নীতি নৈতিকতা মানছে না ঢামেক চিকিৎসক রাজীব

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি এন্ড অবস বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান রাজীব ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অনৈতিকভাবে সি ক্যাটাগরির একটি ব্লাড ব্যাংক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীদের পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, গাইনি বিভাগের এ চিকিৎসক রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহিঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সাধারণ রোগীদের তাঁর ব্যক্তিগত ভিজিটিং কার্ড দিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তাঁর ব্যক্তিগত চেম্বারে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনাপত্রের সাথে ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনাপত্র প্রদান করেন তিনি। তাঁর ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনাপত্রে আবার ঢাকার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লোগো ও সিল ব্যবহার করেন। সেই সাথে যাবতীয় পরীক্ষা-নীরিক্ষার জন্য যেতে বলেন এ্যাকটিভ ব্লাড ব্যাংক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।
এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ইতোপূর্বে বহিঃবিভাগের গাইনি বিভাগে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- রোগীদের হাতে ডা. মাহবুববুর রহমান রাজীবের ভিজিটিং কার্ড ও এ্যাকটিভ ব্লাড ব্যাংক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ফাইল। একাধিক রোগী ও রোগীর স্বজনের হাতে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ফাইল দেখে রোগীর স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ডা. রাজীব ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্ববার দিয়ে পরবর্তীতে যোগাযোগ করতে বলেন। আর পরীক্ষা করাতে বলেন এ্যাকটিভ ব্লাড ব্যাংক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। ঢাকার কেরাণীগঞ্জ থেকে আসা বিপুলা খাতুন নামে রোগীর এক স্বজনকে এ্যাকটিভ ব্লাড ব্যাংক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ফাইল আপনার হাতে কেন? এমন প্রশ্ন করা হলে ওই স্বজন বলেন, পরীক্ষার জন্য এ্যাকটিভ ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে যেতে বলেছে ডাক্তার। এ সময় রোগী অভিযোগ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থেকে পরীক্ষা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু ডা: রাজীব এ্যাকটিভ ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকেই পরীক্ষা করাতে বলেন। প্রতিবেদক ওই রোগীর কাছে দেয়া ভিটিটিং কার্ড ও এ্যাকটিভ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ফাইলের ছবি তুলেন। রোগীর কাছ থেকে ছবি তুলে নেয়া ভিজিটিং কার্ডে স্পষ্ট দেখা যায় ডাঃ মাববুবুর রহমান রাজীব এ্যাকটিভ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দুপুর ২ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত সময়ে বসেন। এরপর এই প্রতিবেদক বেশ কয়েকজন রোগী ও রোগীর স্বজনদের সাথে কথা বলেন ও ছবি ধারণ করেন। প্রত্যেকের হাতেই ছিলো এ্যাকটিভ ব্লাড ব্যাংক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ফাইল।
এ বিষয়ে ডা. রাজীবের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে বলেন, ভিজিটিং কার্ড রোগীরা চেয়ে নেন। এছাড়া তিনি কখনোই এ্যকটিভ ব্লাড ব্যাংক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রোগী পাঠান না। কার্ডে লেখা থাকলেও তিনি এ্যাকটিভ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বসেন না। তিনি বলেন, রোগীরা যেকোনো যায়গা থেকেই পরীক্ষা করতে পারেন। তবে কোনো রোগী যদি জিজ্ঞাসা করে কোথায় পরীক্ষা করবো? সেক্ষত্রে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে পরীক্ষা করতে বলি। ঢাকা মেডিকেল কলেজে যদি পরীক্ষা করা না যায় সেক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ অথবা বারডেম থেকে পরীক্ষা করে নিয়ে আসতে বলি। অথচ বাস্তব চিত্র ছিলো সম্পূর্ন ভিন্ন। বহিঃবিভাগে আসা রোগীরা কম খরচের জন্যই সারাদেশ থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসে চিকিৎসা সেবা নিতে। রোগী, রোগীর স্বজনদের আর্থিক সংকটের জন্যই তাঁরা বেসরকারি বা ব্যক্তিগতভাবে ডাক্তারদের চেম্বারে যান না। আর পরীক্ষার জন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে গুনতে হয় ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি টাকা।