জয়পুরহাটের কালাইয়ে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা অনুষ্ঠিত

প্রতি বছরের ন্যায় এবারও নবান্ন উপলক্ষে জয়পুরহাটের কালাইয়ে বসেছে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। এ উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থাকা এই এলাকার জামাই-মেয়ে, ইষ্টি-কুটুমরা আসেন এখানকার স্বজনদের বাড়ি বাড়ি। মেলা থেকে সেরা মাছ কিনে জামাইরা নিয়ে যান শ্বশুরবাড়িতে। তাই এ মেলাকে জামাই মেলাও বলা হয়ে থাকে।
ভোরের হিমে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় এখনই শীতের আমেজ। ঘন কুয়াশায় খানিক দূরের দৃশ্য ঝাপসা। এর মধ্যেই কালাই-মোকামতলা মহাসড়কের পাশে কালাই পৌরসভার পাঁচশিরা বাজার থেকে মাছ ব্যবসায়ীদের কন্ঠে ভেসে আসছিল, ‘মাছ...ভাই...,বড়..বড় মাছ..,পুকুর, দিঘী ও নদীর মাছ। বাঁচা মাছ, খুব স্বাদের মাছ, দেখে যান, নিয়ে যান, এ মাছ ফুরাইলে আর পাবেনা ভাই...। ৩ থেকে ১৮ কেজির কাতলা, রুই, মৃগেল, ব্রিগেড, সিলভার মাছ। এভাবেই বলছিলেন তারা। সেখানে সুন্দর করে সাজানো কাতলা, রুই, মৃগেল, চিতল, গ্রাসকার্প, কার্ফু, কালবাউশ, ব্রিগেড, সিলভার কার্পসহ হরেক রকমের মাছ। সেখানে ভোর থেকে বছেসে সারি সারি মাছের দোকান। চলছে হাঁকডাক ও দরদাম। তিন কেজি থেকে শুরু করে ১৮ কেজি ওজনের বড় মাছ। মাছের আকার অনুযায়ী প্রতি কেজি মাছ ২শ ৫০ থেকে ৯শ টাকা কেজি বিক্রি হ”েছ। ক্রেতারাও ব্যাপক উৎসাহের সঙ্গে কিনছেন ঐসব মাছ। আবার দেখতে এসেছেন অনেকেই।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও শনিবার জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের পাঁচশিরা বাজারে নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে বসেছে মাছের মেলা। তবে এই মাছের মেলায় শুধুই মাছ কেনার বিষয় নয়, আছে একধরনের জামাই-মেয়েদের কেনার প্রতিযোগিতা। কোন জামাই কত বড় মাছ কিনলেন, সেটাই আসল বিষয়। প্রতিযোগিতায় নীরব অংশগ্রহণ করে শ্বশুরেরা। এ অগ্রহায়ণ মাসে নবান্ন উৎসব উপলক্ষে বসেছে উপজেলার পাঁচশিরা বাজারে প্রায় ঢের যুগের এই মাছের মেলা। মেলায় অংশ নেন উপজেলার মাত্রাই, উদয়পুর, পুনট, জিন্দারপুর, আহম্মোবাদ ইউনিয়ন ও কালাই পৌরসভার শতাধিক গ্রাম-মহল্লার মানুষেরা। এই মেলা কেন্দ্র করে ঘরে ঘরে এ উৎসবকে ঘিরে প্রতিটি বাড়িতেই মেয়ে-জামাইসহ স্বজনদের আগে থেকেই দাওয়াত দেওয়া হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তর থেকে শত..শত মানুষ উৎসব দেখতে আসেন। এ দিনটিকে ঘিরে এখানে দিনব্যাপী চলে মাছ কেনা ও বিক্রি করার উৎসব। কালাই পৌরসভার পাঁচশিরা বাজারে মাছ নিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। মেলায় উঠেছে বড় বড় সব মাছ। অর্ধশতাধিক দোকানে এসব মাছের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। দূর-দূরান্তর থেকে দলে দলে লোকজন মেলায় এসেছেন মাছ কিনতে। ক্রেতারা মাছের দাম হাকাচ্ছেন, কিনছেন, আবার কেউ কেউ সেলফি তুলতেও ব্যাস্ত। শুধু সেলফি তুলেই শেষ নয়। মাছ মেলার ছবি দিয়ে কেউ কেউ আবার ঝড় তুলছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও। এই মাছের পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্যের পসরা বসেছিল এই মেলায়। ক্রেতারা খালিহাতে ফিরছেন না কেউ। সবাই সামর্থ্য অনুযায়ী মাছ কিনে খুশিমনে বাড়ি ফিরছেন। মেলা উপলক্ষে আশপাশের গ্রাম-মহল্লায় বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। নাইওর এসেছেন মেয়ে ও জামাই। নিমন্ত্রণ করা হয়েছে আত্মীয়-স্বজনকেও। মেলা উপলক্ষে ওই যেন এলাকায় ঈদের আনন্দ বিরাজ করছিল। এই দিনটির জন্য পুরো বছর অপেক্ষায় থাকেন কালাই উপজেলাবাসি।
মেলার পাশের বেগুন গ্রামে বেড়াতে এসেছেন আজাদ। তিনি বলেন, বেগুন গ্রামে থেকে স্বামীকে নিয়ে মাছের মেলায় ঘুরতে এসেছেন। মেলাটির নাম আগেই থেকে জানি, কিন্তু আসা হয়না কখনো। মেলায় এসে বড় বড় মাছ দেখছি। অনেক আনন্দ লাগছে। ঘুরেফিরে মেলা থেকে স্বাদ ও সাধ্যের কথা মাথায় রেখে পছন্দের মাছটি কিনবেন বলে জানান তিনি।মেলায় মাছ কিনতে আসা জাহাঙ্গির আলম নামে এক জালাই বলেন, অন্য বছরের চাইতে এবার মাছের দাম একটু বেশী। তবে যাই হউক না কেন এই মেলা থেকে ১২ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ ১০হাজার টাকায় কিনে নিয়ে শশুর বাড়ি যাচ্ছি।
পাশের বাইগুনি গ্রামের বাসিন্দা তানজিল ইসলাম বলেন, প্রায় ঢের যুগের ঐতিহ্যবাহী মেলাটি যেমন মাছের জন্য বিখ্যাত, তেমনি এই এলাকায় ধান-আলুতেও ভরপুর থাকে। এ কারণে আশপাশের লোকজন মেলায় ছুটে আসে।এই মেলায় মাছ বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, মেলায় ছোট-বড় মিলে অর্ধশতাধিক মাছের দোকান বসেছে। মাছের মেলাতে বড় পুকুর, দিঘি ও নদী থেকে নানান জাতের বড় বড় মাছ সংগ্রহ করা হয়েছে। কাতলা, রুই, মৃগেল ব্রিগেড, সিলভার ৮শ’ থেকে ৯শ’ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে । আর মাঝারি আকারের মাছ ২৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে । অন্য বছরের তুলনায় এবার ক্রেতা বেশি। তাই মাছও বিক্রি হচ্ছে বেশি। দামও ছিল স্বাভাবিক।
সেখানে আরেক জন মাছ বিক্রেতা আহসান হাবীব বলেন, আমি প্রতিবছরই এ মেলায় মাছ বিক্রি জন্য আসি। বর্তমান সবজিনিসের দাম বৃদ্ধি, তবে মাছের বাজারে তুলনায় মাছের দাম বেশি হলেও সবাই আনন্দের সঙ্গে মাছ কিনছেন। এবার মাছ নিয়ে বিপাকে পড়তে হবেনা। প্রত্যেক বিক্রেতা অন্তত ৮ থেকে ১০ মণ করে মাছ বিক্রি করেন। তাছাড়া লাভও মোটামুটি হবে।
হাট ইজারাদারের পার্টনার ময়েন উদ্দিন বলেন, শুধু জয়পুরহাট নয় বিভিন্ন ডিস্ট্রিক্ট থেকে ব্যাপারীরা এ মেলায় মাছ এনে বিক্রি করেন। এবার মাছের বাজার স্বাভাবিক আছে এতে করে সবাই মাছ কিনতে পারবে।
কালাই পৌর মেয়র রাবেয়া সুলতানা বলেন, পাঁচশিরা বাজারে মাছের মেলায় উৎসবমুখর পরিবেশে মাছ কেনাবেচা হচ্ছে। এ মেলাকে ঘিরে আশেপাশের সকলে আনন্দিত। মেলা উপলক্ষে আশেপাশের গ্রামে চলে আনন্দ-উৎসব। লোকজন মেয়ে-জামাই ও অতিথি আপ্যায়নে বড়বড় মাছ কেনার জন্য মেলায় ভিড় করছেন। এর চাইতে সামনের বছরে যেন আরো ভালোভাবে মেলা উপহার দিতে পারি সে চেষ্টা করে যাবো।
কালাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িক্ত) আনোয়ার আলী জানান এই মেলাকে ঘিরে এলাকায় উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আর এই মেলাকে লক্ষ্যে করে ¯’স্থানীয় বড় মাছ ব্যবসায়ীরা ও মাছ চাষিরা বিভিন্ন এলাকা থেকে সপ্তাহ খানেক ধরে বড় বড় মাছ সংগ্রহ করে থাকেন।
এমএসএম / এমএসএম

কোটালীপাড়ায় শ্রেণিকক্ষে দুর্গন্ধে ২০ শিক্ষার্থী অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি-৮

টাঙ্গাইলে দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে দুদকের গণশুনানি অনুষ্ঠিত

মধুখালী বাজার ব্যবসায়ী পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু

অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়ার মিথ্যা বক্তব্যের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন - ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন

উল্টোপথে ট্রাক ধাক্কা দিল সিএনজিকে প্রাণ গেল দু’জনের

কোনাবাড়ীতে মুদি দোকান ও বাসা পুড়ে ছাই, ৩০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি

পারকি পর্যটন কমপ্লেক্সের কাজ ডিসেম্বরে শেষ হবে-পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন

ভূরুঙ্গামারীতে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছেন ডাক্তার মোঃ ইউনুস আলী

৩১ দফা বাস্তবায়ন ছাড়া রাষ্ট্রের উন্নয়ন সম্ভব নয়: মনোয়ার সরকার

যানজটের কবলে হাতহাজারী কাচারী সড়ক

বড়াইগ্রামে মডেল প্রেসক্লাবের আত্মপ্রকাশ, তরুণ সাংবাদিকদের নেতৃত্বে নতুন কমিটি

সন্দ্বীপে তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা দাবী ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টন
