ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
দালাল চক্রের দৌরাত্মে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত

চিকিৎসা সেবায় দেশের অন্যতম নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সারাদেশ থেকেই উন্নত চিকিৎসার জন্য এ হাসপাতালে আসেন রোগীরা। কিন্তু গ্রামের সাধারণ রোগীরা এ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য এসে প্রথমেই দালালদের খপ্পরে পড়ে যান। এতে চিকিৎসা নেয়ার আগেই আর্থিক ক্ষতিসহ নানা হয়রানির শিকার হন রোগীর সঙ্গে আসা আত্নিয়স্বজনরা। এখানে ভাল চিকিৎসা হবে না বলে অনেক সময় রোগিকে পরিচিত কোনো ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেয় দালাল চক্রটি। এরপর ভাল চিকিৎসা না পেয়ে শেষ ভরসার স্থল আবারও আসতে হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এসব কাহিনী শুনে হতভম্ব হয়ে দালাল চক্রের অবসান চান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তাদের মতে, এহেন পরিস্থিতিতে দেশের স্বনামধন্য এ হাসপাতালটির কেবলই দূর্নাম হচ্ছে।
সূত্র মতে, দেশের অন্য যে কোনো হাসপাতালে যেসব রোগের চিকিৎসা করানো সম্ভব হয় না, সেসব রোগের চিকিৎসা সম্ভব হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এমনকি বিশেষায়িত হাসপাতালের রোগীদের অবস্থা যখন সঙ্কটাপন্ন, তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে যায় রোগী ও রোগীর স্বজনদের শেষ ভরসা। সারাদেশ থেকে আসা রোগীদের সব ধরনের রোগের চিকিৎসা সেবা দেয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। বছরের ৩৬৫ দিন এ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা সবার জন্য খোলা থাকে। সাধারণ জ্বর, সর্দি, কাশি হোক বা জটিল যে কোনো রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
'শয্যা খালি নেই' বলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কোন রোগীকে পাঠানো হয় না অন্য কোনো হাসপাতালে। অনেকে অন্য হাসপাতাল ঘুরে ভালো চিকিৎসা না পেয়ে শেষ আশ্রয় খুঁজেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দেশের সব হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হলেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাওয়া যায় সঠিক চিকিৎসা। এ ভরসায় সাধারণ রোগী থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত ও সামর্থবান রোগী ও রোগীর স্বজনেরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের এ উদারতার বিপরীতে হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনদের ঘিরে তৈরি হয়েছে একাধিক অসাধু চক্র। যে চক্রের সাথে জড়িত আছে কতিপয় অসাধু চিকিৎসক, ওয়ার্ডবয়, আনসার সদস্যসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তি। এ চক্রের সদস্যদের প্রথম টার্গেট বা লক্ষ্য থাকে গ্রাম থেকে আসা নতুন রোগী ও মফস্বল শহর থেকে ঢাকায় আসা রোগীর স্বজন। তারা রোগী ও রোগীর স্বজনদের অজ্ঞতার সুযোগে 'সঠিক পরামর্শদাতা হিসেবে পাশে দাঁড়ায়। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কখনো রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যায় অন্য বেসরকারি হাসপাতালে। কখনো রোগীর স্বজনদের নানা কিছু বুঝিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর জন্য দেখিয়ে দেন অন্য হাসপাতাল। বছরের বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় এসব খবর ।
এই কতিপয় অসাধু চক্রের কারণে থামছে না ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনদের ভোগান্তি। গত ৩০ সেপ্টেম্বর, শনিবার রাত ১২ টায় সরেজমিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে একই চিত্র। এ প্রতিবেদকের দৃষ্টিতেও ধরা পড়েছে দায়িত্বরত আনসার ও বহিরাগত দালাল ও চিকিৎসকদের সহায়তায় নানা অনিয়মের চিত্র।
রাত ১২ টায় দেখা যায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় সবগুলো প্রবেশদ্বার বন্ধ। শুধুমাত্র জরুরি বিভাগের প্রবেশদ্বার খোলা। রাত বারোটায় জরুরি বিভাগের প্রবেশদ্বার বাদে সবগুলো প্রবেশদ্বার যেখানে বন্ধ, সেখানে বহিরাগতদের হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করতে পারার কথা নয়। সরেজমিনে দেখা যায়- আনসার সদস্যরা কিছুক্ষণ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন। কিছুক্ষণ পর দেখা যায়, তারা আর দায়িত্ব পালন করছেন না। প্রবেশদ্বারে দায়িত্বপালন করা আনসার সদস্যদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে সহজেই "প্রবেশ পাশ' ছাড়াই বহিরাগতরা ঢাকা মেডেকেল কলেজ হাসপাতালে ঢুকে পড়ছে। এ সুযোগে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে অসাধু চক্র। এই চক্রের কেউ করছে দালালি, কেউ করছে চুরি। রাত সাড়ে বারোটায় হাসপাতালের গাইনি ও শিশু বিভাগের ২১১ ও ২১২ নং ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, একজন নারী চিকিৎসক একজন রোগীর স্বজনের সাথে অসদব্যবহার করছে। ঠিক কি কারণে অসৈজন্য আচরণ করলেন চিকিৎসক? বোঝা গেল না। জরুরি চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনদের যে পরীক্ষা- নীরিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, দালাল চক্রের সদস্যরা স্বজনদের সহযোগিতা করার নাম করেই নিয়ে যাচ্ছে নির্ধারিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে।
এ প্রতিবেদকের চোখে আরও একটি বিষয় দেখা যায়, হাসপাতালের যেসব কর্মীদের পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) আছে তারা পরিচয়পত্রটি শাটের ভেতরে ঢুকিয়ে রেখেছেন। গলায় শুধু ফিতা দেখা যাচ্ছে, যেখানে লেখা- ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এতে বোঝার কোনো উপায় নেই, কে হাসপাতালের কর্মী আর কে বহিরাগত দালাল? এর কিছুক্ষণ পরেই দেখা গেল শিশুসহ রোগীর স্বজনরা বেরিয়ে গেলেন। কেন চলে যাচ্ছেন ? প্রশ্ন করা হলে রোগীর স্বজন বলেন, 'ভর্তি নেয় নাই, কারণ, সিট খালি নাই। জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন, তাই রোগীর স্বজনরা ছুটে চলছেন অন্য হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। তাই বেশি কথা বলার সুযোগ হয়নি। অসুস্থ শিশুকে নিয়ে এক প্রকার তাড়াহুড়ো করে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেলেন তারা। অসাধু চক্রের সদস্যরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রোগী নিয়ে যায় ঢাকার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে। এমন খবর অনেকইে পড়েছেন গণমাধ্যমে। মধ্যরাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসা নিতে আসা রোগীকে চিকিৎসা না দিয়ে সিট খালি নেই' বলে হাসপাতালে ভর্তি না নেওয়ার বিষয়টি অসাধু চক্রের সদস্যদের কাজ কি না? যাচাই করা সম্ভব হয়নি। হয়তো এটিও তেমন একটি ঘটনা। এরপর এক স্বজনকে দেখা গেল অন্তঃসত্ত্বা রোগীকে নিয়ে যাচ্ছে মডার্ণ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। কথা বলে জানা গেল, সেখান থেকে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা- নিরীক্ষা করিয়ে অন্তঃসত্ত্বা এই রোগীকে আবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। এরপর আনসারদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একই আনসার সদস্য দীর্ঘদিন একই ওয়ার্ডে থাকার কারণে দালাল চক্রদের সাথে তাদের সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। কৌশলে তারা রোগীর স্বজনদের মাঝে মাঝে ওয়ার্ড থেকে বের করে দিচ্ছেন। চিহ্নিত দালালদের বের না করে তাদেরকের সহোযোগিতা করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আনসার সদস্য প্রতিবেদককে বলেন, দেখেন ভাই, এই হাসপাতালে সাংবাদিক, পুলিশ, র্যাব, ডিবি সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আসা-যাওয়া করে। সবাই সব কিছু জানে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও জানে। তারা চাইলে ২৪ ঘণ্টা লাগবে না ১২ ঘণ্টায় হাসপাতালের পরিবেশ স্বাভাবিক হবে।
Sunny / Sunny

বিএসএমএমইউয়ে নতুন নামের ব্যানার, বাদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব

মেডিকেলে থাকছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা, যাচাই-বাছাই ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত

ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৫৭ রোগী

ডেঙ্গুতে ঢাকায় কর্মক্ষম মানুষের মৃত্যু বেশি

ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ৮৮৮

বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষায় অশনি সংকেত অটোমেশন; ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা

ইডেন মাল্টি কেয়ার হাসপাতালের বিরুদ্ধে অপচিকিৎসার অভিযোগ

ক্যানসার রহস্যের জট খোলার নতুন ‘সূত্রের’ সন্ধান মিলেছে

বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির ইসি গঠনে সাত সদস্য বিশিষ্ট সার্চ কমিটি

বিশ্ব হার্ট দিবস ২০২৪ উদযাপন করলো এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা

আঘাতপ্রাপ্ত রেটিনায় চোখের চিকিৎসা ও সম্ভাবনা

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট
