এক্স-রে করার সময় সতর্ক থাকবেন যেসব বিষয়ে

চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক যুগান্তকারী আবিষ্কার হল রেডিওগ্রাফি। এক্স-রে, গামা-রে এবং তড়িৎ চৌম্বকীয় রশ্মি ব্যবহার করে দেহ কিংবা কোনও পদার্থকে সুচারুভাবে দেখার ক্ষমতা দেয় এই রেডিওগ্রাফি। ১৮৯৫ সালের ৮ নভেম্বর উইলিয়াম রন্টগেন এক্স রে-এর মাধ্যমে রেডিওগ্রাফির সূচনা করেন। শরীরের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নির্ণয়ে এক্স-রে অন্যতম উপায়। হাড় ভেঙে যাওয়া থেকে শরীরের অভ্যন্তরে কোনও অসামঞ্জস্যতা থাকলে তা নির্ণয় করা যায় এক্স-রের মাধ্যমে। এক্স-রের মাধ্যমে ডাক্তার কোন প্রকার কাটা-ছেড়া ছাড়া খুব সহজেই শরীরের ভেতর দেখতে পারেন এবং এর মাধ্যমে রোগ সনাক্ত করতে পারেন। এক্স-রে করার আগে কিছু বিষয় জানা উচিত। এতে করে এক্স-রের ক্ষতিকারক দিক সর্ম্পকে সর্তক হওয়া যায়। এক্স-রের কার্যকারীতা এবং সতর্কতা বিষয়ে কথা বলেছেন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেডিওলজী এন্ড ইমেজিং ডিপার্টমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মোস্তাক আহমেদ জালালী। সাক্ষাতকার নিয়েছেন দৈনিক সকালের সময়ের প্রতিবেদক নিশাত শাহরিয়ার।
সকালের সময়: এক্স-রে বলতে কি বোঝায় ?
ডা. মোস্তাক আহমেদ: এক্স-রে এক প্রকারের তাড়িত চৌম্বক বিকিরণ। এক্স-রে সবচেয়ে বেশি যে কারণে পরিচিত সেটা চিকিৎসা ব্যবস্থার কল্যাণে। মানব শরীরের ত্বক ভেদ করে শরীরের অভ্যন্তরীণ ভাগের ছবি প্রকাশের মাধ্যমে রোগ শনাক্তকরণে সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে সহজ ও জনপ্রিয় মাধ্যম হ”েছ এক্স-রে। উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে বর্তমানে এক্স-রের কাজের পরিধি আরও বেশি বাড়ানো হয়েছে। ক্যান্সার কোষ ধ্বংসের কাজেও বর্তমানে সফলভাবে ব্যবহার হ”েছ এক্স-রে। এক্স-রে কে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। কোমল এক্স-রে এবং কঠিন এক্স-রে। কোমল এক্স-রে অপেক্ষাকৃত কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলো বিকিরণ করে। এর পরিমাণ হতে পারে সর্বো”চ ১০ ন্যানোমিটার। আলোর বিভিন্ন স্তরের মাঝে এর অব¯’ান তাড়িতচৌম্বক এবং অতিবেগুনীর মাঝামাঝি। অন্যদিকে কঠিন এক্সরের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ১০০ পিকোমিটার। এর অব¯’ান তাড়িত চৌম্বক থেকে গামা রশ্মির মাঝামাঝি।
সকালের সময়: এক্স-রে করার সময় কোন কোন বিষয়গুলির প্রতি সতর্ক থাকতে হবে ?
ডা. মোস্তাক আহমেদ: এক্স-রে করার সময় বেশ কিছু বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। তবে সবার আগে মনে রাখতে হবে, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী এক্স-রে করতে হবে। এক্স-রে করার সময় ঢোলা-ঢালা কাপড় পড়া উচিত যাতে করে এক্স-রে করার সময় পজিশন নিতে সুবিধা হয়। এতে করে ব্যাক পেইন হবার সম্ভাবনাও কমে যায়। শরীরে যদি কোন জুয়েলারি বা মেটাল আইটেম থাকে তাহলে খুলে ফেলতে হবে। কারণ এগুলো দ্বারা এক্স-রে বিম বাঁধা পায়। রোগীর শরীরে যদি কোন সার্জারীর কারণে মেটাল বডি থাকে তাহলে টেকনোলজিস্টকে তা অবশ্যই জানাতে হবে। রোগী যদি প্রেগন্যান্ট হন বা প্রেগন্যান্ট হয়েছে এরকম অনুভূতি হয় তবে এক্স-রে করার আগে ডাক্তারকে জানাতে হবে। যদি এক্স-রে করতেই হয় তবে “পেলভিক রিজন” এর উপর “শিল্ড” ব্যবহার করতে হবে এবং এক্সপোজার ডোজ কমিয়ে দিতে হবে। রোগী যদি বা”চা হয় তবে চেষ্টা করতে হবে একবারেই যাতে ফিল্ম নেয়া যায়। কোন ভাবেই একদিনে ৩ বারের অধিক “এক্সপোজ” দেয়া উচিত নয়। কিছু কিছু এক্স-রের ক্ষেত্রে “কনট্রাস্ট ডাই ” ব্যবহার করতে হয়। এগুলো রোগীকে মুখে খাওয়ানো হয়। ইনজেক্ট করা অথবা “এনিমা” হিসেবে দেয়া হয়।“কনট্রাস্ট ডাই” দেয়ার রোগীর সামান্য অস্বস্তি বোধ হতে পারে। ল্যাব থেকে এক্স-রে রিপোর্ট নেয়ার সময় এক্স-রে ফিল্মের আইডি ও রোগীর আইডি দেখে নিতে হবে। নরমালি এক্স-রের কোন পাশ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এলার্জি সেনসিটিভ হবার কারণে চামড়া লাল হয়ে যেতে পারে। এক্স রে ২ ভাবে করা হয়। যেমন- রিপোর্ট সহ এবং রিপোর্ট ছাড়া। তাই এক্স রে করার আগে এই বিষয়টি জেনে নিতে হবে।
সকালের সময়: এক্স-রে কোন কোন কাজে ব্যবহার করা হয় ?
