ঢাকা সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

কেমন ছিল রবীন্দ্রনাথের নায়িকাদের সাজপোশাক-চুলের স্টাইল


সকালের সময় ডেস্ক photo সকালের সময় ডেস্ক
প্রকাশিত: ৮-৫-২০২৪ দুপুর ৩:৩৩

খেলাঘর বাঁধতে লেগেছি আমার মনের ভিতরে। / কত রাত তাই তো জেগেছি  বলব কী তোরে॥ / প্রভাতে পথিক ডেকে যায়, / অবসর পাই নে আমি হায়--/ বাহিরের খেলায় ডাকে সে, যাব কী ক'রে॥~ রবীন্দ্রনাথ

ইউটিউবে রবীন্দ্রনাথের গান ছেড়ে চোখ বন্ধ করে গানের কথার মধ্যে ডুবে যান কুহেলি। ছোট থেকেই রবীঠাকুরের লেখা ও গানের ভক্ত তিনি। অফিস থেকে ফিরে সব দুশ্চিন্তা, কাজের চাপ, সারাদিনের ধকল থেকে মুক্তি পেতে রবিঠাকুরের কাছেই ফেরেন। শোনেন রবিবাবুর গান। তার সকালও শুরু হয় রবীন্দ্রসংগীতে। শৈশবের প্রেমিক রবীন্দ্রনাথের লেখাজোঁকা, ঠাকুর বাড়ির ফ্যাশন ও স্টাইল, পোশাক পরার রীতি, সাজসজ্জা- সবকিছুই তার নখদর্পণে। আজ ২৫ শে বৈশাখ। রবীন্দ্রনাথের ১৬৩ তম জন্মদিন। আজকের এই দিনে কুহেলি রাবীন্দ্রিক সাজে সাজবে না তা কি হয়? এবার কুহেলি সাজবে রবীবাবুর নৌকাডুবি উপন্যাসের হেমনলিনীর মতো। 

নৌকাডুবি সিনেমায় নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেন রাইমা সেন। তার সাজসজ্জা, পোশাক সবকিছুই মুগ্ধ করে দর্শকদের। হেমনলিনীর মতো সাজতে কুহেলি বেছে নেবে হালকা রঙের শাড়ি। কেননা ঠাকুরবাড়ির নারীরা হালকা ও চাপা রঙের শাড়ি বেছে নিতেন। এর সঙ্গে মিলিয়ে ফুল হাতা ব্লাউজ পরবেন। ব্লাউজের গলায় ও হাতায় সাদা চিকেন কাপড়ের ফ্রিল। সাজের ক্ষেত্রেও বেশ মিনিমালিস্ট থাকবে কুহেলি। হালকা বেইজের ওপর লুজ পাউডার দেবে। হেমনলিনীর মতো চোখে টানা করে কাজল, আর কপালের একটু ওপরে টিপ পরবে। এতেই স্নিগ্ধ দেখাবে। মাঝখানে সোজা করে সিঁথি টেনে পেছনের দিকে চুল টেনে খোঁপা করে তাতে কাঁটা পরবে কুহেলি। কানে পরবে হালকা ওজনের গোল্ড প্লেটেডের গহনা। 

রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসের নায়িকারা বেশ মার্জিত, শিক্ষিত ও পরিশীলিত ছিলেন। ঠাকুরবাড়ির স্বর্ণকুমারী দেবী, জ্ঞানদানন্দিনী দেবী, কাদম্বরী দেবী ও অন্যান্যরাও ছিলেন ফ্যাশন সচেতন, মার্জিত ও শিক্ষিত। বাঙালি নারীদের আধুনিক কৌশলে শাড়ি পরা শেখানো, পোশাক পরার ধরনে নতুনত্ব যোগ ইত্যাদি অনেক কিছুই করেছেন রবীবাবুর বৌঠান জ্ঞানদানন্দিনী দেবী। স্বর্ণকুমারী দেবীর কন্যা সরলা দেবী বাঙালি মেয়েদের মধ্যে টিপ পরা, আলতা পরার চল শুরু করেন। সেসব ছাপ পড়েছে রবির উপন্যাসের নায়িকাদের ওপরও। 

চোখের বালি উপন্যাসের আশালতা দেবীকে যখন সিনেমায় রূপদান করা হয় তখন নায়িকাকে পরানো হয় সিল্কের কাপড়ের কুঁচি দেওয়া থ্রি কোয়ার্টার ব্লাউজ, মসলিন শাড়ি। তিনি গলায় পরেন লম্বা হার, হাতে হাতভর্তি সোনার চুড়ি, নাকে বড় নথ। উঁচু চূড়ো খোঁপা তার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়। যদি আজকের দিনে আশালতা দেবীর মতো সাজতে চান তাহলে মসলিন শাড়ি, কুঁচি দেওয়া থ্রি কোয়ার্টার ব্লাউজ, হাতভর্তি চুড়ি, নাকে নথ বেছে নিতে পারেন। ঠাকুরবাড়ির নারীরা সোজা সিঁথি করে সাধারণ বেণি করতেন। এলো খোঁপার বদলে তারা বাঁধতেন বান খোঁপা। চাইলে সেভাবে চুল বেঁধে সেখানে রুপা কিংবা মেটালের কাটা জুড়ে দিতে পারেন। কানে কানপাশা ও কানটানা পরলে পুরো হয়ে উঠবেন রবীন্দ্রনাথের নায়িকা। 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নষ্টনীড় উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে চারুলতা সিনেমাটি। সেখানে সত্যজিত রায় চারুলতাকে পরিয়েছেন নকশাপেড়ে শাড়ি, থ্রি কোয়ার্টার স্লিভের ব্লাউজ, ম্যাচিং গয়না ও টিপ। খুব ছিমছাম সাজে দর্শকদের কাছে চারুলতা হয়ে উঠেছিলেন আকর্ষণীয়। রাবীন্দ্রিক সাজে সাজতে ব্লাউজের গলা পিঠখোলা, পিঠবন্ধ অথবা কলার দেওয়াও হতে পারে। এর সঙ্গে কন্ট্রাস্ট করে কিংবা মিলিয়ে টাঙাইল, জামদানি, তসর, হাফসিল্কের শাড়ি বেছে নিতে পারেন। 

যদি ডিজাইনবিহীন ফুল হাতার ব্লাউজ দিয়ে শাড়ি পরতে চান তাহলে রবীন্দ্রনাথের ‘চার অধ্যায়’ উপন্যাস থেকে বানানো ‘এলার চার অধ্যায়’ এর এলার মতো সাজ বেছে নিতে পারেন। সেখানে এলা ডিজাইনবিহীন ব্লাউজের সঙ্গে কুঁচি দিয়ে শাড়ি পরেছে, চোখে টানা কাজল দিয়েছে, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক ও কপালে টিপ। এ সাজের সঙ্গে চুল খোঁপা করে নিজেকে অনন্য করে তুলতে পারেন।
 

 

Israt / Israt