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসন বিভাগের কর্মকর্তা রেজাউল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে ডা. রাজীবের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসেনি। এর বেশি মন্তব্য করতে তিনি রাজি হননি। সরাসরি হাসপাতালের পরিচালকের সাথে কথা বলতে বলেন। এই প্রতিবেদক আরও দেখতে পায় ডা. রাজীবের ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনাপত্র আছে যেখানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নাম ও লোগো ব্যবহার করা। সেখানে লাল চিহ্নিত করে লেখা ‘এই চিকিৎসাসেবা সম্পূর্ণ ফ্রি’ এরপর মোবাইল নাম্বার দেয়া আছে। সেই সাথে ব্রাকেট দিয়ে লেখা ‘মাগরিবের নামাজের পর’। অর্থাৎ ডা. মাহবুবুর রহমান রাজীব হাসপাতালের বহিঃবিভাগে বসেই তিনি তাঁর ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনাপত্র ব্যবহার করছেন। আর সন্ধ্যার পর মোবাইলে যোগাযোগ করতে বলছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো: নাজমুল হক এর সাথে প্রথমে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সমস্ত তথ্য প্রমাণ না জেনে কোনো মন্তব্য করতে পারব না। তিনি আরও বলেন ডা. মাহবুবুর রহমান রাজীব একজন পুরস্কার প্রাপ্ত চিকিৎসক। গাইনী বিভাগে মহিলা চিকিৎসকেরা সেবা দিয়ে থাকে। তবে ডা. রাজীব একজন পুরষ ডাক্তার হিসেবে সুনামের সাথে রোগীদের সেবা দিয়ে আসছেন। এরপর এই প্রতিবেদক প্রথমে হোয়াটসঅ্যাপে তথ্য প্রমাণ পাঠান। এতে তিনি কোন উত্তর দেননি। পরবর্তীতে সরেজমিনে গিয়ে পরিচালকের সাথে দেখা করেন তথ্য প্রমানসহ। ডা. রাজিবের ব্যক্তিগত ভিজিটিং কার্ড দিয়ে রোগী তাঁর চেম্বারে নিয়ে আসছে এমন অভিযোগের মন্তব্য জানতে চাওয়ায় পরিচালক বলেন, যেকোনো রোগী চাইলে একজন ডাক্তারের ভিজিটিং কার্ড নিতে পারেন, তাঁর চেম্বারেও যেতে পারেন। রোগীকে এ্যাকটিভ ব্লাড ব্যাংক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে পরিচালক বলেন, রোগীরা চাইলে যেকোনো জায়গা থেকেই পরীক্ষা করাতে পারে। এটা রোগীর এক ধরনের স্বাধীন ইচ্ছা। তবে রোগী যদি জিজ্ঞাসা করে কোথায় পরীক্ষা করবো? সেক্ষেত্রে রোগীদের সব রকম পরীক্ষার জন্য প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকেই পরীক্ষা করানোর নিয়ম। যদি কোনো যন্ত্রপাতি সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে রোগীদের বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ অথবা বারডেম থেকে পরীক্ষা করানোর জন্য বলা হয়ে থাকে।
এরপর ওই প্রতিবেদক ডা. রাজীবের ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনাপত্রে ঢাকা মেডিকেল কলেজের লোগো ব্যবহার করা ছবি দেখালে পরিচালক বলেন, ডা. রাজীব এটা করতে পারেন না। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনাপত্র ছাড়া ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনাপত্র দিতে পারেন না কোনো চিকিৎসক। এছাড়াও হাসপাতালের বাইরে চিকিৎসকের চেম্বারে যে ব্যবস্থাপনাপত্র দিবে সেটাতে ঢাকা মেডিকেলের কোনো লোগো ব্যবহার করা যাবে না বলে মন্তব্য করেন। এরপর এই প্রতিবেদক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. মোহাম্মদ হাবিবুল আহসান তালুকদার এর সাথে দেখা করে তথ্য প্রমান দেখালে তিনি বলেন- ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান রাজিব যেহেতু একজন সরকারি কর্মকর্তা এবং সরকারি একটি হাসপাতালে বসে তাঁকে রোগী দেখতে হয়, সেক্ষেত্রে সরকারি একটি হাসপাতেলে বসে ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার উল্লেখ করে অন্য হাসপাতালে বা ব্যক্তিগত চেম্বারে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা সম্পূর্ণ অনৈতিক। এটি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি শুধু ডাক্তার রাজিব বা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য নয়, বাংলাদেশের যে কোন সরকারি হাসপাতাল ও সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের জন্য প্রযোজ্য।
Sunny / Sunny

বিএসএমএমইউয়ে নতুন নামের ব্যানার, বাদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব

মেডিকেলে থাকছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা, যাচাই-বাছাই ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত

ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৫৭ রোগী

ডেঙ্গুতে ঢাকায় কর্মক্ষম মানুষের মৃত্যু বেশি

ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ৮৮৮

বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষায় অশনি সংকেত অটোমেশন; ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা

ইডেন মাল্টি কেয়ার হাসপাতালের বিরুদ্ধে অপচিকিৎসার অভিযোগ

ক্যানসার রহস্যের জট খোলার নতুন ‘সূত্রের’ সন্ধান মিলেছে

বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির ইসি গঠনে সাত সদস্য বিশিষ্ট সার্চ কমিটি

বিশ্ব হার্ট দিবস ২০২৪ উদযাপন করলো এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা

আঘাতপ্রাপ্ত রেটিনায় চোখের চিকিৎসা ও সম্ভাবনা

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট
