ঢাকা বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট

শিশু হাসপাতালে নিউরোলজি সেন্টার একটি বড় অর্জন


তানভীর সানি  photo তানভীর সানি
প্রকাশিত: ২০-১১-২০২৩ দুপুর ১:৭

রোশ বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে প্রথমবারের মতো একটি নিউরোলজি সেন্টার তৈরি করছে। এটি বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট এর একটি বড় অর্জন বলে মনে করেন বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম। সম্প্রতি বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট এবং রোশ বাংলাদেশের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়েছে। চুক্তিতে রোশ বাংলাদেশের ইউরোপিয়ান কান্ট্রি ডিরেক্টর এবং বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের পরিচালক স্বাক্ষর করেন। দৈনিক সকালের সময়ের এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, দেশে শিশুদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য সবচেয়ে নির্বরযোগ্য সরকারের একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট। প্রতিষ্ঠানটি ধনী-গরিব উভয় শ্রেণির রোগীদের সমমর্যাদায় সুনামের সাথে সেবা দিয়ে আসছে। হাসপাতাল ও ইন্সিটিটিউট হওয়ায় এখান থেকে শিশু চিকিৎসার উপর উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে শিশু মেডিসিন ও সার্জিক্যাল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে শিশু চিকিৎসা সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালণ করছে। হাসপাতালটিতে রয়েছে বাংলাদেশের প্রথম একটি নিউমোনিয়া রিসার্চ সেন্টার ও রেস্পাইরেটরী আইসিইউ। এখানে আছে বাংলাদেশের অত্যাধুনিক ব্রঙ্কোস্কোপি মেশিন যার মাধ্যমে শিশুদের বুকের ভিতর থেকে এক্সিডেন্টালি ঢুকে যাওয়া কোনো অবাঞ্চিত বস্তু বের করা বা ফুসফুসের নিঃসরণ বের করে পরীক্ষা করে রোগ নির্নয় করা যায়। ইতোমধ্যে শিশু হাসপাতালে চালু হয়েছে জটিল রোগের চিকিৎসায়  স্টেম সেল থেরাপি। এসএমএ  এর একজন রোগী নবনি যে কিনা  ১৯ মাসের জীবন প্রত্যাশী তাকে ১ বছর যাবৎ রিচডিপ্লানের মাধ্যমে সেবা দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। যার এক একটি ইনজেকশনের দাম প্রায় ১০ লাখ টাকা। সেবাটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সরবরাহ করছে রোশ বাংলাদেশের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার এই শিশু হাসপাতাল। 


শিশু হাসপাতালের সুন্দর একটি একাডেমিক পরিবেশ আছে। যেখানে প্রতিদিন সকাল ও বিকাল উভয় সেশনে একাডেমিক ডিসকাশন হয়। হাসপাতালটিতে সারাদেশ থেকে যেসব শিক্ষার্থী আসে, তারা কমর্ফোটেবল পরিবেশে ভালোভাবে পড়াশোনা করতে পারে। এছাড়াও এখানে কনফারেন্স হয়, ওয়ার্কশপ হয়, সেমিনার হয় এতে তারা আপডেটেড পেডিয়েট্রিক নলেজ অর্জন করতে পারে এবং শিশুদের চিকিৎসা সেবায় তা প্রোয়োগ করতে পারে। 


পরিচালক আরো বলেন, বাংলাদেশে যত দুর্লভ রোগ আছে বিভিন্ন জায়গা থেকে রেফার হয়ে এখানে ভর্তি হতে আসে। শিশু হাসাপতালের ডায়াগনসিস ডিভিশনটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ কিন্তু এখানেও একটি সিটি স্ক্যান ও এমআরআই মেশিন নেই।  বাহির থেকে এই পরীক্ষাগুলো করে এনে তারপরে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। কিছু কিছু জেনেটিক ডিজিস আছে যেগুলো শিশু হাসপাতালেও চিকিৎসা করানো সম্ভব না। এই শিশু হাসপাতালে যে অপারেশন থিয়েটার আছে সেটি বাংলাদেশের একটা মডেল অপারেশন থিয়েটার। যেটি প্রায়ই সম্পূর্ণ হবার পথে। এত সুন্দর একটা অপারেশন থিয়েটার অনেক যায়গায়ই খুঁজে পাওয়া যাবে না। এখানে ২৪ ঘন্টা ইমার্জেন্সি পেডিয়েট্রিক সার্জারি ডিপার্টমেন্ট খোলা থাকে। যদি কোনো রোগী রাত ৩ টার দিকেও অ্যাপেন্ডিসাইডের ব্যাথা নিয়ে আসে তাহলে সকালের ভিতর দেখা যাবে তার অ্যাপেন্ডিসাইডের অপারেশন হয়ে গেছে। এখানে বিলম্ব করার কোনো সুযোগ নেই। সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও ডিজি হেলথের সহায়তায় এখানে একটি ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি সার্ভিস কেয়ার সেন্টার তৈরি করার পরিকল্পনা হয়ে গেছে। নকশা হয়ে গেছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে এটা বাস্তবায়ন হবে। আর এটি করতে পারলে ইমার্জেন্সি বিভাগ সুন্দরভাবে সাজানো যাবে। 


শিশু হাসপাতালে রোগীদের হয়রানীর বিভিন্ন খবর প্রায়ই প্রকাশিত হয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে। এ অভিযোগের উত্তরে হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হাসপাতালের সজ্জা সংকটই মূলত দায়ী। বাংলাদেশে শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট অটোমেশন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ পদ্ধতিতে রোগীরা ঘরে বসে পেমেন্ট করতে পারবে। হাসপাতালে আসতে হবে না। ঘরে বসে ডাক্তারের সিরিয়াল দিতে পারবে। এতে রোগীরা সুশৃংখলভাবে সেবাও পাবে এবং হাসপাতালের ভিড়ও কমে যাবে। 


রোগীরা যেন কোনভাবে হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে নজর রেখে সম্পূর্ণ আধুনিক, উন্নত সেবা দেয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট। হাসপাতালটির কিছু সংকট নিয়ে পরিচালক বলেন, আমাদের ডাক্তাররা এখানে অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করে যাচ্ছে। রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী বিছানার সংকট, আইসিইউ এর সংকট পিআইসিইউ এর সংকট, এনআইসিইউ এর সংকট এনআইসিইউ এর সংকট টা এখানে খুব বেশি প্রকট। এনআইসিইউ এর বেড আছে ১৮ টা। স্পেশাল কেয়ার বেবি ইউনিট ২টা মিলিয়ে ৫৮টা। হাসপাতালের ইমার্জেন্সী থেকে মুমুর্ষ নবজাতক রোগীই সবচেয়ে বেশি ফেরত যায়। প্রতিদিন রাত ৯টার পর এসব যায়গায় একটা বিছানাও খালি থাকে না। এটা আমাদের একটা অনেক বড় সংকট। আইসিইউ, এনআইসিইউ, এইচডিউ, পিআইসিউ, সিসিএনডি, কারডিয়াক আইসিউ, রেস্পাইরেটরী আইসিউ,  স্পেশাল কেয়ার বেবি ইউনিটসহ মোট ১০০টা বেড আছে এই হাসপাতালে। প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ৩০ জন মুমূর্ষ রোগী আমাদের অন্য সরকারি হাসপাতালে রেফার্ড করতে হয়। যেটা আমাদেরকে অনেক কষ্ট দেয়। যে রোগীগুলো ফেরত যায় তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নাম না জানা অনেক ক্লিনিকের দালাল চক্রের ক্ষপ্পরে পরে যায়। এইজন্যই ইমার্জেন্সি কমপ্লেক্স বা ওয়ান্সটপ ইমার্জেন্সী কেয়ার সেন্টার যদি করা যায় সেখানে ২০ টা অত্যাধুনিক ইমার্জেন্সী সুবিধাসহ বিছানা থাকবে। সেই বিছানাগুলোতে ইমার্জেন্সি কেয়ার পাবে এবং রোগীও দালাল চক্রের হাত থেকে কিছুটা রেহাই পাবে। আমরা চাচ্ছি অত্যাধুনিক সার্ভিস অরিয়েন্টেড শিশু হাসপাতাল  এবং এই শিশু হাসপাতালটি হবে সেন্টার এক্সিলেন্সী। সেই লক্ষ নিয়েই আমি কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়াও এখানে গরিব রোগীদের চিকিৎসা সেবা এবং বিনামূল্যে ঔষধ দেয়ার পাশাপাশি মায়েদের খাবারও দেয়া হয়। গরিব রোগীদের কোনো ঔষধ কিনতে হয় না, বিছানা ভাড়া লাগে না। এছাড়াও এখানে স্পেস এর সংকট আছে প্রচুর, ডাক্তারদের বসার জায়গা নেই। অ্যাসিসেটেন্ট প্রফেসরদের পর্যন্ত আমরা একটা রুমে বসার জায়গা দিতে পারি না। রেজিস্টারদেরও বসার জায়গা নেই। এই অল্প স্পেসে ৬৮১টা বিছানা। এতগুলো রোগীকে সেবা দেয়ার জন্য যে লজিস্টিক দরকার সেই লজিস্টিক এখানে নাই। আরেকটা সংকট হচ্ছে এখানে সুন্দর একটা অডিটোরিয়াম নেই। কনফারেন্স রুম নেই। হাসপাতালটির বিল্ডিং শত বছরের পুরোনো সেটা ভেঙ্গে উপর তলা থেকে পানি পরে। হাসপাতালের পাশেই আরেকটি বিল্ডিং আছে। বিল্ডিংটা অত্যন্ত জরাজীর্ণ এবং সেখানে ২য় তলা ও ৩য় তলায় পঙ্গু হাসপাতালের স্টাফরা থাকে নিচ তলা শিশু হাসপাতালের স্টাফরা ব্যাবহার করে। এতো নোংরা ওই জায়গাটা কখন যে ভেঙ্গে পরে অ্যাক্সিডেন্ট হয় জানি না। অলরেডি রাজউকের স্থাপনা বিভাগ থেকে বলে দিয়েছে ভবনটি রেট্রোফিকেশনের জন্য। এখানে রোগীদের অনেক অভিযোগ আছে। রোগীরা বেশি অভিযোগ করছে স্টাফদের ব্যবহারের। এখানে সিস্টারের অনেক সংকট আছে। অনেক রোগীদের অভিযোগ তারা যখন নার্সদের ডাক দেয় নার্সরা আসে না। আরও অভিযোগ আছে কিছু দুষ্ট চক্র রোগীদের প্রতারণা করার চেষ্টা করে। তবে যারা এই কাজগুলো করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে পরিবেশ স্বাভাবিক আছে। স্টাফ ও আনসার সদস্যরা তাদের যে যার জায়গা থেকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে। 


পরিচালক অধ্যাপক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শিশু হাসপাতালে ৬ দশমিক ২ একর জমি আছে কাগজে কলমে। কিন্তু বাস্তবে আমরা এর সবটুকু ব্যাবহার করতে পারছি না। নিটোরের পরিচালকের সাথে এর আগে অনেক মিটিং হয়েছে, কিন্তু আমরা এর সুরাহা করতে পারছি না। এছাড়াও কিছু কিছু বিভাগ আছে যেখানে দক্ষ জনবল পাইনা। যেমন  কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগ, রেডিওলজি বিভাগ এই সমস্ত বিভাগে দক্ষ জনবল পাচ্ছি না। এ বিষিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ এখানে কেউ আসতে চায় না সরকারি বেতন স্কেলে কারন এখানে কাজের প্রেশার অনেক বেশী। একজন কার্ডিয়াক সার্জন আছেন তাকে চুক্তিভিত্তিক অনেক বেশী টাকা বেতন দিয়ে রাখা হয়েছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা,  যদিও আগের চেয়ে এর অনেক উন্নতি হয়েছে কিন্তু এখনও সংকট আছে। মানুষের অভ্যাসও এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। আরেকটি বিষয় হচ্ছে অনেক দরিদ্র রোগী আসে তারা কেবিনে ভর্তি হয় যাদের সক্ষমতা খুবই কম। তারা ভর্তি হয়ে পড়ে যায় বিপদে। পরবর্তীতে তারা ভাড়া দিতে পারে না। এদের জন্য দরিদ্র ফান্ড থেকে সাহায্য করা হয়ে থেকে। এই দরিদ্র ফান্ড থেকে  ২৫ লাখ টাকার দান উঠেয়েছি। শিশু হাসপাতালকে পাবলিক হাসপাতালে ভেবে অনেক রোগীরা এখানে আসে, পরে দেখে যে এটা পাবলিক না। যদিও সরকারি একটা সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে একটা আইন হয়েছে। তবে এখন সরকার যদি দায়িত্ব নিয়ে প্রচুর ফান্ডিং করে সবকিছু যদি সরকার হাতে নেয় তাহলে আমরা এখানে পাবলিক হাসপাতালের  মতো খরচে কর্পোরেট হাসপাতালের মতো সার্ভিস দিতে পারবো বলে আশা রাখি।

Sunny / Sunny

বিএসএমএমইউয়ে নতুন নামের ব্যানার, বাদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব

মেডিকেলে থাকছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা, যাচাই-বাছাই ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত

ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৫৭ রোগী

ডেঙ্গুতে ঢাকায় কর্মক্ষম মানুষের মৃত্যু বেশি

ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ৮৮৮

বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষায় অশনি সংকেত অটোমেশন; ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা

ইডেন মাল্টি কেয়ার হাসপাতালের বিরুদ্ধে অপচিকিৎসার অভিযোগ

ক্যানসার রহস্যের জট খোলার নতুন ‘সূত্রের’ সন্ধান মিলেছে

বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির ইসি গঠনে সাত সদস্য বিশিষ্ট সার্চ কমিটি

বিশ্ব হার্ট দিবস ২০২৪ উদযাপন করলো এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা

আঘাতপ্রাপ্ত রেটিনায় চোখের চিকিৎসা ও সম্ভাবনা

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

পদত্যাগ করলেন স্বাস্থ্য সংস্কার কমিটির সভাপতি এম এ ফয়েজ