প্রতিবেশীর হক ও ইসলাম কি বলে?
মানুষ সামাজিক জীব। আর সমাজবদ্ধ জীবনযাপন মানুষের জন্য অপরিহার্য। সমাজ ছাড়া মানুষ চলতে অক্ষম। প্রত্যেকটি সমাজ গড়ে ওঠে প্রতিবেশীর মাধ্যমে। সমাজ ছাড়া যেমন মানুষ চলতে পারেনা তেমনি প্রতিবেশী ছাড়াও মানুষ সচল নয়। ইসলাম মানুষকে সবসময় সমাজবদ্ধ জীবনযাপনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। ইসলাম সামাজিকতাকে মূল্যায়ন করে, প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার আবশ্যক করে দিয়েছেন। রাসূল ﷺ সদা প্রতিবেশীর প্রতি সদয় ছিলেন। তিনি ছিলেন প্রতিবেশীর প্রতি সহনশীল।
রাসূল ﷺ ছিলেন প্রতিবেশীর প্রতি আন্তরিক ও সহনশীল। তার কোন প্রতিবেশী কখনো তার থেকে কষ্ট পায়নি। তিনি যেমন মানুষের প্রাপ্য পরিপূর্ণ বুঝিয়ে দিয়েছেন, তেমনি নিজ প্রতিবেশীর হক ও পূর্ণরূপে আদায় করেছেন। প্রতিবেশী কে? আপনার বাড়ীর চতুর্পাশে ৪০ টি করে মোট ১২০ টি পরিবার আপনার প্রতিবেশী বলে গন্য হবে। যেহেতু মানুষ মানুষের জন্য সেহেতু প্রত্যেক মানুষ একে-অপরের সাথে অবশ্যই সদ্ব্যবহার করবে। কেউ কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করবেনা এটাই ইসলামের সাম্যের বানী। তবে প্রতিবেশীর কথা আরেকটু গুরুত্বের সাথে বলা হয়েছে। কেননা মানুষের জীবনযাপন চলাফেরা বেশিরভাগ তার প্রতিবেশীর সাথে হয়ে থাকে। তাই প্রতিবেশীর হকের কথা ইসলাম অধিক গুরুত্বের সাথে বলে।
প্রতিবেশীর হক হলো, তার সাথে ভালো ব্যবহার করা তাকে কষ্ট না দেয়া, তার কল্যান কামনা করা, তার অকল্যান কামনা না করা ইত্যাদি। নিকটতম প্রতিবেশী কিংবা দূরবর্তী প্রতিবেশী হোক তার সাথে সদ্ব্যবহার করা কুরআনের নির্দেশনা,
এবং আল্লাহর ইবাদত কর ও তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করো না। পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার কর। আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সঙ্গে বসা (বা দাঁড়ানো) ব্যক্তি, পথচারী এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও (সদ্ব্যবহার কর)। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন দর্পিত অহংকারীকে পছন্দ করেন না। (আন-নিসা-৩৬)
রাসূল ﷺ প্রতিবেশীর প্রতি সম্মান দেখানোকে ঈমানের অঙ্গ বলে উল্লেখ করেছেন।
যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও শেষ দিনের উপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে সম্মান করে। (সহীহ বুখারী-৬০১৯)
প্রতিবেশীর সাথে খারাপ কিংবা রূঢ় আচরণ জাহান্নামে যাওয়ার কারন হতে পারে।
বাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলা হলো ইয়া রাসূলাল্লাহ! অমুক নারী সারা রাত নামায পড়ে, সারা দিন রোযা রাখে, ভালো কাজ করে, দান-খয়রাত করে এবং নিজ প্রতিবেশীদেরকে মুখের কথায় কষ্ট দেয়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ তার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই,সে জাহান্নামী।
পক্ষান্তরে প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যমে হতে পারে।
পুনরায় সাহাবীগণ বলেন, অমুক নারী ফরয নামায পড়ে, বস্ত্র দান করে এবং কাউকে কষ্ট দেয় না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ সে জান্নাতী। (আদাবুল মুফরাদ-১১৮)
অন্য হাদীসে রাসূল ﷺ বলেন।
রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ না থাকে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।-(সহীহ মুসলিম-৭৬)
সদাসর্বদা প্রতিবেশীর খোজ খবর নেয়া, সে খেল কি খেলনা, সেদিকে লক্ষ্য রাখা ঈমানের দাবীও বটে। কারণ নিজে পেট পুরে খেলাম আর প্রতিবেশী উপবাস থাকলে পরিপূর্ণ মুমিন হওয়া সম্ভব নয়।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) ইবনুয যুবাইর (রাঃ)-কে অবহিত করে বলেন, আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে তৃপ্তি সহকারে আহার করে সে মুমিন নয়।-(আদাবুল মুফরাদ-১১১)
রাসূল ﷺ সর্বদা প্রতিবেশীর সাথে ভালো আচরণের প্রতি তাকিদ দিতেন।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমি তোমাদেরকে তোমাদের প্রতিবেশীর ব্যাপারে অসিয়ত করছি।”
জিবরিল আ. রাসূল ﷺ কে প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহারের ব্যপারে জোর তাকিদ দিতেন।
রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জিব্রীল (আঃ) সর্বদা আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে অসীয়ত করতে থাকেন। এমনকি আমার ধারণা হয় যে, শীঘ্রই তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারিস করে দিবেন।" (সহীহ বুখারী-৬০১৫)
এমনকি প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার ছাড়া পরিপূর্ণ মুমিন হওয়া সম্ভব নয়।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়।’’ জিজ্ঞেস করা হল, ‘কোন্ ব্যক্তি? হে আল্লাহর রাসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘যে লোকের প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদে থাকে না।’’-( রিয়াদুস সলেহীন-৩১০)
এভাবে রাসূল ﷺ তার অসংখ্য হাদীসে প্রতিবেশীর সাথে অসদাচরণ থেকে নিষেধ করে তার সাথে ভালো আচরণের প্রতি জোর তাকিদ দিয়েছেন।
তিনি বলতেন, প্রতিবেশীর সাথে ভালো ব্যবহবার করো, খারাপ ব্যাবহার করিওনা, সুন্দর আচরণ করো, রূঢ় ব্যবহার থেকে দূরে থাকো।
এবং ভালো কিছু রান্না করলে তোমার প্রতিবেশীকে দাও। তোমার প্রতিবেশীর কল্যান কামনা করো কখনো তার অকল্যান কামনা করবেনা।
রাসূল ﷺ এর এসকল অমিয় বানী একটি সুষ্ঠ ও সুন্দর সমাজ বিনির্মানের উত্তম পাথেয়। যা প্রতিবেশীর সাথে সুন্দর আচরণের মাধ্যমে সম্ভব।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে প্রতিবেশীর প্রতি সহনশীল ও উদার হওয়ার তাওফিক দান করুন।
আমীন।
এমএসএম / এমএসএম