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট
