বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ জালিয়াতি সমিতির নজরে আনা যায় : অধ্যাপক মান্নান চৌধুরী

দৈনিক সকালের সময়ের সাথে একটি বিশেষ সাক্ষাতকারে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা এবং উপাচার্য দেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সনদ জালিয়াতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে সরকারি কর্তৃপক্ষকে আরো সজাগ করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের কাছে এমন বহু অভিযোগ জমা পড়লেও মন্ত্রণালয় তাদের বিরুদ্ধে উল্লেখ কোন পদক্ষেপ নেয়নি। প্রমাণস্বরূপ শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের একটি চিঠি অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরীর হাতে দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠিতে দেখা যায় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার ফারুখ আহমেদ সনদ জালিয়াতি করছে। সনদ জালিয়াতি চক্রের মেইন লোক এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর ভূয়া উপাচার্য যুদ্ধাপরাধী মাওলানা আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেকের বিষয়টি উল্লেখ করলে মান্নান চৌধুরী বলেছেন বিষয়টি আমরা সমিতির আলোচনায় তুলতে পারি। ভুয়া উপাচার্য যুদ্ধপরাধীদ মাওলানা সাদেক ২০১০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর উপাচার্য পরিচয় দিয়ে বহু মানুষকে টাকার বিনিময়ে ভুয়া সনদ বিতরণ করছে। একপর্যায়ে এই সাদেক নিজের নামের শুরুতে এমিরেটস উপাধি ব্যবহার শুরু করে। খোঁজ নিয়ে দেখা যায় সেই উপাধি ভুয়া।
দৈনিক সকালের সময়ঃ উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা সম্পর্কে বলবেন ।
প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান চৌধুরীঃ দেশের দুই তৃতীয়াংশের বেশী বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্র সংখ্যার বিচারেও তার অবস্থান দৃষ্টিকাড়া। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় বাদ দিলে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ ছাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে। প্রায় অর্ধেকের বেশী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবন ঘনিষ্ঠ শিক্ষা দিয়ে থাকে। ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ তাকে বলে Utilitarian Education অর্থ্যাৎ তাৎক্ষনিক প্রয়োগ যোগ্য শিক্ষা। তাৎক্ষনিক প্রয়োগ যোগ্য হতে হলে শিক্ষাকে হতে হবে মান সম্পন্ন। মান সম্পন্ন মানে এমন শিক্ষা যা ব্যবহারকারির প্রয়োজন মিটাবে। বর্তমানে বৈশিক নাগরিকত্বের কালে আমাদের প্রেক্ষিত হতে হবে দেশ ও বিদেশ। ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ প্রায়োগিক ও মান সম্পন্ন শিক্ষা দিয়ে আসছে। ফলাফল হাতে হাতে পাচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে এ যাবত প্রায় ২২০০০ শিক্ষার্থী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। অবশ্য ইউজিসির পদক্ষেপ অর্থ্যাৎ IQAC বা Internal Quality Assurance Cell ঈবষষ কে অর্থায়ন করার কারনে আরও বহু সংখ্যক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মানোন্নয়নে ব্রতী হয়েছে। ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে Accreditation Council গঠনের একটি ধারা আছে। এই ধারাটা কার্যকরী করতে IQAC এর উপরেও Bangladesh Accreditation Council গঠিত হয়েছে। এই কাউন্সিল ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় সরকারের অনুমোদন নিয়ে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রোগ্রামগুলো অনুমোদনের দায়িত্ব পেয়েছে। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে OBE শিক্ষা। এই OBE শিক্ষার কারণে মান নিয়ন্ত্রণ একান্তই অপরিহার্য হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ইউজিসি IQAC কে Institutional Quality Assurance Cell ঈবষষ এ রূপান্তরের নির্দেশ দিয়েছে এবং প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক কাঠামোতে তার পরিচালক, যুগ্মপরিচালক সহ অন্যান্য সহযোগির অন্তর্ভূক্ত নির্দেশ দিয়েছে। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই এই নির্দেশনা পালনে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে। সিলেবাস, কারিকুলাম ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসছে। যেহেতু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইউজিসির নিয়ন্ত্রনকে সর্বাগ্রে গ্রহণ করে নিয়েছে, সেহেতু ইউজিসির Institutional Quality Assurance Cell কে গ্রহণ করেছে, ফলও পেয়েছে। এমন কি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানের দিক থেকে বহু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাড়িয়ে গেছে।
দৈনিক সকালের সময়ঃ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সনদ জালিয়াতির সুনির্দিষ্ট প্রমান পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রনালয়। তবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেয়নি সরকার বা প্রশাসন। বিষয়টি পুরো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি নেতিবাচক প্রভাব পরে সাধারণ মানুষের। এবিষয়ে আপনার মন্তব্য বলবেন প্লিজ।
প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী-বাংলায় একটা প্রবাদ আছে ‘একে পাপ করে সর্বলোকে পায়।’ আপনার পর্যবেক্ষনের প্রেক্ষিতে আমার পর্যবেক্ষনেও উল্লেখিত প্রবাদ তূল্য। ব্যাপারটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির নজরে আনা যায়।
দৈনিক সকালের সময়ঃ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এমফিল/ পিএইডি করানোর সক্ষমতা অর্জন করছে কি-না?
প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী-সব ক’টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পিএইচডি ডিগ্রি রয়েছে। এ দু’জনকে ক্ষমতা দিলে এবং তারা ইচ্ছে করলে প্রতিবছরে অন্তত: একজন করে শিক্ষার্থীর এমফিল বা পিএইচডি’র দায়িত্ব নিতে পারে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ ক’টিতে অন্তত: দুজন সিলেকশান গ্রেড প্রফেসর আছে। প্রতি বিভাগে পিএইচডি ধারী বিভাগীয় প্রধান রয়েছে। তাদেরকে সুপারভিশনের অনুমতি দেয়া যেতে পারে। কেননা তাদের অবস্থান অন্তত: অর্ধেক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে ভালো। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে বলা যায়, বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমফিল ও পিএইচডি সুপারভিশনের সক্ষমতা আছে এবং তারা সুপারভিশনের অধিকার দাবী করতে পারে। অন্তত: যে ক’টি বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের স্থায়ী অনুমোদন পেয়েছে এবং যে ক’টি বিশ্ববিদ্যালয় কিউএস র্যাংকিং কোন না কোন সময় পেয়েছে তাদের সীমিত সংখ্যক বিষয়ে হলেও এমফিল/পিএইচডি দেয়ার অনুমতি দেয়া প্রয়োজন। এ’সব পদক্ষেপ নিলে তাদের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ তুলণামূলক ভাবে সহজ হবে।
দৈনিক সকালের সময়- ব্যবসায়ীদের মালিকানায় অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ। তারা ব্যাবসা ছাড়া অন্য কিছু চায় না। শিক্ষা সম্প্রসারণ বা তার মানোন্নয়ন নিয়ে আগ্রহ নেই। এর মধ্যে আপনি একজন শিক্ষাবিদ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা কেমন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন?
প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী- বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বাপর আইনগুলো বিশ্লেষন করলে দেখা যায় তাদের কোন মালিক নেই, শিক্ষানুরাগী বা বিদ্যুৎসাহী উদ্যোক্তা রয়েছে। বরাবর দেখা গেছে এর সবাই না হলেও অধিকাংশই ব্যবসায়ী এবং ব্যবসায়ের স্বভাবজাত প্রবনতা অনুসারে মুনাফা আকাঙ্খী। কিন্তু আইনে মুনাফা বন্টন বা উত্তোলনের কোন বিধান নেই। তারপর টাকা নয়ছয় নিয়ে দেশে বিভিন্ন কথা প্রচলিত আছে। কোভিড পূর্ব সময়ে তাদের সংখ্যা একেবারে কম ছিলনা বলে অনেকের ধারনা। বর্তমানে হাতে গোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্যদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। নতুন বিনিয়োগ আসলেও ক্রমাগত বিনিয়োগ এখন শুন্য বললে অত্যুত্তি হবে না। এদিক থেকে আমাদের অবস্থান ভিন্নতর এবং সে কারণে আমাদের প্রতি অঙ্গলী নির্দেশও দুস্কর। তবুও ত একটা অস্বস্তি কাজ করেছে যা অস্বীকার করা কঠিন। এখন যদি আমাকে বলেন, ‘আপনিও আমি নি:সন্দেহে বিব্রত হই এবং নিজকে প্রশ্ন করি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেড়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান কি সঠিক সিদ্ধান্ত হয়েছে? আরও বিস্মিত মনে হয়, যখন ভাবি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাবার সুযোগ থাকা সত্বেও নানান সৃষ্টির উন্মাদনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিলাম, তাতে চলমান চাকুরী ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অতিরিক্ত সময় চাকুরীর সুযোগ সত্বেও আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিলেকশান গ্রেড প্রফেসর পদে পদত্যাগ করে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে যোগদান কতটা সঙ্গত হয়েছে।
দৈনিক সকালের সময়- বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে উচ্চশিক্ষা নিয়ে আপনার ভবিষ্যত রূপরেখা বলবেন
প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী-আপনাকে আগেই বলেছি আমাদের নির্বাচিত বিষয়গুলো হচ্ছে Utilitarian in Nature। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অনুসঙ্গ বিষয় Utilitarian in Nature আমরা ২০০৬ সালে প্রবর্তন করেছি। তারপর আমাদের নির্বাচিত বিষয়গুলোতে অভিনবত্ব আছে। এ’সবে মাষ্টার ডিগ্রি প্রবর্তন করছি।
আমরা তৃতীয় শিল্প বিপ্লবকে ক্ষানিকটা ছুয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে পদার্পন করেছি, আমার ধারণা টেকসই উন্নয়ন ও উচ্চ আয়ের দেশে উত্তীর্ণ হতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে অবগাহন করতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যাকে স্মার্ট বাংলাদেশ বলছেন, আমরাও সে লক্ষ্যে ধাবিত হতে আশান্বিত। আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী প্রযুক্তিগুলো এবং পরিপূর্ণ সক্রিয়করনের কথা ভাবছি এবং কোর্স কারিকুলামে সেভাবে পরিবর্তন আনছি।
এমএসএম / এমএসএম

জবি ঊষার সভাপতি নাইম, সম্পাদক লিশা

মৎস বীজ কেন্দ্র অধিগ্রহণ দাবিকে আমি মুগ্ধর দাবি হিসেবে গ্রহণ করছিঃ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার

পরীক্ষার ফি কমানোর দাবিতে বার কাউন্সিলে স্মারকলিপি প্রদান

ধর্ষণের সর্বোচ্চ বিচার দাবিতে মধ্যরাতে মহাসড়ক অবরোধ জাবি শিক্ষার্থীদের

তিতুমীর কলেজস্থ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্র কল্যাণ পরিষদের নতুন কমিটি ঘোষণা

নিষিদ্ধ 'হিযবুত তাহেরীর' সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে কুবির দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা

শিশু ধর্ষণের প্রতিবাদে জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

থিসিস লেখায় দক্ষতা বাড়াতে খুবির রিসার্চ সোসাইটির প্রশিক্ষণ

খুবির শহীদ মীর মুগ্ধ তোরণের উদ্ধোধন আগামী রবিবার

নিজ বিভাগ থেকে সভাপতি নিয়োগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান, প্রশাসনের আশ্বাসে কর্মসূচি প্রতাহার

বার কাউন্সিলের ফি কমানোর দাবিতে জবিতে মানববন্ধন

সাবেক ছাত্রদল ও সাংবাদিক নেতা সুজার শেল্টারে হত্যা মামলার আসামীর ক্যাম্পাসে প্রবেশ