ডা. মোস্তাক আহমেদ: এক্স-রের বিভিন্ন ধাতুর প্রতি ভেদ্য ক্ষমতার কারণে বিভিন্ন পরীক্ষার কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। যে কোনো গাঁথুনিতে ফাটল কিংবা অসামঞ্জস্যতা নির্ণয়ে এক্স-রে ইমেজিং গুরুত্বের সাথে মূল্যায়ন করা হয়। রেডিয়েশনের প্রভাবে সহজেই যে কোনো গঠনের সূক্ষ ফাটল কিংবা অসামঞ্জস্যতা ফিল্ম বা ডিটেক্টরে স্পষ্ট ছবি তৈরি করে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক্স-রে এই পদ্ধতিতেই যুগের পর যুগ রোগ নির্ণয় করে আসছে। এছাড়া এক্স-রে যাত্রাপথের নিরাপত্তার কাজেও ব্যাপক জনপ্রিয়। কার্গো, লাগেজ কিংবা স্বয়ং যাত্রীর শরীরে ইলেকট্রনিং ইমেজিং এর ম্যাধমে রিয়েল টাইম ভিজুয়াল তৈরি করে যার ফলে তৎক্ষণাৎ অবৈধ ব¯‘র সন্ধান পাওয়া সম্ভব। তবে এক্স-রে ইমেজিংয়ের সবচেয়ে বড় ব্যবহার দেখা যায় চিকিৎসাক্ষেত্রে। শরীরের টিস্যুর মাঝ থেকে হাড়ের কিংবা অভ্যন্তরীণ গঠনের ইমেজিং এর মাধ্যমে এক্স-রে চিকিৎসকদের রোগ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করে।
সকালের সময়: এক্স-রে থেরাপি এবং এর প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাই।
ডা. মোস্তাক আহমেদ: সাধারণ রেডিয়েশন থেরাপি ক্যান্সার আক্রান্ত কোষের ডিএনএ ভাঙ্গনের মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করে। তবে এর ফলে অনেক ক্ষেত্রেই সু¯’ কোষের ডিএনএ ধ্বংস হবার সম্ভাবনা থাকায় বর্তমানে বিজ্ঞানীরা এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যা”েছন। পর্যাপ্ত ব্যবহারের মাধ্যমে এটি মানবশরীরের যে কোনো কোষকে ধ্বংস করতে সক্ষম। এক্স-রের ব্যবহারে ক্যান্সার আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে আবার ক্যান্সার প্রতিরোধেও এক্স-রে দারুণ কার্যকরী। ক্যান্সার টিউমারে এক্স-রে নিক্ষেপণের মাধ্যমে ক্যান্সারের অস্বাভাবিক কোষ সহজে ধ্বংস করা সম্ভব। পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় তরঙ্গদৈর্ঘ্য যত ছোট হয় পদার্থ ভেদ করার ক্ষমতা তত বেশি হয়। এক্স-রে বা রঞ্জন রশ্মির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ১০-৮মিটার থেকে ১০-১১ মিটারের কাছাকাছি। যা আলোর অনেক কম। সাধারণ চোখে দৃশ্যমানও নয়। শরীরের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নির্ণয় করতে এক্স-রে বর্তমানে একমাত্র উপায়। হাড় ভেঙে যাওয়া থেকে শরীরের অভ্যন্তরে কোনও অসামঞ্জস্যতা থাকলে তা নির্ণয় করা যায়। এক্স রে’র যেমন অনেক উপকারি দিক আছে, তেমনি এর ক্ষতিকর দিকও আছে। বেশি এক্স-রে শরীরে প্রবেশ করলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।রেডিয়েশন থেরাপি ক্যানসার আক্রান্ত কোষের ডিএনএ ভাঙনের মাধ্যমে ক্যানসার কোষ ধ্বংস করে থাকে। কিš‘ এই রেডিওগ্রাফির ফলে আবার সু¯’ কোষের ডিএনএ ধ্বংস হবার সম্ভাবনাও থাকে।
সকালের সময়: দৈনিক সকালের সময়ের পক্ষ থেকে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ডা. মোস্তাক আহমেদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।
ডা. মোস্তাক আহমেদ জালালী
সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
রেডিওলজী এন্ড ইমেজিং ডিপার্টমেন্ট
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল,
মহাখালী, ঢাকা।
এমএসএম / এমএসএম

বিএসএমএমইউয়ে নতুন নামের ব্যানার, বাদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব

মেডিকেলে থাকছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা, যাচাই-বাছাই ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত

ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৫৭ রোগী

ডেঙ্গুতে ঢাকায় কর্মক্ষম মানুষের মৃত্যু বেশি

ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ৮৮৮

বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষায় অশনি সংকেত অটোমেশন; ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা

ইডেন মাল্টি কেয়ার হাসপাতালের বিরুদ্ধে অপচিকিৎসার অভিযোগ

ক্যানসার রহস্যের জট খোলার নতুন ‘সূত্রের’ সন্ধান মিলেছে

বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির ইসি গঠনে সাত সদস্য বিশিষ্ট সার্চ কমিটি

বিশ্ব হার্ট দিবস ২০২৪ উদযাপন করলো এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা

আঘাতপ্রাপ্ত রেটিনায় চোখের চিকিৎসা ও সম্ভাবনা

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট
